মুসাফির। হাঁটছি পৃথিবীর পথে পথে, অনিশ্চিত গন্তব্যে। কাগজের নৌকা দিয়ে সাগর পাড়ি দেবার দুরন্ত প্রয়াস।
সংলাপ-সম্ভাবনার শেষ আশাটুকুও মিলিয়ে গেল। আর শেষ সুযোগটি হাত ছাড়া হবার পর সংকট উত্তরণ ও রক্তপাত এড়াতে সম্ভবত সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের বিকল্প নেই।
তবে তা সীমিত সময়ের জন্য, হতে পারে ছয়মাস। যদিও নীতিগতভাবে বিষয়টি আমি সমর্থন করি না।
ছোটবেলা থেকেই সেনাবাহিনীর কোনো সদস্য দেখলে জানি না কেন এক অপ্রাকৃতিক ভক্তি-শ্রদ্ধা জেগে ওঠে। আপনা থেকেই হাত তুলে সালাম দেই। তবে বড় হওয়ার পর তাদের ‘অস্ত্রের ভাষায়’ কথা বলার ব্যাপারটাও বুঝতে পারি।
সাধারণত বিশ্বের যেকোনো দেশের যেকোনো সেনাবাহিনী যেকানো সময় চাইলে ‘ক্ষমতা’ হস্তগত করতে পারে। তারা অস্ত্রের শক্তিতে বলীয়ান। সবচেয়ে বেশি অস্ত্রের মজুদ, প্রশিক্ষণ, সুযোগ-সুবিধা তারা পায়। আর দেশ ও জাতীয়তা রক্ষার্থে জীবন বাজি রাখার শপথ নিয়েই তাদের দায়িত্বের শুরু। সুতরাং তাদের সামনে দেশের যেকোনো ক্ষমতা, হম্বি-তম্বি তুচ্ছ।
অবশ্য জনসাধারণ তাদের যতই পছন্দ করুক ও প্রয়োজনীয় মনে করুক, কেবল একটি জায়গায়ই তাদের প্রতি ঘৃণার সীমানা ছাড়িয়ে। তা হল, রাষ্ট্রক্ষমতায় দেখতে চায় না। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী তাদের ইতিহাসও ভালো নয়।
সেনাবাহিনীর এই যে অস্ত্রের বিশাল মজুদ, সাধারণ সদস্যদেরও ভিআইপি মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা, সারা বছর প্রশিক্ষণ বা অলস সময় কাটানোয় রাষ্ট্রীয় সিংহভাগ অর্থ খরচ- এসব কাদের টাকায় এবং কাদের জন্যে? দুটো প্রশ্নের উত্তর একই, জনগণ। অর্থাৎ জনগণের টাকায় ও জনগণের জন্যে।
তাহলে যেকোনো কারণেই হোক, জনগণের জীবন যখন বিপন্ন, জীবিকা যখন অনিশ্চিত, ভবিষ্যৎ যখন অন্ধকার, সেই মুহূর্তে তাদের দায়িত্ব কি? সন্দেহ নেই জনগণের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বভার হাতে নেয়া অপরিহার্য। এটা সংবিধান পরিপন্থিও হবে না, যদি এর বিপক্ষে সংবিধানে সুস্পষ্ট বিধানও থাকে। কারণ সংবিধান কখনোই সর্বসাধারণের স্বার্থের বিরুদ্ধে যেতে পারে না।
যদি যায়, সেটা নিশ্চয় অন্য কোনো ধারা-উপধারা-অনুচ্ছেদ দ্বারা বাতিল হবে। কিন্তু কথা হচ্ছে, ঠিক এমন মুহূর্তে এতটা মানবিক এবং রাষ্ট্রীয় স্বাভাবিক অবস্থা দ্রুত ফিরিয়ে এনে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের শিক্ষা কি তারা পেয়েছে? উত্তর : না।
তারা কেবল তাদের সুবিধামতো ক্ষমতা গ্রহণ ও হস্তান্তর করে থাকেন। আমি নিশ্চিত, এ শিক্ষা তাদের অধিকাংশের নেই। সুতরাং এমনটা আশা করা বোকামী যে, সংকটকালীন তারা দেশ পরিচালনা করবে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ব্যারাকে ফিরে যাবে। তাছাড়া ক্ষমতার নরম গদিতে বসলে মানুষ হিসেবে সাধারণত কারোরই ছেড়ে যেতে... । তবু ছেড়ে যেতে হয়।
বড় দুটি দল যেভাবে জনগণকে জিম্মি করে রেখেছে, আর অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও যেভাবে ব্যর্থ, দেশে বড় ধরনের সংঘাত ও ব্যাপক রক্তপাতের আলামত দিন দিন স্পষ্ট হয়ে ওঠছে। এক্ষেত্রে সংঘাত ও রক্তপাত এড়াতে আমি মনে করি সেনাবাহিনী সাময়িকভাবে ক্ষমতা করে রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতার সময়সীমা বেধে দিতে পারে। আর এ নিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন ও ‘অনির্বাচিত কারও ক্ষমতা গ্রহণের অপবাদের’ আশঙ্কা করলে বিষয়টি নিয়ে একটি জরিপ চালানো যেতে পারে যে, জনগণ এক্ষণে কী চায়, কোনটা চায় তা বুঝার জন্যে। এটা করতে পারে যেকোনো বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। পরবর্তীতে এটাই জনগণের ‘মতামত’ বা একপ্রকার ‘নির্বাচন’ হিসেবে ধরা যেতে পারে।
অবশ্য এটা আমার ব্যক্তিগত চিন্তাধারা থেকে উদ্ভূত একটা সংকটকালীন ফর্মূলা। আর সংকটকালীন করণীয় সম্পর্কে কারোরই পূর্ব ধারণা থাকে না, তাই সংবিধান বা আইন-কানুনে এর সমাধান খুঁজে বেড়ানোর প্রশ্নই আসে না। কারণ যেটা সম্পর্কে কারো পূর্বধারণা থাকা সম্ভব নয়, তা আইন বা বিধানে থাকবে কি করে? তবে এর মৌলিক নির্দেশনা যে পাওয়া যাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই এটা নিয়ে আলোচনা, পর্যালোচনা, চিন্তাভাবনা ও মতামত চলতে পারে। যে করেই হোক, পথ তো একটা বের করতেই হবে।
নইলে জাতীয় দুর্যোগ নেমে আসবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।