আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বপ্নচারিনী...



জীবনে আগে কখনো এতো সুন্দর আকাশ দেখি নি। হয়ত বা, আকাশের এই সৌন্দর্যটা দেখা হয়ে ওঠেনি। আকাশে মেঘ নেই; নেই রোদ্দুরও। কেমন যেন একটা অসাধারণ স্নিগ্ধতা। পাশ থেকে নীরবে বয়ে চলা ছোট্ট নদীতে তেমন উন্মত্ত স্রোত নেই; আকাশে উড়ে যাওয়া নাম না জানা পাখিগুলো যেন পানিতে পড়া ছায়ার সাথে ঝাঁক বেধে উড়ে যাবার প্রতিযোগিতা করছে।

আশেপাশের সারিসারি গাছের পাতাগুলো যেন সেই বাতাসে কেমন একটা অন্যরকম সুগন্ধ ছড়িয়ে দিচ্ছে। হয়ত; এগুলো প্রতিদিনই হয়। সারাদিন বই পড়া, আর প্রোগ্রামিং এর ব্যস্ততায় হয়ত আমিই এগুলো কখনো চোখ মেলে দেখতে পাই নি। নাকি, আজ ও আমার পাশে বলেই আকাশটা এতো স্নিগ্ধ; নদীটা এতো প্রশান্ত; পাখিগুলোর মাঝে এতো আনন্দ। ঠিক বুঝতে পারছি না।

এই গোধূলী লগ্নে পাশাপাশি অনেক পথ হেটে এসেছি আমি আর শান্তা। দুজনের জীবনেই এই প্রথমবারের মত কোন কারন ছাড়াই পাশাপাশি পথচলা। আশেপাশের মানুষগুলো যেন কেমন করে তাকাচ্ছিলো। দূরের মাঝীগুলোও যেন আমাদের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছিলো; সম্ভবত আমাদের জন্য শুভকামনা করছিলো। পাখীগুলোও মনে হয় অনেকক্ষন ধরে আমাদের এই নিশ্চুপ হেটে চলা দেখে নিজেদের ভাষায় কিছু মন্তব্য করছিলো।

দুই জন পাশাপাশি চলতে চলতে খুব ইচ্ছা হচ্ছিলো একে অপরের হাত ধরে হাঁটি। প্রতিদিনই তো আড্ডাবাজি, মারামারি; খুনসুটি-তে হাজারোবার দু’জন দু’জনার হাত ধরা হয় ভার্সিটিতে; কিন্তু, আজ যেন কেমন অন্যরকম লাগছে। এমন নানাকিছু ভাবছি; ঠিক সেসময় শান্তা বললো “এই... আমার হাত ধর্‌ তো; কেমন যেন ভয় ভয় করছে... মানুষগুলোকে দেখছিস কেমন করে আমাদের দিকে অষ্টম আশ্চর্যের মত তাকাচ্ছে? ”। সত্যিই, ও যেন কেমন করে আমার মনের কথাগুলো পড়তে পারে। “ঐ পাগলী; তোর আবার ভয়ও লাগে নাকি? আমি তো জানতাম তোকে দেখেই সবাই ভয় পায়...”- কথাটা বলেই ওর নরম তুলতুলে হাতটা ধরলাম; নতুন করে বুঝলাম ও কাঁচের নয়।

“এই তুই কি বললি?” - শুরু হল ওর সেই চিরাচরিত গুন্ডামী; সেই পিচ্চিদের মত করে হাত নেড়ে, মুখ ভেংচিয়ে, কিল-ঘুষিসহ একেবারে নন-স্টপ দস্যিপনা। কে বলবে, যে এই মেয়েটিও একটু আগে কথাই বলছিলো না লজ্জায়। এভাবেই আরো হাঁটতে হাঁটতে কখন যে সূর্যটা অস্ত যাওয়া শুরু করেছিলো খেয়ালই করিনি। একসময় হঠাৎ গোধূলীর আকাশের দিকে তাকাতেই কেমন যেন একটা গোলাপী আভায় আকাশের সাথে আমাদের মনটাও ভরে গেল অন্য রকম আনন্দে। বসে পড়লাম সবুজ ঘাসের উপরেই।

ও আমার হাতদুটো তখনো শক্ত করে ধরে রেখেছে। দু’জনেই ভাবছিলাম যে পৃথিবীটা এতো সুন্দর কেন? ভাবছিলাম, যদি আমরা চলে যেতে পারতাম কোন একটা ভীন গ্রহে; যেখানে পড়াশুনার ঝামেলা নেই; জটিলতা নেই; কষ্ট নেই। দুইজনের মনে কেমন করে যেন একই কথাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছিলো; কেমন যেন একটা কো-ইন্সিডেন্ট। ঝগড়া আর হাসিতে দুজনে একেবারে হারিয়ে যাচ্ছিলাম অন্য ভূবনে। ধীরে ধীরে গোলাপী আকাশটা রাতের কোলে ঢলে পড়তে শুরু করল।

কেমন যেন মুহূর্তের মধ্যে হাজারো তারা আর সেই সাথে এক পূর্নিমার চাঁদ নিঃসঙ্গ আকাশটাকে ভরিয়ে তুললো। চাঁদটা যেন আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো; আর সেই সাথে তারাগুলো যেন আমাদেরকে জানাচ্ছিলো সম্ভাষন। এক অসাধারণ ভালোলাগায় ভরে থাকা মনটা তখন একটি কথাই বলতে চাইছিলো। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখ রেখে হাত দুটো হাতে নিয়ে হৃদয়টা জানাতে চাইছিলো ওকে আমি কতটা ভালোবাসি। সেই অস্ফুট চোখদুটো কেমন যেন সজল হয়ে উঠছিলো।

বাঁধভাঙ্গা চোখে ঠোটদুটো সেই ছোট্ট শব্দটা উচ্চারন করবে; ঠিক এমন সময় মনে হল পিঠের উপর কে যেন জোরে কিল মারছে। হ্যা; তাইতো... চোখদুটো খুলতে খুলতে মাথ উঠাতেই দেখি সেই দস্যিরানী শান্তার যুদ্ধসাজে প্রশ্ন; “ওই গাধা... তোর হইছে কি? সেই ব্রেকের পর থেকেই ফ্রি-স্টাইলে ডেস্কের উপর ঘুমাচ্ছিস... ফাজিল একটা... সারারাত গেম খেলবি; ফেসবুকে চ্যাটিং করবি... আর ক্লাসে এসে ঘুমাবি আর দিবাস্বপ্ন দেখবি... আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ল্যাব টেস্ট দিবি না? স্যার তো মনে হয় অলরেডি শুরু করে দিসে...” – যেন এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেল শান্তা। “হ্যা; এই তো... এই তুই আমাকে আগে ডাকিস নি কেন?”- আমি এই কথা বলতেই ওর মেজাজ গেল আরো চড়ে। “এই শয়তান... তুই দিনের বেলায় ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখবি; আর আমি তোকে ডাকার জন্য বসে থাকব? আমি তোর কি পিএস হই নাকি?” – তাইতো... ঝগড়া করতে করতে শান্তার সাথে এগিয়ে গেলাম ল্যাবের দিকে... তারপরও ওকে বলতে পারলাম না... আমার স্বপ্নে যে ছিলো সে তো আর কেউ নয়... ঐ দস্যিরানী... ওকে জানাতে পারলাম না ওকে একটু আগেই যে কথাটা আমি জানাতে চেয়েছিলাম। জানি না... আমার স্বপ্নের মতই ঐ ছোট্ট শব্দ “ভালোবাসি”-টা ওকে কখনো বলা হবে কী’না... কখনো একসাথে গোধূলী দেখা হবে কী’না... কখনো ওর হাতদুটো ধরে নদীর তীরে হেটে বেড়ানো হবে কী’না... !!!


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।