আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুনেন: এক শিক্ষকের করুণ অভিজ্ঞতার কথা!

নিজের ভাবনা অন্যকে জানাতে ভালো লাগে।

(লখাটা লিটন চন্দ্র ভৌমিকের ফেইসবুক স্ট্যাটাস থেকে) তখন সবেমাত্র মাস্টার্স দিয়ে বের হলাম। অর্জিত জ্ঞান ছটফট করছে; নতুন সার্টিফিকেট জ্বলমল করছে; শরীরের রক্ত টগবগ করছে। শিক্ষকতা পেশার প্রতি তুমুল আকর্ষণ থেকে নগরীর একটি কলেজে অর্থনীতি পড়ানোর জন্য জয়েন করলাম। ১৫ দিন পর প্রথম ক্লাস নিতে হবে; অবিরাম প্রস্তুতি; বাথরুমে, ক্লাসরুমে, মেসে, বারান্দায় রাস্তায় ডেমো ক্লাস নিচ্ছি।

নেট ঘাঁটছি, বারাকাত, আনু মুহাম্মদ, অমর্ত্য সেন, আকবর আলি খানের বই শেষ করছি। প্রথম ক্লাসে বাজিমাৎ করতে হবে; কাঁপিয়ে দিতে হবে। মুখস্ত করতে লাগলাম- মুক্তবাজার থেকে কাঁচা বাজার, ঐতিহাসিক অর্থনীতি থেকে আন্ত্রজাতিক অর্থনীতি, অর্থনীতির ইতিহাস থেকে অর্থনীতির সর্বনাশ, অ্যাডাম স্মিথ থেকে পল ক্রুগম্যান... ... প্রথম ক্লাস; শুরু করলাম... অ্যাডাম স্মিথ দিয়ে, কোন কোন দেশ কার উপনিবেশ ছিল; কিভাবে কিছু দেশ ধনী হল। অর্থনীতির সাথে কিভাবে রাজনীতি, সমাজ রিলেটেড ... হুট করে একটা স্টুডেন্ট দাঁড়িয়ে বলছে- স্যার কি সব উল্টাপাল্টা পড়াচ্ছেন? কিছুই সিলেবাসে নাই। সবেমাত্র আমি কৈটিল্লের অর্থশাস্ত্র আর অ্যাডাম স্মিথের The Wealth of Nations এ ঢুকলাম; তারা আমাকে নামিয়ে আনলো সিলেবাসে।

যাই হোক সিলেবাস নিলাম। প্রথম চ্যাপ্টার হল- অর্থনীতি কি? তার প্রকারভেদ? আবার শুরু করলাম। কে কি বলেছে অর্থনীতি নিয়ে; কেন অর্থনীতি পড়া দরকার। শুরু করলাম- সমাজতান্ত্রিক, পুঁজিবাদী, ইসলামী, মিশ্র অর্থনীতি। শুরু করলাম তাদের বিস্তারিত বর্ণনা।

হুট করে একটা স্টুডেন্ট দাঁড়িয়ে বলে- স্যার, এগুলার খালি সংজ্ঞা আসে। আজাইরা কথা আসে না। যাইহোক প্রথমদিন শেষ করলাম। দ্বিতীয় দিন ক্লাসে ঢুকলাম। সিলেবাস নিলাম।

শুরু করলাম- বাজার; একচেটিয়া বাজারের সংজ্ঞা পড়ালাম; তারপর একচেটিয়া বাজারের কুফল, সীমাবদ্ধতা পড়াতে লাগলাম। হুট করে একটা স্টুডেন্ট দাঁড়িয়ে গেছে। [আমি ভাবছি আগ্রহ নিয়ে কোন প্রশ্ন করবে] কিন্তু বলে- স্যার, একচেটিয়া বাজারের কুফল-সুফল কোনবছর আসে নাই। পড়াইয়েন না। স্যার চাহিদা-যোগান পড়ান; ফাইভ স্টার, ইম্পরটেন্ট।

যোগানরেখা কিভাবে চাহিদারেখাকে টাচ করে; এইটাও ইম্পরটেন্ট; ফোরস্টার। বাজেটরেখা একটু কমকরে পড়ান, ওয়ানস্টার। এরপর থেকে ভাবলাম- না স্টার যুক্ত প্রশ্নগুলোই ভালো করে পড়াবো। সেখানেই কারিজমা দেখাতে হবে। এরপর ফাইভস্টারযুক্ত একটা প্রশ্ন নিলাম- 'বাংলাদেশের অর্থনীতি আলোচনা করো'।

একসপ্তাহ পর ক্লাস। শুরু করলাম 'বাংলাদেশের অর্থনীতি' নিয়ে বেধড়ক পড়াশুনা। বাংলাদেশের গার্মেন্টস, কৃষি, শিল্প, রেমিটান্স। গ্যাস, তেল, খনিজসম্পদ, নদী, সমুদ্র...। তার বাণিজ্য, লেনদেন, আমদানী-রপ্তানী, বাজেট... দারুণ একটা ক্লাস নেবো; একদম সেমিনারের মত।

আমি উত্তেজিত, উৎফুল্ল, শিহরিত, মুখরিত। তারপর ক্লাসে ঢুকলাম; বললাম- প্রিয় ছাত্রছাত্রী আজকে একটা গুরুত্বপূর্ণ টপিক পড়াবো। 'বাংলাদেশের অর্থনীতি'। এই বলে আমি শুরু করলাম- বাংলাদেশের অর্থনীতি মুলত... হুট করে একটা স্টুডেন্ট দাঁড়িয়ে গেছে। [আমি ভাবলাম দেশের অর্থনীতি নিয়ে বোধহয় মারাত্মক কৌতূহল, প্রশ্ন করবে] দাঁড়িয়ে বলে- স্যার এইটা গতবছর আসছে।

সাথে সাথে অনেকেই- স্যার, গতবছর আসলে প্রধানমন্ত্রী চাইলেও এই বছর আর আসবেনা। আমি বললাম- সমস্যা কি? আবার পড়। এইটাতো জানা দরকার। বাংলাদেশে থাকবে আর বাংলাদেশের অর্থনীতি জানবে না। একটা বলে- স্যার, বেশী জানলে মাথা জ্যাম হইয়া যায়।

আরেকটা বলে- আজইরা পড়ি কি লাভ !! আরেক হারামজাদা কয়- গতবার বেশীপড়ে ফেল করছি স্যার!! এই হল আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার হাল। তারপর... তারপর... শচীন টেন্ডুলকার যেমন ক্রিকেট থেকে অবসর নিল; আমিও শিক্ষকতা থেকে অবসর নিলাম । । তখন সবেমাত্র মাস্টার্স দিয়ে বের হলাম। অর্জিত জ্ঞান ছটফট করছে; নতুন সার্টিফিকেট জ্বলমল করছে; শরীরের রক্ত টগবগ করছে।

শিক্ষকতা পেশার প্রতি তুমুল আকর্ষণ থেকে নগরীর একটি কলেজে অর্থনীতি পড়ানোর জন্য জয়েন করলাম। ১৫ দিন পর প্রথম ক্লাস নিতে হবে; অবিরাম প্রস্তুতি; বাথরুমে, ক্লাসরুমে, মেসে, বারান্দায় রাস্তায় ডেমো ক্লাস নিচ্ছি। নেট ঘাঁটছি, বারাকাত, আনু মুহাম্মদ, অমর্ত্য সেন, আকবর আলি খানের বই শেষ করছি। প্রথম ক্লাসে বাজিমাৎ করতে হবে; কাঁপিয়ে দিতে হবে। মুখস্ত করতে লাগলাম- মুক্তবাজার থেকে কাঁচা বাজার, ঐতিহাসিক অর্থনীতি থেকে আন্ত্রজাতিক অর্থনীতি, অর্থনীতির ইতিহাস থেকে অর্থনীতির সর্বনাশ, অ্যাডাম স্মিথ থেকে পল ক্রুগম্যান... ... প্রথম ক্লাস; শুরু করলাম... অ্যাডাম স্মিথ দিয়ে, কোন কোন দেশ কার উপনিবেশ ছিল; কিভাবে কিছু দেশ ধনী হল।

অর্থনীতির সাথে কিভাবে রাজনীতি, সমাজ রিলেটেড ... হুট করে একটা স্টুডেন্ট দাঁড়িয়ে বলছে- স্যার কি সব উল্টাপাল্টা পড়াচ্ছেন? কিছুই সিলেবাসে নাই। সবেমাত্র আমি কৈটিল্লের অর্থশাস্ত্র আর অ্যাডাম স্মিথের The Wealth of Nations এ ঢুকলাম; তারা আমাকে নামিয়ে আনলো সিলেবাসে। যাই হোক সিলেবাস নিলাম। প্রথম চ্যাপ্টার হল- অর্থনীতি কি? তার প্রকারভেদ? আবার শুরু করলাম। কে কি বলেছে অর্থনীতি নিয়ে; কেন অর্থনীতি পড়া দরকার।

শুরু করলাম- সমাজতান্ত্রিক, পুঁজিবাদী, ইসলামী, মিশ্র অর্থনীতি। শুরু করলাম তাদের বিস্তারিত বর্ণনা। হুট করে একটা স্টুডেন্ট দাঁড়িয়ে বলে- স্যার, এগুলার খালি সংজ্ঞা আসে। আজাইরা কথা আসে না। যাইহোক প্রথমদিন শেষ করলাম।

দ্বিতীয় দিন ক্লাসে ঢুকলাম। সিলেবাস নিলাম। শুরু করলাম- বাজার; একচেটিয়া বাজারের সংজ্ঞা পড়ালাম; তারপর একচেটিয়া বাজারের কুফল, সীমাবদ্ধতা পড়াতে লাগলাম। হুট করে একটা স্টুডেন্ট দাঁড়িয়ে গেছে। [আমি ভাবছি আগ্রহ নিয়ে কোন প্রশ্ন করবে] কিন্তু বলে- স্যার, একচেটিয়া বাজারের কুফল-সুফল কোনবছর আসে নাই।

পড়াইয়েন না। স্যার চাহিদা-যোগান পড়ান; ফাইভ স্টার, ইম্পরটেন্ট। যোগানরেখা কিভাবে চাহিদারেখাকে টাচ করে; এইটাও ইম্পরটেন্ট; ফোরস্টার। বাজেটরেখা একটু কমকরে পড়ান, ওয়ানস্টার। এরপর থেকে ভাবলাম- না স্টার যুক্ত প্রশ্নগুলোই ভালো করে পড়াবো।

সেখানেই কারিজমা দেখাতে হবে। এরপর ফাইভস্টারযুক্ত একটা প্রশ্ন নিলাম- 'বাংলাদেশের অর্থনীতি আলোচনা করো'। একসপ্তাহ পর ক্লাস। শুরু করলাম 'বাংলাদেশের অর্থনীতি' নিয়ে বেধড়ক পড়াশুনা। বাংলাদেশের গার্মেন্টস, কৃষি, শিল্প, রেমিটান্স।

গ্যাস, তেল, খনিজসম্পদ, নদী, সমুদ্র...। তার বাণিজ্য, লেনদেন, আমদানী-রপ্তানী, বাজেট... দারুণ একটা ক্লাস নেবো; একদম সেমিনারের মত। আমি উত্তেজিত, উৎফুল্ল, শিহরিত, মুখরিত। তারপর ক্লাসে ঢুকলাম; বললাম- প্রিয় ছাত্রছাত্রী আজকে একটা গুরুত্বপূর্ণ টপিক পড়াবো। 'বাংলাদেশের অর্থনীতি'।

এই বলে আমি শুরু করলাম- বাংলাদেশের অর্থনীতি মুলত... হুট করে একটা স্টুডেন্ট দাঁড়িয়ে গেছে। [আমি ভাবলাম দেশের অর্থনীতি নিয়ে বোধহয় মারাত্মক কৌতূহল, প্রশ্ন করবে] দাঁড়িয়ে বলে- স্যার এইটা গতবছর আসছে। সাথে সাথে অনেকেই- স্যার, গতবছর আসলে প্রধানমন্ত্রী চাইলেও এই বছর আর আসবেনা। আমি বললাম- সমস্যা কি? আবার পড়। এইটাতো জানা দরকার।

বাংলাদেশে থাকবে আর বাংলাদেশের অর্থনীতি জানবে না। একটা বলে- স্যার, বেশী জানলে মাথা জ্যাম হইয়া যায়। আরেকটা বলে- আজইরা পড়ি কি লাভ !! আরেক হারামজাদা কয়- গতবার বেশীপড়ে ফেল করছি স্যার!! এই হল আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার হাল। তারপর... তারপর... শচীন টেন্ডুলকার যেমন ক্রিকেট থেকে অবসর নিল; আমিও শিক্ষকতা থেকে অবসর নিলাম । ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।