চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) উদ্বৃত্তের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি।
২০১২-১৩ অর্থ বছরে এ সময়ে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৩৩ কোটি ১০ লাখ ডলার।
উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো, নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।
লেনদেন ভারসাম্যে এই স্বস্তির পেছনে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধিই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ জায়েদ বখত।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমদানি ব্যয় বাড়ার পরও রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক ধারার কারণে চলতি হিসাবে বড় উদ্বৃত্ত রয়েছে। ”
রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও এই উদ্বৃত্ত দেশের অর্থনীতির জন্য ‘ভালো’ বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এই গবেষক।
বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) গত বছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে ২২ শতাংশ। রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২৪ দশমিক ১৫ শতাংশ।
অন্যদিকে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
২০১২-১৩ অর্থবছরে মোট উদ্বৃত্ত ছিল ২৫২ কোটি ৫০ লাখ (২ দশমিক ৫২ বিলিয়ন) ডলার। ২০১১-১২ অর্থবছরে ৪৪ কোটি ৭০ লাখ ডলারের ঘাটতি ছিল। ২০১০-১১ অর্থবছরে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ৮৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
জায়েদ বখত বলেন, গত কয়েক বছর বাম্পার ফলন হয়েছে।
চাল আমদানি করতে হয়নি। দেশে বর্তমানে ১৫ লাখ টন খাদ্য মজুদ আছে। ফলে আগামী এক-দেড় বছর চাল আমদানি করতে হবে না।
“সে বিবেচনায় আমদানি ব্যয় খুব বেশি বাড়বে বলে মনে হয় না। এ অবস্থায় রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা গেলে চলতি অর্থবছর শেষেও লেনদেন ভারসাম্যে বড় উদ্বৃত্ত থাকবে বলেই আমার মনে হচ্ছে।
”
বাণিজ্য ঘাটতিও কমেছে
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ের বাণিজ্য ঘাটতি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩২ দশমিক ৩৭ শতাংশ কমেছে।
এই তিন মাসে পণ্য বাণিজ্যে সামগ্রিক ঘাটতি ১২৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ১৮৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
২০১২-১৩ অর্থবছরে পুরো সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৭০১ কোটি ডলার। ২০১১-১২ অর্থবছরে ছিল ৯৩২ কোটি ডলার।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে বিভিন্ন পণ্য আমদানি খাতে (এফওবিভিত্তিক, ইপিজেডসহ) মোট ৮৮০ কোটি ৪০ লাখ ডলার ব্যয় করেছে বাংলাদেশ।
পণ্য রপ্তানি থেকে (এফওবিভিত্তিক, ইপিজেডসহ) আয় হয়েছে ৭৫৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
এই হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১২৬ কোটি ৮০ লাখ কোটি ডলার।
তবে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। গত অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এ খাতের ঘাটতি ছিল ৮৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে ৮৭ কোটি ২০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।
জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স কমেছে ৮ দশমিক ১ শতাংশ। এ সময়ে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীরা ৩২৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। গত বছরের একই সময়ে পাঠিয়েছিলেন ৩৫২ কোটি ৪০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে দেশে ৩৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছিল। চলতি বছরের একই সময়ে এসেছে ৪০ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
এই সময়ে পুঁজিবাজারে (পোর্টফোলিও বিনিয়োগ) ১০ কোটি ১০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ এসেছে। গত বছরের জুলাই-অগাস্ট সময়ে এসেছিল ৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।