আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্বাচনী মন্ত্রিসভা নিয়ে ধোঁয়াশা

নির্বাচনকালীন সরকারের আকার ও ধরন নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। মন্ত্রীরা কাল সারা দিন অপেক্ষা করেও জানতে পারেননি, মন্ত্রিত্ব থাকছে, কি থাকছে না। দিনভর অপেক্ষায় ছিলেন জনপ্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারাও। তাঁরাও এ বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা পাননি।

ফলে ৫৯ সদস্যের মন্ত্রিসভার একটি বড় অংশ গতকাল কর্মহীন দিবস কাটিয়েছে।

বেশির ভাগ মন্ত্রী সচিবালয়ের দপ্তরে যাননি। কোনো ফাইল নড়াচড়া হয়নি। নির্ধারিত বৈঠকগুলোর বেশির ভাগই হয়নি। নতুন মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন না হওয়ায় তাঁরাও সচিবালয়ে যাননি। জাতীয় সংসদের লিখিত প্রশ্নোত্তরে মন্ত্রীদের কোনো নামও ছিল না।

এতে সরকারি কাজকর্মে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট আইনজীবী রফিক-উল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা উৎকণ্ঠায় থাকতে প্রস্তুত না, পরিষ্কার জানতে পারলে ভালো হয়। মনে হয়, প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন, আমরা সাধারণ নাগরিকেরা বোধ হয় বোকা। আমাদের বোঝানোর জন্য বলা হলো সর্বদলীয়। কিন্তু বিএনপি যখন এল না, তখন এরশাদকে ম্যানেজ করার চেষ্টা হলো।

কিন্তু বিএনপির মতো দলকে বাদ দিয়ে সর্বদলীয় সরকার হতে পারে?’

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রীদের তালিকায় ৫৮ জনের নাম আছে। গত সোমবার নতুন আটজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও একজন উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ফলে মন্ত্রী-উপদেষ্টার সংখ্যা এখন ৬৭ (গতকাল ভুল করে ছাপা হয়েছিল ৬৬)।

১১ নভেম্বর মন্ত্রিসভার সদস্যরা একযোগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র পেশ করেন। পদত্যাগের আট দিন পরও তাঁরা দায়িত্বে বহাল আছেন।

এ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় গত সোমবার আরও ছয়জন মন্ত্রী, দুজন প্রতিমন্ত্রী ও একজন উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়। এই মন্ত্রিসভাকে ‘সর্বদলীয়’ বলা হলেও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এতে যোগ দেয়নি।

মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের পরদিন গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা দিনভর সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় ছিলেন। কোনো নির্দেশনা না পেয়ে তাঁরা রাত নয়টার দিকে সচিবালয় ত্যাগ করেন।

এর কিছুক্ষণ আগে সাংবাদিকদের সচিবালয়ের ভেতরে না থাকার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেকের মতো তাঁরাও জানেন না, মন্ত্রিসভার আকার কত, কারা আছেন বা কারা নেই। অনেকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে খোঁজ নিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ জানার চেষ্টা করেছেন। অনেক মন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে ফোন করে জানতে চান, তিনি মন্ত্রী থাকছেন কি না।

এ রকম পরিস্থিতিতে খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক গতকাল দুপুরে মন্ত্রণালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেন।

এ সময় কথা বলতে গিয়ে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ দুপুরে তাঁর মন্ত্রণালয় থেকে বিদায় নেন। এ ছাড়া মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, সমাজকল্যাণমন্ত্রী এনামুল হক মোস্তফা শহীদ সচিবালয়ে যাননি। মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ সচিবালয়ে কিছু সময় থেকে চলে যান। গত সোমবার কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী সচিবালয় থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় নেন।

গতকাল মন্ত্রীদের কেউ কেউ সরকারি বাসা ছেড়ে নিজের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন।

সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারের শীর্ষ পর্যায় মন্ত্রিসভার আকার এবং কাউকে বাদ দেওয়া না-দেওয়া নিয়ে নিশ্চিত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে তালিকা পাঠিয়েও আবার দফায় দফায় সংশোধন করা হচ্ছে। একজন নীতিনির্ধারক জানান, নতুন মন্ত্রী নিয়োগ নিয়েও কয়েক দফা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়।

এ ছাড়া ১৮-দলীয় জোটের শরিক এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) সভাপতি আন্দালিব রহমানকে মন্ত্রিসভায় আনার লক্ষ্যে তৎপরতা ছিল।

কিন্তু তাঁদের রাজি করানো যায়নি বলে জানা গেছে।

সরকারি পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে ২৫ থেকে ৩০ সদস্যের নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা করার সিদ্ধান্ত ছিল। প্রাথমিক একটি তালিকাও করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে গতকাল রাতে জানা যায়, পুরোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের ৩২ জনই বহাল থাকতে পারেন। বর্তমান মন্ত্রিসভার প্রায় সবাই নির্বাচনকালীন সরকারে থাকার জন্য চেষ্টা করছেন।

নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভার প্রাথমিক তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে তাঁরা হলেন: আবুল মাল আবদুল মুহিত, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, মতিয়া চৌধুরী, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, ওবায়দুল কাদের, জি এম কাদের, নুরুল ইসলাম নাহিদ, এ এইচ মাহমুদ আলী, হাসানুল হক ইনু, হাছান মাহমুদ, কামরুল ইসলাম প্রমুখ।

সরকারের শীর্ষস্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সংসদ সদস্য নন এমন কাউকে মন্ত্রী করা হচ্ছে না। ফলে সাংসদ না হওয়ায় আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ ও শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়াকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা করা হতে পারে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর পুরোনো উপদেষ্টাদের কয়েকজন বাদ পড়তে পারেন।

মন্ত্রিসভার আকার ও নতুন মন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি মন্ত্রিসভায় যোগ দেয় কি না, সে জন্য প্রধানমন্ত্রী কিছুটা সময় নিচ্ছেন।

বিএনপি এলে অনেককে বাদ দিতে হবে। তখন দপ্তরের বিষয়টি নিয়েও চিন্তা করতে হবে। এ জন্য কিছুটা দেরি হচ্ছে। তবে আজ-কালের মধ্যে সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে।



সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.