জানি না কেন লিখি! তবু লিখি মনের খেয়ালে, পরিবর্তন করার মানসে, পরিবর্তিত হওয়ার মানসে। যদিও জানি সব ব্যর্থ হচ্ছে। তবুও আমি আছি সেদিনের সেই আলোকময় প্রত্যুষার আগমনের অপেক্ষায়
কয়েককদিন আগে ভারতের মঙ্গল অভিযানের নেপথ্যে যা কিছুটা সংযোজন বিয়োজন করে ভারতের মঙ্গল অভিযান, গরীবের ঘোড়া রোগ শিরোনামে কয়েকটি পত্রিকায় ছাপা হয়। দু:খের বিষয় হচ্ছে যে এই লেখাতে কয়েকজন পাঠক ফোন করে এবং বিভিন্নভাবে ভারত বিরোধী বক্তব্য হিসেবে আখ্যা দেয়। কিন্তু পুরো লেখাটায় ভারতকে ছোট করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না।
বা দেশ হিসেবে কোন ভূ-খন্ডের প্রতিই আমার বিদ্বেষ নেই। আমার উদ্দেশ্য ছিল যে দেশের লোকে শৌচারগার ব্যবহারের অভ্যাস নেই কিংবা যথেষ্ট শৌচাগার নেই সেই সাথে ৩৩ শতাংশ মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে তারা কেন মঙ্গলে ৪৬০কোটি রুপি ব্যায় করে অভিযান চালাবে। তাদের কাছে কি দারিদ্রতা হ্রাস এবংযৌতুকের ভয়ে দৈনিক ২০০০ কন্যা সন্তান হত্যার চেয়ে মঙ্গলাভিযান বেশি প্রায়োরিটি পাওয়া উচিত?
যাই হোক, গতকাল বিবিসি বাংলা ভারতে সেনিটেশন ব্যবস্থা নিয়ে একটি
প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটি পড়ার পর আমার মনে হলো আবারো তাদেরকে এই প্রশ্নটি করা যায়। একই গ্রহের বাসিন্দা হিসেবে তাদেরকে বলা যায় মঙ্গলে যাওয়ার আগে মানুষকে শৌচাগার ব্যবহারের প্রতি সচেতন করে তুলুন।
নিচে প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হোল:
আজ (মঙ্গলবার) বিশ্ব শৌচাগার দিবসে বিশ্ব ব্যাঙ্ক বলছে, প্রায় সোয়াশো কোটি মানুষের দেশ ভারতে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ শৌচাগার ব্যবহার করেন না – তাদের মূত্র বা মলত্যাগের মতো কাজগুলো সারতে হয় খোলা আকাশের নিচেই।
স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের অভাবকে ভারতের মতো অনেক উন্নয়নশীল দেশেই অপুষ্টি ও শিশুমৃত্যুর একটা বড় কারণ বলে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক।
কিন্তু ভারতের অর্থনীতি যেখানে বিগত দুই দশকে প্রভূত উন্নতি করেছে, সেখানে কেন এখনও দেশের এত মানুষকে খোলা আকাশের নিচেই শৌচাগারের কাজ সারতে হচ্ছে?
বস্তুত ভারতে শৌচাগারের ব্যবহার নিয়ে বিশ্ব ব্যাঙ্ক যে তথ্য দিয়েছে, তা রীতিমতো চমকে দেওয়ারই মতো।
গোটা দুনিয়ায় আড়াইশো কোটিরও বেশি মানুষের কোনও শৌচাগার নেই – আর তার মধ্যে একশো কোটিকেই মলত্যাগ করতে হয় চার দেওয়ালের বাইরে।
এদের মধ্যে অন্তত ষাট কোটিই ভারতে, যেটা এ দেশের জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশ।
"প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে যাওয়াটাই এসব মানুষের অভ্যাস আর বহু বছরের সেই অভ্যাসটা পাল্টানো খুব কঠিন। "
সুস্নাত চৌধুরী, গবেষক
শৌচাগারের অভাবে বাইরে মলত্যাগ করতে যেতে হচ্ছে, আর তা মৃত্যু ডেকে আনছে অসংখ্য শিশুর। কিন্তু মুশকিল হল – স্বাস্থ্যসম্মত একটা শৌচাগারের অভাব যে একটা সমস্যা ও বিরাট স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি, বহু ভারতীয়র মধ্যে এখনও এই সচেতনতাই তৈরি হয়নি।
শৌচাগার ব্যবহারের অভ্যাস নিয়ে গবেষণা করেছেন সুস্নাত চৌধুরী। তিনি বলছেন ভারতে ধনী-দরিদ্র, শহর-গ্রাম নির্বিশেষে অনেকেই এই একই মানসিকতার শরিক।
''শুধু গ্রামে নয়, মুম্বাই শহরেও একটু ভেতরের দিকেই খোলা রাস্তায় বা সমুদ্রের ধারেও লোককে মলত্যাগ করতে দেখা যায়। ''
মি: চৌধুরী বলছেন, জরিমানার ভয় দেখিয়ে বা দেবদেবীর ছবি-ওলা টাইলস লাগিয়ে ভারতে মানুষকে প্রকাশ্য স্থানে মূত্রত্যাগ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হয়।
এর থেকে বোঝা যায়, ভয়ে বা ভক্তিতেই মানুষকে এ কাজ থেকে আটকানোর চেষ্টা করতে হয় – কিন্তু খোলা আকাশের নিচে মল-মূত্রত্যাগ করার ব্যাপারটা আসলে তার ভেতরেই আছে।
এই অভ্যাস থেকে যে দূষণ ঘটছে সে বিষয়ে মানুষ সচেতন নয়
অর্থাৎ কোটি কোটি ভারতীয়র মধ্যে এই ধারণাটা এখনও মজ্জায় মজ্জায় ঢুকে আছে যে মলত্যাগ বা মূত্রত্যাগ বাইরে করলে সমস্যা কিছু নেই।
সামাজিক লজ্জা সংকোচ তো অনেক দূরের কথা, এই অভ্যাসের জন্য যে জল দূষিত হচ্ছে, ডায়রিয়া বা আরও অন্যান্য রোগ উন্নয়নশীল বিশ্বে প্রতি বিশ সেকেন্ডে একটি শিশুর মৃত্যু ডেকে আনছে, সেটাও তারা জানেন না।
আসলে ভারতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে গরিব মানুষেরও আর্থিক স্বাচ্ছল্য হয়তো বেড়েছে, কিন্তু শৌচাগার তৈরি করাটা তাদের অগ্রাধিকারেই পড়ে না।
সুস্নাত চৌধুরী বলছেন, ''দেশের প্রত্যন্ত এক জেলার চাষীর হাতে ফসল বেচে কিছু টাকা এলে তিনি হয়তো বাড়িতে শৌচাগার বানানোর আগে একটা রঙিন টিভি কেনার কথাই ভাববেন। ''
''তার কারণ আর কিছুই নয়, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে যাওয়াটাই এসব মানুষের অভ্যাস আর বহু বছরের সেই অভ্যাসটা পাল্টানো খুব কঠিন। ''
বাংলাতে চলতি কথায় প্রাত:কৃত্য করতে যাওয়াকে বলে মাঠ সারতে যাওয়া ... যেখানে মাঠে মলত্যাগ করার ব্যাপারটা ভাষার মধ্যে পর্যন্ত ঢুকে আছে, সেখানে মানুষের অভ্যাস পাল্টানো মোটেই সহজ নয়, বলছিলেন মি: চৌধুরী।
বিশ্ব ব্যাঙ্ক-সহ সরকারি ও বেসরকারি বহু সংস্থা ভারতে এখন ঠিক এই কঠিন চ্যালেঞ্জটারই মোকাবিলার চেষ্টা করছে, আর দেশের রাজনীতিতেও বিতর্ক চলছে শৌচালয় না দেবালয় – কোনটা বেশি জরুরি।
আর এই আবহেই আস্তে আস্তে আরও বহু ভারতীয় তাদের আজন্মলালিত অভ্যাস পাল্টাচ্ছেন, চার দেওয়ালের ঘেরাটোপে আর ছাদের নিচে তারা মূত্র বা মলত্যাগ করতে শিখছেন – ধীরে ধীরে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।