২০০৪ এর শীতরাত। যখন পৌঁছুলাম গোপালগঞ্জে, রাত ১০টার বেশি। ঢাকা থেকে আমার গন্তব্য টুঙ্গিপাড়া। গোপালগঞ্জ থেকে ঐ রাতে কোনোমতে একটা লোকালবাসে আমি টুঙ্গিপাড়া পৌঁছুই, রাত তখন এগারোটার উপরে।
আমার বাল্যবন্ধু তখন টুঙ্গিপাড়া থানায় কর্মরত।
(বর্তমানে মিন্টো রোড)। টুঙ্গিপাড়া থানায় গিয়ে দেখি, বন্ধুটা তখনও বাইরে, কোথায় যেন পুলিশদল নিয়ে আসামী ধরতে গেছে। থানার বারান্দায় বসে থাকলাম। বন্ধুটা পিক-আপ ভ্যানে ফিরল রাত ১ টায়। আমাকে বলল, 'কিছু খাইছিস?'
বললাম, 'খাবার পাব কোথায়? দোকান থেকে পাউরুটি কলা খাইছি।
'
থানার ডরমেটোরিতে শোবার আয়োজনে ব্যস্ত হলো বন্ধু। দেখে, বললাম, 'আমি আজ ঘুমোব না, চল বেরোই। '
'কোথায়? বাইরে তো খুব ঠাণ্ডা। '
বললাম, 'ঠাণ্ডা তাই আমার কি? চল তো!'
এবার মটর সাইকেলে, আমরা দুজন, টুঙ্গিপাড়ায়, রাত ২ টার পর। বললাম, 'বঙ্গবন্ধুর বাড়ি চল।
'
'এতরাতে? সকালে গেলে হয় না?'
'না, এখনি চল। '
বঙ্গবন্ধুর বাড়িতেই তার কবর। সেখানে কিছু পুলিশ ও নিরাপত্তার সংস্থার লোক ছিলেন। আমার বন্ধুটা তখন তাদের সঙ্গে স্বগোত্রভাষায় কথা বলল। সমস্যা নেই।
শীতের এরকম শেষরাতে আমি ঘুরে ঘুরে দেখলাম রক্তঝরা এক মহাকাব্যের নায়কের এপিটাপ। টের পাই, লক্ষ পৃষ্ঠা ইতিহাসের সামনে আমি খুব সামান্য এক পাঠক। সত্যি, বাঙালিকে ভালোবেসে এত বড় বুকের পাটাঅলা সাহসী মানুষ বঙ্গে আর জন্মায়নি।
রাত প্রায় শেষ হতে চলল। ভোরের টুঙ্গিপাড়া ছেড়ে আমি আবার গাড়িতে উঠলাম।
যাব, ঝিনাইদহে। চলন্ত বাসের জানলা দিয়ে দেখি, কুয়াশামোড়া মাঠ, জলাশয়। বিস্তীর্ণ মাঠের শেষে আকাশ। মনে মনে ভাবি, মানুষটা এই মাঠের মতো, এই মাঠ যতদিন থাকবে, মানুষের মুখে মুখে, অন্তরে থাকবেন তিনি। পরাধীন একটা দেশকে স্বাধীন করবার প্রত্যয়, লড়াই বা ত্যাগ করতে হয়েছে পৃথিবীর খুব কম নেতাকেই।
তবেই না স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক মুক্তি, অবাধ মতপ্রকাশ, শিল্পকলা, কবিতা-গল্প-গান ইত্যাদি...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।