জানি না কবে কোথায় , কিভাবে তোমাকে আবার দেখব। তবে তোমাকে হারানাটাই আমার অনেক বড় একটা বাজে অনুভুতি । ভাল থেকো বিবেকা। ভাল থেকো বিবেক। ভাল থেকো আমার কবিতাগুলো মাথার শিরা উপশিরায় নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা ।
তাই কিছু নেগেটিভ কথা বলব । কয়েকদিন ধরে দেখছি একজনের বাংলাদেশ নিয়ে ব্যপক উন্নয়ন এর ইন্টারনেট ভিত্তিক এবং রাজনৈতিক দলের এজেন্টভিত্তিক একটি লেখা ছড়িয়ে পড়েছে । আশাবাদী হওয়া ভাল । আশাবাদী লোকের খুব অভাব কিন্তু আশাবাদটা বাস্তবতার সাপেক্ষেই হওয়া দরকার । তাই কয়েকটা কথা ।
বাংলাদেশের উন্নয়নের সূচক নির্ধারন করেন বিদেশীরা । এবং কিছু স্বদেশী যারা এশিয়া এনার্জীর লোকাল এজেন্ট হিসাবে কাজ করেন । প্রশ্ন হল কিসের ভিত্তিতে সূচক ণির্ণয় হচ্চে ? ৭ কোটির স্বাধীন দেশে ৭৪ এর দুর্ভীক্ষ , না খেয়ে মারা যাওয়া মানুষের হিসাব আজও জানেন না যারা তাদের উদ্দেশ্যে বলছি । দেশের ১০০ কোটিপতির সংখ্যা এখন ১০০০ হয়েছে হয়ত আরো বেশি হয়েছে । সংখ্যাটা ১০০০০ ও হতে পারে ।
কিন্তু বাস্তুহারা মানুষের সংখ্যা তার ১০০ গুন বেশি বেড়েছে । তাহলে কোটিপতির ক্রমবর্ধমান সংখ্যাই কি জাতির উন্নয়নের সূচক ? দেখতে পান না দরি্দ্র মানুষের আসল চেহারা > যারা পত্রিকার পাতায় কিংবা সংসদ ভবনের সামনে বা টিএসসি তে ফুচকা খায় না ।
পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের বাজার হয়ত ভাল তাতে আমাদের অর্থনীতিতে লাভ হবার কথা ছিল । জনজীবন এর মান উন্নত হবার কথা ছিল । বুকে হাত দিয়ে বলেন তো শুধু শীতকালে শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য কত লক্ষ অসহায় মানুষকে লাইনে দাড় করিয়ে রাখেন ? কত মানুষকে শুধু মিডিয়ায় প্রচার পাবার জন্যে মাইকে মিথ্যা বলান ? নিজের দেশের মানুষ এখনও না খেয়ে দিন কাটায় আর কোটিপতিরা সোমবারের কাচা বাজার করতে যায় সিঙ্গাপুর ।
একেও দেশের উন্নয়নের সূচক বলবেন ?
সুখী মানুষের দেশ হিসাবে বিশ্বে ১১ নম্বর । কে দিয়েছে এই নম্বর ? বিশ্বজিত ও তাহলে সুখী মানুষ ছিল ? টাঙ্গাইলে গণধর্ষনের শিকার মেয়েটির পরিবার তাহলে বিশ্বে ১১ নম্বর সুখী মানুষ ? হাহাহ , আমি আপনিও ? গ্যাস , পানি বিদ্যুতের ব্যপক ঘাটতি , শিক্ষাক্ষেত্রে অনিয়মের বেড়াজাল , চাকরিহীন কয়েক কোটি পথহারা যু্বক , রাজনীতির ঘোলাজলে বিশ্বাজিতের মত হাজার মৃত্যু , আর কোন দেশে আছে পৃথিবীতে ? সোমালিয়ার মত দেশেও তো একটা বিস্কুটের প্যাকেট সবাই ভাগাভাগি করে খায় । আমরা কি সেটাও পেরেছি ? আর কোথাকার কোন মিডিয়ায় বলে দিল আমরা বিশ্বের ১১ নম্বর সুখী দেশ তাই নিয়ে পেপার ধুয়ে মুড়ি খাও ।
প্রযুক্তি আজ আমেরিকায় যা আসছে , ৬ মাস পর তা এদেশেও আসবে এটা নিয়ম । কারণ তা না হলে ব্যবসা হয় না ।
কিন্তু সেই প্রযুক্তি কে কে পাচ্ছে ? বাংলাদেশের প্রযুক্তির সাথে ভারতের তুলনা করুন ? আজও এদেশের চিকিতসা সেবা জঘন্য । অপ্রতুল সেবা মান । টাকা পয়সা প্রজেক্ট মায়ের ভোগে । প্রযুক্তির সাহায্যে আজও আমরা ভ্যাটিকান সিটি বা থাইল্যান্ড হতে পারি নি । বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট আর গাড়ি শুধু আমাদের মানদন্ড ।
ভাল ছাত্র আছে তাদের রাখার মত কোন প্রজেক্ট বানাতে পারি নি । থ্রিজি ধুয়ে তো আমার কৃষক পানি খাবে না । তাদের ধানের জাত উদ্ভাবন করতে পারি নি । খাবারের মান দিন দিন নিম্নতর হয়ে যাচ্ছে । মোট কথা নাগরিক সেবার কোন মানই নেই আমাদের ।
বিশ্ব অর্থনীতি সমিতিতে আমাদের অনেক মেধাবী আছেন কিন্তু তা দিয়ে দেশের কি উন্নয়ন হয়েছে তা কে দেখাতে বা বোঝাতে পারবেন জানি না । তাকিয়ে দেখুন ভিয়েতনাম, কোরিয়া, বা বিধ্বস্ত জাপান । কিংবা দরিদ্র কিওবা , বা মালয়েশিয়ার দিকে । তাদের প্রযুক্তি নেই । আমাদের মত বুয়েট বা ঢাবি নেই ।
আমাদের মত মুজিব নেই , জিয়া নেই । চিটা ধানের শিষ বা তলাফাটা নৌকা নেই । অথচ ওরা বদলে গেছে । আমেরিকার সাথে শত্রুতা না থাকলে বিশ্ব সুথী মানুষের র্যাংকিং এ এরাই আগে থাকার কথা । অন্তত আপনার আমার অবস্থান তাই বলে ।
আপনাদের এতই যদি প্রযুক্তির উন্নয়ন হয়ে থাকে একটা আইটি হাব দেখান । সরকারের আইটি বিশেষজ্ঞরা নিজের কম্পউটার ই সেটাপ দিতে জানে না , তারা প্রযুক্তি দিয়ে কি করবে ? যারা জানে বা জানত তাদের কে দেশছাড়া করেছি । বা আসতে দেয়া হয় না কাছে ।
দুরনীতির আখড়া হয়ে আছে বাজারের গদি । সারাদেশে মাত্র আটজন কোটিপতির দখলে চালের বাজার , ছয়জনের দখলে তেল ।
এরপরও বলবেন আমরা অনেক এগিয়েছি । ক্রাইম রেট ছুয়ে গেছে মাথার আকাশ । তবুও বলবেন অনেক দেশের থেকে ভাল ।
দেশে এখনও প্রতিদিন বিনা চিকিতসায় মারা যায় ৩৪ জন মানুষ । পেটের দায়ে সন্তান বিক্রি হয় ২ টি করে ।
ধর্ষন বা খুনের কথা লিখছি না ।
দেশের প্রত্ন সম্পদ লুট করে যারা আমাদের অর্থনীতির মন্থর চাকাকে কাগজে কলমে ভাল বলে চালিয়ে দেয় আর আমরা যারা তাই নিয়েই লাফাই তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই ।
আপনি নিজের নিশ্চয়তা দিতে পারেন ? আজ রাতে আপনি বা্ আপনার বাবা বা আপনার বোন বাড়ি ফিরবেই ? আপনি নিশ্চয়তা দিতে পারেন ? কাল আপনার ভাই বা বোন নীতিহীন শিক্ষকের জালে আটকা পড়বে না ? যদি পারেন তবে আপনি এ দেশের ধনী কাতারের লোক যাদের গানম্যান থাকে বা লীগ বিএনপির পতাকা থাকে । বাকি ৮০ ভাগ লোক আপনার কাতারে নেই ।
দিনাজপুরের কয়লাখনি দখলে নিতে গুলি করে মারা হয়েছে মানুষ ।
রাতের আধারে চলতে পারেনা এদেশের কোন বয়সী নারী । নিরাপত্তাহীনতায় ছোট্ট শিশুও । স্কুলের বেতন দিতে না পারায় ঝরে পড়া ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা কোটিপতিদের সংখ্যার থেকে অন্তত বেশি । আমি নিজেই নিজের দেশে টাকা দিতে পারি নি বলে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে চাকরির ধান্ধায় নামতে হয়েছিল । মামা খালূর জোন না থাকলে শতকরা ৯৯ ভাগ খুনের মামলায় ছাড়া পায় খুনী ।
শতকরা ৭০ ভাগ ধর্ষনের মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয় না । রোজ রাতে লালসালু ছড়িয়ে ব্যবসা পাতে হাজার ধর্ম ব্যবসায়ী । বিশ্বের আর কোন দেশে আছে ? একটা যুদ্ধ করা স্বাধীন দেশের এমন অধ:পতনের ইতিহাস ?
আজ পর্যন্ত মৌলবাদের শিকল ই ভাঙতে পারি নি । সাম্প্রদায়িকতার জাল থেকে বের হতে পারি নি । আজ ও হিন্দু মেয়েদের ধর্ষণ হয় , ধর্ষক বহাল তবিয়তে বেচে যায় ।
আজও বৌদ্ধ বিহারে আগুন লাগানো হয় , রাজনীতির ঘোলাজলে প্রাণ দেয় সাধারণ রিকসা চালক । আজও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে বলতে শুনি আমাদের দেশে যুদ্ধাপরাধী নেই । আজও হুমাযূন আযা্দ খুন হয় , রবীন্দ্রনাথকে হিদুর বাচ্চা বলে গালি দেওয়া হয় মসজিদে , আজও আমাদের দেশের জননেতাদের নিরাপত্তা দিতে এ্যাম্বুলেন্স আটকে মেরে ফেলা হয় সাধারণ মানুষ । আজও পথশিশুদের বেশ্যার ছেলে বলে গালাগাল করা হয় । তবু বলবেন আমরা জাতি হিসাবে অনেক এগিয়েছি ? নেপালের একজন পাহাড়ী শিশুর সাথে আমাদের দেশের একজন শিশুর পার্থক্য কোথায় জানেন ? ও জানে নেপালে ওর জীবনটা কঠিন হবে , সংগ্রাম করতে হবে ।
আর আমাদের শিশুটা জানে ও চাইলেও সংগ্রাম করে বড় হতে পারবে না । সেই পথ রুদ্ধ করে গেছে ওর পূর্ব প্রজন্ম ।
তারপরও স্বপ্ন দেখা ছাড়তে নেই । তবে , এমন কিছূ বাঘ ভাল্লুক মারা যায় নি যা নিয়ে গর্ব করে স্বপ্নগুলো গুলিয়ে ফেলতে হবে । ক্ষুধা থাকলেই আন্দোলন দানা বাধে , যাদের কাছে বাংলাদেশ অনেক কিছু করে ফেলেছে , অনেক এগিয়েছে বলে মনে হয়েছে তাদেরকে একবার অনুরোধ করব , প্রতিদিন দেশের পত্রিকাগুলো একটু পড়ে দেখবেন , সাথে বিদেশের পাতাটাও ।
শুধু বসে বসে প্রেম পত্র লিখলেই তো আর হয় না । কোন বিশেষ দল বা মহলকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যেই শুধু পজিটিভ হবেন না । পজিটিভ হবার জন্য পজিটিভ হোন । নেগেটিভকে আমলে না নিলে পজিটিভ বেঁচে থাকে না ।
sudipto
software development &information security
southwest jiaotong university
sichuan , china ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।