অন্যান্য ডেক্সটপ অপারেটিং সিস্টেম এর মত অ্যানড্রয়েডেও কিছুসময় ব্যবহার করার পর দেখা যায় পারফরম্যান্স হ্রাস পাচ্ছে।
সময়ের সাথে সাথে মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমগুলো আরও ফাস্ট এবং হাল্কা হওয়া উচিত যাতে করে চলার পথেও আমরা এই ফোন দিয়েই মোটামুটি সব কাজ সাচ্ছন্দ্যে করতে পারি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে আপনি পারফরম্যান্স এবং আপনার প্রয়োজন, দুটোই ম্যানেজ করবেন? তবে আসুন এজন্য সেটের ভিতর কিছু গোছগাছ করা যাক।
১. আপনার ডিভাইসটিকে জানুন
আপনার ডিভাইসের সক্ষমতা এবং দুর্বলতা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারন আপনার ডিভাইসটি সব কিছু চালাতে সক্ষম কিনা জানা উচিত। সবসময় রিসোর্সের যথেচ্ছ ব্যবহার করে এমন অ্যাপস ব্যবহার পরিত্যাগ করা উচিত কারন ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর কোনও যৌক্তিকতা নেই।
২. আপনার ডিভাইটিসটিকে আপডেট করুন
আপনি যদি আপনার ডিভাইসটির সর্বশেষ ফার্মওয়্যার আপডেট না করে থাকেন তবে এখুনি করুন। গুগল সবসময় অ্যানড্রয়েডের নিত্যনতুন ভার্সন প্রকাশ করে যেগুলোতে আগের অপারেটিং সিস্টেমগুলোর দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার একটা প্রচেষ্টা লক্ষণীয়। সাধারনত ব্র্যান্ডগুলো প্রতিটি মডেলের রিলিজের কিছুদিন পরই নতুন OS এর আপডেট সহ ফার্মওয়্যার রিলিজ করে। এজন্য সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ডগুলোর ডেভেলপার সাইট এবং ফোরামে নিয়মিত ঢু মারা যেতে পারে।
৩. অপ্রয়োজনীয় অ্যাপস দূরীকরণ
প্রায় সব অ্যাপসই Storage এ কিছু জায়গা দখলের পাশাপাশি ব্যাকগ্রাউন্ডেও প্রসেস রান করে থাকে যা অতিরিক্ত জায়গা দখলের পাশাপাশি রিসোর্স নিয়েও টান দেয়।
যত বেশি storage অ্যাপস দিয়ে ভরতি থাকবে, ততবেশি ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেস চলবে, সেইসাথে আপনার প্রিয় সেটের পারফরম্যান্স নিচের দিকে নামতে থাকবে।
সমাধান একটাই এবং তা হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় সব অ্যাপস ডিলিট অথবা ডিঅ্যাকটিভেট করে রাখা। যে অ্যাপস কালেভদ্রে ১/২ বার ইউজ করেন সেগুলিকে হাতি পোষার মত করে রাখার কোনও মানে নেই।
৪. অ্যাপস আপডেট করা
ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, “Practice makes a man perfect”. আমরা অ্যাপসের ভাষায় বলতে পারি “Update makes an apps Chocolate”. হ্যাঁ, আপডেটের ফলে একটি অ্যাপস চকলেটে (খাওয়ার নয়, কাজের ক্ষমতায়!!) রূপান্তরিত হতে পারে। আপডেটের ফলে অ্যাপস তার পুরনো lags এবং bugs ঝেরে ফেলে চকলেটের মতই আকর্ষণীয় এবং উপাদেয় হয়ে ওঠে।
আবার এটাও ঠিক, “You never know what’s inside the chocolate box”এর মত আপডেট হরিষে বিষাদের মত প্রকট হতে পারে। কিন্তু এর সম্ভবনা খুবই কম। তাই অ্যাপস চালান, চকলেট খাওয়ার মত আপডেট নামান।
৫. উচ্চগতিসম্পন্ন মেমোরি কার্ড ব্যবহার
মেমোরিকার্ডও ফোনের storage যাকে মোবাইল বা ফ্ল্যাশ storage হিসেবেও ধরা যায়। কম ইনটারনাল মেমোরিসম্পন্ন ফোন অনেক সময় এক্সটারনাল হাই স্পিড মেমোরি(অবশ্যই জায়গা যত বেশি সম্ভব খালি থাকতে হবে)থেকে boost পায় যা ফোনের পারফরম্যান্স সন্তোষজনক রাখতে সাহায্য করে।
যদি টাকার চেয়ে পারফরম্যান্স আপনার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়, তবে class 6 থেকে class 10 এর মধ্যে মেমোরি কার্ড ব্যবহার করা যেতে পারে। কারন শুধু হাই storage নয়, হাই স্পিডও একটি ফ্যাক্টর।
৬. উইজেট যথাসম্ভব পরিহার করা
অনেকেই মনে করেন উইজেট নিয়ে চিন্তার কি আছে? এটি তো আর আট দশটা অ্যাপসের মতই। কিন্তু আমি বলব, রিসোর্স ড্রেন করার ক্ষেত্রে উইজেট আরও এক কাঠি সরেস। অ্যাপসতো তাও বন্ধ করার সাথে সাথে no work, no food এর মত ভদ্রভাবে বসে থাকে।
কিন্তু উইজেট আপনি চান বা না চান নিরব ঘাতকের মত ঠিকই ব্যাটারি ড্রেন করতে থাকে। তাই যখন আপনার জিপিএস, ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ, রোদ বৃষ্টির খবর জানার ওয়েদার আপডেট, টর্চ জ্বালানোর জন্য টর্চ উইজেট ইত্যাদি কোনটিরই দরকার নেই, ডিএকটিভেট করে রাখুন সব উইজেট। শুধু ব্যাটারি ড্রেন করাই নয়, পারফরম্যান্স হ্রাস করতেও ওস্তাদ এই উইজেট। অনেক অ্যানড্রয়েড ব্লগেও উইজেট নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে। জানেন তো অনেক সময় দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভাল।
৭. লাইভ ওয়ালপেপার পরিহার করা
রিসোর্স কিলারের আরেক রূপ এই লাইভ ওয়ালপেপার। সাধারনত চকমকে ঝকঝকে, চিত্তাকর্ষক এই ওয়ালপেপারগুলো কমবেশি সব স্মার্ট ফোনের সাথেই স্টক হিসেবে আসে। অনেকে আবার বিভিন্ন সাইট থেকেও ওয়ালপেপারের চেহারা দেখেই আগপিছ না বুঝে নামিয়ে ফেলেন। কিন্তু ভাইয়েরা, চক চক করলেই যেমন সোনা হয়না, তেমনি বাহারি এইসব লাইভ ওয়ালপেপারও শুধু আপনার মনই হরন করবে, কাজের কাজ কিছুই করবে না বরং উল্টো সেটের ব্যাটারি যা একটু বেশিক্ষণ ব্যাকআপ দিতো, সেটাও ছিনিয়ে নিবে লাইভ ওয়ালপেপার।
৮. Synchronization বন্ধ রাখা
Synchronization একটি দরকারি এবং গুরুত্তপুর্ণ ফিচার যা স্মার্ট ফোনেরই একটি মূলনীতি।
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং, ই-মেল সহ অন্যান্য অ্যাকটিভিটিজের জন্য synchronization অপরিহার্য। কিন্তু ক্রমাগত রিফ্রেশ করার কারনে ব্যাটারি এবং পারফরম্যান্স দুটোই নিচে নামতে পারে যা ফোনের পাওয়ার ব্যাকআপ প্রশ্নের মুখে ফেলতে বাধ্য। এক্ষেত্রে খুব বেশি ব্যবহার হয়না এমন অ্যাপসগুলোর synchronization বন্ধ করে রাখা যেতে পারে।
৯. অ্যানিম্যাশন বন্ধ রাখা
এটি বেশ অবাক করার মত তাইনা? আমাদের ফোনে আবার অ্যানিম্যাশন কিভাবে হয়? আসলে আমরা যখন এক প্রসেস থেকে অন্য প্রসেসে যাই, তখন স্ক্রীন ফেডআউট এর মত একরকম অ্যানিম্যাশন হয়, এটি যদি দেখতে চান তবে আপনার ফোনের ডেভেলপার অপশন থেকে Window Animation Scale>Animation Scale 10x সিলেকশন করুন। এরপর আপনি Window Animation Scale এই অপশনটি আবার সিলেকট করলে স্লো-মোশনে দেখবেন।
এখন আপনি যদি অ্যানড্রয়েডের একজন হার্ডকোর ইউজার হোন, তবে Window Animation Scale আর Transition Animation Scale দুটোই অফ করে রাখুন, এতে করে সেটের পারফরম্যান্স আরও ফাস্ট হবে।
১০. টাস্ক কিলার অথবা টাস্ক ম্যানেজার ব্যবহার
আর এত সব ঝামেলায় যদি যেতে ইচ্ছে না করে, গুগল প্লে স্টোরে প্রচুর ফ্রী টাস্ক ম্যানেজার রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে আপনি অপ্রয়োজনীয় টাস্ক ঝেটিয়ে বিদায় করতে পারেন। এর ভিতরে রয়েছে Advanced Task Killer এবং Super Task Killer Free. ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেস কিল করার জন্য এর মধ্যে যেকোন একটি টাস্ক কিলার ব্যবহার করলেই চলবে।
এছাড়া সবসময় মোবাইল ও ইন্টারনেটের খুটিনাটি জানতে এ পেজ ক্লিক করুন। হয়ত পেয়ে যাবেন আপনার প্রত্যাশিত অজানা তথ্যটি এবং আপনার জানা বিষয়টিও এ পেজ এ শেয়ার করলে আমরা অনেকেই উপকৃত হতে পারি।
ধন্যবাদ
ভাল থাকবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।