আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হিমুর অপেক্ষায় রুপা

দুঃখ ব্যাপারটা আপেক্ষিক , অতি সহজেই দুঃখ আসে আবার খুব সহজেই চলে যায় ।

রাত ২ টা আমি এখনো হেঁটে বেড়াচ্ছি । আকাশে চাঁদ উঠেছে । রুপাকে কথা দিয়েছি পূর্নিমা দেখাব । কিন্তু আজও আমি আমার কথা রাখব না ।

রুপাকে অপেক্ষা করাতে একাটা আলাদা আনন্দ আছে । থাকনা অপেক্ষায় , অপেক্ষা মানুষের জীবনকে রুমাঞ্ছকর করে তুলে । ভাবছি মিসির আলি সাহেবের বাসায় যাব । এক কাপ চা হাতে হাজির হয়ে চমকে দিলে মন্দ হয় না । কিন্তু মিসির আলি মানুষটা সাধারন মানুষেদের মত নয় , খুব অল্পই চমকায় ।

আজকাল মানুষের চমকে যাবার স্বভাবটা লুপ পাচ্ছে । জীবনে তারা এতই বড় চমকের সাথে পরিচিত হচ্ছে যে বিশেষ কিছু না করলে চমকায় না । আমি এখন মজনু ভাইয়ের রেস্টুরেন্টের সামনে দিয়ে যাচ্ছি । দোকানের কর্মচারীরা জিনিসপত্র ঠিক করছে । একটু পরেই বুধহয় দোকান বন্ধ করে দিবে ।

সামান্য শীতও পড়েছে । কিছু কুকুর ঘুরা ঘুরি করছে । সাধারণত ভাতের রেস্টুরেন্টের কোন নাম থাকে না । কিন্তু এইটার নাম আছে , মজনু ভাইয়ের ভাতের দোকান । দোকানে গিয়ে দেখি সবাই একটা বড় পাত্র থেকে ভাত নিচ্ছে ।

মনে হয় সবাই মিলে একসাথে খাওয়ার ব্যবস্তা করছে । আমি যাওয়ার সাথে সাথে মজনু ভাই এগিয়ে আসলেন । কি হিমু ভাই , কেমন আছেন ? আজকাল তো আপনাকে আর দেখাই যায় না । কোথায় থাকেন ? আমি কোন উত্তর না দিয়ে সামনে এগিয়া গেলাম । মজনু ভাই আবার জিজ্ঞেশ করলেন , কি হিমু ভাই , কেমন আছেন ? ভাল ।

ভাত তরকারি কিছু আছে ? না ভাই আজ সব ভাত শেষ । বাকি যে ভাত রয়েছে ওইটা সবাই মিলে খাবে । চাইলে আপনিও যোগ দিতে পারেন । না ভাই থাক আপনারা কষ্ট করেছেন এখন ভাত খান । আমি যাই ।

আজ একটু বেশি ঘুম পেয়েছে । আমি হাঁটা শুরু করলাম । আমার গন্তব্য স্তান আমার মেস । আমি গিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলাম । শীতের দিনে ঘুম আস্তে বেশি সময় লাগে না ।

গায়ে একটা চাঁদর আর কিছুই নেই , আর মধ্যে দরজা খুলা । আমি দরজা খুলা রেখে ঘুমাই । কারন চুর ভুলেও যে ঘরের দরজা খুলা অই ঘরে ধুকবে না । চুর দের কিছু নিয়ম কানুন আছে । তারা মনে করে খুলা দরজার পিছনে হয়ত কোন মানুষ হাতে লাঠি নিয়ে দারিয়ে আছে ।

ঘরে ঢুকার সাথে সাথে ঠাশ করে স্বজোরে একটা আঘাত তার মাথার পিছনে লাগবে । সকাল ছয়টায় ঘুম ভাঙল । চা খাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু বিছানা ছাড়তে মন চাচ্ছে না । ঘুম থেকে উঠে দেখি সামনে চিঠিটা পরে রয়েছে । চিঠিটা হাতে নিয়ে পড়া শুরু করলাম ।

লিখা দেখে মনে হচ্ছে রূপার চিঠি । প্রিয় হিমু , কেমন আছো ? তুমি এবারও আসনি । প্রতিবার কথা দিয়েও তুমি আস না । কাল আমি সারা রাত তুমার অপেক্ষায় বসে ছিলাম । মনে মনে ভেবেছিলাম তুমার সাথে খুব সুন্দর একটা রাত কাটাব ।

দুজনে মিলে আকাশের চাঁদ দেখব । কিন্তু আমি জানতাম তুমি আসবেনা । কারন আমি কষ্ট পেলে তুমি অনেক আনদ পাও । তবুও দেখ , তুমার প্রতি রাগ দেখানোর বদলে তুমার কাছে চিঠি লিখছি । তুমি এমন কেন বলতো ।

যতই চেষ্টা করি তুমার উপর কখনও রাগ করতে পারিনা । আচ্ছা হিমু তুমি কি সত্যিই কোন দিন আমাকে তুমার সাথে চাঁদ দেখাতে নিয়ে যাবে । কখনও কি আমি এই সুযোগ পাব ? মনে হয় এটি স্বপ্ন হয়েই থাকবে । ইতি তুমার রূপা মিসির আলি সাহেব সব চিঠি আন্তত তিন বার পরেন । কিন্তু আমি কখনও চিঠি একবারের বেশি পরি না ।

এটা আমার বাবার আদেশ , “ শোন হে বৎস , কখনও কারো দুঃখ অথবা আনন্দে লিখা চিঠি একবারের বেশি পাঠ করিবে না , একবার পাঠ করা শেষ হলে চিঠিটিকে ছিরে ফেলবে । এতে তুমি মোহ গ্রস্ত হবে না , তাদের দুঃখ অথবা আনন্দ আনুভব করবে না । মহাপুরুষরা দুঃখ অথবা আনন্দের উর্ধে এবং যারা মোহ ত্যাগ করতে পারে তারাই প্রকৃত মহাপুরুষ । ” চিঠিটা পড়া শেষ করে ছিরে ফেললাম । মাঝ ববাবর নয় , অনেক ছোটছোট অংশে ছিরলাম ।

জানালা দিয়ে বাইরে ছুরে ফেলে দিতেই কাগজের টুকরোগুলি বাতাসে উরে চলে গেলো । কিছু সময় পর বিছানার মোহো কাটিয়ে উঠে হাত মুখ ধুয়ে নিলাম । আজ বাদলের কাছে যেতে ইচ্ছা করছে । অনেক দিন হল দেখা হয় না। ।

.......

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।