অন্যায় এর প্রতিবাদ সংবিধানে আছে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের জান মালের রক্ষণাবেক্ষণ ও তার নিরাপত্তা প্রদান করা সরকারের দায়িত্ব
সরকার কি তার দায়িত্ব সধিক ভাবে পালন করছে?
পুলিশ কিংবা র্যাব আসামীকে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে দিনের পর দিন তাদের হেফাজতে রেখে শারীরিক, মানসিক নির্যাতন করে বলে ভূক্তভোগী আসামী পরিবারের নিকট থেকে অনেক সময় অভিযোগ পাওয়া যায়।
সংবিধানের ৩৩(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে গ্রেফতার ও প্রহরায় আটক প্রত্যেক ব্যক্তিকে গ্রেফতারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে নিকটতম ম্যাজিট্রেটের সামনে হাজির করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিকে যথাযথভাবে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতে হাজির করা হচ্ছে না। এতে করে মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে।
প্রশ্ন উঠেছে সংবিধানে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিকে ২৪ ঘন্টার বেশি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে না রাখার বিধান কতটুকু পালন করছে তারা?
আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছিলো ক্ষমতায় এলে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিষিদ্ধ করা হবে এবং বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা কঠিনভাবে দমন করা হবে।
যেভাবে গত চার বছরে গুম, খুন, অপহরণ, গুপ্ত হত্যা ও ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটেছে তাতে সারা দেশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও গভীর উদ্বেগ লক্ষ্য করা গেছে। যদিও সরকার নিয়ন্ত্রিত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তা মানতে নারাজ।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী গত চার বছরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ৪৯৩ জন নিহত ও নিখোঁজ হয়েছে। র্যাবের “ক্রসফায়ারে” নিহত হয়েছে ২৬৯ জন। এছাড়াও পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার গুলিতে নিহত হয়েছে ১২২ জন।
সারা দেশে ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত অপহৃত হয়েছে ৮১ জন। এদের মধ্যে মাত্র ১৮ জনের লাশ পাওয়া গেছে, অন্যরা সবাই নিখোঁজ এবং মাত্র ২ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
পুলিশের হিসাব অনুযায়ী ২০১১ সালের ১১ মাসে ৭১৫ জন অপহৃত হয়েছে। এদের মধ্যে পাচার ও মুক্তিপণের জন্য ৮৮ জন অপহৃত হয়েছে।
গত ছয় মাসে ১৭ পাহাড়ি নারী ধর্ষণের স্বীকার হয়েছে।
গত ৪ বছরে ১৭ সাংবাদিক খুন হয়েছে। মহিলা পরিষদের তথ্যমতে গত বছরে ৯০০ জন নারী ও শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। গত বছরে বিভিন্নভাবে ধর্ষিত হয়েছে ৭৭১ জন এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৫৭ জন। তার মধ্যে ১০৬ জনকে ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়েছে। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ১৩৩ জনকে এবং শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে ২০৫ জন নারী।
ইভটিজিং এর শিকার হয়েছেন ৬৬২ জন নারী। এ কারণে ১৭ জন নারী আত্মহত্যা করেছে।
সেন্টার ফর মিডিয়া রিসার্চ (এম.আরটি ) মহাজোট সরকারের ৪ বছরের বিভিন্ন অপরাধের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে গত ৪ বছরে ১৬,৫৮৯ জন খুন হয়েছে, রাজনৈতিক হত্যা ৭৯০ জন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে নিহত ৪৫৯ জন, গণপিটুনীতে নিহত ৫৮৮ জন।
গত তিন বছরে সারা দেশে চরমপন্থি ও জঙ্গী তৎপরতা কমলেও বেড়ে গেছে গুম, খুন, নারী ধর্ষণ ও অপহরণ।
২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর সদরঘাটে জজকোর্টের সন্নিকটে নিরীহ পথচারী শরিয়তপুর নিবাসী বিশ্বজিৎকে যেভাবে দিনে দুপুরে পুলিশের নাকের ডগায় জনসম্মুখে কুপিয়ে ও পিটিয়ে খুন করা হয়েছে তাহা খুবই ভয়াবহ, নৃশংস ও হৃদয় বিদারক।
গত বছরে সবচেয়ে আলোচিত হত্যাকাণ্ডের মধ্যে সাংবাদিক দম্পতি সাগর রুনির হত্যাকাণ্ড এবং গুলশানের নিজের বাসভবনের সামনে র্দুবৃত্তদের গুলিতে সৌদি দুতাবাসের কর্মকর্তা খালাফ আল আলীর খুনের ঘটনাটি উল্লেখ যোগ্য ।
গত ৪ বছরের আলোচিত হত্যাকাণ্ডের মধ্যে সংসদ ভবন এলাকায় যুবলীগ নেতা ইব্রাহীম হত্যা, মিরপুরে ইডেন কলেজ ছাত্রী মেনকা হত্যা, গুলশানে বাসায় ঢুকে মা মেয়েকে গুলি করে হত্যা, আমিন বাজারে ৬ ছাত্র হত্যা, ডাঃ নিতাই চন্দ্র হত্যা উল্লেখ যোগ্য।
এসব হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, অপহরণ, নারী ধর্ষণের ঘটনায় আজ পর্যন্ত কোন প্রকৃত অপরাধী ব্যক্তির শাস্তি হয়নি। কেন বিশ্বজিতের মত নিরীহ পথচারী তরুণ রাজনীতির নৃশংস বলি হবে? এ রকম হত্যাকাণ্ডের দায় কি সরকার ও বিরোধী দল এড়াতে পারে?
আজ রাজনীতিতে যেভাবে দলবাজি, ঠকবাজি, চাঁদাবাজি, পেশী শক্তি ব্যবহƒত হচ্ছে তাতে ভবিষ্যতে ভাল মানুষ রাজনীতিতে আসবে কি না সন্দেহ?
মহাজোটের রকারের ৪ বছরে তাদের নিকট থেকে জাতি কি পেল? এভাবে আর কত মায়ের কোল খালি হবে? যেভাবে প্রতিনিয়ত সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ পাখির মত গুলি করে বাংলাদেশীদেরকে হত্যা করছে তার নিন্দা করার ভাষা আমাদের জানা নেই।
আমাদের দেশে কম-বেশি প্রায় ৪০টির মত মানবাধিকার সংগঠন আছে। যেভাবে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে সেভাবে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিবাদ চোখে পড়ছে না।
সম্প্রতি টাঙ্গাইলের সদর উপজেরার দরিদ্র কৃষকের মেয়ে ৯ম শ্রেণীর ছাত্রীকে মধুপুরের পাহাড়ি এলাকার বোকারবাইদে একটি বাড়িতে আটকে রেখে ৩ দিন ধর্ষণ করা হয়েছে। মেয়েটি আজ মানসিক ভারসাম্যহীন, গুরুতর অসুস্থ্য অবস্থায় ডিএমসিতে চিকিৎসাধীন আছে।
অতি সম্প্রতি ঢাকার সাভারে কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ করে ভিডিও চিত্র ধারনের অভিযোগে ছাত্রীর বান্ধবীসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং সাভার মডেল থানায় ১১ জনের নামে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গত শুক্রবার রাতে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তালুক বাণীনগর গ্রামে এক গৃহবধূকে ধর্ষণের পর শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এ ঘটনায় ধর্ষক পলাতক হলেও পুলিশ ভিকটিমের স্বামীকে গ্রেফতার করেছে। অন্যদিকে একই দিনে নরসিংদীতে ৫ম শ্রেণীর এক স্কুলছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে।
পাশবিক নির্যাতনে আহত শিশু ছাত্রীকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় নির্যাতিত ছাত্রীর পরিবারের মামলার প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত মসজিদের ইমামসহ ২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ধর্ষণের মতো ভয়াবহ ও নৃশংস ঘটনা যারা ঘটায় তাদেরকে এই জঘন্য অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে এবং দেশের উন্নয়নের গতি চরমভাবে ব্যাহত হবে। ধর্ষণের মতো ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে জন্য দোষীদেরকে দ্রুত বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
যেভাবে দেশে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে তাতে আমরা জাতি হিসাবে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো তা কে জানে?
আমরা কেন সরকার কে ট্যাক্স দিচ্ছি?র কেনই বা ট্যাক্স দিব যদি তারা আমার নিরাপত্তা ই দিতে না পারে ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।