সচ্ছ, উজ্বল, ঝকঝকে একরতি কাঁচঘরের একরতি জানলা। জানালার দুপাশে অনাবিল আঁকাশ। স্বর্গীয়, অপার্থীব, আশ্চর্য্য মায়াময়, আলৌকিক নভঃ। নিঃসীম নিলিমার শেষ প্রান্ত ছুঁয়ে ঝুকে থাকে সেখানে অবারিত সবুজ! পৃথিবীর সে সীমান্ত ঘেসে বয়ে চলে এক ছোট্ট নদি নিরবধি, শান্ত, অচঞ্চল।
সেই নদিটা ছিলো আমাদের একান্ত আপন।
কেউ না জানা, শুধুই দু'জনার নিজস্ব জগতের এক লুক্কায়িত সম্পদ। সে নদিতে এপার আর ওপারের একমাত্র মনোবৈতরণী ছিলো, হঠাৎ ভেসে আসা এক আলোর খেয়া। আলোকিত সে তরণীর ছিলোনা কোনো নেয়ে, ছিলো না কোনো মাঝি, মাল্লা, দাঁড়ি বা কাঁছি। তবুও অদ্ভুৎ আলোকময় ঝলমলে সে বর্ণীল তরী কি এক অসীম দক্ষতায় চলতো দুলে দুলে।
পৌছে দিত ওপার হতে অপার বারতা মনের গহীনে গহীনে, অলিন্দে অলিন্দে, জাফরিকাটা ঝুল বারান্দায়।
আমাদের যত অব্যাক্ত কথনের ব্যাক্ত ভাবনামালা মুখরিত হত, আছড়ে পড়তো পাড়ে। সকাল, দুপুর, সাঝে নদীটির দুই কুলে বসে থেকেছি আমরা নিশ্চুপ, ভাষাহীন। দেখেছি অপলক দুই হৃদয়ের সাত রঙ ভাব তরঙ্গের খেলা। হৃদয় দিয়ে হ্বদয় ছুঁয়াছুঁয়ি, মন নিয়ে এক্কাদোক্কা, আলোছায়া লুকোচুরি, নানা বর্ণে, রঙ্গে রসে কেটেছে দিন হেলাফেলায়।
গভীর নিশিথীনি রাতের স্বপ্ন সহচর।
চুপি চুপি ভাগাভাগি করে নিয়েছি নিজেদের সুখ দুঃখগুলো। পরস্পরকে চিনেছি তিল তিল করে। আপন করে নিয়েছি একে অপরের স্বত্বা, , গেঁথেছি মালা বিনি সুতোর অমরাবতীর ফুলে। সে অমরাবতীর বীজ বুনেছি অজানা স্বর্গলোকের স্বর্গদ্যানে।
হঠাৎ একদিন ঝড়ো হাওয়ায় উড়িয়ে নিলো চারিদিক।
ভাসলো চারিধার। হারিয়ে গেলো সে আশ্চর্য্য আলোর খেয়া। নিভে গেলো তার সবুজ সংকেত। সে কি পথ হারালো, নাকি নিমজ্জিত হলো? জানা নেই আমার।
মায়ানদীটির তীর ধরে যুগ যুগ হেঁটেছি আমি, বসে থেকেছি সে নিখোঁজ তরীটির আশায়।
কোথায় না খুঁজেছি, এখানে ওখানে তপ্ত বালুতে পুড়িয়েছি পা, বরষার প্রথমদিনটি হতে অঝর ধারার শেষবিন্দুটি পর্যন্ত অবিশ্রান্ত বরষণে ভিজিয়েছি কায়া,শীত, গ্রীস্ম বা হেমন্তের বিকেল, এক মুহুর্ত থামিনি আমি। বসন্তের পর বসন্ত চলে গেছে বিফলে, হিমবায়ে সবাই যখন উষ্ণ গৃহকোনের আয়েসী আশ্রয়ে, আমি তখন কনকনে হাওয়ায় ডুবে থেকেছি। পরোয়া করিনি কোনো শাররিক যাতনার । ঠায় বসে থেকেছি সে নদিটির ধারে। বুকে নিয়ে ক্ষীন আশা, যদি ফেরে আমার সে আলোর খেয়া।
খুব টিমটিমে , ক্ষীন সবুজ সেই সংকেতের আশায় আমি পার করেছি দিনের পর দিন, বছরের পর বছর!
সব হারিয়েও যাবার পরেও আশা হারাইনি আমি। আমি তখন খুঁজছি একটি ছাঁয়া। খুব দূর থেকে হলেও হাঁটতে চেয়েছি সে ছাঁয়ার পাশাপাশি। চুপচাপ বসে থাকতে চেয়েছি সেই ছাঁয়াটির পৃষ্ঠের আড়ালে। হতে চেয়েছি তার গোপন ছায়াসঙ্গিনী।
ছায়াসন্ধানী আমি তখন ওৎ পেতে থাকি রোজ রোজ একটি ছাঁয়ার আশায়। অদৃশ্যমান মায়াজাল পেতে ছায়া ধরি রোজ রোজ। কত শত ছায়া। কিন্তু কোথায় সে আকাংখিত ছায়া? প্রতীক্ষায় কাটে দিন। মলিন জাল বিবর্নতা হারায়।
টুপটুাপ ঝরে পড়ে সেথায় নিরাশার ফুলগুলি। আমার দৃষ্টি ক্ষীন থেকে ক্ষীনতর হয়।
হঠাৎ একদিন আবারও ঝড় ওঠে। উত্তাল হয় শান্ত্ অচঞ্চল নদি। ফুসে ওঠে রোষে ধরণী উন্মাতাল ।
আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে চলে প্রচন্ড তান্ডব। ধুলায় লুটায় বিশ্ব চরাচর। ঝড় থামার পর, পৃথিবী শান্ত হলে ক্লান্ত বিধস্ত আমি মুখ তুলি। আমায় অবাক করে, সহস্র যুগের অনাদিকাল হতে ভেসে ওঠে সেই নিঁখোজ আলোর খেয়া। নেয়ে তার সেই অতি আকাংখিত, চির পরিচিত ছায়া...
পাশে তার এক অতি অপরূপা ছায়াসঙ্গিনী......
প্রকাশিত ও জাজ্বল্যমান......
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।