‘দয়া করে কোমলমতি শিশুদের দুর্নীতি থেকে বাঁচান’—এভাবেই একজন অভিভাবক তাঁর মুঠোফোন থেকে এই প্রতিবেদকের মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠান।
রাজধানীর জাতীয় হূদরোগ ইনস্টিটিউটে কর্মরত আরেক অভিভাবক প্রথম আলোয় ফোন করে বলেন, শিশুশিক্ষার্থীদের মধ্যে যদি এভাবে সহজ ও অবৈধ পন্থা শিখিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এর পরিণাম হবে ভয়াবহ।
চলমান প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় একের পর এক প্রশ্নপত্র ‘ফাঁস’ হয়ে যাওয়ায় এভাবেই উদ্বেগ প্রকাশ করেন এ দুই অভিভাবক। তাঁদের দুজনের পরিবারেই প্রাথমিক সমাপনীর পরীক্ষার্থী আছে। শুধু এ দুই অভিভাবক নন, এ রকম অসংখ্য অভিভাবক এ পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
একাধিক অভিভাবক বলছেন, পরীক্ষার আগে ‘ফাঁস’ হওয়া প্রশ্ন পরীক্ষার মূল প্রশ্নের সঙ্গে প্রায় মিলে যাচ্ছে। গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বিষয়ের প্রশ্নও আগের দিন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। তবে পরীক্ষার পর দেখা গেছে, আগের তিনটি পরীক্ষার চেয়ে এ পরীক্ষায় কম প্রশ্ন মিলেছে। তবে আগের তিনটি পরীক্ষায় ‘ফাঁস’ হওয়া প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মূল প্রশ্নের ৯০ শতাংশ পর্যন্ত মিলে গেছে।
একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করেন, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা শিশুদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।
তাঁরা বলছেন, প্রশ্নপত্র ‘ফাঁসে’র বিষয়ে মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু তদন্ত কমিটিকে সময় দেওয়া হয়েছে ১৫ কর্মদিবস। তাতে পরীক্ষাই শেষ হয়ে যাবে। তখন পরীক্ষার বিষয়ে আর সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরাও মনে করছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে।
কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এ মুহূর্তে পরীক্ষা বাতিল করে এত বিশালসংখ্যক পরীক্ষার্থীর নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া কঠিন। যে কারণে তাঁরা ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না।
মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রমতে, এ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে ময়মনসিংহে অবস্থিত জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ)। আর এসব প্রশ্নপত্র ছাপা হয় বিজি প্রেস থেকে। তাই সেখান থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে কি না, সেটিও সন্দেহের মধ্যে রাখা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, অতিরিক্ত সচিব এস এম আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গতকাল দিনভর বিজি প্রেসে তদন্তকাজ করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন কোচিং সেন্টারও প্রশ্নপত্র ফাঁস করছে বলে মনে করছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, তাঁরা ফাঁসের উৎসের দিকে বেশি নজর দিচ্ছেন। যাতে ভবিষ্যতে এর প্রতিকার করা যায়।
মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, গতবারও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছিল।
তখন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি পরীক্ষার জন্য একাধিক সেটে প্রশ্নপত্র ছাপার সুপারিশ করে। কিন্তু সেই সুপারিশ আমলে নেওয়া হয়নি। এবারও প্রতিটি বিষয়ে মাত্র এক সেট প্রশ্নপত্র ছাপা হয়েছে।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ও উদ্বিগ্ন।
শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল বেলা আড়াইটায় নিজ মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা বিব্রত ও উদ্বিগ্ন। তবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
মন্ত্রী বলেন, ‘সীমিত আকারে হয়তো প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে।
কিন্তু তদন্ত ছাড়া তো আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না। ’
পরে রাতে প্রথম আলোকে মন্ত্রী বলেন, তদন্তে যদি ফাঁসের বিষয়টি প্রমাণিত হয়, তাহলে সেভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি দেখা যায়, কোনো নির্দিষ্ট এলাকার শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তখন সেভাবেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
২০ নভেম্বর গণিত বিষয়ের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। এর মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় মোট শিক্ষার্থী ২৬ লাখ ৩৫ হাজার ৪০৬ জন এবং ইবতেদায়িতে পরীক্ষার্থী তিন লাখ ১৪ হাজার ৭৮৭ জন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।