আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পেট্রল ঢেলে বাসে আগুন

রাজধানীর শাহবাগ শিশুপার্কের সামনে গতকাল সন্ধ্যায় যাত্রীবোঝাই বাসে পেট্রলবোমা হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বিধ্বংসী পেট্রলবোমা চলন্ত বাসের ভেতর বিস্ফোরণ ঘটলে মুহূর্তেই আগুন ধরে যায়। আগুনে জ্বলতে থাকা বাসের ভেতর আটকে পড়েন বাসের ৪০ যাত্রী। তাদের প্রত্যেককে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও মারাত্দক অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন চার নারী ও শিশুসহ ২০ যাত্রী। আহত এসব যাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তাদের মধ্যে ছয়জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে। অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা, ব্যাংক কর্মকর্তা, আইনজীবী, সাংবাদিক, ঢাবি শিক্ষার্থী ও পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। তাদের অধিকাংশই মিরপুর এলাকার বাসিন্দা।

বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার এসব মানুষ কাজ শেষে নিজ নিজ ঘরে ফিরছিলেন বিহঙ্গ পরিবহনের মিরপুরগামী বাসে (ঢাকা-মেট্রো-ব-১১-৩৪৫৬) চড়ে। কিন্তু বাসে চড়ে তারা বেশি দূর এগুতে পারেননি।

বাসটি সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় মৎস্যভবন পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পেট্রলবোমা হামলার শিকার হয় বাসটি। ঘরে ফিরতে উদগ্রীব এসব যাত্রী এখন হাসপাতালে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে দেহের ৯০ শতাংশ পুড়েছে এমন ব্যক্তিও রয়েছেন, সবচেয়ে কম আহত যিনি তার দেহেরও ১৫ শতাংশ পুড়েছে। আহত ছয়জনের অবস্থা গুরুতর। ১৮ দলের ডাকা অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দুই দিনে যাত্রীশূন্য বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলেও তৃতীয় দিনের শেষ বেলায় যাত্রীবোঝাই বাসে পেট্রলবোমা হামলার ঘটনা ঘটল।

এটি স্মরণকালের সবচেয়ে বড় নাশকতার ঘটনা বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার শিবলী নোমান জানান, অবরোধ সমর্থকরাই বাসে বোমা হামলা চালিয়েছে। দুর্বৃত্তদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ওই বাসে একটি শক্তিশালী পেট্রলবোমা ছোড়া হয়েছিল, যা থেকে এই আগুনের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, আগুনে পুড়তে থাকা বাসের ভেতর আটকেপড়া যাত্রীরা বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকেন।

তাদের আর্তচিৎকারে আশপাশ এলাকার মানুষ বাসটির দিকে ছুটতে থাকে। এ সময় যাত্রীদের অনেকেই জানালা দিয়ে বাইরে লাফিয়ে প্রাণ রক্ষা করার চেষ্টা করেন। আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা বাসের ভেতর এ সময় যাত্রীদের ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। নারী ও শিশু যাত্রীরা এ সময় অসহায়ের মতো কান্না করতে থাকেন। যাত্রীদের বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার আর দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা আগুনের কারণে বিভীষিকাময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

যাত্রীদের গগনবিদারী চিৎকারে আশপাশের লোকজন, টং দোকানদার, পথচারী, টহল পুলিশ ও র‌্যাব ঘটনাস্থলে পেঁৗছে আগুনের ভেতর আটকেপড়া যাত্রীদের উদ্ধার করতে থাকে। এর পর তাদের একে একে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। বাসের অগ্নিদগ্ধ দম্পতি মাহবুব ও মাসুমা জানান, বিহঙ্গ পরিবহনের বাসটি মিরপুরের দিকে যাচ্ছিল। মৎস্য ভবনের কাছে বাসটি আসামাত্র পেছনে আগুন দেখতে পান তারা। বাসটি আগুন নিয়েই রমনা পার্কের অস্তাচল গেট পর্যন্ত আসে।

এর মধ্যে যাত্রীরা যেভাবে পেরেছেন নেমে পড়তে থাকেন বলে মাহবুব জানান। আহতদের মধ্যে চারজন নারী রয়েছেন। বাসের আহত যাত্রী মাসুদ জানান, শাহবাগ শিশুপার্কের সামনে তারা হঠাৎ করেই বাসে আগুন দেখতে পান। সেই আগুন ক্রমশ ভেতরের দিকে ছাদে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার লাইটপোস্ট ভেঙে রোড ডিভাইডারের ওপর উঠে যায়।

তবে কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন কিনা তা তাৎক্ষণিকভাবে তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি। অপর এক যাত্রী জানান, বাসের পেছনে দরজার সামনে বিকট শব্দ হয় এবং আগুন ধরে যায়। বাসটির গেটে আগুন দেওয়ায় ভেতরে যাত্রীরা আটকা পড়েন। দগ্ধ বাসযাত্রীদের মধ্যে রয়েছেন একুশে টিভির মুক্তখবর অনুষ্ঠানের শিশু সাংবাদিক সুস্মিতা সেন (১৭) ও তার মা গীতা সেন (৪৫)। অগ্নিদগ্ধ অন্যরা হলেন- রূপালী ব্যাংকের মাসুমা আকতার (২৫) ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শফিকুল ইসলাম (৩৭), সরকারি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন মৃধা (৪০), আইনজীবী খোদেজা নাসরিন (৪৩), পুলিশ কনস্টেবল নুরুন্নবী (৪৫), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র অহিদুর রহমান বাবু (২৫), বাসচালক মো. মাহবুব হোসেন (২৭), তার সহকারী হাফিজুল ইসলাম (২২), কাঁচামাল ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন (৪০), শামীম (২৪), রিয়াদ (২২), নাহিদ (২২), রবিন, আবদুর রাজ্জাক ও রাহাজুল।

আহত বাকি দুজনের নাম জানা যায়নি। আহতদের বিশেষ ব্যবস্থায় চিকিৎসা দেওয়ায় সেখানে সাংবাদিকদেরও ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা মাসুমা সাংবাদিকদের বলেন, বিহঙ্গ পরিবহনের বাসটি মিরপুরের দিকে যাচ্ছিল। মৎস্য ভবনের কাছে বাসটি আসামাত্র পেছনে আগুন দেখতে পান তারা। বাসটি আগুন নিয়েই রমনা পার্কের অস্তাচল গেট পর্যন্ত আসে।

খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে যাত্রীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় বলে শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এম এ জলিল জানিয়েছেন। রাজধানীতে গাড়িতে অগ্নিসংযোগে আহত এক টেম্পোচালক গত বুধবার মধ্যরাতে মারা গেছেন। হাতবোমায় আহত এক নারীও ওই দিন মারা যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বুধবার চানখাঁরপুলে হাতবোমায় নয়জন আহত হয়েছেন, টিকাটুলিতে গাড়িতে ছোড়া বোমায় আহত হন এক বাসচালক। এদিকে অবরোধ কর্মসূচির তৃতীয় দিন গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডি ও পুরান ঢাকায় পুলিশের সঙ্গে ছাত্রশিবির কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে।

উভয় স্থানেই পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সন্ধ্যায় ঢাকায় নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূতের গুলশানের বাসার সামনে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। এর বাইরেও নগরীর বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল, ককটেল বিস্ফোরণ ও যানবাহনে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে অবরোধকারীরা। এসব ঘটনায় পথচারী বাসযাত্রীসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। সহিংসতাকালে সূত্রাপুর থেকে ৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের প্রত্যেককে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার সকালে যাত্রাবাড়ীর মীরহাজিরবাগে অভিযান চালিয়ে ১৭টি তাজা ককটেল এবং ২টি হাতবোমা উদ্ধার করে র‌্যাব।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।