আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উলফার টাকায় গড়ে উঠেছে প্রথম আলো ডেইলি স্টার !

যাদের হাতে দলীল প্রমাণ কম তারা গালি দেয় বেশি

একটি জাতি গঠনে গণমাধ্যম রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আবার সেই একই গণমাধ্যম কালো শক্তির ইন্ধনে কিংবা নিজের স্বার্থ হাসিলে উঠতে পারে ওই জাতির জন্য ধ্বংসাÍক অস্ত্র। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় মিডিয়া গ্রুপ ট্রান্সক্রাফ্ট লিমিটেডের প্রকাশনা দৈনিক প্রথম আলো, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার, পাকি আনন্দধারা ও সাপ্তাহিক ২০০০ প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট আসামের (উলফা) অর্থায়নে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় মিডিয়া গ্রুপ। প্রসঙ্গত ১৯৯০ সালে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে উলফাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ভারত।

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায়ও উলফার নাম রয়েছে। বাংলাদেশ নিয়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়েই এগুচ্ছে উলফা। এ লক্ষেই সংগঠনটি বাংলাদেশের মিডিয়ায় টাকা ঢালেছে। প্রথম আলো-ডেইলি স্টার গ্রুপে চারটি পত্রিকা ছাড়াও রয়েছে একটি রেডিও স্টেশন। আয়না ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (এবিসি রেডিও) নামে ওই এফএম রেডিওটিও যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার গ্রুপের মালিক লতিফুর রহমান। তিনি নব্বইয়ের দশকে দেউলিয়ায় পরিণত হন। আর্থিক অনটনে ওই সময় তার পৈত্রিক সম্পত্তি চাঁদপুরে অবস্থিত ডব্লিউ রহমান জুট মিল বন্ধ করতে বাধ্য হন। বেতন-ভাতা না দিয়েই প্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে চাঁদপুরের আদালতে একাধিক মামলা হয়।

অন্যদিকে ডব্লিউ রহমান জুট মিল বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ ঋণখেলাপির তালিকায় স্থান পায়। এমন সংকটাপন্ন অবস্থায় স্ত্রীর ভাই উলফা নেতা অনুপ চেটিয়া তার প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ শুরু করেন। অবশ্য এ বিষয়ে আগেই দুজনের সাথে আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছিল। অল্পসময়ের মধ্যে লতিফুর রহমানকে কয়েক মিলিয়ন ডলার দেন অনুপ। অর্থ পেয়ে লতিফুর গড়ে তোলেন ট্রান্সকম গ্রুপ।

বাংলাদেশে বিশ্বখ্যাত নেসলে ব্রান্ডের একক বাজারজাতকারী হন। তরতরিয়ে উপরে উঠতে থাকেন তিনি। নব্বইয়ের দশকে সাংবাদিক এসএম আলী একটি ইংরেজি দৈনিক করার উদ্যোগ নেন। উলফার নির্দেশ অনুযায়ী লতিফুর রহমান ওই পত্রিকার শেয়ার নেন। কারণ ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য আসামকে আলাদা করার জন্য পার্শ্ববতী দেশের মিডিয়াকে কাজে লাগাতে চায় উলফা।

এসএম আলী অল্পসময়ের মধ্যে ডেইলি স্টারকে একটি জনপ্রিয় ইংরেজি পত্রিকায় পরিণত করেন। বাংলাদেশ অবজারভার, বাংলাদেশ টাইমস (অধুনালুপ্ত), নিউ নেশন, মরনিং সান (অধুনালুপ্ত) ও ফিনানসিয়াল এক্সপ্রেসকে ডিঙিয়ে ডেইলি স্টার উঠে যায় শীর্ষে। এসএম আলীর আকস্মিক মৃত্যুতে পত্রিকায় নিজের শতভাগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সুযোগ পান লতিফুর রহমান। এই সুযোগে তিনি সম্পাদক হিসেবে মাহফুজ আনামকে নিয়োগ দেন। যিনি এসএম আলীর শেয়ার তার উত্তরাধিকারদের কাছ থেকে সুকৌশলে নিজের করে নেন।

সাংবাদিক মাহফুজ আনামের নেতৃত্বে ডেইলি স্টার চলে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তাদের বেপরোয়া সাংবাদিকতায় সরকারও অসহায় হয়ে পড়ে কখনো কখনো। অন্যদিকে উলফার স্বার্থরায় চলে নানা তৎপরতা। অনুপ চেটিয়া বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হওয়ার পর লতিফুর রহমানের সাথে উলফার সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। তিনি তার প্রতিষ্ঠানে উলফার গোপন শেয়ার অস্বীকার করেন।

এই বিরোধের জেরে লতিফুর রহমানের মেয়ে শাজনীন রহমান গুলশানে তার নিজবাড়িতে খুন হন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। কিন্তু তার আগেই উলফার কাছ থেকে বড় অংকের অর্থ নেন লতিফুর। ওই অর্থ দিয়ে ১৯৯৭ সালে তিনি একটি বাংলা দৈনিক পত্রিকা করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম আলো ঢাকার শীর্ষ পর্যায়ের সাংবাদিকদের উচ্চ বেতনে নিয়োগ দেয়। সম্পাদক হিসেবে লতিফুর রহমান বেছে নেন আরেক ডায়নামিক সাংবাদিক মতিউর রহমানকে।

যিনি অল্প সময়ের মধ্যে প্রথম আলোকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যান। পরে ওই গ্রুপ থেকে দুটি ম্যাগাজিনও প্রকাশ শুরু হয়। কয়েক বছরের মধ্যে ট্রান্সকম গ্রুপ বাংলাদেশে পেপসি, ফিলিপসের মালিকানাসহ বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। দেশের মিডিয়ার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণকে অন্যান্য ব্যবসার কাজে ব্যবহার করেছেন লতিফুর রহমান। তার বেশকিছু ব্যবসা আমদানি নির্ভর হওয়ায় এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তিনি বিপুল অংকের রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন।

রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আনা বেশ কয়েকটি পণ্য শুল্ক কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় আটকও করেছিল। কিন্তু মিডিয়ার আধিপত্য কাজে লাগিয়ে লতিফুর পার পান। ২০০৭ সালে ওয়ান বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও ওয়ানইলেভেন সৃষ্টিতে লতিফুর রহমান, মতিউর রহমান ও মাহফুজ আনামের ভূমিকা রয়েছে। ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ পান ডেইলি স্টারের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সৈয়দ ফাহিম মোনায়েম। ওই সময় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) লতিফুর রহমানকে তার সম্পদের বিবরণী চেয়ে নোটিস ইস্যু করে।

কিন্তু দ্রুত সময়ের মধ্যে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়। তখন সম্পদের বিবরণীতে তথ্য গোপনসহ নানা ঠুনকো অজুহাতে দেশের বহু ব্যবসায়ীকে হেনস্তা হতে হয়। কিন্তু লতিফুর রহমান ছিলেন স্পর্শের বাইরে। উলফার কাছ থেকে ফান্ড পেয়ে লতিফুর রহমান বিভিন্ন দেশে ব্যাংক হিসাব খোলেন। কেএফসি ও পিজা হাটের ব্যবসার আড়ালে তিনি বিদেশে অর্থ পাঁচার করেন।

যদিও এ সংক্রান্ত কাগজপত্রে দেখানো হয়, বিদেশি প্রতিষ্ঠান কেএফসি ও পিজা হাটকে তাদের শাখা পরিচালনা বাবদ অর্থ দেওয়া হচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, কেএফসি ও পিজা হাটের মূল প্রতিষ্ঠানকে তাদের প্রাপ্যের অতিরিক্ত অর্থ পাঠানো হয়। যা পরবর্তীতে লতিফুর রহমানের বিদেশি ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। যমুনা বহুমুখী সেতুর (বঙ্গবন্ধু সেতু) ফাটল নিয়ে দেশটির বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এই ফাটলের মূল কারণ ততোটা প্রকাশ পায়নি।

যমুনা সেতুর ফাটলের মূল কারণ একটি নির্দিষ্ট ব্রান্ডের সিমেন্টের ব্যবহার। পোর্টল্যান্ড গ্রে সিমেন্ট ব্যবহারের কারণেই যমুনায় ফাটল দেখা দিয়েছে। ওই সিমেন্ট উৎপাদন ও বাজারজাত হচ্ছে ট্রান্স গ্রুপ'র একটি প্রতিষ্ঠানে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পোর্টল্যান্ড গ্রে সিমেন্ট অত্যন্ত নিম্মমানের। যমুনা বহুমুখী সেতুর মতো একটি বড় প্রজেক্টে এ ধরনের সিমেন্ট ব্যবহারের সিদ্ধান্ত ছিল আত্মঘাতী।

বিস্ময়কর ব্যাপার হলো নিম্মমানের সিমেন্ট সরবরাহ অতঃপর সেতুর ফাটলের পরও ট্রান্সকম গ্রুপের লতিফুর রহমানের বিরুদ্ধে কেউ টুশব্দটিও করেননি। অবশ্য সঙ্গত কারণেই কেউ মুখ খুলেননি। দেশের মিডিয়া মোগল যার অধীনে কিনা শীর্ষস্থানীয় দুটি দৈনিকসহ বেশকয়েকটি গনমাধ্যম, তার বিরুদ্ধে কথা বলার ধৃষ্টতা কেউ দেখাতে পারেননি। ট্রান্সকম গ্রুপ তাদের একচ্ছত্র প্রভাব ও ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে শীর্ষস্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস কিংবা কোনঠাসা করে রাখার কৌশল নেয়। এক্ষেত্রে প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয় প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারকে।

এই দুটি পত্রিকার অপপ্রচারে বেশকয়েকটি ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে। যে প্রতিষ্ঠানই ট্রান্সকমের প্রতিদ্বন্দ্বী সেই প্রতিষ্ঠানকেই টার্গেট করা হয়। [সুনীতা পাল, ভারতীয় সাংবাদিক ও বিশ্লেষক, আমেরিকান ক্রোনিকল, দি গ্লোবাল পলিটিসিয়ান ও এশিয়ান ট্রিবিউনের নিয়মিত লেখক] Click This Link


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।