ভারত তার উলফা ‘জঙ্গি’দের দমন শুরু করেছে এবং না চাইলেও সেই ‘যুদ্ধ’ এখন বাংলাদেশের ওপরে এসে পড়েছে। নিরাপত্তার জন্য এদেশে আত্মগোপন করে থাকা উলফা নেতাদের ভারতের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে বাংলাদেশ সরকার যদি নীতি পরিবর্তন না করে তবে দেশের অবকাঠামো এবং যোগাযোগ স্থাপনাগুলো উলফার আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আসামের বাংলাভাষী যারা একসময় এদেশে বসবাসের জন্য চলে এসেছিলেন তারাও এই হামলার শিকার হতে পারেন। ‘জঙ্গি’ নেতারা তাদের এই হুমকি সম্পর্কে কোনো রাখঢাক রাখছে না। গত সপ্তাহে বেশ কয়েকটি পত্রিকা উলফার সেনা শাখার প্রধান পরেশ বড়-য়ার উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, যদি তাদের ‘স্বাধীনতার লড়াই’য়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ চলমান নীতি পরিবর্তন না করে তবে ‘ভয়াবহ পরিণতি’ অপেক্ষা করছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছেন, তাদের যেকোনো ‘চ্যালেঞ্জ’ মোকাবিলা করতে সক্ষম বাংলাদেশ। তার এই বক্তব্যে দেশের জনগণ কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করতেই পারেন যদি না সরকার সরাসরি উলফার বিরুদ্ধে ভারতের কৌশলের অংশ না হয়ে থাকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আসামের অধিবাসীদের ওপরে কোনো ধরনের ‘হুমকি’ বিষয়টি সরকার কতটুকু খতিয়ে দেখছেন। যেখানে পরেশ বড়-য়া বলেছেন, খুব শিগগিরই বাংলাদেশ তার ‘অন্যায় কাজের’ ফল ভোগ করবে। পরিণতি নিয়ে উলফা নেতাদের হুমকি এবং নিরাপত্তার জন্য শেখ হাসিনার দিল্লি সফর পিছিয়ে দেয়া সত্ত্বেও পুলিশের আইজি গত সপ্তাহে বলেছেন দেশের ওপরে কোনো ধরনের হুমকির কোনো প্রমাণ এখনো তারা পাননি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ বিষয়ে সরকার দ্বিমুখী আচরণ করছে। একদিকে সাহারা খাতুনসহ সরকারের নেতৃস্থানীয় নীতিনির্ধারকরা বলছেন উলফা নেতাদের গ্রেফতার এবং ভারতের কাছে হস্তান্তরে সরকারের কোনো হাত নেই। তবে প্রশ্ন উঠতেই পারে উলফা চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়াসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেফতার কীভাবে সরকারের নজর এড়িয়ে সম্ভব হলো। এক. হতে পারে ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থার গোয়েন্দারা দেশের সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে একত্রে এ কাজ করেছেন অথবা সরকার বিরূপ প্রতিক্রিয়া এড়াতে ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটনাপ্রবাহ গোপন করছেন।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতের উত্তর-পূর্ব এ অঞ্চলটি দেশের লাখ লাখ উদ্বাস্তুকে আশ্রয় ও খাদ্য দিয়ে সাহায্য করেছিল।
আসাম ও ত্রিপুরার জনগণের সেই নিস্বার্থ সাহায্যের কথাও উলফা নেতারা বারবার তাদের বক্তব্যে এনেছেন। কিন্তু দিল্লি তার ‘জঙ্গিদমন’ যুদ্ধ এখন বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে এবং সরকার দেশের নিরাপত্তার বিষয়টি একেবারেই না ভেবে তাদের প্রতি বিশ্বস্ততা বজায় রেখে চলেছে।
এখানে ভারত একসঙ্গে দুটি কাজ করছে। প্রথমত. তাদের নিরাপত্তা গোয়েন্দাদের দিয়ে উলফা নেতাদের গ্রেফতার করছে এবং একইসঙ্গে তাদের উসকে দিচ্ছে বাংলাদেশের ভেতরে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর জন্য। তাদের বন্দুক বাংলাদেশের ঘাড়ে রেখে চালানোয় একইসঙ্গে বাংলাদেশের উদীয়মান অর্থনীতি এবং উলফা দুটিই শেষ হয়ে যাবে।
সরকার হয়তো হিসাব-নিকাশ করছে এভাবে ভারতের সঙ্গে যৌথঅভিযান করতে করতে একসময় ভারতীয় সেনাদের এদেশে নিয়ে আসা সম্ভব হবে উলফার সকল ঘাঁটি ধ্বংসের জন্য।
এদিকে সরকার তার ব্যক্তিগত আক্রোশ চরিতার্থ করতে বিরোধীদলকে নির্মূল করার পেছনে সময় দিচ্ছে তাতে ঘটনাপঞ্জি ক্রমেই শোচনীয় হচ্ছে। রাজনৈতিক মোহে আচ্ছন্ন কিছু নেতার কারণে নুতন কোনো ‘যুদ্ধের’ সম্মুখীন যদি দেশের জনগণকে হতে হয় সেক্ষেত্রে শুধু দেশের সাধারণ মানুষকেই এর ফল ভোগ করতে হবে।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।