বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...
এতোদিন দেখেছি ওসামা বিন লাদেন অজ্ঞাত স্থান থেকে ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে আমেরিকাকে হুশিয়ার করতো। বারাক ওবামার বাহিনীর হাতে লাদেন ধরাশায়ী হবার পর সেই কাজ এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন তার অনুসারীরা। আল কায়েদা স্টাইলে বিশ্বের অনেক সন্ত্রাসী সংগঠন একই রকম ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তাদের নানান কর্মসূচি জানান দেয়। কখনো বা তারা কোনো গুপ্ত গামলা করার পর এভাবে অজ্ঞাত স্থান থেকে সেই হামলার দায় স্বীকার করে। গত সপ্তাহে বিএনপি নের্তৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ৭১ ঘণ্টা অবরোধের সময় গাড়িতে আগুন লাগিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা, রেলগাড়িতে আগুন লাগানো, ট্রাক, সিএনজি থামিয়ে আগুন দিয়ে পোড়ানো এবং যাত্রীবাহী বাসের উপর পেট্রোল বোমা ছুড়ে আগুনে সাধারণ মানুষ পুড়িয়ে দেবার ঘটনা ঘটেছিল।
তখন কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলে এবং বিভিন্ন পত্রিকা অফিসে সেই সব হামলার দায় দায়িত্ব স্বীকার করে জামায়াত শিবিরের কোনো কোনরো মহল সেই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছিল। যেটি সাধারণত চরম সন্ত্রাসী দলের পক্ষেই এরকম হামলার পরে দায়িত্ব স্বীকারের নজির আমরা দেখতে পাই।
আর আজ দুপুরে বিএনপি'র যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমদ অজ্ঞাত স্থান থেকে কয়েকটি টেলিভিশনে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় দাবী করেছেন, দমন-পীড়ন, হত্যা-নির্যাতন এবং মামলা-হামলা চলমান আন্দোলনকে আরও বেগবান করবে। এখনো সময় আছে, সরকারকে আহ্বান জানাব, গ্রেপ্তারকৃত নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিন। সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করুন।
নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নিন। চলমান সংকট সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানজনকভাবে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বিএনপি'র যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমদ অজ্ঞাত স্থান থেকে টেলিভিশনে ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে কি আল কায়েদার নীতি অনুসরণ করলেন? গত সপ্তাহে জামায়াত-শিবির যেটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে করেছিল, আজ সেটি বিএনপি'র যুগ্ম মহাসচিব জনাব সালাহউদ্দিন আহমদ অজ্ঞাত স্থান থেকে ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে কি প্রমাণ করতে চাইছেন?
তাহলে কি বিএনপি এখন আর প্রকাশ্যে রাজনীতি করার মত কোনো রাজনৈতিক দল নয়? আল কায়েদার মত আন্ডারগ্রাইন্ড রাজনীতিই বেছে নিল বিএনপি? ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বন্দুকের নলের মাধ্যমে ক্ষমতা পেয়েছিল মেজর জিয়া। পরে কিছু রাজনীতিবিদদের পটিয়ে, কিছু বুদ্ধিজীবীদের ধার করে একটি রাজনৈতিক দল দাঁড় করিয়েছিলেন। যেটির নাম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল।
সংক্ষেপে বিএনপি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত বিএনপি বা তাদের দোসররা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল। তারপর ১৯৯১ সালের ১৯ মার্চ থেকে ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়া বিএনপি'র নের্তৃত্ব রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল। তারপর ২০০১ থেকে ২০০৭ সালের ১/১১ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়ার নের্তৃত্ব বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল। তিন বার বিএনপি বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে দেশ শাসন করেছে।
তিন বারে মোট ৬ + ৫ + ৫ = ১৬ বছর তারা দেশ শাসন করেছে। এছাড়া ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৮ থেকে ২০১৩ মোট ৫ + ৫ = ১০ বছর বিএনপি জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করেছে। বিএনপি'র প্রতিষ্ঠাকাল যদি ১৯৭৮ ধরা হয়, তাহলে দলটির এখন রাজনৈতিক বয়স ৩৫ বছর। যার মধ্যে ১৬ + ১০ = ২৬ বছর ক্ষমতা এবং ক্ষমতার অংশিদার ছিল বিএনপি। মাত্র ৯ বছর বিএনপি ক্ষমতার বাইরে ছিল।
এখনো বিএনপি সংসদের প্রধান বিরোধীদল হিসেবে ক্ষমতার অংশদারী একটি দল। সেই দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা কিভাবে অজ্ঞাত স্থান থেকে টেলিভিশনে ভিডিও বার্তা পাঠান?
তাহলে কি বিএনপি এখন আর প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে চাইছে না? মহামান্য আদালতের রায়ের কারণে জামায়াতে ইসলামী এখন একটি নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল। সেই দলের অনেক বড় বড় নেতা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী মামলায় ফাঁসির রায়ে কারাগারে বন্দী। বর্তমান ব্যবস্থায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী'র নির্বাচন করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু বিএনপি তো দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল।
জামায়াতের খপ্পরে পরে দলটি কি শেষ পর্যন্ত নিশ্চিন্থ হতে চললো!!! যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বিএনপি এতোদিন প্রকাশ্যে কোনো বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তারা আবার ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কি হবে, তা নিয়েও কিএনপি এখনো ধোয়াশার মধ্যে রয়েছে। তার মধ্যে অজ্ঞাত স্থান থেকে টেলিভিশন চ্যানেলে ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে বিএনপি'র মত একটি বড় রাজনৈতিক দল কি আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতি করার ইচ্ছা জানিয়ে দিল?
যদি বিএনপি সত্যি সত্যি আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যায়, তাহলে একথা এখন প্রায় নিশ্চিত, জনগণের উপর বিএনপি'র আর কোনো আস্থা নেই। দলটি জামায়াতের তোষামোদ করতে করতে নিজেই জনবিচ্ছিন্ন একটি সন্ত্রাসী দলের দিকে ভিড়ে যাচ্ছে। এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে বিএনপি'র রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটে গেল! এমনতি চলমান আন্দোলনের নামে বিএনপি এখন যে বিচ্ছিন্ন সহিংস হামলার রাজনীতি করে যাচ্ছে, তা জনগণের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি করেছে।
হরতাল অবরোধের মত রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে নিরীহ সাধারণ মানুষ পুড়িয়ে মারার রাজনীতি তো সন্ত্রাসী সংগঠনের পক্ষেই শোভা পায়। আর যদি এখন তারা অজ্ঞাত স্থান থেকে এভাবে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে রাজনীতি করতে চায়, তাহলে বিএনপিকে আর রাজনৈতিক দল বলা যাবে না। যদি তারা সত্যিই সেদিকে চলে যায়, তাহলে ধরে নিতে হবে বিএনপি'র রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটেছে। সেখান থেকে একটি সন্ত্রাসী দলে রূপ নিয়ে তারা জনবিচ্ছিন্ন সহিংস আন্দোলন করছে। যা মোটেও জনগণের নামে রাজনীতি করা বোঝায় না।
যা সরাসরি সন্ত্রাসী গোপন বাহিনীর সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গেই মানানসই।
আমরা আশা করব, বিএনপি'র নের্তৃত্বের শীঘ্রই শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। আন্ডারগ্রাউন্ড পলিটিক্স বাদ দিয়ে তারা জনগণের কাতারে এসে জনগণের রাজনীতি করবেন। গ্রেফতারের ভয়ে লুকিয়ে না থেকে রাজপথে অহিংস জনসস্পৃক্ত রাজনীতির মূল ধারায় ফিরে আসবেন। নির্বাচনের ধারায় ফিরে আসবেন।
রাষ্ট্রীয় আইন কানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন। জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির সুষ্ঠু ধারা অব্যাহত রাখবেন। জনগণের সঙ্গে দূরত্ব না বাড়িয়ে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে বিএনপি যতো দ্রুত স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফিরে আসবে, ততোই দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্থির নিঃশ্বাস পড়বে। আমরা জ্বালাও পোড়াও রাজনীতি দেখতে চাই না। আমরা পেপ্রোল বোমার রাজনীতি দেখতে চাই না।
আমরা যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ার সহিংস রাজনীতিও দেখতে চাই না। আমরা রেললাইন খুলে ফেলে দেশের সম্পদ নষ্ট করার রাজনীতিও দেখতে চাই না। যদি বিএনপি জনগণের সেবা করার মানসিকতা নিয়ে সুষ্ঠু রাজনীতির ধারায় ফিরে এসে সত্যি সত্যিই জনগণের বন্ধু হতে পারে, তাহলে ভোটের রাজনীতিতে সাধারণ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে বিএনপিকে আবারো হয়তোক্ষমতায় আনবে। কিন্তু এভাবে ভুল রাজনীতির মাধ্যমে ভুল নের্তৃত্বের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী বড় রাজনৈতিক দল আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবার অর্থই হল, জনগণের প্রতি তাদের আর কোনো আস্থা নেই। তারা এখন দিশেহারা হয়ে ভুল পথে চলে যাচ্ছে।
আমরা চাই, বিএনপি'র নের্তৃত্বে শীঘ্রই শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। অজ্ঞাত স্থানের পরবর্তে তারা জনগণের সামনে প্রকাশ্যে রাজনীতি করবেন। প্রকাশ্যে সভা সমাবেশ করবেন। প্রকাশ্যে মিটিং মিছিল করবেন। প্রকাশে জনগণের দাবী নিয়ে কথা বলবেন।
নইলে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাওয়া কোনো সন্ত্রাসী দলকে জনগণ কখনোই গ্রহন করবে না। জনগণকে হয়তো ভয় ভীতি দেখিয়ে, গুপ্ত হামলা করে, পুড়িয়ে মেরে উল্লাস করা যাবে। তাতে জনগণ থেকে বিএনপি আরো জনবিচ্ছিন্ন দলে পরিনত হবে। বিএনপি'র শুভ বুদ্ধির উদয় হবে বলেই আমি এখনো দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।