আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সুশীল সমাধান অকার্যকর , দরকার গণমুখী রাজনীতির উত্থান

যদি ঠাঁই দিলে তবে কেন আজ হৃদয়ে দিলে না প্রেমের নৈবদ্য

রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিপরীতে হাজির হচ্ছে বিরোধী সন্ত্রাস! আন্দোলনের নামে ককটেল আর পেট্রোল মেরে সাধারণ মানুষ পুড়িয়ে মারা বা আহত করা আন্দোলন নয়, এটা হত্যাকাণ্ড , বিরোধী দলীয় সন্ত্রাস, এই সন্ত্রাসের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই, এটা বন্ধ করার জন্য আন্দোলনকারীদের কাছে দাবি জানাই। একইরকমভাবে আন্দোলন দমনের নামে বিজিবি, পুলিশের নির্বিচার গুলি চালিয়ে বিরোধীদের আহত ও হত্যা করা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস! এই সন্ত্রাসেরও তীব্র প্রতিবাদ জানাই, এটা বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখন এমন জায়গায় ঠেকেছে লিবারেল রাজনীতির সুযোগ সঙ্কুচিত হয়ে আসছে, দুই পক্ষই সহিংস হয়ে উঠেছে, এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দুষছে , রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিপরীতে হাজির হচ্ছে বিরোধী সন্ত্রাস! এক্ষেত্রে সমাজের নানান শক্তি ও শ্রেণীর দলবাজি সমাজে অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলছে! আমাদের সুস্পষ্ট দাবি উভয় সন্ত্রাস এর নিন্দা ও প্রতিবাদের জন্য সিভিল সোসাইটিকে মুভ করতে হবে, কিন্তু সেই সিভিলরাও দলবাজিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে পড়েছেন , গণমুখী রাজনীতির অনুপস্থিতি বাংলাদেশকে ঠেলে দিচ্ছে মহা সংকটে ! বাসে আগুন দিয়ে বার্ন করায় মিডিয়া বিরোধী দলের নিন্দা জানালেও , একইরকমভাবে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে কুমিল্লায়, সিরাজগঞ্জ সহ ঢাকার বাইরে নিহতদের জন্য রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মিডিয়ার সোচ্চার ভূমিকা নাই। দুই বিবদমান জোটের উভয়ের হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ আবশ্যক, আমাদের উচিত নয় কারো পক্ষ নিয়ে এক পক্ষের সহিংসতার প্রতিবাদ করা কিন্তু অন্য পক্ষের ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকা। আমি মনে করি দুই পক্ষের হানাহানির মাঝে দাঁড়িয়ে পক্ষ নেয়া হবে অনুচিত, মানবতা কিংবা সহানুভূতি সার্বজনীন, এটার কোন পক্ষ নাই! রাষ্ট্রযন্ত্রের সন্ত্রাসের প্রতিবাদ না করে সুশীল আর বিশিষ্ট নাগরিক থাকার কোন সুযোগ নাই।

মোটা দাগে বাংলাদেশের সুশীল সমাজ এবার সুশীল থাকারও যোগ্যতা হারিয়েছেন, বাংলাদেশে এখন যে সহিংসতা চলছে তার দায়ভার দুই রাজনৈতিক জোটের, ককটেল আর পেট্রোল নিক্ষেপে যেমন হতাহত হচ্ছেন সাধারণ নাগরিকরা তেমনি ট্রিগার হ্যাপি পুলিশের নির্বিচার গুলিতেও হতাহত হচ্ছেন বিরোধী দলের নাগরিকরা। তো আপনি যদি সুশীলও থাকতে চান তাইলে আপনাকে দুই ধরণের সন্ত্রাসেরই নিন্দা ও প্রতিবাদ করতে হবে। রাষ্ট্রযন্ত্রের সন্ত্রাসের প্রতিবাদ না করে সুশীল আর বিশিষ্ট নাগরিক থাকার কোন সুযোগ নাই। এবারের ককটেল নির্ভর আন্দোলন যেমন নজিরবিহীন তেমনি সভা সমাবেশ মিছিলে দেখা মাত্র পুলিশের নির্বিচার গুলিও (এমনকি গাজীপুরে বিরোধী দলের মিছিল মনে করে সরকারী দলের মিছিলেও পুলিশ গুলি করে)নজিরবিহীন। এরকম পরিস্থিতিতে দেশে দরকার ছিল একটা শক্তিশালী সিভিল সোসাইটি যারা দুই পক্ষের সহিংসতার মাঝে দাঁড়িয়ে উভয় পক্ষের সন্ত্রাস ও নিপীড়নের প্রতিবাদ করত, প্রেসার ক্রিয়েট করতে পারত, কিন্তু তা সম্ভব হয় নাই কথিত সুশীলদের দলবাজির কারনে।

কিছু ইন্টেলেকচুয়াল রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও বিরোধী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদহীন আবার বাকি ইন্টেলেকচুয়ালরা বিরোধী দলের সহিংসতার তুমুল প্রতিবাদ করলেও রাষ্ট্রযন্ত্রের নির্মম নির্যাতন নিপীড়নের বিরুদ্ধে হয় চুপচাপ না হয় মৃদু প্রতিবাদেই ক্ষান্ত, এই যখন দেশের সুশীলদের অবস্থা তখন এসব কথিত বুদ্ধিজীবীদের সুশীল সমাজের সার্টিফিকেটও কেড়ে নেয়া উচিত, আর মিডিয়ার কথা নাই বা বললাম... এদেশে প্রচারযন্ত্র আছে, মিডিয়া নাই! বাইরের শক্তির অযাচিত হস্তক্ষেপ টকশো তে আবার দেখা যাচ্ছে কিছু সুশীল সাংবাদিক জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে বাংলাদেশে ব্লু হেলমেট নির্বাচন করার পক্ষে ওকালতি করছেন। এসব সুশীলরা সংঘাত নিরসনের নামে জাতিসঙ্ঘসহ বাইরের শক্তির অযাচিত হস্তক্ষেপকে এসেনশিয়ালাইজ করে দেশকে পুরাপুরি উপনিবেশে পরিণত করার কাজে লিপ্ত !তাদের একমাত্র যুক্তি এটা দুই বিবদমান রাজনৈতিক জোটের সংঘাত থেকে দেশকে বাঁচাবে, কিন্তু পরাশক্তির হস্তক্ষেপ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে পুরাপুরি ধসিয়ে দিয়ে দেশকে যে স্রেফ একটা পুতুল রাষ্ট্রে পরিণত করবে সে হুঁশ এসব দালাল এজেন্সির নাই, এদের আত্মা-মগজ এখনও উপনিবেশিক দাস বৈ আর কিছুই হয়ে উঠতে পারেনি! বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর গণবিচ্ছিন্নতা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সংঘাত মোকাবিলায় নিজেরা জনগণের উপর আস্থা না রেখে অযাচিতভাবে বিদেশি কূটনীতিবিদ ও জাতিসংঘের কাছে ধর্না দিতে হচ্ছে! পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে কূটনীতিবিদদের মাঝে চলছে প্রোটোকল ভেঙ্গে কে কত দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক কান গলা গলাতে পারে তার নষ্ট প্রতিযোগিতা, ভারত, আম্রিকা, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, থেকে শুরু করে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া , চীনের রাষ্ট্রদূত পর্যন্ত এই প্রতিযোগিতায় শামিল! বান কি মুনের ফোন ও চিঠি, জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ, আম্রিকা ও ভারতের প্রেসক্রিপশন ও খবরদারী এসব যে বাংলাদেশের উপর আঞ্চলিক আধিপত্য এবং সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ করে এদেশকে হাইতি, কঙ্গো বানাবে তা নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই, উল্টা গণবিরোধী বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ, বুর্জোয়া মিডিয়া বাইরের এই অবৈধ হস্তক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়ে নিজেদের বহিশক্তির গোলাম হিসেবে হাজির করছে। জনগণের উপর বিন্দুমাত্র আস্থা না রেখে এভাবে পরাশক্তির সেজদায় নিজেদের বিকিয়ে দিয়ে রাজনীতি করার কোন অধিকার এদেশের রাজনীতিবিদদের দেয়া হয় নাই। জনগণের তরফ থেকে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনীতির অভিমুখ হবে দুইটি- প্রথমত দুই বিবদমান পক্ষকে অবিলম্বে নিজেরাই দেশের অভ্যন্তরেই একটা গ্রহণযোগ্য সমাধানে আসতে বাধ্য করা এবং দ্বিতীয়ত রাজনৈতিক দলগুলার বিবাদের সুযোগে পরাশক্তির নিরঙ্কুশ আধিপত্য বিস্তারের যে কোন প্রচেষ্টা প্রতিহত করা। সুশীল সমাধান অকার্যকর দরকার গণমুখী রাজনীতি প্রথম আলোয় প্রকাশিত “চাই অহিংস নৈতিক শক্তির উত্থান” কলামে জনাব আলী রিয়াজ বলেন, “এ জন্য ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে।

তাদের অহিংস নৈতিক শক্তির চেয়ে বড় কোনো শক্তি নেই। তাদের মধ্য থেকেই এ দাবি সামনে রেখে সমবেত হতে হবে যে আমরা শান্তি চাই, আমরা ক্ষমতার লড়াইয়ে পড়ে আর মরতে চাই না। তাদের নৈতিক চাপ প্রয়োগ করা দরকার বিরোধীদের ওপরে যেমন, তেমনি সরকারি দলের ওপরেও। অহিংস নৈতিক শক্তির দরকার বাংলাদেশে, যা এর আগে এত বেশি করে আর কখনোই অনুভূত হয়নি”। – শ্রদ্ধেয় আলী রিয়াজ বর্তমান সহিংস রাজনীতির বিপরীতে জনগণের অহিংস নৈতিক শক্তির যে বিকাশ চান তা “আমরা শান্তি চাই” বলে কোটি বার চিৎকার করলেও এই কায়দায় শান্তি আসবে না, রাজনীতি সম্পর্কে যাদের গভীর আগ্রহ ও বিশ্লেষণ আছে তাঁরা এটা জানেন যে রাজনীতির মোকাবিলা পাল্টা রাজনীতি দিয়েই করতে হবে।

গণমুখী রাজনীতির বিকাশ ছাড়া বিদ্যমান সংকটের কোন স্থায়ী সমাধান নাই! বাংলাদেশের জনগণের তরফ থেকে গণমুখী রাজনীতির অভিমুখ হওয়া উচিত নয়া উপনিবেশবাদ , ইম্পেরিয়ালিজম এবং গ্লোবাল ক্যাপিটালিজম এর মোকাবিলার জন্য নতুন সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তির উত্থান। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে সমাজপরিবর্তনের রাজণৈতিক-সামাজিক শক্তিকে অবশ্যই গ্লোবাল ইম্পেরিয়ালিজম এবং গ্লোবাল ক্যাপিটালিজম এর দেশিয় এজেন্সির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। আরও সোজা কথায় বললে বাংলাদেশে চলমান ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যেমন আমাদের দাঁড়াতে হবে একইরকম ভাবে আম্রিকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও দাঁড়াতে হবে। তো এই বৈশ্বিক আধিপত্যবাদীদের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে যারা লড়বে তাদেরকেই রিয়াজ সাহেবরা অনিয়মতান্ত্রিক এবং ননলিবারেল বলে নিন্দা করবেন, নিয়মতান্রিকতা রক্ষা না করলে যে পরাশক্তির স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে! লিবারেল রাজনীতির স্কোপ না থাকলে দেশে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির অবসান হতে পারে এই আশঙ্কা থেকে বিপ্লবী রাজনীতি ঠেকানোর জন্য মজেনারা তৎপর, মার্কিন শুনানিতে তাই প্রতিফলিত হয়েছে, রাজনীতি যেন লিবারেল বুর্জোয়াদের হাতেই থাকে সেজন্যই এতো এতো মার্কিনী আর জাতিসঙ্ঘীয় তৎপরতা। অহিংসার নৈতিক শক্তি দরকার আছে, সমাজ আর রাষ্ট্র পরিচালনায় তার গুরুত্ব কেউ অস্বীকার করে না কিন্তু গণমুখী রাজনীতি বিবর্জিত কথিত লিবারেল অহিংস রাজনীতির বিপদ যত তাড়াতাড়ি আমরা বুঝতে পারব তত লাভ আমাদের, ভাসানির “অহিংসা ও বিপ্লব” নিবন্ধটা দেখা যেতে পারে, লিংক পাবেন Click This Link


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।