জন গির্জার কাছাকাছি চলে এসেছে। দূর থেকেই সে দেখতে পাচ্ছে ফাদার গির্জার ফটকে দন্ডায়মান।
‘জন বাছা, প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে তুমি কোথায় গিয়েছিলে!’
‘ফাদার, আমি আশেপাশেই ছিলাম। ’
‘তোমার জন্য খুব উৎকন্ঠায় ছিলাম। যাহোক তোমাকে নিরাপদ দেখে ভালো লাগছে।
তা তুমি বলে যাওনি কেনো!’
‘ আপনি তখন আহার করছিলেন। ভাবলাম বিরক্ত না করি। ’
‘এসো ভিতরে এসো। ’
‘ফাদার, আমি প্রার্থনা কক্ষে যাবো। ’
‘খুবই ভালো।
’
জন সরাসরি প্রার্থনা কক্ষে আসে। পুনরায় যীশুখ্রিষ্টের ক্রুশের সামনে এসে দাঁড়ায়।
‘হে ঈশ্বর, আমার কি ফিরে যাবার সময় হয়েছে! এ ব্যাপারে তোমার কাছ থেকে দিক নির্দেশনা চাইছি। ’
যীশুখ্রিষ্টের ক্রুশটি হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। সেখানে কিছু লেখা ভেসে উঠে।
যার সারমর্ম এই- তোমাকে আমি যে কর্ম সম্পাদনের জন্য পাঠিয়েছিলাম তা তুমি নিষ্ঠার সাথে পালন করতে সক্ষম হয়েছ। এখন তোমাকে ফিরে আসতে হবে।
জন: হে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, তোমার আদেশ শিরোধার্য। অভয় দিলে আমি শুধুমাত্র তোমাকে একটা অনুরোধ করতাম।
সম্মতি পেয়ে জন বলতে শুরু করে,‘ ওহে প্রভু, পৃথিবী নিয়ে আমার অনেক কৌতূহল ছিলো।
তুমি যেহেতু আমাকে এখানে পাঠিয়েছ- কয়েকটা দিন আমি পৃথিবীর বুকে ঘুরে বেড়াতে চাই। ’
ক্রুশে লেখা ফুটে উঠে- তোমার মনের অন্তবাহির কোনো কিছুই আমার অজানা নয়।
জন: প্রভু, শুধু সাতটা দিন আমি তোমার কাছে সময় চাচ্ছি। তারপর আমি নিজেই আমাকে ফিরিয়ে নিতে তোমার কাছে ফরিয়াদ জানাবো।
জনের মুখে প্রশান্তির রেখা ফুটে উঠে।
বোঝাই যাচ্ছে তার অনুরোধ গৃহিত হয়েছে।
জন ঈশ্বরের একজন ঐশ্বরিক প্রতিনিধি। যার বাস মানুষের দৃষ্টিসীমার বাইরে। ঈশ্বরের বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে সে পৃথিবীতে এসেছিলো। যার মধ্যে অতিমানবীয় কিছু গুনাবলী বিদ্যমান।
পৃথিবীর আহার আহার্য যার জন্য প্রযোজ্য নয়।
জন ফাদারের কামরায় ফিরে আসে। মানুষ হলে সে নিশ্চয়ই মনের সুখে দু লাইন গেয়ে উঠতো।
‘তোমার প্রার্থনা শেষ হলো!’
‘আজ্ঞে মহামান্য। ’
‘বসো, তোমার সাথে গল্প করি।
তোমার কথা শুনি। ’
‘ফাদার, তার আগে আপনার কাছে একটা ব্যাপারে অনুমতি চাইবো। ’
‘নিঃসংকোচে বলে ফেলো। ’
‘আমি কয়েকটা দিন আপনার এখানে থাকতে চাই। ’
‘কোনো অসুবিধা নেই বৎস।
তোমার যতদিন মন চায় তুমি থাকতে পারো। তুমি ঈশ্বরের প্রিয়পাত্র। তোমার সংস্পর্শে এই গির্জাও পবিত্র হবে। ’
‘ফাদার, আরেকটা কথা। এখানে প্রার্থনা করতে আসে নোরা নামের মেয়েটি সম্পর্কে কি আপনি কিছু জানেন!’
‘কেন নয়! খুবই ভালো মেয়ে।
এমন মেয়ে, সচরাচর যার দেখা মেলে না। ঈশ্বরের ভক্ত। প্রার্থনায় কোনো অনিয়ম বা কোনো ধরনের অনীহা তার মধ্যে কখনো দেখিনি। ’
‘তার সাথে আমার পরিচয় হয়েছে। ’
‘তাই বুঝি!’
‘আর মেয়েটির পরিবার!’
‘পরিবারে শুধু বাবা আর মেয়ে।
বাবার ঘোড়ার ব্যবসা আর নোরা বস্ত্র বুননে পারদর্শী। মোটামুটি সচ্ছল। বাবা মেয়ের দিন চলে যায়। এই গির্জাতে মাঝেসাঝে দান করে, উপঢৌকন পাঠায়- ঈশ্বরের করুনা লাভের অভিপ্রায়ে। ’
‘নোরা কি বিবাহিত!’
‘না হে।
নোরা কে বুঝি তোমার ভালো লেগেছে!’ মুচকি হেসে ফাদার জিজ্ঞেস করে।
‘না সেটা নয়। আসলে মেয়েটার সাথে কথা বলে তাকে অনেক ভালো মনে হয়েছে। ’ জন লজ্জায় পড়ে যায়। আমতা আমতা করে কথাগুলো বলে।
‘শুধু ভালো নয়। ওর মতো সুন্দরী মেয়ে তুমি এ অঞ্চলে আর একটিও পাবে না। ’
‘ফাদার, আপনি এ গির্জাতে কতদিন ধরে আছেন!’
‘আরে বাছা- আমার জন্মই এ এলাকায়। এতেই তুমি বুঝে নাও। ’
‘তাহলে তো আপনি এ অঞ্চলের নাড়ি নক্ষত্র সবই অবগত।
’
‘তা আর বলতে বৈকি। জন, অনেকক্ষণ গল্প করলাম। আমাদের মনে হয় এখন বিছানায় যাওয়া উচিত। ’
‘জ্বি মহাশয়। আপনার অশেষ কৃপা।
’
বিদায় নিয়ে জন তার জন্য নির্ধারিত বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। শুয়ে শুয়ে সে নোরার কথা ভাবছে। মেয়েটিকে প্রথম দেখাতেই তার ভালো লেগেছে। এ বিষয়ে তার অনুভ’তি সে অন্য কাউকে বলে বোঝাতে পারবেনা। কি এক অজানা মানবীয় অনুভ’তি! যে কারণে মনে প্রশান্তির বন্যা বয়ে যায়।
তার মনে হলো পৃথিবীতে মানুষ আসলে অসুখী নয়। ঈশ্বর তাদের জন্য নারী জাতি সৃষ্টি করেছেন। যে নারীর সংস্পর্শে সারাজীবন কাটিয়ে দিলেও আশ মিটবে না । হয়তোবা তাদের জন্যই বেঁচে থাকা। সত্যিই মানুষের জন্য এ ঈশ্বরের অশেষ কৃপা।
সে এতদিন ভেবেই পায়নি কেন পৃথিবীতে মানুষেরা নারীকে পাবার জন্য এত ব্যাকুল! নোরার প্রতি জনের এ অনুভ’তি যেন সে রহস্য উন্মোচন করেছে।
সকালে জন বাইরে বের হবে সেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। সারারাত সে ভোর হবার অপেক্ষা করেছে। ইচ্ছে করছিলো নোরাকে গিয়ে একবার দেখে আসে। বহুত কষ্টে সে নিজেকে সংবরণ করে।
জন নোরাদের বাড়ির খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। এখান থেকে সে দেখতে পাচ্ছে নোরার বাবা ঘোড়াগুলোর পরিচর্যায় ব্যস্ত। সকালের এই উজ্জ্বল রোদে বাড়িটাকে ছবির মতো মনে হচ্ছে। তার মনে হচ্ছে এমন একটা বাড়িতেই সে যদি নোরার সাথে দিনযাপন করতে পারতো!
নোরার বাবা জনকে দেখতে পেয়ে তাকে অভ্যর্থনার জন্য এগিয়ে আসছে। গেট খুলে জনকে ভিতরে নিয়ে যায়।
‘তুমি এসেছ- খুব খুশি হয়েছি। ’
‘সাত সকালে এসেছি- আসলে নোরার জন্যই। ওর খোঁজ নিতে। ও কি সেরে উঠেছে!’
‘হ্যাঁ, এখন অনেক ভালো। দিনের এমন চমৎকার শুরুতে ও যেন গতকালকের স্মৃতি পুরোপুরি ভুলে গিয়েছে।
সবই ঈশ্বরের অনুগ্রহ। নোরা এখন নাস্তা করছে। আমি ওকে ডেকে পাঠাচ্ছি। তা তুমি কিছু খাও!’
‘না জনাব। আমি আরো কয়েকদিন উপবাসে থাকবো।
আপনাকে ধন্যবাদ। ’
‘ভালো, খুবই ভালো। ঈশ্বরের কৃপা তোমার প্রতি বর্ষিত হউক। ’
জন বাগানে বসে নোরার অপেক্ষা করছে। তার কাছে মনে হচ্ছে সময় কি থেমে গেলো! অপেক্ষার প্রহর শেষই হচ্ছেনা।
তারপরও মনে হচ্ছে নোরাকে একপলক দেখার তরে সে সারাজীবন এভাবে কাটিয়ে দিতে পারবে। নোরার হাসি মাখা কন্ঠে জন সম্বিত ফিরে পায়।
‘কেমন আছেন!’
‘হুম ভালো। এখন বলুন আপনি কেমন আছেন। ব্যথা কি এখনও আছে!’
‘নাহ।
রাতের ঘুমে এখন আমি একদম ফ্রেশ। ঘুম থেকে উঠে একদম ঝরঝরে। ’
‘আপনাকে কিন্তু আসলেই ফ্রেশ দেখাচ্ছে। ’
‘ধন্যবাদ। তা আপনি এত সকাল সকাল!’
‘আপনার খোঁজ খবর নিতে এলাম।
’
‘আমি নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে করছি। ’
‘কেন নয়! আপনাকে সুস্থ দেখে এখন আমার দায়িত্ব শেষ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তা আপনি দাঁড়িয়ে কেন! বসুন না। ’
নোরা জনের সামনে বসে। তারপর কিছু সময়ের জন্য দুজন চুপ।
নিরবতার অবসান ঘটায় নোরা।
‘আজকের আবহাওয়াটা অনেক সুন্দর, তাই না!’
‘আমিও আপনাকে সেটাই বলতে চাচ্ছিলাম। এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ আপনার সাথে উপভোগ করতে পেরে আমার আরো বেশি ভালো লাগছে। ’
‘আপনাকে আসলে এখন পর্যন্ত সেভাবে ধন্যবাদ জানানো হয়নি। ’
‘কোনটা!’
‘এই যে গতকালকে আপনি যেভাবে আমাকে রক্ষা করলেন! আসলে ঐ ঘটনার পর থেকে আমরা আপনাতেই দুজনার ভালো বন্ধু হয়ে গেছি।
আপনার সম্পর্কে এখনও কিছু জানা হলো না। ’
‘আমিও আপনার সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক। ’
‘আপনিই শুরু করুন না। ’
‘নিজের সম্পর্কে আসলে বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছিনা। একা একজন মানুষ।
নিকটাত্মীয় বা বন্ধু বান্ধব কেউ নেই। ব্যস এটুকুই। ’
‘আপনার গল্পটাতো অনেক করুণ। থাক আমি আর শুনতে চাচ্ছি না। ’
বলে নোরা মুচকি হাসে।
‘তাহলে এবার আপনার সম্পর্কে বলুন। ’
‘প্রথমেই নিজের একটা পছন্দের কথা বলি। বৃষ্টি আমার অনেক ভালো লাগে। তবে কালকের মতো সেই ঝড়ো বৃষ্টি নয়। আমার ঘরের জানালা দিয়ে যে বৃষ্টি আমি দেখতে পাই।
আর বৃষ্টির পরে আমাদের বাড়ির চারপাশটা এত সুন্দর হয় যা আমি আপনাকে বলে বোঝাতে পারবোনা। তবে আমি আপনাকে সে চমৎকার দৃশ্য অবশ্যই দেখাবো। বিস্তৃত এই সবুজ ঘাসে বর্ষণ- সত্যিই মোহনীয়। সেদিন আমার মনটাও অনেক ভালো থাকে। আপনাকে নিয়ে একদিন এসবই উপভোগ করবো।
’
‘সেই দিনের অপেক্ষাতেই আমি আছি। আর আপনি চমৎকার গুছিয়ে কথা বলেন। শুনতে অনেক ভালো লাগে। ’
নোরা হাসছে। প্রশংসায় যে কোনো মেয়েই খুশি হয়।
নোরার হাসিটাও যেন স্বর্গীয়। জন তা প্রাণ ভরে উপভোগ করছে। জন চমৎকার একটা সময় পার করছে। তার কাছে মনে হচ্ছে পৃথিবীটা আসলেই অনেক সুন্দর, অনেক সুখের। এখানে না এলে সে যা কখনো বুঝতে পারতো না।
নোরার সাহচর্যে সে নিজেকে খুবই সুখি মনে করছে।
‘আমি কিন্তু এখন বাইরে যাবো। ’ নোরা হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
‘কোথায়!’
‘এই প্রশ্নটা করার ফলে আপনি আমার সম্পর্কে আরো কিছু জানতে পারবেন। ’
‘নোরা, আপনি বুদ্ধিমতিও বটে।
’
‘কিছুক্ষণ পর আপনি আরেকটি ব্যাপারে আমার প্রশংসা করবেন। ’ নোরার মুখে রহস্যপূর্ণ হাসি।
‘আপনি আমাকে এরইমধ্যে অনেকগুলো চমক দিয়ে ফেলেছেন। ’
‘হুম! যে কথা বলছিলাম- আমি বস্ত্র বুননেও পারদর্শী। জামা কাপড় তৈরীতে এ অঞ্চলে আমার নাম ডাক রয়েছে।
অনেকের কাছ থেকে আমি এ ব্যাপারে অর্ডার পাই। আমার তৈরী জামা পরতে তারা খুব পছন্দ করে। বস্ত্র বুননে আমার সিংহভাগ সময় ব্যয় হয়। জীবিকার চেয়েও বেশি এটা আমার শখ। আমার তৈয়ারি জামা পরে মানুষের মুখে সন্তুষ্টির হাসি দেখতে আমার ভালো লাগে।
’
‘তা আপনি কি এখন কাপড় কিনতে যাবেন!’
‘না। আমি যাবো একটা জামা ডেলেভারি দিতে। খদ্দেরের বাসায় আমি নিজে গিয়ে ডেলেভারি দিয়ে আসি। মাঝে মাঝে অনেক দূরেও যেতে হয়। তখন অবশ্য একা একা অত দূরের পথ বিরক্ত লাগে।
’
‘আজকে মনে হচ্ছে আপনি দূরে কোথাও যাবেন!’
‘একটু দূর বৈকি। ’
‘আপনার যদি আপত্তি না থাকে আমি আপনার সাথে যাই। ’
‘আপনি কেন শুধু শুধু কষ্ট করবেন!’ নোরার ঠোঁটে আবারো সেই মোহময়ী হাসি।
‘আপনার হাসিটা অনেক সুন্দর। আমি প্রশংসা না করে পারছিনা।
’
‘একটু আগে যা বলছিলাম সেটাই সত্যি হলো। কি প্রমাণ তো পেলেন!’
এবার তারা দুজনেই হাসছে। জনের মনে হচ্ছে নোরার এই হাসিমুখের জন্য সে সবকিছু করতে পারে, সবকিছু। নোরা পূর্বের প্রসঙ্গে ফিরে যায়।
‘আপনাকে যা বলছিলাম- আপনার কষ্ট করতে হবেনা।
ওতে আমার অভ্যাস আছে। ’
‘আমরাতো এখন বন্ধু নাকি! আর এটাও সত্য আপনার সাহচর্য আমার ভালো লাগে। ’
‘ঠিক আছে। ঠিক আছে। আপনি তাহলে বসুন ।
আমি গোছগাছ করে আসছি। ’
জন বসে আছে ঠায়। চারপাশটায় একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। দৃষ্টি চলে যায় আকাশের পানেও। সাদা ঝকঝকে মেঘের ভেলা আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে।
পৃথিবীটা আসলেই চমৎকার একটা স্থান। পৃথিবীর স্তুতি বর্নণায় আকাশের পানে চেয়েও সে ভুলে যায় উপরওয়ালার কথা। যার সাথে ছিলো তার অতীত কর্মকান্ড।
নোরা ফিরে এসেছে। তারা দুজন চড়ে বসে ঘোড়ার গাড়িতে।
চালকের আসনে জন। তার পাশে নোরা। গাড়ি চলতে শুরু করেছে। বাতাসে নোরার চুল উড়ছে। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে জন।
জনের সময়টা নোরার সাথে এভাবেই কেটে যাচ্ছে। নোরাকে ছাড়া সে এখন অন্য কিছু ভাবতে পারে না। নোরাও এ কদিনে জনকে অনেক আপন করে নিয়েছে। জনের সঙ্গ সেও উপভোগ করে।
জন এসেছে নোরাদের বাসায়।
আজকে আর নোরার ডেলেভারির কোনো কাজ ছিলো না। দুজনে নোরার রুমে বসে গল্প করছিলো। হঠাৎ নোরা পুলকিত হয়ে উঠে। জনকে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতে বলে।
‘আহা, এ এক অপার্থিব পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
’ জনের চোখেমুখে বিস্ময়- মুগ্ধতা একসাথেই পরিলক্ষিত হচ্ছে।
‘তোমাকে বলেছিলাম না আমরা দুজন একসাথে একদিন বৃষ্টি উপভোগ করবো। আজকেই সে দিন। দেখলে তো কি সুন্দর! আমি কি মিথ্যা বলেছিলাম!’
‘উঁহু। আমার তো আর এখানে বসে থাকতে ইচ্ছে করছেনা।
’
‘কি করবে শুনি!’
‘চলো বৃষ্টিতে ভিজি। ’ জন প্রস্তাব করে।
‘ না বাবা। আমার অসুখ করবে। ’
জন তার কোনো আপত্তি গ্রাহ্য করেনা।
হাত ধরে টেনে বৃষ্টিতে নিয়ে যায়। দুজন হাত ধরাধরি করে মনের সুখে সবুজ নরম ঘাসে ছুটাছুটি করছে। এভাবে অনেকক্ষণ। তারপর বৃষ্টি থেমে যায়। ভিজে কাপড়ে দুজন বাসার ভিতরে প্রবেশ করে।
‘এই ভিজে কাপড়ে তোমার তো অসুখ বেধে যাবে। তোমার জন্য আমি কি করতে পারি। ’ নোরার কন্ঠে জনের জন্য উৎকন্ঠা।
‘আমি তো চিন্তা করছি তোমাকে নিয়ে। ’
‘আমার কিছু হবেনা।
’
‘তুমি তো যেতেই চাওনি!’
‘সে তো এমনি এমনি। ’ নোরা মুখ টিপে হাসে।
‘আমারও কিছু হবে না। ’
‘তুমি কি মহামানব নাকি!’ নোরার কন্ঠে বিদ্রুপের সুর।
কিন্তু জন হাসে।
তার মুখখানা হয়ে উঠে রহস্যপূর্ণ।
‘তুমি কাপড়গুলো ছেড়ে ফেলো। তোমাকে বাবার একসেট কাপড় এনে দিচ্ছি। ’
‘আর তুমি!’
‘আমি চেঞ্জ করে আসছি। ’
নোরা যাবার জন্য পা বাড়ায়।
জন তাকে বাধা দেয়। টেনে তার বুকে নিয়ে আসে। উষ্ণ আলিঙ্গনে দুজনে শিহরিত হয়। জন নোরার ঠোঁটে আলতো করে স্পর্শ করে। নোরা কেঁপে উঠে।
ভিজে কাপড়গুলো দুজন ছাড়িয়ে নেয়। আর তাদের এখন উষ্ণতা প্রয়োজন। দুজনের দেহের উষ্ণতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। একসময় তারা নিজেদেরকে আবিস্কার করে বিছানায়। নোরা ব্যথামিশ্রিত চরম সুখে চোখ বন্ধ করে আছে।
হঠাৎ চোখ খুলে জনের কামদন্ডে রক্ত দেখে সে বিচলিত হয়। জন তাকে অভয় দেয়। প্রথমে যে ব্যথাটা ছিলো তা আর এখন নেই। চরম পুলকে শক্ত করে নোরা জনকে জড়িয়ে ধরে। জন নোরার কুমারীত্বের প্রশংসা করে।
এভাবে অনেকটা সময় কেটে যায়। কিন্তু নোরা আর পারছিলো না। সুখের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ধীরে ধীরে তা বিপরীতে মানে অস্বস্তির দিকে যেতে থাকে। নোরা জনকে থামতে বলে।
‘আমার যে তোমাকে আরো ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে।
’
‘না, প্রিয়। আমার কষ্ট হচ্ছে। ’
‘তুমি চাইলে আজকে সারাদিন- তারপর সারারাত। ’
‘উঁহু জন। আমি আর পারবোনা।
তবে এটুকু বলবো- নারী জীবনের চরমতম সুখের একটা সময় আমি কাটিয়েছি। এতসুখ শুধু স্বর্গেই পাওয়া সম্ভব। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ তিনি আমাকে স্বর্গসুখের দেখা দিয়েছেন এই পৃথিবীতে। ’
জন হেসে নোরাকে সমাপ্তি চুম্বন করে। নোরাও তার জবাব দেয়।
তাদের দেহের উষ্ণতায় ভিজে কাপড়গুলো হয়তো শুকিয়ে গেছে।
(চলবে)
View this link
tanim jubair
all rights reserved
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।