আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খোঁজা হচ্ছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা

রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নবম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন কোনো পরিণতির মুখ দেখবে না। আর তাই সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োগের ওপর জোর দিয়ে সদস্যদেশগুলোকে একটি সমঝোতায় আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ার ক্ষুদ্রতম ও দ্বীপ প্রদেশ বালির নুসা দুয়া আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে (বিএনডিসিসি) গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে চার দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট ড. সুসিলো বামবাং ইউধোইয়োনো।
উদ্বোধনী ভাষণে সুসিলো বামবাং বলেন, ডব্লিউটিওর সদস্যদেশগুলোর সামনে এখন সুযোগ এসেছে অসমাপ্ত ও প্রলম্বিত বৈশ্বিক বাণিজ্য আলোচনাকে একটি পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়ার। বালি সম্মেলন থেকে যেন সেই পরিণতি বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা যায়, সে জন্য এই কয় দিন সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে।


সুসিলো আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘যখন সব বাণিজ্যমন্ত্রী এখানে আছেন, তখন আমাদের সবার রাজনৈতিক সদিচ্ছার শক্তির সদ্ব্যবহার করতে হবে, যেন আমরা একটি পরিণতিতে আসতে পারি, যার জন্য বিশ্ব অপেক্ষা করছে। আর তাই সবার ভালোর জন্য আমাদের আরও নমনীয় হতে হবে। আমাদের অর্থনীতির ভালোর জন্য, ডব্লিউটিওর ভালোর জন্য এবং দুনিয়ার মানুষের ভালোর জন্য। ’
বালি সম্মেলনে সমঝোতার ক্ষেত্রে পরস্পরকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে না দেখে বরং পরিপূরক হিসেবে দেখার আহ্বান জানিয়ে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘উত্তর বনাম দক্ষিণ’ প্রচারণা আসলে বিদ্যমান মতভেদকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো।
বাস্তবে উত্তর বনাম দক্ষিণ অর্থাৎ উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যকার মতবিরোধ যে মাত্রায় রয়েছে, তাতে এই আহ্বান কতটা কাজে আসবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে অংশগ্রহণকারীদের।

ডব্লিউটিওর দায়িত্বশীলদের মধ্যেও কিছুটা হতাশার সুর বেজেছে গতকালই।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর এক সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক রবার্তো আজেভেদো বলেন, ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, জেনেভায় আমরা শেষ পর্যন্ত আর সমাপ্তি টানতে পারিনি। আর তাই অমীমাংসিত কিছু বিষয় রেখেই বালিতে একটি পাঠ (টেক্সট) তুলতে হচ্ছে। ’
সাধারণত ডব্লিউটিওর সম্মেলনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য জেনেভায় সংস্থার কার্যালয়ে একাধিক বৈঠক ও সভা করে প্রস্তাবিত সিদ্ধান্ত ও সুপারিশগুলো লিপিবদ্ধ করা হয়, যা খসড়া পাঠ (ড্রাফট টেক্সট) হিসেবে পরিচিত। সম্মেলনে এই পাঠ সংশোধন বা পুনর্বিন্যাস করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আকারে প্রকাশ করা হয়।


আজেভেদো আরও বলেন ‘বালিতে এখন এমন কোনো বিষয় নেই, যা খুব কৌশলগতভাবে (টেকনিক্যালি) জটিল। যে বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করতে হবে, সেগুলো অসম্ভবও নয়। এ জন্য দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা। ’
সম্মেলনের আগে জেনেভায় আলোচনার প্রয়াসের কোনো ঘাটতি ছিল না উল্লেখ করে আজেভেদো বলেন, ‘সামান্য কিছু বিষয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক অনীহাই শেষ পর্যন্ত অসম্পূর্ণতার সৃষ্টি করেছে। আর তাই বালিতে বাণিজ্যমন্ত্রীদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখাতে হবে, রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত হয়ে একটি নিষ্পত্তির দিকে যেতে হবে।


সরাসরি উল্লেখ না করলেও এটা এখন সবারই জানা যে খাদ্যনিরাপত্তার জন্য কৃষি ভর্তুকি বিষয়ে ভারতের কঠোর অবস্থানকে ‘স্থানীয় রাজনৈতিক অনীহা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো চাচ্ছে কৃষি ভর্তুকির নির্ধারিত সীমা অপসারণে একটি স্থায়ী সিদ্ধান্ত। মূলত ভারত সরকার ভর্তুকি মূল্যে খাদ্যশস্য গরিব মানুষের কাছে সরবরাহের জন্য যে আইন পাস করেছে, তা বাস্তবায়ন করতে হলে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে তা ডব্লিউটিওর নির্ধারিত ১০ শতাংশ সীমা ছাড়িয়ে যাবে।
আজেভেদোর মতে, ‘সম্মেলনের ফলাফল পুরোপুরি মন্ত্রীদের হাতে।

আর যে রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতার কথা বলা হয়, তা নতুন কিছু নয়। সুতরাং, তাদের কিছু করে দেখাতে হবে। ’
এবারের সম্মেলনে মূলত তিনটি বিষয়ে একটি ঐকমত্যে পৌঁছার মাধ্যমে বালি প্যাকেজ চূড়ান্ত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এগুলো হলো: বাণিজ্য সহজীকরণ (ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন) বিষয়ে চুক্তি, খাদ্যনিরাপত্তার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ কৃষি ভর্তুকি ও এলডিসিগুলোর সুবিধা। কিন্তু কৃষি ভর্তুকির বিষয়ে কাঙ্ক্ষিত সিদ্ধান্ত না এলে ভারত কোনো প্যাকেজে সম্মত হবে না বলে জানিয়েছে।

অন্যদিকে আমেরিরকাসহ উন্নত দেশগুলো বাণিজ্য সহজীকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাপ দিচ্ছে।
আর তাই সংবাদ সম্মেলনে ইন্দোনেশিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী গিতা বীরজওয়ান সতর্ক করে দিয়ে বলেন, সবাই বালির একটি পরিণতি চাইলেও কিছু ঝুঁকি রয়ে যাচ্ছে। আর তা অল্প কিছু মতভেদের কারণে। এটা দুঃখজনক যে জেনেভাতেই এই মতভেদ দূর করা যায়নি।
এদিকে কড়া নিরাপত্তার কারণে সম্মেলন কেন্দ্রের আশপাশে বিক্ষোভ-সমাবেশের সুযোগ ছিল সীমিত।

তার মধ্যেও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা উদ্বোধনী অধিবেশন শেষ হওয়ার পর অল্প সময়ের জন্য সম্মেলনস্থলে জড়ো হয়ে স্লোগান দেন এবং বিক্ষোভ প্রকাশ করেন। আর বালির রাজধানী দেনপাসারে কয়েক শ বিক্ষোভকারী সকালেই প্রতিবাদ মিছিল বের করেন এবং ডব্লিউটিওকে বাতিল করার দাবি জানান।
আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইজ নট ফর সেল নামে বেসরকারি সংস্থাগুলোর একটি আন্তর্জাতিক জোটে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অংশ নিচ্ছেন ইক্যুইটি বিডির রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে জানান, এলডিসিগুলোর জন্য কিছু পাওয়ার সুযোগ থাকলেও উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিরোধে তা হারিয়ে যেতে পারে।



সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।