মাস্টার্স । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ।
জীবনে প্রথম বিমান ভ্রমন, বিদেশ/ভারত ভ্রমন। কেমনে কী!! যারা প্রথম প্লেনে উঠবেন!!
মনে উঁকি দেয়া প্রশ্নের ব্যাখ্যাসহ উত্তর-
১। হায় হায়! বিমান বন্দরে ঢুইকা কোনদিকে যামু ?
২।
আমার লাগেজ আমার প্লেনে না দিয়ে যদি অন্য প্লেনে দিয়ে দেয়?
৩। যদি ইমিগ্রেসন কর্মকর্তা কোন কারনে আমারে বিমানবন্দর থেকে বের করে দেয়?
৪। আচ্ছা, বিমানে কি চকোলেট দিবে নাকি খালি পানি খাইয়া থাকতে হবে? কি খানা দিতে পারে? চিন্তায় ক্ষুধা আরও বাইরা যায় !
৫। লাগেজের ওজন ২০ কেজির বেশি হয় নাই তো ?
৬। ইশ, সিনেমায় দেখা যায়, সুন্দরি বিমানবালাদের (airhostess) সাথে কথা বললেই প্রেম হয়ে যায়... এইরকম কোন awesome ঘটনা যদি ঘটে যায়?
৭।
Man is mortal … মানুষ মাত্রই ভুল, যদি বিমানের ড্রাইভার চালাইতে চালাইতে টায়ার্ড হইয়া ঘুমাইয়া যায়? কেমনে কি? আমি নিজেই পাইলট হইয়া যামু ।
৮। ভিসা নিতে ইন্ডিয়ান এম্বেসিতে যে কষ্ট পাইতে হইছে, প্লেন থেকে নামার পর যদি Indian immigration officer ভারতে ঢুকতে না দেয়? এরা তো সব বাংলাদেশিরে চোর সন্ত্রাসীর দৃষ্টিতে দেখে।
এরকম হাজারো চিন্তা নিয়ে ঢাকা বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দিলাম। প্লেন ছাড়বে দুপুর ৩ টায় ,টার্মিনালে উপস্থিত থাকতে হবে দুপুর ১ টার মধ্যে।
দিনটি ছিল নভেম্বার/২০১৩ ইং এর এক বৃহস্পতিবার। ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে অনলাইনে Maldivian Airlines এর টিকিট কাটলাম। বাংলামটর থেকে সিএনজি অটোরিক্সা নিয়ে দুপুর ১২ টায় বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলাম। শুরু থেকেই প্রচণ্ড জ্যাম, এজেন্সি থেকে বলে দিয়েছিল যে, বিমানবন্দরে ঠিক সময়ে না পোছলে কিন্তু প্লেন মিস করবেন আর টিকিটের টাকা ফেরত দেয়ার ত প্রশ্নই উঠে না। কত অজানা আশংকা আর চিন্তা যে আসছিল, টেনশন কাহাকে বলে কত প্রকার ও কি কি সে দিন টের পেয়েছিলাম ।
এত কষ্ট বিদেশ যেতে ! তাও আবার ইন্ডিয়া! পাশের বাড়ি!
যাই হোক, এয়ারপোর্ট এ পৌঁছলাম ঠিক দুপুর ১ঃ১০ মিনিটে । দরজা দিয়ে টিকিট চেক করার পরেই আমার কাছ থেকে লাগেজ কেড়ে নিল তারপর X-RAY ROW এর মধ্যে দিয়ে দিল, ভাবলাম, হায় হায় এই লাগেজ কি চিরদিনের জন্যই হারালাম? এক্সরে চেক এর পর একটা security sticker লাগিয়ে এক লোক বলল, আপনার লাগেজ নিন। আহ ! যাক ! নেয় নাই তাইলে! আমি এখান থেকেই মনের সব প্রশ্নের জবাব পাওয়া শুরু করলাম। এরপর Maldivian airlines এর লাইনে দাঁড়ালাম।
এখানে বলে রাখি, প্লেন ছাড়ার কমপক্ষে দুই ঘণ্টা আগে এয়ারপোর্ট এ উপস্থিত থাকতে হয় (আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে)।
আর domestic flight এর ক্ষেত্রে ১ ঘণ্টা আগে গেলেই হয়। বিমানবন্দরে ঢুকার পরই আপনার লাগেজ/ ব্যাগ সব এক্সরে মেশিনে চেক হয়ে security tag লাগিয়ে দিবে। তারপর আপনি যে প্লেনের টিকিট কাটছেন সেই প্লেনের টিকিট counter এ লাইনে দাঁড়াবেন। আপনার সব কিছু verify করে আপনার লাগেজ এর ওজন করা হবে। যদি লাগেজ এর ওজন ৭ কেজি বা তার কম হয় তাহলে আপনি প্লেনে আপনার এই ব্যাগসহ উঠতে পারবেন, এর বেশি ওজন হলে লাগেজ/ ব্যাগ চলে যাবে প্লেনের লাগেজ বক্সে।
এই ওজন এর সীমারেখা airline to airline vary করে কিনা তা অবশ্য জানি না। আমার ব্যাগের ওজন হল ১৩ কেজি! আর একটা প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলাম। আমার লাগেজ আমার প্লেনেই যাচ্ছে। ওজন মাপার পর belt এর মধ্যে দিয়ে লাগেজ চলে গেল প্লেনের Luggage Box এ । এখানে ঝামেলা শেষ।
এরপর হইল immigration police এর counter. আমার পাসপোর্ট দেখে পুলিশ বলে, “ফার্স্ট টাইম না?” আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম। অনেক্ষন ধইরা উনি আমার পাসপোর্ট দেইখা ফেরত দিলেন। ভাব দেখে মনে হইল আরেক্তু হইলে উনি আমার যাত্রা ভঙ্গ করে দিতেন।
পাসপোর্ট দেখতে দেখতে উনি আমারে যে সব প্রশ্ন করছিলেন সেগুলো হলঃ
১। আপনার নাম?
২।
এটা কোথা থেকে ইস্যু হইছে? কবে ইস্যু হইছে?
৩। কি উদ্দেশে ভারত যাচ্ছেন? কবে আসবেন?
৪। ভারতে কোন আত্মীয়স্বজন আছে?
ভাই, এই লোক ঢাকা বিমানবন্দরে যত প্রশ্ন করছে আমি ত টেনশনে শেষ। নিজের দেশেই এত হয়রানি, ইন্ডিয়ার পুলিশ ত আরও খারাপ হইবার কথা। আমি ভারতে যাচ্ছি tourist visa এ।
তাকে বললাম, আমার কোন আত্মীয় ও নাই সেখানে। পরে ভারতে প্লেন ল্যান্ড করার পর Indian Immigration Police রে দেখি আমার দিকে ফিরে ও তাকায় না, আমার পাসপোর্টটা স্ক্যান করল, সিল দিল তারপর বলল, have a nice stay in India. আমি ত অবাক। মনে মনে ভাবলাম, আহারে নিজের দেশের পুলিশ, তোরা নিজের দেশের নাগরিকদের যেভাবে হয়রানি করস এই জন্যই তোদের সবাই বলে “ছোটলোক”। বুঝলাম ছোটলোক গাছে ধরে না, বিমানবন্দরেও পাওয়া যায়!
ইমিগ্রেসন চেক এরপর waiting Lounge এ বসে আছি। এখানে অনেক duty free shop আছে যেখান থেকে product কিনলে আপনাকে tax দিতে হবে না।
আমি ঢাকা বিমানবন্দর থেকে কিছু কিনিনাই কারন ভেবে দেখলাম, খালি খালি বোঝা বাড়াইয়া লাভ নাই, ফেরার পথে কিনলেই হবে।
ইন্ডিয়া থেকে ফেরার পথে Chennai International Airport এর duty free shop থেকে মায়ের জন্য একটা শাড়ি কিনছিলাম। দাম নিল ২১০০ রুপি! আমার মাকে খুশি করার ব্যাপারে NO COMPROMISE. এছাড়া Chennai থেকেই কিছু চকোলেট আর চেন্নাই সমুদ্র সৈকত থেকে কিছু সুভেনির কিনলাম, দেশে ফিরে relative & bro-sis & team কে গিফট করার জন্য। যাই হোক, সেইটা আরেক ইতিহাস। সময় পাইলে আরেক দিন বলমু!
তো ঢাকা এয়ারপোর্ট এ লাউঞ্জ এ বসে আছি আর দেখতেছি অনেক বিদেশিরা duty free shop থেকে মদ (whisky/ vodka/ bear) কিন্তেছে।
একটু পর ১ঃ৪০ মিনিটের দিকে মাইকিং শুরু হইল “যারা Maldivian airlines এর যাত্রী আপনাদেরকে আমাদের প্লেনে উঠে আমাদের ধন্য করার জন্য অনুরধ করা যাচ্ছে”!! হু হা হা!
** ভাল কথাঃ বিমানের টিকিট কাটলে সবসময় রিটার্ন টিকিট কাটাই ভাল কারন খরচ কম পড়ে আর অনেক ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকা যায়। এক সপ্তাহ বা অন্তত ৩-৪ দিন আগে টিকিট কাটা ভাল।
আরে ভুলে গেছি, tourist visa য় ইন্ডিয়া গিয়েছিলাম আসলে একটা জরুরি কাজে। আমি একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের Lecturer, গিয়েছিলাম একটা কনফারেন্স এ যোগ দিতে। ইন্ডিয়া থাকলাম ১ সপ্তাহ।
Maldivian Airlines এ আমার ঢাকা-চেন্নাই-ঢাকা রিটার্ন টিকিটের দাম পড়ল ৩২০০০ টাকা। যদি এক সপ্তাহ আগে টিকিট করতাম তাহলে খরচ পড়ত ২৭০০০ এর মত। আফসোস! আমি নানাকারনে টিকিট করছিলাম ১ দিন আগে।
আপনি মালদ্বীপ এয়ারলাইন্স এ বিনা ট্যাক্সে ৩০ কেজি লাগেজ নিতে পারবেন। এটা airline to airline vary করে।
জানলাম।
কী উত্তেজনা ! কী ভালোলাগা ! প্রথম বিমানে উঠতে যাচ্ছি। এত টেনশন এত অদ্ভুত আনন্দ, বিশ্বাস হইতেছিল না। দুপুর ২ টা ১৫তে প্লেনে উঠলাম। বুদ্ধি করে জানালার পাশে সিট নিয়ে নিলাম।
আহ! আর কি লাগে? প্লেন take off করার পর অবশ্য দেখলাম ১৩২ সিটের বিমানে যাত্রী মাত্র ৬০-৭০ জনের মত, বিশাল অংশ ফাকা। তখন সবাই যে যার মত সিটে বসতেছে! হায়রে... যাত্রীরা মালদ্বীপ এয়ারলাইন্স রে ঢাকার লোকাল বাস বানাইয়া ফেলছে! কেউ হাটতেছে, প্লেন যখন আকাশে, একটু মাথা ঘুরিয়ে পিছনে দেখতেই দেখি, প্লেন ছাড়ার এক ঘণ্টা ও হয় নাই, টয়লেট এর সামনে বিশাল লাইন, কমপক্ষে ১০ জন দাড়িয়ে! সব যাত্রী কী ডায়াবেটিস এর রোগী নাকি!! পরে একজনের কাছ থেকে জানলাম, কেউ কেউ টয়লেটে যায় অন্য কারনে... টয়লেট এ নাকি মাঝে মাঝে স্বর্ণের বার/ বিস্কিট পাওয়া যায়! ভাগ্যে থাকলে ঠেকায় কে! হায়রে বাঙালী...!!
প্লেন ফ্লাই করে আকাশে সমান্তরাল/ সোজা হওয়ার পরই টুংটাং শব্দ হইতে লাগলো। দেখলাম দুই জন airhostess খাবারের ট্রলি নিয়ে আসতেছে। মালদ্বীপ এয়ারলাইন্স এর বিমানবালারা শার্টপ্যান্টস পড়ে তাইলে! হালকা নীল রঙের শার্টস। তাদের সাথে কথা বলে কয়েকটা অনুসিদ্ধান্তে আসলামঃ
১।
বিমানবালা হইতে ইংরেজি জানা লাগে না, কারন এদের সাথে English এ কথা বলা আর এদের ইংরেজি বোঝা বেসম্ভব ব্যাপার। এরা পারে দুই তিনটা কথা যেমনঃ thank you, excuse me, fasten your seat belt, yes, no, very good!
২। সুন্দরি হইলে আর ধমক খাইয়াও হাসতে পারলেই airhostess হওয়া অনেক সোজা!
৩। আরেকটা ব্যাপার খেয়াল করলাম তাদের আরেকটা যোগ্যতা আছে, ১৮+ কিভাবে যে বলি! ধ্যাত! তাদের ইয়ে... মানে figure অনেক বড় !! শার্ট পরার কারণে সেটা আরও স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।
৪।
বিমানে বুড়া যাত্রীরা যেভাবে বিমানবালাদের ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে ঘুরে দিকে দেখছিল তাতে আমিই লজ্জা পাইয়া গেলাম। কেয়ামতের আলামত!
তিন ঘণ্টার জার্নি শেষে বেলা তিনটায় চেন্নাই পৌঁছলাম। এরপর ৬ দিন প্রচুর ঘটনা দুর্ঘটনা ঘটছে, যেগুলো বলে আমি আর আপনাদের মাথা নষ্ট করতে চাইছি না। অনেক মজা ও হইছে। এখন লিখতে লিখতে টায়ার্ড হইয়া গেছি।
সময় পেলে ইন্ডিয়া থাকা, ঘুরা ফেরা ইত্যাদি নিয়ে লিখব। কেউ চেন্নাই গেলে কোন হোটেলে থাকবেন,বাঙালি হোটেল ও আছে, কোথা থেকে বাস কোথায় যায়, অটোরিকশার ভাড়া কেমন লাগে ইত্যাদি সব ব্যাপারে আপনাদের হেল্প লাগলে বলিয়েন। এখন যাইগা, টাটা!
ও ! অনেক ছবি তুলছি। দেখি আপলোড হয় কিনা।
১
২
৩
৪
৫
৬
৭
৮
৯
কেমন লাগলো জানাবেন।
ধন্যবাদ!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।