লড়াইটা ছিল ফেডারেশন কাপের ফাইনালে ওঠার। প্রতিপক্ষ ছিল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ও আবাহনী। দুই ক্লাবের আড়ালে লড়াই ছিল দুই বিদেশি ফুটবলার সনি নর্দে ও ওসেই মরিসনের। গতকাল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে দুই দলের সেমিফাইনালের লড়াইটা ছিল এক পেশে। শেখ জামালের আক্রমণাত্দক ফুটবলের সঙ্গে পেরে ওঠেনি আকাশি-হলুদ শিবির।
নর্দের সঙ্গে ব্যক্তিগত দ্বৈরথেও পারেননি মরিসন। পেনাল্টি মিস করে হ্যাটট্রিক না পেলেও হাইতি জাতীয় দলের নর্দে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলদাতা আসরের। তার অসাধারণ নৈপুণ্যে মৌসুমের প্রথম টুর্নামেন্ট ওয়ালটন ফেডারেশন কাপের প্রথম সেমিফাইনালে আবাহনীকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে উঠেছে শেখ জামাল। টানা চতুর্থবারের মতো ফেডারেশন কাপের ফাইনালে ঠাঁই নিতে শক্তিশালী শেখ জামাল ৩-০ গোলে হারিয়েছে আবাহনীকে। ফাইনালে জামালের প্রতিপক্ষ হবে আজকের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও টিম বিজেএমসির জয়ী দল।
দুই হেভিওয়েট দলের লড়াই দেখতে হাজার দশেক ফুটবল অনুরাগী শীতের সন্ধ্যায় উপস্থিত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। যে উদ্দেশ্য নিয়ে ফুটবলপ্রেমীরা উপস্থিত হয়েছিলেন মাঠে, তার শতভাগ পূরণ না হলেও আশাহত হননি। যদিও আবাহনীর সমর্থকরা মাঠ ছেড়েছেন মাথা নিচু করে। তবে নজরকাড়া ফুটবল উপভোগ করেছেন ক্রীড়াপ্রেমীরা। খেলার প্রথমার্ধেই ফাইনাল নিশ্চিত করে শেখ জামাল।
তিন গোলের সব কয়টিই হয় প্রথমার্ধে এবং ম্যাচের ইনজুরি টাইমে পেনাল্টি মিস করেন নর্দে।
কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত কোনো গোল না খাওয়া আবাহনীর রক্ষণভাগ গতকাল ছিল বেশ নড়বড়ে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে খেলা শুরুর পঞ্চম মিনিটেই এগিয়ে যায় জামাল। হঠাৎ করেই আক্রমণে যাওয়া জামালের হাইতিয়ান স্ট্রাইকার ওয়েডসন অ্যানসলেমে এগিয়ে নেন দলকে। নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার এমেকা ডার্লিংটনের লব ধরে আবাহনীর আগুয়ান গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে জালে পাঠান ওয়েডসন (১-০)।
শুরুতেই গোল পাওয়ায় আরও বেশি আক্রমণাত্দক হয়ে ওঠে গত তিন আসরের ফাইনালিস্টরা। ধানমন্ডির দলটির সাঁড়াশি আক্রমণে বেসামাল হয়ে পড়ে আবাহনীর রক্ষণভাগ। ২১ মিনিটে গোলসংখ্যা দ্বিগুণ করেন নর্দে। হাইতি জাতীয় দলের এই ফুটবলার গেল মৌসুমে চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্স করে ট্রেবল জিততে সহায়তা করেন শেখ রাসেলকে। এবার যোগ দেন শেখ জামালে এবং মৌসুমের প্রথম আসরেই ফাইনালে টেনে তোলেন জামালকে।
২১ মিনিটে আবাহনী দ্বিতীয় গোল খায় রক্ষণভাগের আতিকুর রহমান মিশুর ভুলে। মিশু ব্যাক পাস করেন গোলরক্ষককে। কিন্তু বলে গতি না থাকায় ফাঁকায় দাঁড়ানো নর্দে বল ধরে গোলরক্ষককে কাটিয়ে জালে পাঠান (২-০)। ৩৮ মিনিটে দলের ফাইনাল নিশ্চিত করেন নর্দে। স্বদেশি ওয়েডসনের পাস ধরে আবাহনীর গোলরক্ষককে পাস কাটিয়ে প্লেসিং শটে জালে পাঠান (৩-০)।
তিন গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় শেখ জামাল। অবশ্য খেলার ইনজুরি টাইমে যদি নর্দে পেনাল্টি মিস না করতেন, তাহলে টুর্নামেন্টের তৃতীয় হ্যাটট্রিক করতেন নর্দে। হ্যাটট্রিক না পেলেও নর্দের গোল ৪ ম্যাচে ৭টি। তিন গোলে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে আবাহনী। কিন্তু জামালের গোলরক্ষক জিয়ার নৈপুণ্যে ব্যবধান কমানো সম্ভব হয়নি আবাহনীর পক্ষে।
অবশ্য ৭৫ মিনিটে মিশুর জোরালো শট ক্রসবার ঘেঁষে বাইরে যায়। ওটাই ছিল আবাহনীর একমাত্র জোড়ালো আক্রমণ। ফাইনালে ওঠায় সন্তুষ্টি ঝরে পড়ে জামালের কোচ জোসেপ আপুচির কণ্ঠে, 'খেলোয়াড়দের চেষ্টার ফল এই জয়। গোলরক্ষক, রক্ষণভাগ, আক্রমণভাগ-প্রতিটি বিভাগেই দলের ফুটবলাররা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই জয় পাওয়াটা সহজ হয়েছে।
' আবাহনীর কোচ অমলেশ সেন শুরুতে গোল খাওয়াকে দোষারোপ করেছেন, 'শুরুতেই গোল খেয়ে খেলোয়াড়রা মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়ে। শুরুর ধাক্কা সামলে পরবর্তীতে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দল। নর্দে আমাদের আসলে একাই শেষ করে দেন। '
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।