আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারে

খুব ছোটবেলা থেকেই আমেরিকা দেশটি নিয়ে আমার এক ধরনের কৌতূহল ছিল। কোনো টিভি চ্যানেলে আমেরিকার কোনো দর্শনীয় স্থান দেখলেই আমি বিস্মিত হতাম এর বিশালত্ব দেখে। বারিধারার আমেরিকার দূতাবাসের সামনে দিয়ে যখন যেতাম, মনে মনে ভাবতাম ইস, আমার ভাগ্যেও যদি ভিসা জুটত!
একদিন আমি ইমগ্রান্ট ভিসা পেলাম। তারপর কাঙ্খিত এই দেশে এলাম অনেক স্বপ্ন নিয়ে। এখানে আসার পর কিছুদিনের মধ্যেই আমার সৌভাগ্য হলো মহকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারে যাওয়ার।

আমেরিকার প্রয়াত রাষ্ট্রপ্রধান জন এফ কেনেডির নামে এর নামকরণ করা হয়েছে।
ফ্লোরিডা থেকে মাত্র আড়াই ঘণ্টার মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম। এখানে বলে রাখা ভালো ঢাকা থেকে কক্সবাজারের যে দূরত্ব, ফ্লোরিডায় আমি যেখানে থাকি, সেখান থেকে অর্থাৎ ওয়েস্ট পামবিচ থেকে নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারের দূরত্ব তার চেয়েও অনেক বেশি। সুন্দর রাস্তা এবং ট্রাফিক সিগন্যালের চমৎকার ব্যবস্থাপনার জন্য আমেরিকাতে গাড়ি করে মাইলের পর মাইল পাড়ি দেয়া বিরক্তিকর কোনো ব্যাপার নয়। বরং সেটা একটু আনন্দের।


কেনেডি স্পেস সেন্টারে প্রবেশ করার সময় বুঝলাম টিকিটের মূল্য নেহাত কম নয়। মাথাপিছু ৭০ ডলার। মনে মনে চিন্তা করলাম ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য টিকিটের দাম একটু কম হলে ভালো হতো। তবে ভেতরে ঢুকতেই মনটা ভালো হয়ে গেল। আমার দুই চোখ তো বিস্ময়ে ছানাবড়া।

বিভিন্ন সময়ের ব্যবহূত বিশাল আকৃতির এক একটি রকেট দেখে বেশ অবাক হলাম। এতদিন যা টিভিতে দেখেছিলাম আজ সেই রকেটগুলো আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ছবি তোলার আর লোভ সামলাতে পারলাম না। ছবি তুললাম এবং রকেটগুলো ছুঁয়েও দেখলাম। ছবি তুলে দিল আমার ছোট ভাই নাজমুন আকিব।


আমার বিস্ময়ের ঘোর কিছুতেই যেন কাটছে না। এবার আসা যাক আমার চূড়ান্ত বিস্ময়কর অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গে। চাঁদে অবতরণকারী প্রথম মানব নীল আর্মস্টংয়ের ব্যবহূত মহাকাশ জ্যাকেট এবং সরঞ্জামাদি একটি জাদুঘরের মতো কক্ষে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কক্ষটিতে প্রবেশের পর আমি যেন অন্য জগতে হারিয়ে গেলাম এবং ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম সবকিছু। নীল আর্মস্ট্রয়ের জ্যাকেটটি ছুঁয়ে একটু উদাস হয়ে রইলাম বিস্ময়ের অনুভূতিতে।


যে যানে নীল আমস্ট্রং চাঁদের পৃষ্ঠে ঘুরে বেরিয়েছেন সেই বিশেষ যানগুলোর উপরে বসে দেখলাম চাঁদের মাটি। তবে কাছে গিয়ে স্পর্শ করার অনুমতি পেলাম না। তবে অনুভব করলাম মনে মনে। এরপর গেলাম মুভি থিয়েটার সেকশনে। এখানে মহাকাশযান সম্পর্কিত তথ্যচিত্র থ্রিডি প্রযুক্তির মাধ্যমে জীবন্তভাবে উপস্থাপনা করা হয়।

দুটো ডকুমেন্টারি দেখলাম।
একজন মহাকাশচারীর সঙ্গেও সাক্ষাতের সুযোগ হলো। আমরা তাঁর মহাকাশ ভ্রমণের সব অভিজ্ঞতা ও রোমাঞ্চকর নানা কাহিনি শুনলাম। এটা শুনে অডিটোরিয়ামে ভর্তি প্রায় একশ জনের মতো দর্শকদের হূদয় ছুঁয়ে গেল। পরে জানলাম এখানে প্রতিদিনই একজন মহাকাশচারী তাঁর অভিজ্ঞতা বলেন দর্শকদের উদ্দেশে।


এরপর আমরা আর একটি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম। কেনেডি স্পেস সেন্টারের ভেতর শ্বাসরুদ্ধকর একটি রাইড আছে। এটি মহাকাশযানের সরাসরি ‘সিমুলেশন’ অর্থাৎ মহাকাশযান মাটি থেকে নিক্ষিপ্ত হবার সময়ে শরীরে যে চাপ, যত ওপরে ওঠে তত ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতিগুলো কেমন হয় এবং মহকাশযান লক্ষ্যবস্তুতে প্রবেশের সময় কিরকম অনুভূুতির সৃষ্টি হয় তা ওই যানটিতে আরোহণ করলে বোঝা যাবে। আমরাও সেই অনুভূতিটা পেলাম বৈকি। তবে যাদের হার্ট দুর্বল তাদের এই যানটিতে না ওঠাই উত্তম।


যাদের পক্ষে সম্ভব তারা একবার হলেও ঘুরে যেতে পারেন নাসার রোমাঞ্চকর কেনেডি স্পেস সেন্টারে।
নাজমুস সাকিব
ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.