দেশে কালোটাকার পরিমাণ বাড়ছে। বিভিন্ন উপায়ে এ টাকা পাচারও হচ্ছে। এ স্বীকারোক্তি খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও অর্থসচিব ফজলে কবিরের।
গত সোমবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অর্থনীতিবিদ ও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রাক্-বাজেট আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অর্থমন্ত্রী এসব মন্তব্য করেন। এ সময় অর্থসচিবও উপস্থিত ছিলেন।
কালো অর্থনীতি নিয়ে আগে একটা সমীক্ষা করার কথা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, বছর দুয়েকের মধ্যে আবার একটা সমীক্ষা করা হবে।
কেন করা হবে—জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে কালো অর্থনীতি রয়েছে। মনে হচ্ছে, এটা বেড়েছে। ’ অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে একমত পোষণ করে অর্থসচিবও বলেন, ‘এটা বেড়েছে এবং বেড়ে যাচ্ছে। ’
শুধু তা-ই নয়, দেশ থেকে অর্থ পাচারও হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘পাচার যে হয়, সকলেই তা জানেন। প্রমাণ হচ্ছে, দেশে বিনিয়োগ খুবই নিম্নগামী। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় সঞ্চয়ের হার যদি ২৯ শতাংশ হয়, বিনিয়োগ সেখানে ২৪-২৫ শতাংশ হবে কেন?’—প্রশ্ন রেখে নিজেই উত্তর দেন অর্থমন্ত্রী, ‘তার মানে, অর্থ পাচার হচ্ছে। ’
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় শুরু হওয়া এ বৈঠক শেষ হয় রাত ১০টায়। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান, বাংলাদেশের প্রথম অর্থসচিব মতিউল ইসলাম, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, জামিলুর রেজা চৌধুরী ও এম হাফিজউদ্দিন খান, ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকসের পরিচালক কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ফাহমিদা খাতুন প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।
নতুন নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আগামী দিনে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার বেড়ে যাবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ইতিমধ্যে কিছু সংশোধন করেছে। তবে জিডিপির আকার বেড়ে যাবে বলে অবধারিতভাবে কমে যাবে কর-জিডিপি হার। অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এখন যে দাবি করছি, কর-জিডিপি হার ১৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, তা কিছুটা কমে যাবে। ’
বাজেট: অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আলোচনায় মৌলিক কিছু প্রশ্ন উঠেছে।
ভালো উপদেশ দিয়েছেন অনেকে। কিছু কাজ করব বলে জানিয়েছিও তাঁদের। তাঁরা বলেছেন, কর ফাঁকি ও কর আদায়ের জটিলতা কীভাবে রোধ করা যায়। অগ্রাধিকার খাত হিসেবে কেউ কেউ কারিগরি শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়নে সবাই জোর দিয়েছেন। ’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যে স্থিতিশীল অর্থনীতি, আমি মনে করি এখন উচ্চশিক্ষার গুণগতমানে নজর দেওয়া উচিত।
এত দিন আমরা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় জোর দিয়েছিলাম। ’
পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনতে পরিচালকদের দুই শতাংশ শেয়ার ধারণ যে বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল, আলোচনায় সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল। তাই এটা নিয়ে নতুন করে ভাবা হবে। ’
অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতি যতই ভালো হচ্ছে, ভবন তৈরির বিষয়টি ততই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
শিল্প স্থাপন করতে গেলে ১০-১৫টি জায়গা থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। আলোচনায় ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা বন্ধ করার পরামর্শ এসেছে। এ ব্যাপারে কিছু করার চেষ্টা থাকবে।
মানবসম্পদ উন্নয়নের কোনো পরিকল্পনা না থাকায় বিপুল পরিমাণ শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বেকার থেকে যাচ্ছে বলে অনেকে আলোচনা করেন—এ কথা স্বীকার করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বলা সহজ, করাটা কষ্টকর। ’
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) জন্য জমি অধিগ্রহণের নীতিমালা গ্রহণের পরামর্শ এসেছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, অধিগ্রহণের দুটি পদ্ধতি আছে। একটি হচ্ছে, বিশ্বব্যাংকের পদ্ধতি; অন্যটি সড়ক ও জনপথের। সহজ কিছু একটা করা হবে।
ই-টেন্ডারের সম্প্রসারণ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর কমানো, শহরাঞ্চলে করের আওতা বাড়ানোর উদ্যোগের কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকারি সংস্থার লোকসান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যৌক্তিক প্রশ্ন।
সংস্থা দুই ধরনের—সেবা সংস্থা ও বিভিন্ন কলকারখানা। সেবা সংস্থাগুলোতে লোকসান হতেই পারে, এগুলো আবার ঠিক লোকসানও না। জনকল্যাণে সরকারের ভর্তুকি। লোকসানি অন্য সংস্থাগুলো নিয়ে সত্যিই ভাবার আছে।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চলমান থাকবে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রকৃত বিচারে সামাজিক নিরাপত্তা আসতে আরও সময় লাগবে।
এটা অনেক বড় বিষয়।
বেসিক ব্যাংকের অনিয়ম-সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শিগগিরই ব্যবস্থা নিচ্ছি। দু-এক দিনের মধ্যেই তা দেখা যাবে। ’
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।