আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২০১২: জামাত শিবিরের তাণ্ডবের সাল

২০১২ সালেই একাত্তরের ঘাতক দল জামায়াত-শিবির চরম সহিংস হয়ে ওঠে। ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পন্ন করার জন্য আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হলেও ঘাতক দলটির ধারণা ছিল যে, এটা সরকারের একটা স্ট্যাট্রেজি। যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারে সরকার সিরিয়াস হবে না, গড়িমসি করে আগামী টার্মের জন্য মূলতবী রেখে দেবে। ততদিনে তারা বিএনপির ঘাড়ে চড়ে ক্ষমতায় এসে যাবে, যুদ্ধাপরাধের বিচার ভ-ুল হয়ে যাবে। কিন্তু বর্তমান সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছাড়াও বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার চাওয়ার বিভিন্ন সংগঠন আছে।

বামপন্থী দলগুলোসহ উদীচী, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরাম এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের তাবৎ বুদ্ধিজীবীরা মনেপ্রাণে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রত্যাশা করছেন। এদেরই দাবির ভিত্তিতে সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচারে বদ্ধপরিকর। বার বার প্রধানমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছেন, ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার কেউ ঠেকাতে পারবে না। ’ ঠিক এ কারণেই জামায়াত-শিবিরও গেল বছরের গোড়া থেকে চরম সহিংস হয়ে ওঠে। তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল করতে।

তারা সেই পুরনো জিঘাংসামূলক মন্ত্র গ্রহণ করেছে, ‘মরলে শহীদ, বাঁচলে গাজীÑ জান দিতেও রাজী। ’ তারা সুইসাইড স্কোয়াড পর্যন্ত গঠন করেছে। গত এক বছরে বিএনপি যতগুলো সমাবেশ, মহাসমাবেশ, করেছে সেসবকে জামায়াত-শিবির নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। পরিবেশ ঘোলা করেছে। চূড়ান্ত হঠকারিতামূলক কর্মসূচি পালন করেছে জামায়াত-শিবির।

দুঃসাহসের পরিচয় দিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করেছে, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে, পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়েছে, শত শত পুলিশকে জখম করেছে। সাংঘাতিক নাশকতামূলক পরিকল্পনা তারা হাতে নিয়েছে। পুরো বছর জমায়াত-শিবিরের ঘাতকরা সারা দেশে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়েছে। বিএনপির কর্মসূচিগুলোতে তারা যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচারাধীন তাদের শীর্ষনেতাদের পক্ষে শ্লোগান দিয়েছে, তাদের ছবি সম্বলিত প্লাকার্ড বহন করেছে। প্রতিটি জনসভায় তারা সরকারের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক শ্লোগান দিয়েছে।

২০১২ সালেই জামায়াত সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করেছে বর্তমান মহাজোট সরকারকে অচল করে দেয়ার লক্ষ্যে। এর পাশাপাশি শিবিরের পাঁচ হাজার সদস্য সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে একটি বিশেষ স্কোয়াড। এদের প্রতিজ্ঞা হচ্ছে, যে কোনো উপায়ে বিচার বানচাল করা। সারা বছর তারা যে ভাবে পুলিশের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা, কখনো প্রকাশ্য সংঘবদ্ধ হামলা চালিয়েছে, তাতে তাদের কার্যকলাপ রাষ্ট্রদ্রোহিতার পর্যায়ে পড়ে। তারা পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার ওপর অতর্কিতে হামলা চালিয়ে বাংলাদেশকে অচল করে দেবে।

এমনকি তারা গত ডিসেম্বরের প্রথমদিকে বিএনপির পথসভা থেকে ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা আন্তর্জাতিক বিচার ট্রাইব্যুনাল তছনছ করে দেবে। ২০১২ সালের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে রামু, পটিয়া, উখিয়া ও কক্সবাজারে জামায়াত-শিবিরের ধ্বংসাত্মক সাম্প্রদায়িক হামলা। তারা হামলা চালিয়েছিল সংখ্যালঘুদের উপাসনালায়ে। শত শত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নাগরিককে জখম করেছে। হিন্দু-বৌদ্ধ মন্দির তছনছ করেছে, ভগবান বৌদ্ধের শৈল্পিক মূর্তি ভাঙচুর করেছে।

বৌদ্ধ ও হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বসতবাড়ি। এদের সঙ্গে সহযোগী ভূমিকা পালন করেছিল মায়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা জঙ্গিরা। এ প্রসঙ্গে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, “গেল সেপ্টেম্বরে রামুসহ সন্নিহিত এলাকায় বৌদ্ধ সম্প্রদায় আক্রান্ত হলে আমরা প্রথমে এটিকে একটি আকস্মিক ঘটনা বলে ভাবতে চেয়েছিলাম। পরে সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হিন্দুদের এবং রংপুরের তারাগঞ্জে আহমদিয়াদের ওপর সহিংসতা ঘটলে আমাদের মনে হয়, এসবই পরিকল্পিত ঘটনা। সরকার ও প্রশাসন এসব ঘটনায় নির্লিপ্ত থাকলেও দেশ ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের মনে হয়েছে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা প্রয়োজন।

কারণ, সাম্প্রদায়িক শক্তি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করতে সাংগঠনিকভাবে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের মনে হয়েছে, যে আদর্শ ও স্বপ্ন নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম তা বিপন্ন হতে দেওয়া যায় না। ” দেশে সর্বপ্রথম সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সম্মেলনে দাঁড়িয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা বুদ্ধিজীবী ড. আনিসুজ্জামান এ কথা বলেন। ২০১২ সালে জামায়াত-শিবির এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল যে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এরা দেশোদ্রোহী ও সমাজবিরোধী।

দেশ ও জনগণের শত্র“। তাই যেখানেই জামায়াত-শিবির, সমাজবিরোধী ও খালেদা জিয়ার মদদপুষ্ট সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী দেখবেন, সেখানেই তাদের প্রতিহত করবেন। গত বছরের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের গাড়িতে শিবিরের সশস্ত্র হামলা। হামলা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। যদিও কয়েকদিনের আক্রমণে বহু পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

জয়পুরহাটে এক পুলিশ সদস্যের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। রাজশাহীতে এক পুলিশ সদস্যের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে পেটানো হয়েছে। খোদ রাজধানীতে এক সার্জেন্টকে দিন-দুপুরে নির্মমভাবে মারধর করেছে শিবির কর্মীরা। গত ১৩ নভেম্বর দিন-দুপুরে রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কে আইনমন্ত্রীর গাড়িতে হামলার চেষ্টা করা হয়। এতে ব্যর্থ হলেও তার এপিএস আকছির এম চৌধুরীর মাইক্রোবাসটি ভাঙচুর করে শিবির কর্মীরা।

পরে এক সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী জানান, তাকেই টার্গেট করা হয়েছিল। তবে মন্ত্রী নিরাপদে চলে গেলেও শিবিরের তা-বের মুখে পড়ে এক ট্রাফিক সাজেন্টসহ তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। ঢাকায় গত ১২ ও ১৩ নভেম্বর জামায়াত শিবিরের হামলা ছিলো পরিকল্পিত। হামলাকারীদের কাছে প্রচুর বিস্ফোরক ছিল। এছাড়া ক্যাডারদের কাছে ক্ষুদ্র আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াও ছোট ছোট ছুরি ও চাকু ছিল।

তবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেনি। মূলত আপৎকালীন মুহূর্ত মোকাবেলা করতেই এসব আগ্নেয়াস্ত্র বহন করেছিল ক্যাডাররা। ভবিষ্যতে এসব আগ্নেয়াস্ত্র বেপরোয়াভাবে ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের। জামায়াত শিবির বিভিন্ন দল উপদলে বিভক্ত হয়ে স্তরে স্তরে হামলা চালিয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা রিমান্ডে এমন তথ্য দিয়েছে।

দেখা যাচ্ছে, ২০১২ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরেই জামায়াত-শিবির সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সবচেয়ে বেশি সহিংস বেপরোয়া হয়েছে। এর কারণ, বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে যুদ্ধাপরাধ বিচারের রায় ঘোষণা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বহুল প্রতীক্ষিত এ রায় ঘোষিত হয়নি। প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধারা আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের সামনে মানববন্ধন করেছেন। তারা সরকারের কাছে যুদ্ধাপরাধের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার জোর দাবি জানান।

গত ২৮ নভেম্বর বিএনপি তথা ১৮ দলের মহাসমাবেশ থেকে জামায়াত নেতা মজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনী ব্যবস্থায় ক্ষমতায় এসেছে তা বন্ধ করে দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীর জীবনাশঙ্কাও তৈরি হতে পারে। ’ মজিবর রহমান আরো বলেন, ‘তাই বলছি, এখনো সময় আছে, নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নিন। নইলে আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের জনগণ এই দাবি বাস্তবায়ন করবে, এতে আপনার জীবনের অবসান পর্যন্ত হতে পারে। ’ একটি দেশের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে পরোক্ষভাবে হত্যার হুমকি দিয়ে জামায়াত-শিবির দেশবাসীকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছিল। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.