আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২০২৫ সালে মঙ্গলে বসত!

একবার এই মায়াভরা পৃথিবী ছেড়ে গেলে আর ফিরতে পারবেন না জেনেও দুই লাখের বেশি মানুষ মঙ্গল গ্রহে পাড়ি জমাতে চান। মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর এ আয়োজন করেছে নেদারল্যান্ডসের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান মার্স ওয়ান। দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে মঙ্গল যাত্রার এই কাজ। সিএনএন এক খবরে এ তথ্য জানিয়েছে।

সম্প্রতি মার্স ওয়ান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মঙ্গলে বসতি স্থাপনের জন্য লকহিড মার্টিন, সারে স্যাটেলাইট টেকনোলজি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে।

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০১৮ সালে মঙ্গলের উদ্দেশ্যে মনুষ্যবিহীন রোবোটিক যান পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। ২০২৫ সাল নাগাদ আবেদনকারীদের মধ্য থেকে চারজন সেখানে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করবেন।

১০ ডিসেম্বর মার্স ওয়ান প্রকল্পের প্রধান নির্বাহী ব্যাস ল্যানসড্রপ জানিয়েছেন, এ বছরের এপ্রিল মাসে মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা প্রকাশের পর থেকে অসংখ্য মানুষের সাড়া পাওয়া গেছে। দুই লাখের বেশি মানুষ মঙ্গলে স্থায়ীভাবে বসবাস করার ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলগ্রহে যাওয়ার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে।

দুই লাখ আবেদনকারীর মধ্যে থেকে উপযুক্ত নভোচারী বেছে নিতে শিগগিরই দ্বিতীয় পর্যায় শুরু করবে মার্স ওয়ান।

প্রথমে ২০২৩ সালে মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা থাকলেও আরও দুই বছর দেরি করে পাঠাতে চাইছে প্রতিষ্ঠানটি। মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর আগে সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিতেও আগ্রহ দেখিয়েছে মার্স ওয়ান। এ লক্ষে মার্কিন প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন মঙ্গল অধিবাসীদের বসবাসের ঘর নিয়ে এবং সারে স্যাটেলাইট টেকনোলজি যোগাযোগ প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করবে।

এ বছরের এপ্রিল মাসে ২০২৩ সাল নাগাদ মঙ্গল গ্রহে মানুষ পাঠানোর ও বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছিল ‘মার্স ওয়ান’।

মঙ্গলগ্রহে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে ইচ্ছুক এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে আবেদনপত্র চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। ১৮ বছরের বেশি বয়সের যে কারও মঙ্গলে যাওয়ার জন্য আবেদন করার সুযোগ ছিল। শর্ত ছিল যে, প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে কেবল চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত চারজন ব্যক্তিকেই শুধু মঙ্গল গ্রহে পৌঁছে দেওয়া হবে আর তাঁদেরকে জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করা হবে। পরবর্তীতে মঙ্গলগ্রহের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে অভিযাত্রীদের নিজেদেরই চেষ্টা করতে হবে মঙ্গলে বেঁচে থাকার জন্য।

পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে  সহজে অন্যলোকে পাড়ি দিতে চান না কেউ।

কিন্তু গন্তব্য যদি মঙ্গল হয় অন্যত্র বসতি গড়ার? সে ক্ষেত্রে মনে হয় হিসাবটা অন্য। এ কারণেই হয়তো মঙ্গল গ্রহে পাড়ি দিতে অসংখ্য মানুষ উত্সাহ দেখান। ৩১ আগস্ট ছিল রহস্যময় লালগ্রহে যেতে আগ্রহী ব্যক্তিদের নাম নিবন্ধন করার শেষদিন। এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৪০টি দেশের প্রায় দুই লাখ মানুষ এ জন্য আবেদন করেন। আবেদনকারীর সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষ স্থানে যুক্তরা, চীন, ব্রাজিল ও ভারত।

 

মঙ্গলে বসতি গড়া সম্ভব?

অনেকের কাছে শুধু বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মনে হলেও মার্স ওয়ানের কর্মকর্তারা মনে করেন, মঙ্গলে মানুষের বসতি স্থাপন সম্ভব। তাঁরা বলছেন, বর্তমান প্রযুক্তি ব্যবহার করেই মানুষ মঙ্গলে প্রথমবারের মতো পা রাখবে। এরমধ্যে মঙ্গল অভিযানে যাওয়ার সব পরিকল্পনা শেষ করে কাজে নেমে পড়েছে তারা। মঙ্গলে মনুষ্যবাহী প্রথম অভিযানের ব্যয় ধরা হয়েছে ছয়শো কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু এত অর্থ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটিকে কে যোগাবে? সে বন্দোবস্ত করে ফেলেছে মার্স ওয়ান।

স্পনসর জোগাড় হয়েছে। মঙ্গল অভিযানে দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থাও করছে প্রতিষ্ঠানটি।

ব্যাস ল্যান্ডড্রপসের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আবেদনকারীদের মধ্যে থেকে প্রথমে ৪০ জনকে নির্বাচন করা হবে এবং এদের প্রশিক্ষণ শেষে চূড়ান্তভাবে চারজনকে বেছে নেওয়া হবে। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে আবেদনকারীদের মধ্যে থেকে প্রাথমিক বাছাইয়ের মাধ্যমে চার জন করে মোট ছয়টি দল গঠন করা হবে। এরপর মঙ্গল অভিযানের উপযুক্ত করে তুলতে ৮ বছর ধরে প্রশিক্ষণ চলবে তাঁদের।

২০২৫ সালে চার নভোচারীর প্রথম দলটি মঙ্গলে যাবে। এরপর প্রতি দুই বছর পরপর নতুন অভিযাত্রীরা যোগ দেবেন তাদের সঙ্গে। এর আগে মঙ্গল গ্রহে চালানো হবে প্রাথমিকভাবে টিকে থাকার উপযোগী পরিবেশ নির্মাণের চেষ্টা। মহাকাশে মানুষের বসতি ছড়িয়ে দিয়ে সেখানে বংশবৃদ্ধি করার চেষ্টা করতে হবে। সেখানে বেঁচে থাকার মতো উপযুক্ত পরিবেশও তাদেরকেই তৈরি করে নিতে হবে।

মঙ্গল মিশন সফল করতে আগামী বছর একটি যোগাযোগ উপগ্রহ মঙ্গলের কক্ষপথে পাঠাবে মার্স ওয়ান। ২০১৮ সালে মঙ্গলে যাবে বিশেষ রোবোটিক্স যান। এরই মধ্যে খাবার, রসদ আর জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম পাঠানোর একাধিক পরিকল্পনাও রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মঙ্গলের বুকে প্রথম বসতি স্থাপনকারীদের জন্য শক্তির জোগান দিতে সৌর প্যানেল বসানো এবং গ্রহের পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে পানি ও অক্সিজেন তৈরির গবেষণাও চালাবে মার্স ওয়ান।

 

প্রায় অসম্ভব যাত্রা সম্ভব হতে পারে

মার্স ওয়ানের পরিকল্পনার সফলতা নিয়ে অনেক গবেষক সংশয়ে রয়েছেন।

তাঁদের দাবি, মার্স ওয়ানের এই পরিকল্পনার মধ্যে অনেক ‘যদি’ ও ‘কিন্তু’ রয়েছে। তাঁদের যুক্তি হচ্ছে যুক্তি নভোচারীদের অতি তেজস্ক্রিয়তার হাত থেকে বাঁচাতে এখন পর্যন্ত টেকসই কোনো প্রযুক্তি উন্নয়ন করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়াও দূর মহাকাশে পাড়ি দিতে যে দ্রুতগতির মহাকাশযান প্রয়োজন এখনও সে পর্যায়ে পৌঁছাতে দেরি আছে। তবে প্রতিকূলতা স্বত্বেও তোড়জোড় থেমে নেই। মার্স ওয়ানের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের বেসরকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সবার আগে মঙ্গল জয় করার প্রতিযোগিতা শুরু করেছে।

এ পৃথিবী ক্রমশ তার আকর্ষণ হারিয়ে ফেলছে, ধীরে ধীরে এই ধরিত্রী তার অধিবাসীদের কাছে বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে উঠছে! পৃথিবীর মায়া ছেড়ে মঙ্গলে যেতে লাখো আবেদন কী তারই প্রমাণ? তড়িঘড়ি মঙ্গল যাত্রার এ আয়োজন আর পৃথিবীর মায়া কাটানোর জন্য অসহিষ্ণু পৃথিবী বাসীর লাখো আবেদন দেখে বিভ্রম জাগাটাই স্বাভাবিক।

 

মার্স ওয়ানের ওয়েবসাইটের ঠিকানা

http://www.mars-one.com/en/ 

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।