প্রবীণ সাংবাদিক, কলামিস্ট এবিএম মূসা বলেছেন, সরকার গণমাধ্যমসহ বাকস্বাধীনতার ওপর পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। টক-শোয় কে আসবে না আসবে বলে দিচ্ছে। মান্নার (মাহমুদুর রহমান মান্না) অনুষ্ঠান কেড়ে নিয়েছে। যে কোনো সময় আমাকেও গ্রেফতার করা হতে পারে। আমি গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছি।
যখনই গণতন্ত্র বিপদাপন্ন হয় তখনই দেশে এ রকম আশঙ্কা দেখা যায়। তবে গণতন্ত্রের সুষ্ঠু শাসন ছাড়া পৃথিবীর কোথাও শান্তি আসেনি, আসবে না। জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে গতকাল অনুষ্ঠিত 'টেলিভিশন টক-শো : সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে নাগরিক উদ্বেগ' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভা শেষে প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসার পক্ষে একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করে শোনান নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। আলোচনায় অংশ নেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, ইতিহাসের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, নিউজ টুডে সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবির, সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, অধ্যাপক পিয়াস করিম, আমাদের অর্থনীতি সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, আইনের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, আইনজীবী ড. তুহিন মালিক প্রমুখ।
এবিএম মূসা তার সূচনা বক্তব্যে বলেন, দেশে প্রথম যখন মার্শাল ল জারি করা হয়েছিল তখন সাংবাদিকদের পেটানো হয়। এখনো এমন আঘাত আসবে। এলে তা প্রতিহত করতে হবে। দেশের রাজনীতিতে বিদেশিরা হস্তক্ষেপ করছেন- এ নিয়ে কেউ কেউ সমালোচনা করেন। কিন্তু তারা ভুলে যান, বিদেশিরা নাক না গলালে বাংলাদেশ স্বাধীনই হতো না।
তিনি বলেন, শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের অনেক সেনা আছে। দেশে যদি শান্তি না থাকে তাহলে একদিন এই সেনারা প্রশ্নের মুখে পড়বে যে তোমাদের দেশেই শান্তি নেই, তোমরা কীসের শান্তি রক্ষা করবে? রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশে বর্তমানে যে অবস্থা চলছে তা বাকশালপূর্ব সময়ের মতোই। এ অবস্থা চলতে পারে না। মাহমুদুর রহমান মান্না পঠিত ঘোষণাপত্রে বলা হয়, টক-শোয় স্বাধীন মতামত প্রকাশে সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিধিনিষেধ আরোপের অংশ হিসেবে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল থেকে টক-শোর উপস্থাপক পরিবর্তন করা হয়েছে। আমরা মনে করি, সরকার ও সব মহলের কার্যক্রম সমালোচনা করা বা ভিন্নমত প্রকাশ বা গঠনমূলক মতামত প্রদান করার অধিকার বাংলাদেশের সংবিধান নাগরিকদের প্রদান করেছে।
নির্বাচনকালীন বর্তমান সময়ে নাগরিকদের এ অধিকারের প্রয়োগ দেশের স্বার্থেই আরও বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকারের কর্তব্য হচ্ছে নাগরিকদের বাকস্বাধীনতাসহ মৌলিক অধিকার হরণকারী সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা। টক-শো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার মাধমে সরকার তার এ কর্তব্যের বরখেলাপ করছে। সরকারের এ ভূমিকা জনগণের মুক্তচিন্তা ও বাকস্বাধীনতার চর্চা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকিস্বরূপ। বক্তারা বলেন, সরকার গণমাধ্যমসহ বাকস্বাধীনতার ওপর পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়নি। সংবিধানের ৩৬ থেকে ৪২ অনুচ্ছেদ এখনো বলবৎ আছে। এ অধিকার হরণ করার অধিকার জনগণ কাউকে দেয়নি।
অথচ টক-শোয় যারা সরকারের সমালোচনা করেন বেসরকারি চ্যানেলগুলোর ওপর তাদের না ডাকতে এবং সরকারের পছন্দের আলোচকদের ডাকার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে।
এর আগে দেশের বরেণ্য কয়েকজন রাজনৈতিক বিশ্লেষকের ওপর হামলা, আক্রমণ ও হয়রানির মতো ঘটনা ঘটেছে বলেও আলোচকরা উল্লখ করেন।
টক-শো নিয়ন্ত্রণের এ অপচেষ্টাকে অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক বলে বক্তারা এ থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।