আন্দোলন নয়, যেন তালেবানি সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সারা দেশে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই তালেবানি সন্ত্রাসের আগুন, খুন আর ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির অন্যতম প্রতিষ্ঠান বিএনপি কতটা লাভবান? দেশের ইতিহাসে এ ধরনের নজির নেই। এমন গণতান্ত্রিক (!) আন্দোলনের চেহারা দেখেনি মানুষ। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পুরনো দিনের মানুষ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলছেন, এ কোন সর্বনাশা রাজনীতি? এ কোন আন্দোলনের নামে বর্বরোচিত সন্ত্রাস? কেউ হিসাব মেলাতে পারছেন না। টেলিভিশনের পর্দায় প্রতিদিন দেশ-বিদেশের মানুষ যে দৃশ্য দেখছে তাতে নিজ দেশকে কেউ চিনতে পারছে না।
এ যেন সেদিনের সন্ত্রাসকবলিত পাকিস্তান, আফগানিস্তান বা মধ্যপ্রাচ্যের সংকটকবলিত কোনো দেশের দৃশ্য। বাঙালি জাতি হিসেবে বিশ্ব ইতিহাসে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের যে ঐতিহ্য ছিল বর্ণময়, উজ্জ্বল ও গৌরবের আজ তা কলঙ্কের কালিমালিপ্ত এক অধ্যায়। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে পাটের গুদামে আগুন দিয়েছে সর্বহারা নামের গোপন দল। মানুষ হত্যার নামে শ্রেণীশত্রু খতমের রাজনীতি করেছে তারা। উগ্রপন্থিরা পুলিশফাঁড়ি, থানায় হামলা চালিয়েছে।
মানুষের শান্তির ঘুম কেড়ে নিয়েছে। সেই ইতিহাস দেশ ও মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনেনি। এবার সেই পুরনো নকশাল রাজনীতির লাল সন্ত্রাসের মতো সহিংস রাজনীতির উন্মত্ত খেলায় নেমেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। এই সর্বনাশা খেলায় নিরীহ পথচারী, অসহায় বিধবা নারী, কোমলমতি শিশু, দিন খেটে খাওয়া সিএনজি চালক থেকে সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক কর্মী কেউ রেহাই পায়নি। মানুষ মরছে।
পেট্রলবোমায় মানুষের শরীর ঝলসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। চলন্ত ট্রেনে ও বাসে আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারা হচ্ছে। এমন পাশবিক রাজনৈতিক কর্মসূচির দৃশ্য ব্রিটিশ-পাকিস্তান আমলেও দেখেনি বাংলাদেশ। শুধু মানুষ হত্যাই চলছে না, মানুষের গাড়ি, বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হচ্ছে। মানুষের শরীর যেখানে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে সেখানে সম্পদই বা কীসের? রেললাইন তুলে নেওয়া হচ্ছে।
নির্বিচারে গাছ কেটে সড়ক অবরোধের নামে চরম নৈরাজ্য চলছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকদের বাড়িতে আগুন দেওয়া হচ্ছে। এ দেশে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি একটি মধ্যপন্থি আধুনিক দল হিসেবে রাজনীতিতে অভিষিক্ত হয়েছিল। সেনাশাসন-উত্তর গণতন্ত্রের জমানায় দুবার ক্ষমতায় আসা বিএনপির অদূর ভবিষ্যতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনাও রয়েছে। সর্বশেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গণরায় পেয়েছিল।
কিন্তু চলমান রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থি শিবিরের আগ্রাসনে এতটাই পতিত হয়েছে যে যেন '৭১-এর পরাজিত জামায়াত-শিবির গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল বিএনপিকে গিলে খাচ্ছে। না হয় প্রধানমন্ত্রীর গণভবনের নৈশভোজের দাওয়াতকে উপেক্ষা করে এই রক্তাক্ত ধ্বংসের হোলিখেলার কর্মসূচিতে পা বাড়াত না। আজকের আন্দোলনের দৃশ্য অতীতের বিএনপির আন্দোলনের দৃশ্যের সঙ্গে মেলানো যায় না। ডান নয়, বাম নয় সোজাপথে হাঁটা বিএনপি আজ ডানে মোড় নিতে নিতে এই সহিংস সন্ত্রাসের আগুনে পুড়ে ছারখার হওয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দায় এড়াতে পারে না। বিএনপির ভেতরে ও আশপাশে থাকা দক্ষিণমুখী উগ্রপন্থিরা সরকার নয়, রীতিমতো জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।
এ যুদ্ধে দেশ ও মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছে। গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনায় বিকশিত মানুষ বিএনপি নামের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলটির কাছ থেকে এ ধরনের গণবিরোধী কর্মসূচি প্রত্যাশা করে না।
এ দেশের সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাসের ক্যানভাস তুলে আনার প্রয়োজন নেই। খালেদা জিয়ার প্রথম শাসনামলে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে যে আন্দোলন চালিয়েছিল তা ছিল নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক। সেই আন্দোলনে বাসযাত্রীদের পুড়িয়ে মারা হয়নি।
রেললাইন তুলে ফেলা হয়নি। চলন্ত ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়নি। মানুষ মরেছে পুলিশের গুলিতে। সেই আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সংসদ বর্জন করেছে শরিকদের নিয়ে। সংসদ থেকে পদত্যাগ করে মানিক মিয়া এভিনিউতে সমাবেশ করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা।
দুজন মেয়রকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম থেকে গণআন্দোলনের দাবানল জ্বালিয়েছিলেন এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে আর ঢাকায় তৎকালীন মেয়র মরহুম মোহাম্মদ হানিফের হাত ধরে জনতার মঞ্চে জনসে াত নামিয়ে গণঅভ্যুত্থান ঘটানো হয়েছিল। এ দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাস এটি। লগি-বৈঠার আন্দোলনে চার-পাঁচজন মানুষ মারা গেলেও শুধু মানুষ হত্যার অপরাধে আওয়ামী লীগের সেই আন্দোলন কলঙ্কিত হয়েছিল। আওয়ামী লীগের সারা জীবনের আন্দোলনের বর্ণাঢ্য ইতিহাসে ওই লগি-বৈঠার আন্দোলন চাঁদের গায়ে কলঙ্ক অাঁকার মতোই শোভা পাচ্ছে। সেনাশাসক এরশাদ জমানায় ভঙ্গুর বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তারুণ্যের স্লোগানে মুখরিত ছাত্রদলের ওপর নির্ভর হয়ে কঠিন সংগ্রামে গণজাগরণ ঘটিয়েছেন।
এ রকম নাশকতায় যাননি। সেই আন্দোলনেও পুলিশের গুলিতে মানুষ মরেছে। আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। তবুও আন্দোলনকারীরা গণতান্ত্রিক চেতনাবোধ থেকে বিচ্যুত হয়নি। পুলিশের ওপর আক্রমণ করেনি।
মানুষ হত্যার বীভৎস উন্মত্ত নেশায় মত্ত হয়নি। জনগণের জানমালের ওপর আঘাত করেনি। জনগণকে আন্দোলনে টেনেছিল। সেনাশাসন-উত্তর '৯১-এর নির্বাচনে জনরায় খালেদা জিয়ার বিএনপির পক্ষে গিয়েছিল। তেমনি '৯৬ সালে গিয়েছিল আওয়ামী লীগের পক্ষে।
এবারের শাসনামলে জনগণ সরকারের প্রতি নানা কারণে অসন্তুষ্ট বলেই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপিকে রায় দিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আন্দোলনের নামে যে লাল সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তার দায় কাঁধে নিয়ে বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনীতি কতটা সুখকর হবে সে প্রশ্ন রয়ে গেছে। এ ধরনের আন্দোলনের নামে নাশকতা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে না। গণতন্ত্রকে জীবন্ত কবর দেয়। তবুও এই সহিংস রক্তক্ষয়ী ও সম্পদহানির সন্ত্রাসনির্ভর অবরোধ-হরতালের জ্বালাও-পোড়াও নীতি থেকে বিএনপি এখনো সরে আসছে না।
প্রয়োজনে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে হলেও বিএনপিকে এই ভয়ঙ্কর অন্ধকার পথ থেকে ফিরে এসে তারানকো যে সংলাপের দুয়ার খুলে গেছেন সেখান থেকে গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও আন্দোলনের ঐতিহ্যের ধারায় ফিরতে হবে। একসময় সর্বহারা, নকশাল ও গণবাহিনীর অন্ধকার রাজনীতিকে মানুষ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধই নয়, আন্দোলনকারীদের ডাকাতের সঙ্গে তুলনা করত। এখনো এই সহিংস রাজনীতি যত চলছে মানুষের মৃত্যুর হার তত বাড়ছে। সম্পদহানি তো ঘটছেই, হামলার সঙ্গে সঙ্গে লুটতরাজও শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এলে বিএনপিকেও একটি মজবুত অর্থনীতি ও সমঝোতার রাজনীতির ওপর দাঁড়িয়ে পথ হাঁটতে হবে।
অতীতে যারা সন্ত্রাসের লাল আগুন ছড়িয়ে রাজনীতি করেছিল কালের বিবর্তনে তারা হারিয়ে গেছে। দেশ ও মানুষ অনেক লোকসান গুনেছে। আজকের বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি মানুষ ও দেশকেই নয়, বিএনপিকেও লোকসানের মুখোমুখি করতে যাচ্ছে। বিএনপি নামের গণতান্ত্রিক দলটিকে উগ্র সন্ত্রাসনির্ভর রাজনীতির পথে টেনে নিচ্ছে। এ পথ গণতান্ত্রিক বিএনপির নয়।
এ পথ উগ্র দক্ষিণী পথ। এখনো সময় আছে দেশ ও মানুষের কল্যাণে যদি হয় রাজনীতি, এখনো সময় আছে যদি ব্যক্তির চেয়ে দল ও দলের চেয়ে দেশ বড়- এই মর্মবাণী হৃদয়ে লালন করে থাকেন বিএনপির নেতৃত্ব তাহলে পেট্রলবোমা, আগুন, ককটেল বোমার সহিংস পথ ছেড়ে গণমুখী জনসম্পৃক্ত আন্দোলন ও আলোচনার পথে আসতে হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর চলমান অবরোধ আর হরতালের সহিংসতায় শিক্ষাব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। পরীক্ষা অসমাপ্ত রেখেই অনেক স্কুল-কলেজে শীতকালীন ছুটি দেওয়া হয়েছে। উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত গ্রামীণ কৃষক থেকে শিল্পপতি সবার কোমর ভেঙে দেওয়া হচ্ছে।
দেশের অর্থনীতির সর্বনাশা ঘণ্টা বেজে উঠেছে। চলমান অবরোধ-হরতালে এ পর্যন্ত ৭৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। ৩০ জন এখনো নিখোঁজ। অগি্নদগ্ধ, আহত ও পঙ্গু ১০ হাজার। ৫০ হাজার মামলার ফাঁদে বিএনপি নেতা-কর্মীরা।
এ দায় কে নেবে আজ? ঘরে ঘরে আতঙ্ক। সন্ধ্যা নামলেই নগর থেকে শহরে যেন কারফিউ জারি হয়ে যাচ্ছে। পেট্রলবোমার আতঙ্কে শিরদাঁড়া শিহরিত হয়ে উঠছে মানুষের। সন্তান ঘরে না ফেরা পর্যন্ত মা-বাবার ঘুম হারাম। স্বামী ঘরে না ফেরা পর্যন্ত বধূরা উদ্বেগ-আতঙ্কে পায়চারী করছেন আর মোবাইল ফোনে খোঁজ নিচ্ছেন।
কত লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ আজ প্রতিহিংসার রাজনীতির শ্বেতসন্ত্রাসে পুড়ছে। জ্বলছে নগর থেকে গ্রাম। কত শত শত শহীদের রক্তে, কত মায়ের বুক খালি করা দীর্ঘশ্বাস আর অশ্রুর বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্র আজ খাদের কিনারে। আন্দোলনের নামে, দানবীয় সন্ত্রাসে শুধু পরিবহন খাতে এরই মধ্যে ক্ষতি হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। পোশাক রপ্তানি খাত হাতছাড়া হতে চলেছে।
ক্ষতির পরিমাণ এক দিনে ৩০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। ২১টি কারখানার জরিপে ৯ দিনে ক্ষতির পরিমাণ ১৬৫ লাখ ডলার বা ১২৯ কোটি টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ খাতটিতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের কারখানায়ই ক্ষতি ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া গত দুই মাসে টেঙ্টাইল খাতে প্রায় ১ হাজার কোটি, প্লাস্টিক খাতে আড়াই হাজার কোটি, আবাসন শিল্পে ১ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বেতন বন্ধ হতে চলেছে বীমা খাতে। এ খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব বোর্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক দিনের অবরোধে রাজস্ব আদায় ব্যাহত হয় ৪০ কোটি টাকা।
এই রাজনীতি ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির করে দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহে যতটা উদার, দেশের অর্থনীতি, শিল্প-বাণিজ্য মাথায় রেখে আন্দোলন কর্মসূচি দিতে তার চেয়ে বেশি রক্ষণশীল ও দায়িত্বহীন।
সরকারের সমালোচনা পাঁচ বছর পরতে পরতে অনেক করেছি। সরকারের ভুল আর ভুলের মাশুল সরকার গুনেছে অনেক। মধ্যরাতের টক-শো থেকে মফস্বলের চায়ের দোকানে সিভিল সোসাইটি থেকে সাধারণ মানুষ সমালোচনায় মুখর থাকে পাঁচটি বছর। সব শাসক ভুল করে। এবারের শাসকও ভুল করেছে অনেক।
কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনায় অভিজ্ঞ বিএনপি বারবার জনরায়ে অভিষিক্ত হওয়া সত্ত্বেও দেশ ও জনগণের জানমালের বিরুদ্ধে সহিংস তাণ্ডবনির্ভর যে কর্মসূচি নিয়ে পথ হাঁটছে, দক্ষিণপন্থিদের আগ্রাসনের শিকার হয়ে উগ্র হঠকারী পথ নিয়ে যে একের পর এক সহিংস কর্মসূচি দিচ্ছে এর উত্তরে অর্জনটা কী- তা বিশ্লেষণ করার এখন সময় এসেছে। এই সর্বনাশা মানুষ হত্যার ও সম্পদহানির রাজনৈতিক কর্মসূচির বিনিময়ে বিএনপি না পারল সরকার হটাতে, না পেরেছে দাবি আদায় করতে, না পেরেছে জনগণের হৃদয় জয় করতে। উল্টো সরকারের ভুলের কারণে যে জনসমর্থন কুড়িয়েছিল তা আগামীতে হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এ দেশের ব্যবসায়ীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিএনপিকে সমর্থন জুগিয়েছে অতীতে। মানুষও গণরায় দিয়েছে।
এই চলমান সহিংস রাজনীতি বিএনপিকে অন্ধকার পথে টেনে নিয়ে যাচ্ছে যেখানে অর্জন শূন্য হলেও প্রশ্ন অনেক। কোনো অদৃশ্য শক্তির ইন্ধনে তো বিএনপি এই অন্ধকার পথে হাঁটছে না?
পুরান ঢাকার চকবাজার, মৌলভীবাজারের ৪০টি ব্যবসায়ী সংগঠনের হিসাবে প্রতিদিন সেখানে ৩০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়। অবরোধের কারণে তা বন্ধ রয়েছে। এতে ব্যবসায়িক ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার কোটি টাকার ওপর। অবরোধে ঢাকা শহরের প্রায় ৪০টি মার্কেট বন্ধ থাকে।
মানুষ জিম্মির এ কোন সর্বনাশা রাজনীতি? কে এ রাজনীতির বংশীবাদক? কার বাঁশির সুরে বিএনপি ছুটছে অজানা পাহাড়ের ওপারে? খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির হিসাবে এ পাইকারি বাজারটিতে মুদিপণ্য বিক্রি হয় দৈনিক ৩০০ কোটি টাকার ওপর। অবরোধে তার ১০ ভাগও এখন বিক্রি হয় না। আমদানি-রপ্তানির ৮০ শতাংশ হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। প্রতিদিন এ বন্দর দিয়ে গড়ে ২ হাজার কনটেইনার পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়। প্রথম দফার দুই দিনের অবরোধেই প্রতিদিন মাত্র ৭০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ কনটেইনার ওঠানামা করেছে এ বন্দর দিয়ে।
পণ্য খালাস ও জাহাজীকরণ বিঘ্ন ঘটায় ব্যবসায়ীদের শুধু লোকসানই গুনতে হচ্ছে। দোকান মালিক সমিতি বলছে, তাদের হিসাবে ঢাকা শহরের দোকান প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হলো ৩ লাখ। আর সারা দেশে ২৫ লাখ। অবরোধে বন্ধ থাকায় প্রতিদিন ক্ষতি হয় ৪০০ কোটি টাকা। রাজনৈতিক সহিংসতায় পোলট্রি শিল্পে তিন মাসে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।
বন্ধ হয়েছে ৩০ ভাগ খামার।
১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে গাজীপুরে কাভার্ড ভ্যানে অবরোধকারীদের দেওয়া আগুনে আদম আলীর সামনে তার স্ত্রী সুমি আক্তার ও এক মেয়ে সানজিদা পুড়ে মারা যান। ছোট মেয়ে সাদিয়াকে নিয়ে দ্রুত নেমে আদম আলী প্রাণে বাঁচলেও দগ্ধ হন।
বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া এ দেশের গণতন্ত্রের আন্দোলন ও রাষ্ট্র পরিচালনায় আপনার ভূমিকা ও অবদান অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু সাদিয়াকে নিয়ে অগি্নদগ্ধ পিতা আদম আলীদের কান্না শুনতে আপনি নেতাদের নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ঘুরে আসুন।
এই লাল সন্ত্রাসের রাজনীতি আপনার বিএনপির জন্য কী অর্জন এনেছে আর কী দিয়েছে দেশ ও মানুষকে- রাতের ইবাদতে বসার আগে উপরে আল্লাহকে রেখে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন। আপনার প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। আপনি গণতন্ত্রের আন্দোলনের নেত্রী ও দুবারের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আপনার দলের ঘোষিত এ রাজনীতির প্রতি আমাদের নূ্যনতম সমর্থন নেই। এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে আমি যেমন নিরাপদ নই, তেমনি আমার সন্তানরাও নিরাপদ নয়।
আমি যতক্ষণ বাইরে থাকি আমার ৯ বছরের শিশুকন্যা চন্দ্রস্মিতা বারবার মুঠোফোনে আমাকে ডাকে। এভাবে সব সন্তানই তাদের কর্মস্থলে থাকা প্রিয় বাবা-মাকে ডাকে। বোন ডাকে ভাইকে। মা ডাকে বুকের ধন সন্তানকে। আর স্ত্রী ডাকে স্বামীকে।
আপনাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি বাহির ও ভেতর সর্বত্র আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে। দেশের মানুষ কেউ নিরাপদবোধ করছে না। দোহাই বিরোধীদলীয় নেতা, রাজনীতিতে যদি দেশ ও মানুষ বড় হয়ে থাকে তাহলে এই সহিংস কর্মসূচি থেকে আমাদের মুক্তি দিন। আল্লাহ আপনাদের সবার মঙ্গল করুন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।