মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর পরিচিতি
একাত্তরের পহেলা মার্চ থেকেই বাঙালির মুক্তির দুত বঙ্গবন্ধুর আহবানে দেশ জুড়ে শুরু হল অসহযোগ আন্দোলন। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধু এবং তার সহকর্মীরা প্রমাণ করলেন যে, একটি স্বাধীন দেশ পরিচালনার সকল নৈতিক ও প্রশাসনিক সক্ষমতা বাঙালির রয়েছে।
১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল স্বাধীন বাংলা দেশের প্রবাসী সরকারের বৈঠকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তাতে সিদ্ধান্ত হয় যে, প্রধান সেনাপতি অফিসারদের একটি তালিকা প্রস্তুত করবেন। সেনা কমান্ডকে সমন্বিত করে কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে।
জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী তাজউদ্দিনের সভপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রীপরিষদের বৈঠকে যুদ্ধ পরিস্থিতির সঠিক পর্যালোচনা করে সুষ্ঠু প্রশাসনিক ব্যবস্থার অধীন যুদ্ধ অঞ্চল (সেক্টর) গঠনের সিদ্ধান্ত হয় এবং এই লক্ষ্য্যে জরুরী ভিত্তিতে সমন্বয় সভা আহবানের জন্য কর্নেল ওসমানীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়া হয়।
এরপর ১০ থেকে ১৭ জুলাই কলকাতায় সেক্টর কমান্ডারদের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সম্মেলনেই নির্ধারণ করা হয়, বাংলাদেশকে কয়েকটি সেক্টরে ভাগ করা হবে, কে কে সেক্টর কমান্ডার হবেন, কয়টি ব্রিগেড তৈরি, কোনটার কমান্ডার কে হবেন। ১১ জুলাই ১৯৭১ মুজিবনগরে উচ্চপদস্থ ও সামরিক কর্মকর্তাদের বৈঠকে মুক্তিবাহিনীর যুদ্ধষ্কাল ও যুদ্ধকৌশল সম্মন্ধে বিস্তারিত আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সেখানে কর্ণেল আতাউল গনি ওসমানিকে মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক নিয়োগ করা হয়।
লে: কর্ণেল আব্দুর রব সেনা প্রধান ও গ্র“প ক্যাপ্টেন একে খন্দকার উপ-প্রধান নিযুক্ত হন। এই সম্মেলনে বাংলাদেশের সমস্ত যুদ্ধাঞ্চলকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। প্রতিটি সেক্টরের নেতৃত্বে ছিলেন একজন সেক্টর কমান্ডার। ১০ম সেক্টরটি সর্বাধিনায়কের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। ১০ম সেক্টরের অধীন ছিলো নৌ কমান্ডো এবং সর্বাধিনায়কের বিশেষ বাহিনী।
সেক্টর কমান্ডার নিজ নিজ সেক্টরের যুদ্ধ পরিচালনা করতেন। সুষ্ঠুভাবে যুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার্থে প্রতিটি সেক্টরকে কয়েকটি করে উপসেক্টরে ভাগ করা হয়। নি¤েœ সেক্টর ও উপ-সেক্টর গুলোর বিবরণ দেয়া হল:
সেক্টর বিস্তৃতি কমান্ডার সাবসেক্টর সমূহ (কমান্ডার)
১ চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ফেনী নদী পর্যন্ত মেজর জিয়াউর রহমান (১০ এপ্রিল ৭১ থেকে ২৫ জুন ৭১ পর্যন্ত)
মেজর রফিকুল ইসলাম (২৮ জুন ১৯৭১ থেকে ১৪ ফেব্র“য়ারি ১৯৭২ পর্যন্ত)
১. রিশিমুখ (ক্যাপ্টেন শাসসুল ইসলাম)
২. শ্রীনগর (ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান, ক্যাপ্টেন মাহফুজার রহমান)
৩. মানুঘাট , (ক্যাপ্টেন মাহফুজার রহমান)
৪.তাবাল ছড়ি — সার্জেন্ট আলী হোসেন
৫. দিমা গিরি — আর্মি সার্জেন্ট
২
নোয়াখালী জেলা কুমিল্লা জেলার আখাউড়া ভৈরব রেল লাইন পর্যন্ত এবং
ফরিদপুর ও ঢাকার অংশ বিশেষ মেজর খালেদ মোশাররফ (১০ এপ্রিল ১৯৭১ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত)
মেজর এটিএম হায়দার (২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ থেকে ১৪ ফ্রেবুয়ারি ১৯৭২ পর্যন্ত) ১. গঙ্গাসাগর, আখাউড়া এবং কসবা (মাহবুব , লেঃ ফারুক এবং লেঃ হুমায়ুন কবীর)
২. মন্দাভব — (ক্যাপ্টেন গফুর)
৩. সালদা-নদী (মাহবুব হাসান)
৪. মতিনগর—(লেফটেন্যান্ট দিদারুল আলম)
৫. নির্ভয়পুর—ক্যাপ্টেন আকবর, লেঃ মাহবুব)
৬. রাজনগর (ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম, ক্যাপ্টেন শহীদ, লেঃ ইমামুজ্জামাম)
৩ সিলেট জেলার হবিগঞ্জ মহকুমা, কিশোরগঞ্জ মহকুমা, আখাউড়া ভৈরব লাইন থেকে উত্তর পূর্ব দিকে কুমিল্লা ও ঢাকা জেলার অংশ বিশেষ মেজর কে এম শফিউল্লাহ (১০ এপ্রিল ১৯৭১-২১ জুলাই ১৯৭১ পর্যন্ত),
মেজর এ এন এম নুরুজ্জামান (২৩ জুলাই ১৯৭১ থেকে ১৪ ফেব্র“য়ারি ১৯৭২ পর্যন্ত) ১. আশ্রমবাড়ী (ক্যাপ্টেন আজিজ, ক্যাপ্টেন ইজাজ)
২. বাঘাইবাড়ী (ক্যাপ্টেন আজিজ, ক্যাপ্টেন ইজাজ)
৩. হাতকাটা (ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান,
৪. সিমলা ( গাইমনতলা (ক্যাপ্টেন এম এস এ ভুঁইয়া)
৫. বঞ্চবাটি (ক্যাপ্টেন নাসিম)
৬. মনতালা (ক্যাপ্টেন এম এস এ ভুঁইয়া)
৭. বিজয়নগর(ক্যাপ্টেন এম এস এ ভুঁইয়া)
৮. কালাচ্ছরা (লেঃ মজুমদারÑ)
৯. কলকলিয়া (লেঃ গোলাম হেলাল মোর্শেদ)
এবং
১০. বামুতিয়া (লেঃ সাঈদ)
বাঢ়াইবাড়ী- ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান
হাতকাটা- ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান
সিমলা- ক্যাপ্টেন মতিন
পঙ্কবটি- ক্যাপ্টেন নাসিম
মনতালা- ক্যাপ্টেন এম এস এ।
কালাছড়া - লেফটেন্যান্ট মজুমদার
৪ সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল এবং খোয়াইÑসায়েস্তাগঞ্জ রেললানই বাদে পূর্ব ও উত্তর দিকে সিলেটÑজেলার ডাউকি সড়ক পর্যন্ত মেজর চিত্তরঞ্জন দত্ত (১০ এপ্রিল ১৯৭১ থেকে ১৪ ফেব্র“য়ারি ১৯৭২ পর্যন্ত) ১. জালালপুর (মাহবুবর রব সাদী
২. বাড়াপুঞ্জি- ক্যাপ্টেন এ রব
৩. আমলা মিদ - লেফটেন্যান্ট জহির
৪. কুকিতাল - ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট কাদের ও ক্যাপ্টেন শরিফুল হক
৫. কৈলাস শহর - লেফটেন্যান্ট ওয়াকিউজ্জামান এবং
৬. কামালপুর - ক্যাপ্টেন এনাম
৫ সিলেট ডাউকি সড়ক থেকে সিলেট জেলার সমগ্র উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চল মেজর মীর শওকত আলী (১০ এপ্রিল ১৯৭১ থেকে ১৪ এপ্রিল ১৯৭২ পর্যন্ত) ১. মুক্তাপুর - সার্জেন্ট নাজির, মুক্তিযোদ্ধা ফারুক ছিলেন সেকেন্ড ইন কমান্ড
২. ডাউকি- সার্জেন্ট মেজর বিআর চৌধুরী
৩. শিলা - ক্যাপ্টেন হেলাল
৪. ভোলাগঞ্জ - লেফটেন্যান্ট তাহের উদ্দিন আখঞ্জী
৫. বালাট- সার্জেন্ট গনি, ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন, এনামুল হক চৌধুরী
এবং
৬. বারাচ্ছড়া- (ক্যাপ্টেন মুসলিম উদ্দিন)
৬ সমগ্র রংপুর জেলা এবং দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহকুমা উইং কমান্ডার মোঃ খাদেমুল বাশার (১০ এপ্রিল ১৭১ থেকে ১৪ ফেব্রয়ারি ১৯৭২ পর্যন্ত) ২. ভজনপুর- ক্যাপ্টেন নজরুল, ফ্লাইট ক্যাপ্টেন সদরুদ্দিন এবং ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার)
৩. পাটগ্রাম - মতিয়ার রহমান
৩. সাহেবগঞ্জ- ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ উদ্দিন
৪. মোগলহাট-ক্যাপ্টেন দেলোয়ার
৫. চিলাহাটী (ফ্লাইট লেঃ ইকবাল)
৭ দিনাজপুর জেলার দক্ষিণাঞ্চল বগুড়া, রাজশাহী এবং পাবনা জেলা মেজর নাজমুল হক (১০ এপ্রিল থেকে ১৯৭১ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত) দূর্ঘটনায় নিহত।
মেজর কাজী নুরুজ্জামান (২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ থেকে ১৪ ফেব্র“য়ারি ১৯৭২ পর্যন্ত) ১. মালন - ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর
২. তপন - মেজর নাজমুল হক
৩. মেহেদিপুর সুবেদার ইলিয়াছ, ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাগাঙ্গীর
৪. হামজাপুর - ক্যাপ্টেন ইদ্রিস
৫. আঙিনাবাদ (অজানা মুক্তিযোদ্ধা)
৬. শেখ পাড়া- ক্যাপ্টেন রশিদ
৭. ঠোকরাবাড়ী- সুবেদার মুয়াজ্জেম)
৮. লাল গোলা- ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী
৮ সমগ্র কুষ্টিয়া ও যশোর জেলা ও যশোর জেলা,
ফরিদপুরের অধিকাংশ এলাকা এবং দৌলতপুর-সাতক্ষিরা সড়কের উত্তরাংশ মেজর আবু ওসমান চৌধুরী (১০ এপ্রিল ১৯৭১ থেকে ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ পর্যন্ত)
মেজর এম এ মঞ্জুর (১৪ আগস্ট ১৯৭১ থেকে ১৪ ফেব্র“য়ারি ১৯৭২ পর্যন্ত) ১. বয়ড়া- ক্যাপ্টেন খন্দকার নাজমুল হুদা
২. হাকিমপুর- ক্যাপ্টেন সাফিউল্লাহ
৩. ভোমরা- ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন, ক্যাপ্টেন শাহাবুদ্দিন
৪. লালবাজার- ক্যাপ্টেন এ আর আজম চৌধুরী
৫. বনপুর- ক্যাপ্টেন মোস্তাফিজুর রহমান
৬. বেনাপোল- ক্যাপ্টেন আবুল হালিম, ক্যাপ্টেন তৌফিক ইলাহী চৌধুরী
৭. শিকারপুর- কাপ্টেন তৌফিক ইলাহী চৌধুরী, ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর
৯ দৌলতপুর-সাতক্ষিরা সড়ক থেকে খুলনার দক্ষিণাঞ্চল
এবং বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা মেজর এম এ জলিল (১০ এপ্রিল ১৯৭১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত)
মেজর জয়নুল আবেদীন (২৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ১৪ ফেব্র“য়ারি ১৯৭২ পর্যন্ত) ১. তাকি
২. হিঞ্জালগঞ্জ
৩. শমসের নগর
১০ কোন আঞ্চলিক সীমানা নেই।
নৌবাহিনীর কমান্ডো দ্বারা গঠিত। শত্র“ পক্ষের নৌযান ধ্বংসের জন্য বিভিন্ন সেক্টরে পাঠানো হত। - -
১১ কিশোরগঞ্জ মহকুমা বাদে সমগ্র মায়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলা এবং নগর বাড়ী ও আরিচা থেকে ফুলছড়ি- বাহাদুরাবাদ থেকে যমুনা নদী তীর অঞ্চল মেজর জিয়াউর রহমান (২৬ জুন ১৯৭১ থেকে ১০ অক্টোবর ১৯৭১ পর্যন্ত)
মেজর আবু তাহের (১০ অক্টোবর ১৯৭১ থেকে ০২ নভেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত—)
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট এম হামিদুল্লাহ খান (০২ নভেম্বর ১৯৭১ থেকে ১৪ ফেব্র“য়ারি ১৯৭২ পর্যন্ত) ১. মানকারচর-স্কোয়াড লিডার এম হামিদুল্লাহ খান
২. মাহেন্দ্রগঞ্জ- মেজর আবু তাহের, লেঃ মান্নান
৩. পুরাখাসিয়া- লেফটেন্যান্ট হাশেম
৪. ধালু- লেফটেন্যান্ট তাহের, লেফটেন্যান্ট কামাল
৫. রংগ্রা- মতিউর রহমান
৬. শিভাবাড়ী (ইপি আর এর জুনিয়র কমিশন অফিসারদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়)
৭. বাঘমারা(ইপি আর এর জুনিয়র কমিশন অফিসারদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়)
৮. মাহেশখোলা (ইপি আর এর জুনিয়র কমিশন অফিসারদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়)
টাঙ্গাইল সেক্টর সমগ্র টাঙ্গাইল জেলা ছাড়াও ময়মনসিংহ ও ঢাকা জেলার অংশ কাদের সিদ্দিকী
আকশপথ বাংলাদেশের সমগ্র আকাশসীমা গ্র“প ক্যাপ্টেন এ.কে খন্দকার
গেরিলা সংগঠনের তালিকাঃ
কর্ণেল ওসমানী তিনটি ব্রিগেড আকারের ফোর্স গঠন করেছিলেন যেগুলোর নামকরণ করা হয় তাদের অধিনায়কদের নামের আদ্যাংশ দিয়ে (এস ফোর্স, কে ফোর্স, জেড ফোর্স)
* জেড ফোর্সের অধিনায়ক — মেজর জিয়াউর রহমান
* ‘কে’ ফোর্সের অধিনায়ক — মেজর খালেদ মোশাররফ
* ‘এম’ ফোর্সের অধিনায়ক — মেজর কে এম সফিউল্লাহ
সংগ্রহঃ
১. লক্ষ্যপ্রাণের বিনিময়ে-মেজর রফিকুল ইসলাম
২. আমি বিজয় দেখেছি-আম আখতার মুকুল
৩. িি.ি রিশরঢ়বফরধ.ড়ৎম
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।