ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা সোমবার বিজয় দিবসে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের অনুষ্ঠানে না যাবার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বাংলাদেশের সরকার।
রীতি অনুযায়ী এ দিনে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে প্রথমে রাষ্ট্রপতি এবং পরে প্রধানমন্ত্রী সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পরপরই বিদেশী কূটনীতিকরাও সেখানে উপস্থিত থাকেন।
কিন্তু এবার যোগ দেননি ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা ।
রোববার বিকেল পাঁচটার দিকে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতের অফিস থেকে এক বার্তায় জানানো হয় যে এবার বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে তারা যোগ দিচ্ছেন না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যোগ না দেবার কারণ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন দুটি বিষয় উল্লেখ করে।
প্রথমত, সোমবার তাদের একটি সমন্বয় সভা আছে এবং দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তারা একটি প্রতিবেদন তৈরি করছেন যেটি ইউরোপীয় পার্লামেন্ট তারা জমা দেবেন।
এই দুটি কারণে ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা ব্যস্ত থাকবেন বলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়।
কিন্তু এই বার্তা পাবার পরপরই গতকাল বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিক থেকে অসন্তুষ্টি এবং ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে আরেকটি বার্তা পাঠানো হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাল্টা নোট
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান , “ চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ চিন্তাই করতে পারছেনা যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগদান থেকে বিরত থাকতে পারে। বিজয় দিবস বাংলাদেশের মানুষের আবেগ এবং গর্বের বিষয়।
“
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে আরও বলা হয় , বাংলাদেশের বিজয় দিবসের মতো রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে বিদেশী কূটনীতিকদের যোগ না দেবার ঘটনা অতীতে কখনোই ঘটেনি।
বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ না দেয়া বাংলাদেশের মানুষের প্রতি অশ্রদ্ধা এবং অবমাননাকর বলেও জানানো হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নকে।
কিন্তু রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিক থেকে এ ধরনের প্রতিক্রিয়ার পরও সাভারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যাননি ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা।
তবে সকালের দিকে রাষ্ট্রদূতরা একটি বৈঠক করে পরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবার সিদ্ধান্ত নিয়ে সেখানে যোগ দেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদিও সমন্বয় সভার কথা বলে স্মৃতিসৌধে যায়নি, কিন্তু বিষয়টিকে ঢাকায় অনেকে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান বয়কট হিসেবে দেখছেন।
সরকারের প্রতি বার্তা?
ইউরোপীয় কূটনীতিকদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে , বাংলাদেশের এমন একজন সাবেক কূটনীতিক বলেন স্মৃতিসৌধে না যাবার বিষয়টি অস্বাভাবিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই বাংলাদেশী কূটনীতিক মনে করেন এই ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশ সরকারকে হয়তো কোন বার্তা দিতে চেয়েছে।
সাবেক ওই কূটনীতিক বলেন , “আমার কাছে মনে হয়েছে – বাংলাদেশের বর্তমান সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আসছে নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে পরিষ্কার অসন্তুষ্টি রয়েছে। তাছাড়া কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার বিষয়টিকে সহজভাবে নিচ্ছে না তারা। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন নীতিগতভাবে মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে।
“
বিষয়টি নিয়ে ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম হানার সাথে কথা বলতে চাইলে জানানো হয় এনিয়ে তিনি আপাতত কথা বলবেন না।
ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন অনুষ্ঠান বয়কট করার মতো কোনো বিষয় এখানেই নেই।
সেই কর্মকর্তা বলেন, “যদি বয়কট হতো তাহলো তো রাষ্ট্রদূতরা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যেতে না । তারা তো সেখানে যোগ দিয়েছেন। ”
ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিক থেকে সে সমন্বয় সভার কথা বলা হচ্ছে সেটি শুরু হয়েছিল সকাল সাড়ে দশটার পরে।
কিন্তু স্মৃতিসৌধের আনুষ্ঠানিকতা সাধারণত সকাল সাতটার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। তাহলে কেন তারা যোগ দিলেন না? এই প্রশ্নে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সেই কর্মকর্তা কিছু বলেন নি।
তিনি শুধু বলেন সমন্বয় সভা একটি জরুরি বিষয় এবং ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা সেই সভা করে থাকেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ ধরনের সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক একজন কূটনীতিক আশফাকুর রহমান।
মি. রহমান বলেন, “স্মৃতিসৌধের আনুষ্ঠানিকতা রাষ্ট্রীয় বিষয়।
এটা সরকারের কোনো বিষয় নয়। দলমত নির্বিশেষে সবাই তো স্মৃতিসৌধে যায়। ”
তিনি বলেন স্মৃতিসৌধে না গিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা এ দেশের মানুষের অনুভূতিকে অসম্মান দেখিয়েছেন।
মি. রহমান বলেন , “তারা সরকারকে কোনো বার্তা দিতে চেয়েছে কি না সেটা আমার জানা নেই। কিন্তু যদি সেটা হয়েও থাকে, স্মৃতিসৌধে না যাওয়াটা মোটেও ঠিক হয়নি।
তারা ভুল করেছে। ” সূত্র: বিবিসি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।