একটা সময়ে লেখক-কবিদের দেশের আত্মা বলা হতো। একেকজন সাহিত্যিক নিজের লেখার মাধ্যমে নিজের দেশকে, সমাজকে, সংস্কৃতিকে ধারন করতেন। এখন রাস্তাঘাটে ব্লগার দেখা যায়। দু-চারটা কথা বাংলায় টাইপ করলো, অমনি একেকজন নিজেদের বিরাট কবি-লেখক-সাহিত্যিক ভাবা শুরু করলো। এখন শুরু হয়েছে ফেসবুকীয় সাহিত্য।
ফেসবুকে বাংলায় স্টেটাস লেখো, যারা যারা তোমার লেখা পছন্দ করে, তারা লাইক দিয়ে যায়। তাদের মন্তব্যও পাওয়া যায়। লেখক না হয়েও, লেখক হবার খানিকটা তৃপ্তি উপভোগ করা যায়।
সমস্যা হচ্ছে ওদের লেখার ভাষা নিয়ে। গালাগালি ছাড়া যেন কারোরই লেখা এগোতে চায়না।
রাস্তার মানুষের ভাষা এবং ছাপার অক্ষরের ভাষার মাঝে কিছুটা পার্থক্য থাকা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। সেই সাথে লেখকদের এটাও খেয়াল রাখা উচিৎ, তাদের লেখার মাধ্যমেই তাদের প্রাতিষ্ঠানিক এবং বিশেষ করে পারিবারিক শিক্ষা, রুচি, চরিত্র ইত্যাদি ধরা পড়ে।
একজন প্রধানমন্ত্রী, একজন বিরোধীদলীয় নেত্রী, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, একজন সরকারী আমলা.....তাঁদের সাথে আমাদের মতের মিল নাও থাকতে পারে, তাই বলে তাঁদের অশ্রাব্য গালাগালি করার যোগ্যতা আমরা রাখিনা। আমরা সাধারন জনতা। আমাদের দেয়া ভোটেই তাঁরা ঐ পর্যায়ে যেতে পেরেছেন।
তাই সেক্ষেত্রে গালাগালির সবচেয়ে বড় দাবিদার আমরা। আমরাই জেনেশুনে ভোট দিয়ে তাঁদের ক্ষমতায় পাঠাবো, আবার গালাগালি করবো, এতে শুধু নিজেদের হিপক্রেসিই প্রকাশ পাবে, আর কিছু নয়।
সিরিয়াসলি, শেখ হাসিনা-খালেদা জিয়াকে কিনা গালি দিচ্ছে এমন একজন মানুষ যে লোকাল বাসে চড়ার সময়ে বাস কন্টাক্টরের সাথে একটাকা ভাড়া নিয়েও ঝগড়া করে!
"ভাড়া চাইর ট্যাকা, আপনে তিন ট্যাকা দিলেন ক্যান?"
"যা ভাড়া তাই দিছি। আমারে ভাড়া চেনাও? ডেইলি এই লাইনে যাওয়া আসা করি। "
"ভাড়া বাড়ছে এক বছর হয়া গ্যালো, আপনে কিয়ের ডেইলি যাওয়া আসা করেন?"
"'....'র পোলা! আমার মুখে মুখে কথা কস! চিনোস আমারে? চিনোস?"
গালি শুনে বাস কন্টাক্টরও গালি শুরু করে।
সামান্য এক টাকার জন্যে ছেলেটা নিজের মা বোনকে বাস কন্টাক্টরের বিছানায় পাঠিয়ে দিল, সে কিনা ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে গালাগালি করে!?!
দেশের রাজনীতি এখন সম্পূর্ন দুইভাগে ভাগ হয়ে গেছে। একদল ব্যবসা করছে ধর্মকে নিয়ে, একদল করছে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে। আমরা দলান্ধের মত অন্য দলের লোকদের গালাগালি করে বিরাট দেশোদ্ধার করে ফেলছি! একটা অশিক্ষিত, মূর্খ, বস্তির ছেলে যদি গালাগালি করে, আমার কোন আপত্তি নেই। ও ঐ ভাষা শিখেই বড় হয়েছে। ভদ্রভাবে কিভাবে কথা বলতে হয়, সেশিক্ষা সে পায়নি।
কিন্তু একজন ডাক্তার, একজন ইঞ্জিনিয়ার কিংবা একজন উচ্চ শিক্ষিত লোককে যখন দেখি রিকশাওয়ালার ভাষায় লেখালেখি করতে, তখন দেশের নতুন প্রজন্মের শিক্ষা ও রুচি সম্পর্কে বিরাট শঙ্কা হয়।
এক্ষেত্রে আমার বাবা আমাকে ছোটবেলায় কী শিখিয়েছিলেন সেটা বলা যেতে পারে। আমার বাবাকে আমার দাদা তাঁর ছোটবেলায় বলেছিলেন, "একটা রিকশাওয়ালা যদি তোমার কাছে ন্যায্য ভাড়ার চেয়ে একটা টাকা বেশি চায় এবং তুমি দিতে অপারগ হও, তবে রিকশাওয়ালাকে সেটা সরাসরিই বল। তুমি তার সাথে গালাগালি বা মারামারিতে যেওনা। কারন একটা রিকশাওয়ালাকে তুমি গালি অথবা মার দিলে তার কিছুই যাবে আসবে না।
কিন্তু সে যদি তোমাকে মারে, অথবা একটা গালিও দেয়, সেটা তোমার ইজ্জতকে ধুলায় মিলিয়ে দিবে। ইজ্জত কামাতে বছরের পর বছর লেগে যায়, খোয়াতে একটা গালি শোনাই যথেষ্ট। "
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।