আমি একজন বেখেয়ালি মানুষ।
প্রিয়/স্নেহের/শ্রদ্ধেয় লাকী,
শুধুমাত্র মুখের কথা নয় প্রকৃতপক্ষে যেখানে মানুষের শ্রদ্ধা/ভালবাসা/স্নেহ/মমতা/আবেগ-অনুভূতি সৃস্টি হয় সেখান থেকে সৃষ্ট শ্রদ্ধা/ভালবাসা/স্নেহ/মমতা/আবেগ-অনুভূতি গ্রহন করুন । আশা নয় বিশ্বাস শাহবাগ পরিবারের সকলকে নিয়েই অপনি অনেক অনেক ভাল আছেন । আমি জানি আপনি অনেক ব্যস্ত একজন মানুষ তাই এই অধম মুর্খের লেখা পড়ার মত সময় আপনার হবে না তবুও এই আশায় লিখছি যদি কখনও সময় বের করতে পারেন তবে কষ্ট করে হলেও একটু পড়বেন আর রাত্রে ঘোমানোর পূর্ব মুহুর্তে বিছানায় শুয়ে নিরবে একটু চিন্তা করার জন্য অনুরুধ রাখলাম। (১) আমার পরিক্ষার বেজাল্ট বের হওয়ার কিছুদিন পরই ডিভি ফরম পুরন শুরু হয় ।
আমি আমার কম্পিউটার থেকেই আমার ৯ জন বন্ধুকে এই ফরম পূরন করে দেই কিন্তু কেন জানি আমার নিজের জন্যও একটি ফরম পুরন করতে ইচ্ছে হল না ! আমি বেশ কয়েকবার সাইটটি চালু করেছি নিজের জন্য ফরম পুরণ করতে । বারবারই মন আমার বিপরীতে কাজ করতে শুরু করল এবং শেষ পর্যন্ত আর ফরম পূরন হলই না । (২) রেজাল্টের পরেই ঢাকার এক নামকরা সফটওয়্যার ফার্মে আমার চাকুরী হয় মাত্র ১৪ দিন করার পর আমি আমার চাকুরী ছেড়ে চলে আসি যদিও খুব ভালই কাটছিল আমার প্রথম চাকুরী জীবন । (৩) আমার এক আত্মীয় থাকে সিঙ্গাপুর, সে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছে আমাকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে আমার সমর্থন আদায়ে এতে করে আমার পরিবারও আমাকে কম কথা বলেনি । (৪) পত্রিকায় যখন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আসে তখন আমি প্রথমেই দেখি কোনটার নিয়োগ আমার জেলা শহরে হবে তারপর সেটাতে দরখাস্ত করি ।
কারন একটাই আমি আমার বাড়ী ছেড়ে অন্য কোথাও বেশি দিন থাকতে পারি না ।
এখন আপনার কাছে আমার প্রশ্ন এটাকে কি দেশপ্রেম বলে নাকি লাল-সবুজের দুই টুকরা কাপড়ে তৈরী বাংলাদেশের প্রতিক পতাকাকে আদরে-যত্নে মাথায় করে রাখাকে দেশপ্রেম বলে? যদি তাই হয় তাহলে আমি বলব পৃথিবীর ৯০% মানুষ তার পিতা-মাতাকে ভালবাসে । তাদের মৃত্যুতে ছেলে-মেয়েরা কাঁদে । কই আমি কোথাও তো দেখি নাই বাবা-মায়ের প্রতিকী তৈরী করে তাকে ভালবাসতে । বাংলাদেশের মানুষ আজ তিন ভাগে বিভক্ত ক) মুসলমান খ) বিধর্মী গ) নাস্তিক ।
আমি জানিনা আপনি কোন কোনটা তবে আজকের প্রথম আলো পত্রিকায় আপনার ছবি দেখে মনে হল আপনি ক) তে পড়েনটি আপনার কপালে অনেক বড় একটা টিপ দেখতে পেলাম এবং আরও বহুবিধ যা ইসলামের সাথে বেমানান তাই এরুপ মনে হওয়ার কারন । এখন আপনি বলতে পারেন কেন? ক) কি টিপ পরতে পারবেনা? উত্তরঃ না; হক্কানী আলেম-উলামারা বলে থাকেন আর কি । এখন আপনার মন হয়তো বলতে পারে তাহলে এই আলেম-উলামারা কিছুই জানে না বা জানলেও তারা জোর করে এই কথাটা আমাদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে । তাহলে
আমি বলতে চাই আপনি ইংরেজীতে পড়েন, আর আমি যত বড় ইঞ্জিঃ হই না কেন আপনার সমান ইংরেজী জানা আমার পক্ষে কখনই সম্ভব না (ব্যাতিক্রমও আছে তবে সেটা খুবই কম) । ঠিক তেমনি আপনি যত বড়ই ইংরেজী বিশারদ হোন না কেন আমার সমান ইঞ্জিঃ এর জটিল থিউরী জানা আপনার পক্ষে সম্ভব না ।
যারা ইসলাম নিয়ে পড়াশুনা করে আপনি-আমি যত কিছুই জানি না কেন তাদের সমান জানা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় । এতক্ষনে হয়তো আপনি ভেবে নিয়েছেন নিশ্চই আমি শিবির! এর উত্তর হচ্ছে-
যখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কথা উঠে তখন আমি বিএনপি, বিএনপি আর জামাত এর মধ্যে কথা হলে আমি জামাত, জামাত আর চরমোনাই পীর এর মধ্যে কথা হলে আমি চরমোনাই, চরমোনাই আর হেফাজতের মধ্যে কথা হলে আমি হেফাজত । এই ধারাবাহিকতার একটি কারন অবশ্যই আছে আর তা হলো- ডিপ্লোমাতে পড়ার সময় আমার বেশ কয়েকজন সহপাঠির মধ্যে যারা বেশী উশৃঙ্খল তারা করতো ছাত্রলীগ, তার চাইতে কম উশৃঙ্খল তারা করতো ছাত্রদল, যারা আমাকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য ডাকতো তারা করতো শিবির এখন আপনিই বলুন মুসলমান হিসেবে আমার কোনটাতে যাওয়া উচিত? বলে নেওয়া ভাল আমি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত নই এবং সমর্থনও করি না । জীবনে কখনও ভোট দিতে যাই নি যদিও আমার বন্ধুরা অনেকেই ভোট দিয়েছে । আপনি মনে করেন হেফাজত তো সাম্প্রদায়ীক এরা নারীদেরকে এবং বিধর্মীদেরকে কোনঠাসা করে; আমি বলব তাহলে তাদের অফিশিয়াল সাইট থেকে ১৩ দফাটা এবং এর ব্যাখ্যাটা একটু ভালভাবে পড়ে নিবেন ।
এখন বলতে পারেন ধর্ম যার যার আর রাষ্ট্র সবার; এই কথার প্রেক্ষিতে আমি বলতে চাই, জীবনে তো অনেক প্রেমের উপন্যাস পড়েছেন, অনেক বড় বড় বই পড়েছেন- একটু কষ্ট করে পবিত্র কুরআন ও হাদীসের কয়েকটা বই পড়ে দেখেন । আপনি আমার চাইতে অনেক জ্ঞানী তাই আমি আশা করি আপনার এতে বুঝতে কষ্ট হবে না । এতক্ষনে আপনার মনোভাব এই পর্যন্ত পৌছেছে যে, আপনি হয়তো মনে করছেন কি জন্য এই লেখাটা পড়ছি সে তো আমাকে উগ্রপন্থীদের মত পর্দার বেড়াজালে আটকাতে চাচ্ছে! বেয়াদবী মাফ করবেন আমি এই রকম ধারনা নিয়ে লিখতে বসিনি ।
আর যদি হয়েই থাকে তাহলে আমি বলব-
সুন্দরী প্রতিযোগীতায় নির্ধারন করে দেওয়া হয় প্রতিযোগীকে
(১) বুকের উপর কোন কাপড় রাখা যাবে না এতে করে তোমাকে সেকেলে-সেকেলে মনে হয় ।
(২) হাটুর উপড় পর্যন্ত কাপড় পড়তে হবে এবং সেটা হতে হবে অবশ্যই টাইট-ফিটিংস তাহলে তোমাকে সেক্সী মনে হবে ।
(৩) বুকে অবস্থানরত স্তনদ্বয় একটু টান টান করে রাখবে তাহলে আরও আকর্ষনীয় লাগবে ।
(৪) গাড়ীর শো-রোমে প্রত্যেক গাড়ীর সাথে অর্ধনগ্ন করে একজন যুবতী রাখা হবে । যেন গাড়িটা দামী আর ঐ মেয়েটি কমদামী মনে হয় । এটাও ধরে নেওয়া যায় যে ঐ গাড়ীর সাথে মেয়েটিও ফ্রী ।
(৫) রিসিপশনে সুন্দরী মেয়েদেরকে রাখা হয় যেন মানুষ পন্যের প্রতি না ঐ মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আবার আসে এটা আমার বন্ধুমহলে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ।
এবং বেতনও কম দিতে হবে ।
(৬) ছেলেটি কোন কম্পানীর একটি বডি স্প্রে দিয়ে মটর সাইকেল চালিয়ে যাবে আর মেয়েরা তার স্বামীকে ছেড়ে দিয়ে ঐ ছেলের পেছনে দৌড়াতে থাকবে । পৃথিবীর মেয়েরা আজ এত সস্তা হয়ে গেছে!
(৭) সিমেন্টের বিজ্ঞাপনে টু-পিস পড়া মেয়েকে উপস্থাপন করা হবে যদিও সিমেন্টের সাথে ঐ মেয়ের কোন সম্পর্কই নাই ।
(৮) চল বহুদুর এর মত বিজ্ঞাপনের ব্যাকেন্ডে বুঝতে হবে আমি রাজি আছি তুমি আমাকে যেখানে নিয়ে যাবে আমি সেখানেই যেতে ইচ্ছুক এবং যা করবে আমি তাতেও রাজি ।
ইত্যাদি ইত্যাদি আরও অনেক আছে ।
এগুলো সব মিডিয়ার তৈরী । এখন বলুন কোনটা দামি এই মিডিয়া নাকি ইসলাম । তর্কে আসতে চাইলে আগে ইসলামে নারীর অধীকার সম্পর্কে জেনে আসার জন্য অনুরুধ করলাম ।
আফসুস-একবারও কি চিন্তা করে দেখেছেন আপনার আজ যাদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন তারা কার!
তারা হচ্ছেন বাংলাদের কওমী ধারার ছাত্র-শিক্ষক যারা অধীক বেতনের আশায় নয় পরকালে নাজাতের আশায় লেখাপড়া করে । আল্লামা শাহ্ আহম্মদ শফী যিনি সারা রাত যেগে যেগে আল্লাহর জিকির-আজগার করে তার তত্বাবধানে লেখাপড়া করে ।
একবারও কি খোজ নিয়ে দেখেছেন? সামান্য বেতনে চাকুরী করেও আজ তারা কত সুখী? তাদের চিন্তার বিষয় শুধু ইসলাম । তাদের ধ্যান-জ্ঞান, মন-প্রান শুধু মাত্র ইসলামকে ঘিরেই । এই ইসলামকে যখন কটাক্ষ করা হয় তখন তারা কতটা দুঃখ অনুভব করেন । একবারও কি খোজ নিয়ে দেখেছেন শুধুমাত্র আল্লাহকে ভয় করে তারা এত প্রতিকুল পরিবেশেও নিজেকে পাপমুক্ত রাখার চেষ্টা করে । একবারও চিন্তা করে দেখেছেন কত কষ্ট করে তারা মহান আল্লাহ ও আমার প্রিয় নবীর অমর বাণীগুলো ছাত্রদের শিখাচ্ছে ও প্রচার করছে ।
আমরা কি পারি না তাদেরকে দুঃখ না দিয়ে আমাদের জীবনকে পরিচালিত করতে । শুধুমাত্র দলীয় স্বার্থকে প্রধান্য না দিয়ে ধর্মকে প্রাধান্য দিতে যেটা ছাড়া আমাদের অন্য কোন পথ নেই ।
সর্বপরি বলতে চাই,
(১) আপু আপনি মারা গেলে আপনার পরিবার আপনাকে হিজাব পড়ানো ছাড়া কিন্তু কখনই মাটি দিতে দিবে না । এই হিজাব যেন আপনার প্রথম হিজাব না হয় ।
(২) আপু আপনি মারা গেলে আপনার পরিবার কিন্তু আপনার জানাযা ছাড়া কখনও মাটি দিতে দিবে না ।
এই জানাযা যেন আপনা জন্য একজন আলেমের প্রথম দোয়া না হয় ।
(৩) আপনি মারা গেলে আপনার পরিবার কিন্তু আপনাকে ওযু করানো ছাড়া মাটি দিতে দিবে না । এই ওযুই যেন আপনার প্রথম ওযু না হয় ।
(৪) আপনি মারা গেলে কিন্তু আপনার পরিবার সম্পূর্ন পর্দার সাথেই আপনাকে কাফন-দাফন করবে । এই পর্দাই যেন আপনার প্রথম পর্দা না হয় ।
আরো অনেক কথাই রয়ে গেল কিন্তু লেখাটা বড় হয়ে যাচ্ছে বিধায় আর লিখলাম না । তবে লিখব এই লিখার যখন রেসপন্স পাব তখন লিখব ।
আমি আপনার প্রতি উত্তরের অপেক্ষায় এবং পরবর্তী অংশ লিখার আপেক্ষায় রইলাম ।
ইতি
মোঃ নাজমুর হুদা (অধ্যয়নরত ইঞ্জিঃ)
বিঃ দ্রঃ দয়াকরে পাঠকবৃন্দগন এই লেখাটা লাকী আপুর কাছে পৌছাতে সাহায্য করবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।