আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেবযানীকে অভিনন্দন



দেবযানীকে অভিনন্দন ৪৩ বছর পরও ভারত বাংলাদেশের মাথায় ছাতা ধরে আছে। জাতি হিসাবে আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার। আমাদের দেশের রাজনৈতিক বিভাজন নয়, যে অংশ বুদ্ধিজীবীরা ভান করছেন অথবা অন্যরা চরমমাত্রায় কা-জ্ঞানহীন, অনেকেই টাউট অথবা বাইরের দালাল। বুদ্ধিজীবী কিংবা সুশীল সমাজের ভান করলে, ভান করার জন্য যেটুকু কা-জ্ঞানের দরকার তাদের তাও নেই। ৪২ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে আমাদের কি হতে পারে তা এদেশের নামধারী বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ অনেকের বোধ বুদ্ধিতে ছিলনা।

তারা গতানুগতিক একটি নিরপেক্ষতার ভান করে যাচ্ছিলেন। এরা একই সঙ্গে আমাদের জনগণকে ৪২ বছর ধরে বিভ্রান্ত করে আসছিলেন। কিন্তু আমরা যারা জনগণ এবং তথাকথিত বুদ্ধিজীবী অংশ তারা নয় আমাদের বিপদটা নিয়ে মাথা ঘামাতে হচ্ছে ভারতকে। বাংলাদেশ প্রশ্নে তারা কোন ছাড় দেয়নি কাউকে। দেশটা স্বাধীন করেছিলেন আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা।

কিন্তু স্বাধীন দেশের মর্যাদা ধরে রাখার মত পরবর্তি যে শক্তি সার্মথ্য আমাদের দরকার ছিল, যেমন কা-জ্ঞানের কথা বলছি সেটাও আমাদের নেই। আজ পাকিস্তান কোন পর্যায়ে গিয়ে আমাদের দেশের আইন আদালত ও বিচার ব্যবস্থার সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছে। এ প্রশ্ন কি এদেশে জামায়াত-বিএনপিও তুলেনি। তুলেছে নামধারী বুদ্ধিজীবীদের একাংশ। আড়ে-ঠারে।

তাহলে কি দাঁড়াচ্ছে- এদেশে এক অংশ বুদ্ধিজীবী ও জামায়াত-বিএনপি এখানে পাকিস্তানের হয়ে রাজনীতি করছে। পাকিস্তান প্রস্তাব তুলেছে সেটা একটা বিষয়- আবার ভারত বাংলাদেশের মাথায় ছাতা ধরে বসে আছে -সেটা। আমরা আমাদের স্বাধীনতার বোধ-ভবিষ্যত বুঝতে অক্ষম আর তার জন্য ভারতীয় নারী কূটনীতিকের শাড়ি খুলছে আমেরিকা। বাংলাদেশ প্রশ্নে সেই হানাদার পাকিস্তান আর পাকিস্তানের দোসর আমেরিকার অবস্থান আজও কি এক জায়গায় নয়। তবু আমরাই অতি সহজ সরল।

গোটা ক্রিকেট বিশ্ব যখন পাকিস্তানে ক্রিকেটার পাঠাতে রাজী নয় তখন আমাদের আ.হ.ম. মোস্তাফা কামাল পাকিস্তানে ক্রিকেটার পাঠানোর জন্য এক পায়ে খাড়া। অথচ যুদ্ধটা লেগেছিল আমাদের সাথে। গণহত্যার বাইরের তারা এদেশের ২ লাখ নারীদের সম্ভ্রমহানি করেছিল। আমরা কিছুই ভাবছি না। না বর্তমান না অতীত।

রাজনীতির কথায় আসি। বিএনপিকে নিয়ে আওয়ামী লীগ কেন এত ভোট ভোট খেলা খেলছে। এ খেলার প্রধান কারণ হচ্ছে এদেশের বিশাল মানুষের সমর্থন নিয়েও দলটি স্বাধীনতার আদর্শ ধারণ করতে পারেনি। বিশ্বাস অর্জন করতে পারেনি এদেশের রাজনৈতিক ও স্বাধীনতার আদর্শের। দেশের অনেক টকশোর গলাবাজরা এ কথাটা কখনও মুখ খুলে বলতে পারে না।

তারা বলে তাদের নিরপেক্ষ থাকতে হবে। এদেশের ৭০ শতাংশ মানুষও যদি না বুঝে ওই সন্ত্রাসী রাষ্ট্র পাকিস্তানের আদর্শবাদীদের ভোট দেয় তাহলে তাদের কারণে কি আমাদের নিরপেক্ষতার ভান করতে হবে। নাকি ওই বিভ্রান্ত মানুষগুলোকে বোঝাতে হবে। দলীয় রাজনীতিকের মত যদি একজন বুদ্ধিজীবীর মতামত হয় তাহলে তাদের দিয়ে দেশ কোথায় গিয়ে ঠেকবে। দরকার হলে এদেশে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানরা না থাকল কিন্তু যারা মুসলমান আছে তাদের জন্য তো একটা যৌক্তিক রাষ্ট্র দরকার।

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানরা না থাকলে কি বাংলাদেশ পাকিস্তান হয়ে যাবে। আর যারা মুসলমান মুক্তিযোদ্ধা আছে তারা কেন মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন সেই প্রশ্নের জবাব তো দিতে হবে। ভারতের সহকারি কূটনীতিক দেবযানীর ঘটনা আর কাদের মোল্লার ফাঁসি নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থান আমাদের সামনে একটা বিষয় পরিস্কার করে দিল দুই সন্ত্রাসী রাষ্ট্র আমেরিকা আর পাকিস্তানের সম্পর্ক কতটা মধুর। অন্তত আজও বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের অবস্থান একেবারেই পারিস্কার। আমার মনে পড়ছে শাহরিয়ার কবির, মুনতাসীর মামুনসহ অন্যদের কথা।

যারা সারা জীবন পাকিস্তানের প্রেতাত্মা ও পাকিস্তানের ব্যাপারে বিনা দ্বিধায় লিখে গিয়েছেন। তাদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য হাজারো চেষ্টা করা হলেও তারা চিন্তা -চেতনায় অটল ছিলেন। কিন্তু তাদেরকে মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য, ভারতের দালাল প্রমাণ করার জন্য জামায়াত লবি এবং জামায়াতপন্থি বিএনপির অংশটি দেশে বিদেশে কি পরিমাণ প্রচার প্রচারণা চালিয়েছে। এখন যদি বলি কোন আওয়ামী লীগ রাজনীতিবিদ যখন বলেন, জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের চর ছিলেন। এটা কি সত্য বলে ধরা যায় না।

যায়-কারণ তিনি অনেক যুদ্ধাপরাধীদের তার সরকারে অন্তর্ভূক্ত করেছিলেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তো তার দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন উঠার কথা নয়। এ প্রশ্ন কেন উঠেছে। এটার কি সঙ্গত কারণ ছিলনা। যে সব যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে পাকিস্তানীদের এমনই আপন ভাইয়ের মত অচ্ছেদ্য সম্পর্ক ‘সেই আপন ভাইদের’ এদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছিলেন জিয়াউর রহমান।

বিনা দ্বিধায়, বিনা প্রশ্নে। তাহলে কেন? কাদের মোল্লার ফাঁসির পর পাকিরা যেমন উথাল পাথাল হয়ে উঠেছে, সেই উথাল পাথাল সম্পর্কের কারণেই তো জিয়াউর রহমান তাদের ক্ষমতার ভাগ দিয়েছিলেন। আমাদের রাজনীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল আওয়ামী লীগকে তাদের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন করতে হয়েছিল। পরিস্থিতি কি ভয়াবহই না হয়ে উঠেছিল তখন। কোন পর্যায়ে গিয়ে আওয়ামী লীগ এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিল।

আমি ব্যক্তি হিসাবে কখনও নিরপেক্ষতার ভান করিনা। সেটা কোন কারণেই নয়। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার কথা বলতে পারি। বিএনপির মত একটি সরকার ক্ষমতায় থাকার পর কিভাবে দেশের বিরোধী দলের নেতার জনসভায় বর্বর বোমা হামলা হয়। আবার- বলে আওয়ামী লীগই ওইদিন বোমা হামলা সংগঠিত করেছিল।

কই এখন তো কোথাও আর কখনও কারো জনসভায় এমন গণহত্যা চালানোর জন্য বোমা হামলা হয় না। তারপর দেশের ৫০০ জায়গায় বোমা বিস্ফোরণ। গ্রামে একটি প্রবচণ আছে- ‘ছাগল নাচে খুঁটির জোরে’। এই বোমা হামলাগুলোর জবাব এদেশের জনগণ বিএনপির কাছ থেকে আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও এই জনগণ ভোট ভোট করে গলা ফাটাচ্ছে।

এটা এমনই এক তাজ্জব ব্যাপার। তাই আমি অন্য একটি লেখায় বলেছিলাম- ৭১ সালের জনগণ আর বর্তমান বাংলাদেশের জনগণ এক নয়। বলছি তাই- আমরা যখন আসল জায়গায় হাত দিলাম-সরকার যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে তখন বাংলাদেশের একাংশ জনগণের ভ্রাতৃপ্রতীম রাষ্ট্রের ভাই জামায়াত সরাসরি পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশ আক্রমণ করার জন্য নির্দেশ দিচ্ছে। পাকিস্তানের সঙ্গে যদি প্রেম করতেই হয় তাহলে বাংলাদেশি ভাইয়েরা একটু বাজিয়ে দেখেন পাকিস্তানিদের। বিচারটা হোক।

আরও যেসব অন্য হিসাব আছে সেগুলো নিয়ে আলাপ আলোচনা করুন। তারপর পাকিস্তানী ভাইদের আরও বোঝা যাবে। কিছুদিন আগে একটা রিপোর্ট বের হয়েছিল পত্রিকায়- পাকিস্তান যে গণহত্যা বাংলাদেশে চালিয়েছে প্রচার প্রচারণা অভাবে সেই গণহত্যা বিশ্বের কাছে প্রচার পায়নি। কিন্তু জামাতি রাজাকারদের একজনের ফাঁসি হওয়ায় আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বুক ফেটে যাচ্ছে। সে বাংলাদেশ সরকারকে ফোন করে বলে ‘তার বাপ’ কাদের মোল্লাকে ফাঁসি না দেয়ার জন্য।

আর তারাই সারা বিশ্বে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার নামে এমনকি সাদ্দাম হোসেন আর গাদ্দাফিকে সরাসরি খুন করে। খুন করে ইসলামি জিহাদি মোল্লা লাদেনকে। এখন বাংলাদেশের প্রশ্নে তারা ভারতীয় কূটনীতিকের কাপড় খুলছে। যে জাতি তার দিশা খুঁজে নিতে ব্যর্থ হয় তারা কতটুকু গণতন্ত্র বোঝে এবং গণতন্ত্র ও ভোটের জন্য কতটা প্রস্তুত তা বরাবরই প্রশ্ন সাপেক্ষ। এ প্রশ্নের কোন সমাধান হয়নি বলে রাষ্ট্রের ইজ্জতের জায়গায় ঘা মারছে ৭১ সালের পরাজিত পক্ষ পাকিস্তান ও আমেরিকা।

যে জনগণ রাষ্ট্রের মর্যাদা বোঝে না তার নাগরিক অধিকার ও ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষা করা রাষ্ট্রের পক্ষেও কঠিন। যেখানে বুদ্ধিজীবীদের একাংশ, সুশীল সমাজ ও পেশাজীবীরা নিজেদের বিষয়ে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য। অথবা কৌশলগতভাবে পাকিস্তান ও আমেরিকার এজেন্ট হিসাবে গলাবাজি করছে। সবশেষে ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানি খোবরাগাড়াকে অভিনন্দন জানাই।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।