তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “সাভার পৌরসভার মেয়র এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা রানা প্লাজা ভবনের মূল নথিকে পাশ কাটিয়ে ক্ষমতায় অপব্যবহার করে অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য নতুন নথি সৃষ্টি করে সপ্তম থেকে দশম তলার নকশা অনুমোদন করেন, যা দায়িত্বে অবহেলা, অদক্ষতা ও ক্ষমতা অপব্যবহারের শামিল। ”
তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান সাংবাদিকদের সামনে এ প্রতিদেবদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, দায়িত্বে অবেহলা, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং জনস্বার্থপরিপন্থী কাজ করায় সাভারের পৌর মেয়র মো. রেফাত উল্লাহকে ইতোমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
কারণ দর্শানোর জন্য মেয়রকে একটি নোটিশ পাঠানো হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, “এর জবাব সন্তোষজনক না হলে তাকে বরখাস্ত করা হবে এবং গাফিলতি প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে মামলা হবে। ”
গত ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকার নয় তলা ভবন রানা প্লাজা ধসে নিহতের সংখ্যা ইতোমধ্যে চারশ ছাড়িয়ে গেছে।
ধসের দিনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, ভবনটি নির্মাণে ইমারত বিধি সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়নি।
ভবনটির লে-আউট ও নকশা অনুমোদনের সময় সাভার পৌরসভা সব বিধিবিধান অনুসরণ করেছে কিনা তা যাচাই করতে গত ২৫ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম-সচিব মো. আকতার হোসেনকে আহ্বায়ক করে এই তদন্ত কমিটি করা হয়। এলজিইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোল্লা আজিজুল হক সদস্য ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব মো. খলিলুর রহমান এই কমিটিতে সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।
রানা প্লাজার স্থাপত্য নকশা ও কাঠামোগত নকশায় স্বাক্ষরকারী স্থপতি এটিএম মাসুদ রেজা ও প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসাইনের দায়-দায়িত্বের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা যেতে পারে বলে মত দিয়েছে তদন্ত কমিটি।
স্থানীয় সরকার সচিব জানান, এই দুজনকে খুঁজে বের করতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হবে।
নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে বিধি-বিধান যথাযথভাবে অনুসরণের জন্য পৌরসভাগুলোকে নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি অনুমোদন বর্হিভূত নির্মাণকাজ ও নকশা বহির্ভূত নির্মাণ হলে সেসব স্থাপত্য ভেঙে ফেলার ব্যবস্থা করতে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।
পৌরসভায় নকশা অনুমোদনের প্রক্রিয়া মূল্যায়ন করে বিধিবিধান হালনাগাদ করা এবং নকশা অনুমোদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মেয়র ও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়াসহ ছয়টি সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
শহিদ খান জানান, ২০০১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর পৌরসভা এলাকায় ভবন নির্মাণের অনুমতি দেয়ার আগে বিল্ডিং কোডের বিধিবিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করতে সব পৌরসভাকে নির্দেশ দেয়া হয়।
এছাড়া সব পৌরসভায় ইমারত বিধির (বিল্ডিং কোড) অনুলিপি সরবাহের নির্দেশ দেয়া হলেও সংশ্লিষ্টরা তা করেননি বলেন অভিযোগ করেন সচিব।
২০০৯ সালের স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইনে বলা আছে, কোনো ভবন বা স্থাপনা ধসে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হলে মালিকদের নোটিস দিয়ে ওই ভবনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।
“যদি কোনো ইমরাত বিপদজনক অবস্থায় থাকে অথবা কোনোভাবে তা মানুষের বসবাসের অনুপযুক্ত হয় তাহলে ভবনটি মেরামত না হওয়া পর্যন্ত সেখানে বসবাস নিষিদ্ধ করতে পারবে পৌর কর্তৃপক্ষ। ”
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা ২০০৫ সালে ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের অনুমোদন পান।
পরে যথযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই সাভার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী খানের সুপারিশের ভিত্তিতে ভবনটি ১০ তলা করার নকশা অনুমোদন করা হয়।
সাত বা তার বেশি তলার ইমারতের ক্ষেত্রে স্থাপত্য নকশা ছাড়াও কাঠামোগত নকশায় আবেদনকারীর সই করার বিধান থাকলেও এক্ষেত্রে তা করা হয়নি।
এছাড়া দশ তলা করার অনুমোদন দেয়ার আগে ওই ভবনের ফাউন্ডেশনের নকশা পরীক্ষা করা হয়নি বা এ বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শনের কোনো প্রতিবেদনও সংরক্ষণ করা হয়নি।
নকশায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ইমারত নির্মাণ কমিটির সদস্য সচিবের সই করার কথা থাকলেও নথিতে তেমন কিছু পায়নি তদন্ত কমিটি।
নিয়ম অনুযায়ী অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপনী ব্যবস্থাও এ ভবনে নেয়া হয়নি বলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সচিব জানান, ইঞ্জিনিয়ার, প্ল্যানার, পৌরসভার কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আগামী রোববার মন্ত্রণালয়ে সভা হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এতে সভাপতিত্ব করবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।