আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দাবা

অর্থ নয়, কীর্তি নয়...আরো এক বিপন্ন বিস্ময়/আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে খেলা করে

দাবা প্রথম দিকে কাটাকাটি করতে একটু মায়া লাগছিল। সময় যাচ্ছে আর আমি উত্তেজিত হয়ে উঠছি। কাটাকাটির দ্রুতি বেড়ে যাচ্ছে। একটার পর একটা প্ল্যান খেলে যাচ্ছে মাথায়। প্ল্যান এ ফেল করার আগেই প্ল্যান বি মাথায় ঘুরছে।

দারুণ জমে উঠেছে। অনেক সম্ভাবনা। অনেক তার শাখা-প্রশাখা। এখন আর বড় পাওয়ারগুলো সামনে আসছে না। ছোট পাওয়ারগুলোই অ্যাকশনে আছে।

খুব ক্রিটিক্যাল একটা মোমেন্টে এসে আটকে আছে খেলাটা। এই মুহূর্তের যে কোন চালই এন্ডিংটাকে যে কোন দিকে নিয়ে যেতে পারে। শুনছ ওরা নাকি পদত্যাগ করেছে। ধুর। ওসব পরে।

এখন একটা ভুল করলেই আমার সাদা হাতি শেষ। খেলাটা যে এমন নেশা ধরানো আমি জানতামই না। শিখে পর্যন্ত লাগাতার খেলা চলল। শুধু উইকেন্ডগুলা বাদ থাকল। আমি সব ধরণের ওপেনিং মুখস্ত করে ফেলেছি।

রুই লোপেজ ওপেন, কুইন গ্যাম্বিট, সিসিলিয়ান ডিফেন্স সব। শুরুটা তো প্রায় গৎ বাঁধা। সবারই জানা। এন্ডিংগুলোও অনেকটাই রেডি মেড। টার্গেটটাই হল মধ্যপর্ব থেকে খেলাটাকে একটা ফেভারেবল এন্ডিং এর দিকে নিয়ে যাওয়া।

মাথাটা শুধু খাটাতে হয় মধ্যপর্বে। তবে আজকাল মধ্যপর্বে এসে কেমন যেন জোশ চলে আসতেসে। মাথা খুব বেশি খাটাইতে ইচ্ছা করতেসে না। কাটাকাটিটা বেশি হইতেসে। নতুন একটা জিনিস শিখেছি।

আজ অ্যাপ্লাই করতে হবে। প্রতিপক্ষের একটা ছোট পাওয়ারকে যদি এমনভাবে আটকে রাখা যায় যে সেটি নাড়ালে তার বড় কোন পাওয়ার চলে যায় বা রাজা চেকের মধ্যে পড়ে যায়, তব সেই অবস্থাটিকে বলে পিন। আজ আমার কাল। এটা আমার লাকি কালার। খেলা শুরু হয়েছে।

চার পাঁচ চালের মধ্যেই আমি প্রতিপক্ষের ঘোড়াকে পিন করে ফেললাম। তার মানে এই মুহূর্তে তার একটি ঘোড়া ইনঅ্যাক্টিভ হয়ে আছে। এই সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে। বেশ উত্তেজিত বোধ করছি। শুনছ বার্ন ইউনিটে আরেকজন মারা গেছে।

ও আচ্ছা। পিন পিন পিন হল। কুইন নাইট পিন হল। অবস্থা এমন হয়েছে যে রাতে শোয়ার সময়ও মাথায় ওপেনিং বা এন্ডিং ঘোরে। গতরাতে এক ভয়াবহ স্বপ্ন দেখলাম।

দেখি বিশাল এক সিনেমা হল। একটা থ্রিডি মুভি দেখছি। মুভি শেষ হওয়ার পর একে একে সব দর্শক চলে গেল। আমি আর আমার প্রতিপক্ষ রয়ে গেলাম। হলের মাঝখানে খেলা শুরু হল।

আলো ঝলমলে থ্রিডি বোর্ড। বোর্ডে কোন ঘুটি নেই। রাজা, মন্ত্রী, সৈন্য, ঘোড়া সব জীবন্ত। আমি আর আমার প্রতিপক্ষ বসে আছি অন্ধকার গ্যালারিতে। কেউ কারো মুখ দেখতে পাচ্ছি না।

আমাদের অদৃশ্য নির্দেশে খেলা শুরু হল। কিছুক্ষণের মধ্যেই হলটা একটা রক্তাক্ত প্রান্তরে পরিণত হল। প্রান্তরে বিস্তীর্ণ ভূমিতে হাজার হাজার সেনা, ঘোড়া, হাতি দানব-চিৎকারে ফেটে পড়ল। কী ভয়াবহ সেই চিৎকার। ঘুম ভেঙে গেল।

খেলা নিয়ে এমন ঘোরের মধ্যে চলে গেছি যে কোনটা কল্পনায় ঘটতে পারে আর কোনটা বাস্তবে ঘটছে পার্থক্য করতে পারছি না। কাল রাতের স্বপ্নটা খুব রেশ রেখে গেছে। আজ সন্ধ্যায় শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম এমন কোন বোর্ড তৈরি করা যায় কিনা যেখানে সৈন্য সামন্তের ওপর জীবন্ত ফিলিংস এর ইফেক্ট দেওয়া সম্ভব। ঘোড়া মরে যাবে বিকট চিঁহি শব্দ করে। বোমায় সৈন্যের গা ঝলসে গিয়ে মাংস পোড়া গন্ধ বেরোবে।

কী দারুণ ব্যাপার হবে ! ভাবতে ভাবতে একটু তন্দ্রা এসে গিয়েছিল। তারপরই দেখি আমার কল্পনার দাবা বোর্ড তৈরি। দিব্যি খেলা হচ্ছে। আমি আনন্দে উত্তেজনায় অট্টহাসি দিয়ে উঠলাম। সাথে সাথে আমার গালে থাপ্পড় পড়ল।

ওটা নাকি স্বপ্ন ছিল না। দৌড়াচ্ছি। সুবিশাল প্রান্তর। পায়ের নিচে উঁচু নিচু ভূমি। মাথার ওপর অন্ধকার।

রক্ত-পিচ্ছিল পথ। অনেক মানুষ। কারো হাতে তলোয়ার, কারো তীর ধনুক। কারো চেহারায় আতঙ্ক, কারো জিঘাংসা। কারো মাথা কাটা, কারো ফুসফুস বেরিয়ে আছে।

দুনিয়া কাঁপানো শব্দ। ধোঁয়া। মাংস পোড়া গন্ধ। অট্টহাসি। শেষ আকুল আর্তনাদ।

দৌড়াচ্ছি। এই প্রান্তরের কোন শেষ নেই। এই জিঘাংসার কোন অন্ত নেই। এই অন্ধকারের কোন সীমানা নেই।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।