১৯২২ সালে ভ্যালি অব দ্য কিংস-এ হাওয়ার্ড কার্টারের নেতৃত্বে একদল খননকারী আবিষ্কার করলেন তুতেন খামেন নামক এক ফারাওয়ের মমি। তুতেন খামেন খুবই অপরিচিত ফারাও রাজা ছিলেন বলে চোর-ডাকাতরা তার সমাধি খুঁজে পাওয়ার চেষ্টাই হয়তো করেনি। এ কারণেই আধুনিক বিশ্বের আবিষ্কৃত একমাত্র অক্ষত সমাধিই হলো তুতেন খামেনের সমাধি। প্রাচীন মিসরের ফারাও তুতেন খামেনের অভিশাপে অনেকের জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। যারাই তার পিরামিডে ধন-সম্পদের লোভে গেছে তাদের জীবনে নেমে এসেছে অভিশাপের থাবা।
ঘটেছে করুণ ঘটনা। এ এক রহস্য। কারনাভানের অর্থায়নে হাওয়ার্ড কার্টারের মমি আবিষ্কারের পেছনে একটি হলুদ ক্যানারি পাখির অবদান ছিল। ইংরেজিতে 'ক্যানারি'র একটি অপ্রচলিত অর্থ হলো গুপ্তচর। এ পাখিটি তাদের গুপ্তধন পাইয়ে দিতে সহায়তা করেছিল।
আর মমির অভিশাপের বিষয়টিও তাই হলুদ ক্যানারি পাখিকে দিয়েই শুরু হলো। যেদিন অভিযাত্রী দল প্রথম তুতেন খামেনের মমি আবিষ্কার করল, সেদিনই শুরু হলো অদ্ভুত আর রহস্যময় কাণ্ড-কারখানা। সেদিন রাতেই হাওয়ার্ড কার্টার তার বাসায় ফিরে এসে কাজের লোকের হাতে কয়েকটি হলুদ পালক দেখতে পান। সে পালকগুলো ছিল গুপ্তচর ক্যানারি পাখির। ভয়ে আতঙ্কিত কাজের লোকটির কাছে হাওয়ার্ড জানতে পারেন, একটি কোবরা তার ক্যানারি পাখিটিকে খেয়ে ফেলেছে।
পরের শিকার লর্ড কারনাভান। যিনি এই খননকার্যে অর্থায়ন করেছিলেন। তিনি জানতেন ফারাওদের অভিশাপের কথা। কিন্তু বিশ্বাস করতেন না। তুতেন খামেনের সমাধিতে প্রবেশ করার অল্প দিনের মধ্যে মারা গেলেন কারনাভান।
কায়রোর একটি হোটেলে তার মৃত্যু ঘটে। বলা হয়েছিল, একটি মশার কামড়েই নাকি তার মৃত্যু ঘটে। অভিশাপের ব্যাপারটি নিয়ে হইচই পড়ে গেল। লর্ড কারনাভানের মৃত্যুর মাত্র দুই দিন পর তুতেন খামেনের মমিকৃত দেহটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, মমিটির বাম গালে কারনাভানের মতো ঠিক একই জায়গায় একটি ক্ষত রয়েছে।
তুতেন খামেনের মমির অভিশাপের গল্প যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল, তখন অনেক নামিদামি ব্যক্তি অভিশাপের অস্তিত্বের পক্ষে তাদের মতপ্রকাশ করলেন।
এদের অন্যতম হলেন স্যার আর্থার কোনান ডায়েল।
এর মধ্যেই লর্ড কারনাভানের মৃত্যুর পর আরও অনেক অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটতে লাগল। যারা মমির অভিশাপে বিশ্বাস করত তাদের ধারণা মমির অভিশাপেই এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একের পর এক মানুষের জীবনাবসান হচ্ছে। লর্ড কারনাভানের মৃত্যুর কিছুদিন পর এ অভিযানের আরেক নেতৃস্থানীয় প্রত্নতত্ত্ববিদ আর্থার ম্যাক একই হোটেল কন্টিনেন্টালে প্রচণ্ড ক্লান্তি অনুভব করতে থাকেন। প্রথমে বিষয়টিকে কেউ আমলে নেয়নি।
বরং অভিযাত্রী দলের ডাক্তার এবং স্থানীয় ডাক্তারকে হতবুদ্ধি করে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন তিনি। কারনাভানের এক বন্ধু তার মৃত্যুর কথা জানতে পেরে মিসরে যান সমাধি দেখতে। কিন্তু তার দুর্ভাগ্য, সমাধিটি দেখার পর দিনই তিনি প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত হলেন। আর এর মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যে তারও মৃত্যু হয়। তখন অনেকেই তুতেন খামেনের সমাধির বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
এমনই এক আগ্রহী ব্যক্তির নাম জুয়েল উড। তিনি একজন শিল্পপতি ছিলেন। সমাধিটি ভ্রমণ করে দেশে যাওয়ার পথে জুয়েলও আক্রান্ত হন প্রচণ্ড জ্বরে। এরপর তারও মৃত্যু হয়। ডাক্তাররা তার এমন জ্বর ও মৃত্যুর কোনো সঠিক ব্যাখ্যা খুঁজে পাননি।
আর্কিবাড রিড নামক একজন রেডিওলজিস্ট তৎকালীন সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে তুতেন খামেনের এঙ্রে রিপোর্ট করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল তুতেন খামেনের বয়স এবং মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানা। কিন্তু এ কাজ পুরোপুরি শেষ করার আগেই প্রচণ্ড ক্লান্ত- এ অভিযোগে ইংল্যান্ডে ফিরে যান রিড। কিন্তু ইংল্যান্ডে অবতরণের কিছুক্ষণ পরই রহস্যজনকভাবে তার মৃত্যু হয়। সমাধিটি আবিষ্কারের চার মাস পর কারনাভানের ব্যক্তিগত সেক্রেটারি রিচার্ড ব্যাথেলকে তার বিছানায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
আর ব্যাথেলের মৃত্যু সংবাদ শোনার পর তার পিতা আত্দহত্যা করেন। সমাধিটি উন্মোচনের সময় কয়েকজন লোক উপস্থিত ছিলেন, তার মধ্যে ১২ জনই অস্বাভাবিকভাবে পরবর্তী ৬ বছরের মধ্যে মারা যান। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে খনি খননের কাজে বিভিন্নভাবে জড়িত প্রায় ২১ জনই মৃত্যুবরণ করে। একজনই কেবল রক্ষা পেয়েছিলেন। তিনি প্রত্নতত্ত্ববিদ হাওয়ার্ড কার্টার।
এটি পৃথিবীর ইতিহাসে তুতেন খামেনের অভিশাপ নামে পরিচিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।