যাত্রা শুরু হল – “ভ্রমণ বাংলাদেশ ট্র্যাভেল লাইব্রেরীর”---
'অর্ধেক জীবন' বইতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছিলেন - 'যে পৃথিবীতে জন্মেছি তাকে পুরোপুরি দেখব না?'। সত্যিতো, একজন মানুষের কি সাধ জাগতে পারে না এই বসুন্ধরার পুরো রূপের সুধা পান করতে। কিন্তু সাধ থাকলেই তো সব সময় তা পূরণ হয় না। এমনিতেই কি আর বিজ্ঞাপনের ভাষায় বলা হয়, “সাধ ও সাধ্যর অপূর্ব সমন্বয়”। তো ভ্রমণপ্রিয় মানুষ যারা, তারা নিজের চোখে যেমন পৃথিবীটাকে দেখতে পারদর্শী, তেমনি তার সাধ্যর বাইরের ভুবন তারা দেখতে উদগ্রীব অন্য পর্যটকের দর্পণে।
আর তাইতো যুগে যুগে ভ্রমণসাহিত্য থেকে শুরু করে হালের অনলাইনে ট্র্যাভেল আর্টিকেল ভ্রমণ পিয়াসীদের তৃষ্ণা মেটানোর অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। তো ভ্রমণ বিষয়ক সকল সাহিত্য, প্রবন্ধ, ফিচার সহ আরও বিভিন্ন মাধ্যমে সংরক্ষিত তথ্যাদি নিয়ে যে বিষয়ভিত্তিক লাইব্রেরী তথা পাঠাগার, তা এক নামে ভ্রমণপ্রিয় মানুষের নিকট পরিচিত “ট্র্যাভেল লাইব্রেরী” নামে।
বিশ্বের প্রথম কার্যকর ট্র্যাভেল লাইব্রেরীর কথা ভাবতে গেলে প্রথমেই যার নাম সামনে আসে তিনি ছিলেন স্কটিশ স্যামুয়েল ব্রাউন। ১৮১৭ সালে স্কটল্যান্ডের লোথাইন নামক স্থানে তিনি বিশ্বের প্রথম ট্র্যাভেল লাইব্রেরী’র সূচনা করেন। তবে বিশ্বের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ট্র্যাভেল লাইব্রেরী ১৮৬০ সালে মেলবোর্ন পাবলিক লাইব্রেরী দ্বারা আরম্ভ হয়।
১৮৭৮ সালে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং ঠিক তার পরপরই ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি তাদের এক্সটেনশন কোর্সের জন্য ছোট্ট পরিসরে ট্র্যাভেল লাইব্রেরী’র কার্যক্রম শুরু করে।
তো আমাদের এই উপমহাদেশে তেমন একটা পৃথক ট্র্যাভেল লাইব্রেরী’র কথা জানা যায়না। তবে উপমহাদেশে প্রায় সকল লাইব্রেরীতে ট্র্যাভেল বিষয়ক আলাদা ক্যাটাগরিতে বই-পুস্তকাদি সংরক্ষণের ঐতিহ্য রয়েছে। তবে যুগে যুগে খুব শৌখিন এবং আগ্রহী ভ্রমণপিয়াসী মানুষ তাদের ব্যাক্তিগত উদ্যোগে নিজস্ব পরিমণ্ডলে ব্যাক্তিগত ট্র্যাভেল লাইব্রেরী’র আদলে সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছেন।
বর্তমানে বাংলাদেশে ‘ট্র্যাভেল’ একটি ক্রেজ।
গত এক দশকে প্রচুর ছেলেমেয়ে এই বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তারা ছুটে বেড়িয়েছে দেশের আনাচে কানাচে থেকে শুরু করে মেরুদেশ পর্যন্ত। আর এই ট্র্যাভেল ক্রেজ থেকে জন্ম নেয়া প্রায় ৩০টি’রও বেশী ট্র্যাভেল রিলেটেড সংগঠন বর্তমানে একটিভ রয়েছে বাংলাদেশে। আর এই সংগঠনগুলোর মধ্যে সেই ১৯৯৯ সাল থেকে যে সংগঠনটি অগ্রজ হিসেবে নিরলসভাবে ভ্রমণ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে সেটি হল “ভ্রমণ বাংলাদেশ”। তাদের পথচলার ১৫তম বর্ষে এসে তারা বাংলাদেশে প্রথমবারের মত শুরু করতে যাচ্ছে “ভ্রমণ বাংলাদেশ ট্র্যাভেল লাইব্রেরী”।
আসছে বিজয় দিবসে সংগঠনটির নিজস্ব কার্যালয়ে ছোট্ট পরিসরে যাত্রা শুরু করবে এই ট্র্যাভেল লাইব্রেরীটি। এরই মধ্যে প্রায় শতাধিক ভ্রমণ সাহিত্য, গাইড, ম্যাগাজিন থেকে শুরু করে অডিও-ভিডিও ডকুমেন্টারি তাদের সংগ্রহশালায় সংযোজিত হয়েছে।
ভ্রমণ বাংলাদেশের সাধারন সম্পাদক, রবিউল হাসান খান (মনা) জানান, “অনেক সময় প্রয়োজনীয় তথ্য বা ভ্রমণ বিষয়ক কোন লেখার জন্য আমাদের বহু উৎসে দৌড়োতে হত। তখন প্রায়ই মনে হত যদি একটি ট্র্যাভেল লাইব্রেরী থাকতো; যেখানে হতে আমি পেয়ে যেতাম আমার কাঙ্ক্ষিত তথ্য। আর এই ভাবনা থেকেই আমাদের এই ট্র্যাভেল লাইব্রেরী।
যদিও বর্তমানে আমাদের সংগ্রহশালা সীমিত, ভবিষ্যতে এর কলেবর আরও ব্যাপ্তি পাবে ইনশাল্লাহ”। বর্তমানে ভ্রমণ বাংলাদেশের সদস্যরা লাইব্রেরী’র সকল কাজ গুছিয়ে নিয়ে এসেছেন, তাদের অফিসে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। ভ্রমণ বাংলাদেশের সভাপতি, আরশাদ হোসেন টুটুল বলেন, “আমাদের এই ট্র্যাভেল লাইব্রেরী সকলের জন্য সবসময় উম্মুক্ত থাকবে।
আমরা চেষ্টা করেছি বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষার ভ্রমণ সাহিত্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভ্রমণ গাইড, ফিচার, ডকুমেন্টারি ইত্যাদি এই লাইব্রেরীতে সংযোজন করতে। সাথে থাকছে “ন্যাশনাল জিওগ্রাফী ট্র্যাভেল”, “লোনলি প্ল্যানেট” প্রভৃতি বিখ্যাত ট্র্যাভেল ম্যাগাজিনগুলোর পুরোনো সংখ্যার সাথে সাথে প্রতিটি নতুন সংখ্যা।
”
বিজয় দিবসে যাত্রা শুরু করা ভ্রমণ বাংলাদেশ’র এই ট্র্যাভেল লাইব্রেরী আমাদের দেশের ভ্রমণপিয়াসীদের মনখোরাক জোগাতে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে আশা করি।
ভ্রমণ বাংলাদেশের ঠিকানা –
১১৩/১, লালবাগ রোড, ঢাকা-১২১১
০১৮২২-৬১১-৪৮৮
(খাঁন মোহাম্মদ মৃধা মসজিদের সংলগ্ন – লালবাগ কেল্লা হতে পশ্চিমে)।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।