আমি আঁধারে তামাসায় ঘেরা জীবন দেখেছি, আমার বুকের ভেতর শূন্যতা থেকে শূন্যরা এসে বাসা বেঁধেছে, আমি খুঁজেছি তোমাকে সেই আঁধারে আমার মনের যত রঙলীলা; আজ সাঙ্গ হতেছে এই ভবের বাজারে।
প্রাচীন মিশর
প্রাচীন মিশর উত্তর আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলের একটি প্রাচীন সভ্যতা। নীল নদের নিম্নভূমি অঞ্চলে এই সভ্যতা গড়ে ওঠে। এই অঞ্চলটি বর্তমানে মিশর রাষ্ট্রের অধিগত। খ্রিষ্টপূর্ব ৩১৫০ অব্দ নাগাদ প্রথম ফারাওয়ের অধীনে উচ্চ ও নিম্ন মিশরের রাজনৈতিক একীকরণের মাধ্যমে এই সভ্যতা এক সুসংহত রূপ লাভ করে।
এরপর তিন সহস্রাব্দ কাল ধরে চলে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার বিকাশপর্ব। প্রাচীন মিশরের ইতিহাস একাধিক স্থায়ী রাজ্য-এর ইতিহাসের একটি সুশৃঙ্খলিত ধারা। মধ্যে মধ্যে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার পর্ব দেখা দিয়েছিল। এই পর্বগুলি অন্তর্বর্তী পর্ব নামে পরিচিত। নতুন রাজ্যের সময়কাল এই সভ্যতার চূড়ান্ত বিকাশপর্ব।
এর পরই ধীরে ধীরে মিশরীয় সভ্যতার পতন আরম্ভ হয়। প্রাচীন মিশরের ইতিহাসের শেষ পর্বে একাধিক বৈদেশিক শক্তি মিশর অধিকার করে নেয়। খ্রিষ্টপূর্ব ৩১ অব্দে আদি রোমান সাম্রাজ্য মিশর অধিকার করে এই দেশকে একটি রোমান প্রদেশে পরিণত করলে ফারাওদের শাসন আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত হয়।
প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার সাফল্যের আংশিক উৎস নিহিত রয়েছে নীল নদ উপত্যকার পরিস্থিতির সঙ্গে এই সভ্যতার মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতার মধ্যে। সুপরিচিত বন্যা ও উর্বর উপত্যকার নিয়ন্ত্রিত সেচব্যবস্থার ফলস্রুতি ছিল উদ্বৃত্ত ফসল।
যা থেকে এই অঞ্চলের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ ত্বরান্বিত হয়। এই সম্পদের সাহায্যেই প্রশাসনের সহায়তায় উপত্যকা ও পার্শ্ববর্তী মরু অঞ্চলে খনিজ পদার্থের উত্তোলন শুরু হয়, একটি স্বাধীন লিখন পদ্ধতির আদি বিকাশ সম্ভব হয়, স্থাপনা ও কৃষিজ পণ্যের সুসংহত ব্যবহার শুরু হয়, পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং সামরিক বাহিনী বহিঃশত্রুদের পরাজিত করে মিশরীয় প্রাধান্য স্থাপন করে। এই সকল কার্যে প্রেরণা জোগানো ও একে সুসংহতরূপে সাধন করা ছিল উচ্চবিত্ত লিপিকার, ধর্মনেতা ও ফারাওদের অধীনস্থ প্রশাসকবৃন্দের আমলাতন্ত্রের নিদর্শন। এঁরা সমগ্র মিশরের জনগণকে একটি বহুব্যাপী ধর্মবিশ্বাসের বন্ধনে আবদ্ধ করে তাদের সহযোগিতা ও একতাকে সুনিশ্চিত করেছিলেন।
প্রাচীন মিশরীয়দের নানান কৃতিত্বগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য খনি থেকে অট্টালিকাদি নির্মাণের জন্য পাথর খনন, সমীক্ষণ ও নির্মাণ কৌশলের দক্ষতা।
এরই ফলস্রুতি ঐতিহাসিক মিশরীয় পিরামিডসমূহ, মন্দির, ওবেলিস্কসমূহ, মিশরীয় গণিত ব্যবস্থা, একটি ব্যবহারিক ও কার্যকরী চিকিৎসা ব্যবস্থা, সেচব্যবস্থা ও কৃষি উৎপাদন কৌশল, প্রথম জাহাজ নির্মাণ, মিশরীয় চীনামাটি ও কাঁচশিল্পবিদ্যা, একটি নতুন ধারার সাহিত্য এবং বিশ্বের ইতিহাসের প্রাচীনতম শান্তিচুক্তি। প্রাচীন মিশর এক দীর্ঘস্থায়ী উত্তরাধিকারকে পিছনে ফেলে যায়। প্রাচীন মিশরের শিল্পকলা ও সাহিত্যের ব্যাপক অনুকৃতি লক্ষিত হয়। বিশ্বের দূরতম প্রান্তে বয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এর পুরাকীর্তিগুলি। শতাব্দীর পর শতাব্দী প্রাচীন মিশরের পুরাকীর্তিগুলির ধ্বংসাবশেষ পর্যটক ও লেখকদের কল্পনাশক্তিকে অনুপ্রাণিত করেছে।
আধুনিক যুগের প্রথম ভাগে পুরাকীর্তি ও খননকার্যের প্রতি নতুন করে মানুষের আগ্রহ জেগে উঠলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মিশরের সভ্যতা সম্পর্কে অনুসন্ধান শুরু হয়। এর ফলে মিশরীয় সভ্যতার সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারগুলি মিশর ও বিশ্ববাসীর সম্মুখে নতুন রূপে উপস্থাপিত হয়।
পরবর্তী প্যালিওলিথিক যুগ থেকেই উত্তর আফ্রিকার শুষ্ক জলবায়ু আরও উষ্ণ ও শুষ্ক হতে শুরু করে। এর ফলে এই অঞ্চলের মানুষেরা নীল নদ উপত্যকায় নিবিড় জনবসতি গড়ে তুলতে শুরু করে। নর্ম্যাডিক আধুনিক শিকারি-সংগ্রাহক মানবজাতি মধ্য প্লেইস্টোসিন যুগের শেষ ভাগে অর্থাৎ বারো লক্ষ বছর আগে এই অঞ্চলে বসবাস শুরু করেছিল।
সেই সময় থেকেই নীল নদ মিশরের জীবনরেখা। নীল নদের উর্বর প্লাবন সমভূমি এই অঞ্চলের অধিবাসীদের স্থায়ী কৃষি অর্থনীতি ও একটি অধিকতর উচ্চমানের ও কেন্দ্রীভূত সমাজ গঠনে সাহায্য করে যা মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি মাইলফলক রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়।
ধর্ম
প্রাচীন মিশরের ধর্মীয় বিশ্বাস মিশরীয় পুরানে প্রতিফলিত হয়েছে। তিন হাজার বছরেরও কিছু বেশি সময় ধরে মিশরে পৌরানিক ধর্মীয় বিস্বাশ প্রচলিত ছিল। মিশরের সভ্যতা ও সংস্কৃতির পাশাপাশি তার পুরানও বিবর্তিত হয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই পৌরানিক চরিত্রগুলোকে যুগ ভেদে বিভিন্ন ভূমিকায় দেখা যায়।
পৌরানিক ধর্মে মূলতঃ বহু দেব-দেবীর অস্তিত্ব থাকলে, প্রাচীন সাম্রাজ্যের কালে আখেনআতেনের ৪র্থ আমেনহোতেপ শাসনামলে কিছুকালের জন্য সূর্যদেব আতেনকে কেন্দ্র করে একেশ্বরবাদের চর্চা করতে দেখা যায়। কিন্তু আখেনআতেনের মৃত্যুর সাথে এই চর্চাও লোপ পায় এবং আগের বহু দেব-দেবী সম্বলিত পৌরানিক ধর্ম ফিরে আসে।
প্রাচীন মিশরীয় ধর্ম
খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে মিশর গ্রিক শাসকদের পদানত হলেও মিশরের পৌরানিক ধর্ম টিকে থাকে । পরবর্তীতে গ্রিক শাসকদের স্থানে রোমান শাসকগন এসে মিশর অধিকার করে নেন এবং সপ্তম শতক পর্যন্ত রোমানরাই মিশর শাসন করেন, এসময়ও পৌরানিক বিশ্বাস টিকে ছিল তবে গ্রিকো-রোমান ধর্মীয় বিশ্বাসের সংস্পর্ষে এসে কিছু পরিবর্তন সাধিত হয় । অবশেষে ৬৪৬ সালে আরব মুসলমানদের হাতে মিশরের শাসনভার চলে গেলে পৌরানিক ধর্ম বিলুপ্তির পথ ধরে ।
প্রাচীন মিশরের ইতিহাস সাধারণত প্রাচীন সাম্রাজ্য, মধ্য সাম্রাজ্য এবং নতুন সাম্রাজ্য - এই তিনটি কালে বিভক্ত করে আলোচনা করা হয় । মিশরীয় সভ্যতার তিনটি স্বর্ণযুগকে এই তিনটি কালের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় । মিশরের সভ্যতা ও সংস্কৃতির পাশাপাশি তার পুরাণও বিবর্তিত হয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই পৌরানিক চরিত্রগুলোকে যুগ ভেদে বিভিন্ন ভূমিকায় দেখা যায়।
প্রাচীন সাম্রাজ্যে মিশরীয় দেব - দেবী কূল
প্রাচীন সাম্রাজ্যে মিশরীয় পুরাণের দেব-দেবীগন ছিলেন অনেকটা আঞ্চলিক, অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন দেব-দেবীর উপাসনা চলত । সেই হিসেবে প্রাচীন সাম্রাজ্যের দেবকূলকে পাঁচটি প্রধান দলে ভাগ করা যায় ।
• হেলিওপোলিসের নয়জন দেব-দেবী - আতুম, গেব, আইসিস, নুট, ওসাইরিস, নেপথিস, সেত, শু এবং তেফনুত ।
• হার্মোপোলিসের আটজন দেব-দেবী - নুনেত ও নু, আমুনেত ও আমুন, কুকেত ও কুক, হুহেত ও হুহ
• এলিফ্যান্টাইনের খুম-সাতেত-আনুকেত ত্রয়ী
• থিবিসের আমুন-মাত-খেনসু ত্রয়ী
• মেম্ফিসের প'তাহ-সেকমেত-নেফেরতেম ত্রয়ী
মিশরীয় পুরাণের দেব-দেবীর তালিকা
• আমুন
• আমুনেত
• আনুবিস
• আনুকেত
• আপেপ
• আতেন
• আতুম
• বাস্ত
• বাল
• বাত
• বেস
• হোরাসের চার পুত্র
• গেব
• হাপি
• হাথোর
• হেগেত
• হোরেস
• ইমহোতেপ
• আইসিস
• ইউসাসেত
• খেপ্রি
• খানুম
• মাহেস
• মা'আত
• মাফদেত
• মেনহিত
• মেরেতসেগের
• মেনথু
• মুত
• নুনেত
• নেইথ
• নেখবেত
• নেপথিস
• নুত
• ওসাইরিস
• প'তাহ
• রা
• রা-হোরাকতাই
• রেশেপ
• সাতিস
• সেখমেত
• সেকের
• সেলকেত
• সবেক
• সেত
• সেশাত
• শু
• তাওয়েরেত
• তেফনুত
• থোথ
• ওয়াজেত
• ওয়াজ-ওয়ের
• ওয়েপওয়াওয়েত
• ওরসেত
আমুন
আমুন একে আমোন, আমোউন, আমেন, এবং কদাচিৎভাবে ইমেন অথবা ইয়ামুন উচ্চরণ করা হয়ে থাকে । প্রথমে বায়ু দেবতা হিসেবে উপাসিত হলেও পরে আমুন সৃষ্টিকর্তা হিসেবে আমুনের উপাসনা শুরু হয়। মিশরীয় দেবতাদের মাঝে ওসিরিসের সাথে, আমুন-রা এর অনেক বিস্তীর্ণভাবে লিখিত বিবরণী রয়েছে। আমুন নিজে একা নিজেকে তৈরি করেছিল।
তার প্রথম স্ত্রী ছিল ওয়াসাট, কিন্তু সে আমুনেট এবং মুট পরবর্তী কালে বিয়ে করেছিল। মুটের সাথে সে চন্দ্র দেবতা খোন্সুর বাবা।
আম্মিত
প্রাচীন মিশরীয় ধর্মে, আম্মুত এবং আহেমাইত ও উচ্চরণ করা হয়ে থাকে, যার অর্থ "গ্রাসক" অথবা "দেহ ভক্ষক" হল একটি মহিলা দানব যার দেহ গঠিত হয়েছে সিংহ, জলহস্তী এবং কুমিরের অংশ দিয়ে। প্রাচীন মিশরীদের জানা মতে এই তিনটি ছিল বৃহত্তম প্রাণী যারা "মানুষ ভক্ষণ" করে। এটি হল অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার দেবতা, তার নামের উপাদি গুলো হল "মৃতদের দেহ ভক্ষক"; "অন্তরের ভক্ষক" এবং "মৃত্যুর মহান"।
আম্মিত মিশরীয় পাতালে, দুয়াতের বিচারের মানদন্ডর নিকট বসবাস করে। দুই সত্যের ঘরে, আনুবিস একজন মানুষের হৃদয়কে তুলনা করে মাআত সাথে। মাআত হল সত্যের দেবী, যাকে কখনও কখনও প্রতীকীরূপে অঙ্কন করা হতো উটপাখির পালকের মত। যদি হৃদয় ঘাটি হিসেবে বিচার না হতো, তখন আম্মিত তাকে খেয়ে ফেলত এবং তাকে ওসাইরিস ও অমরত্বের দিকে যাত্রায় অনুমতি দেওয়া হতো না। একবার আম্মিত হৃদয়কে খেয়ে ফেললে, বিশ্বাস করা হয় যে আত্মা সবসময় অস্থির হয়ে যায়, একে বলা হয় "দ্বিতীয়বার মৃত্যু"।
আম্মিতকে কখনও কখনও অগ্নির হ্রদেও দাঁড়েতে বলা হতো। কিছু ঐতিহ্যে, অযোগ্য হৃদয়গুলোকে মেরে ফেলার জন্য অগ্নিময় হ্রদে নিক্ষেপ করা হয়। কিছু পন্ডিত বিশ্বাস করে যে আম্মিত এবং হ্রদ দুটি ধ্বংসের একই ধারণা প্রতিনিধিত্ব করে।
আম্মিততের উপাসনা হতো না এবং একে কখনও দেবী হিসেবে করা হয়নি। কিন্তু তার দেহ গঠিত করা হয়েছে সেই সব প্রাণী দ্বারা যা মিশরীয়রা ভয় করতো।
তাদেরকে ভয় দেখানো হতো অস্থিরতা সাথে বেধে রাখার যদি আম্মতের নীতিনিয়ম না অনুসরণ করতো।
মাআত
মাআত অথবা মাʻআত মাত অথবা মায়েত ও উচ্চরণ করা হতো, প্রাচীন মিশরীয় ধারণা অনুসারে সে ছিল সত্য, ভারসাম্য, আদেশ, আইন, নৈতিকতা এবং ন্যায়পরতা। মাআত হল একজন দেবী যে তারকা, ঋতু এবং জন্ম-মৃত্যু উভয় নিয়ন্ত্রন করে। সে মহাবিশ্বের সৃষ্টির মূহুর্তের চরম বিশৃঙ্খলা থেকে সব কিছু একটি নিয়মশৃঙ্খলায় নিয়ে আসেন। প্রাথমিক নথিপত্রের বিদ্যমান তথ্য থেকে জানা যায় যে এই জীবন এবং পরবর্তী জীবনের জন্য মাআত হল প্রকৃতি এবং সমাজের জন্য বিধান।
আইসিস
আইসিস অথবা আরও বেশি বিশ্বাসযোগ্যভাবে আসেট হল প্রাচীন মিশরীয় ধর্মবিশ্বাসে মাতৃত্ব, যাদু এবং ঊর্বরতার দেবী। মূলত মিশরীয় ধর্মবিশ্বাসের দেবী হলেও, আইসিসের উপাসনা প্রাচীন মিশরের বাইরে গ্রিক-রোমান বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়েছিল। আদর্শ মা, স্ত্রী, প্রকৃতি ও যাদুর পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আইসিসের উপাসনা করা হত। দাস, কারীগর, পাপী তাপী জন থেকে শুরু করে ধনবান, অভিজাত, শাসনকর্তা, কুমারী নারী - সবার প্রার্থনাই আইসিস শুনতেন।
"আইসিস" নামের অর্থ হল "সিংহাসন"।
তার মুকুট হল একটি সিংহাসন। সিংহাসনের মনূষ্য প্রতিরূপ হিসেবে ফারাও'র ক্ষমতার বিশেষ প্রতীক ছিলেন আইসিস, ফারাওকে চিত্রিত করা হত তার সন্তান রূপে যার বসার সিংহাসনটাকে মনে করা হত আইসিসের দান। তার উপাসক গোষ্ঠী সমস্ত মিশরেই ছড়িয়ে ছিল, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাসনালয় ছিল নিম্ন মিশরে নীল ব-দ্বীপে বেহবেইত এল-হাগার অঞ্চলে এবং নেক্তানেবো'র (৩৮০-৩৬২ bce) শাসনামেলের শুরু থেকে ঊর্ধ্ব মিশরের ফিলা দ্বীপে।
লিখিত ভাবে আইসিসের উপাসনার উল্লেখ পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ এর অল্প কিছু কাল পরেই, পঞ্চম রাজবংশের সময়ে। শুরুর দিকে, মিশরীয় পুরাণ অনুসারে আইসিস হলেন নুট ও গেবের প্রথমা কন্যা, হোরাসের মা।
কালের প্রবাহে হাথরের কিছু বৈশিষ্ট্যও আইসিসের মধ্যে আসতে দেখা যায়। পরের দিকে দেখা যায়, আইসিসের একজন ভাইও রয়েছেন, ওসাইরিস, যিনি পরে তাঁর স্বামী হন এবং তারা জন্ম দেন তাদের সন্তান হোরাস কে। ওসাইরিসের পূনর্জাগরণের ঘটনায় আইসিসের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। অপর এক দেবতা, সেতের এর হাতে ওসাইরিসের মৃত্যু হয়। আইসিস নিজের যাদু ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সেই মৃতদেহের সমস্ত বিচ্ছিন্ন অংশ গুলো জড়ো করেন এবং তাতে প্রাণ সঞ্চালণ করেন।
পরবর্তীতে পুরাণের এই ঘটনা মিশরীয়দের ধর্মবিশ্বাসের উপর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে।
আইসিসের অন্যান্য পরিচয়ের মধ্যে রয়েছে সারল্যের দেবী, মৃতদের রক্ষাকারিনী, শিশুদের দেবী যার থেকে শুরু হয় সবকিছুর, রুটি, পানীয় এবং সবুজ ক্ষেতের দেবী। পরের দিকে মিশরীয় পুরানে এই বিশ্বাস দেখা যায় যে, স্বামী ওসাইরিসকে হারানর শোকে ক্রন্দরত আইসিসের অশ্রূ থেকেই নীল নদ প্লাবিত হয়। প্রতি বছর ওসাইরিসের মৃত্যু এবং পুনর্জাগরণকে বিভিন্ন রকম আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপন করা হত। মিশর ছাড়িয়ে আইসিসের উপাসনা ছড়িয়ে পড়েছিল গ্রিক-রোমান বিশ্বেও।
খ্রিস্টিয় মতবাদের প্রচার শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আইসিসের উপাসনা চালু ছিল সে সব অঞ্চলে।
আতেন
আতেন হল মিশরীয় পুরাণ অনুসারে সূর্যগোলক এবং রা দেবতার আসল চেহারা।
আনুবিস
আনুবিস হল গ্রীসয় নাম, যার মাথা শৃগলের এবং দেহ মানুষের। প্রাচীন মিশরীয় বর্ণনা অনুযায়ী সে মৃতের জগতের অধিকর্তা দেবতা। প্রাচীন মিশরীয় ভাষাতে, আনুবিসকে ইনপু হিসেবে পরিচিত।
সদ্যমৃত ব্যক্তিকে মর্ত্যলোক থেকে মৃতদের দেশ পাতালপুরীতে নিয়ে যাওয়ার পথে নিরাপত্তা দিতেন আনুবিস। মৃত ব্যক্তি আকাশের তারায় পরিণত হতে পারবেন কি না, তা বিচারের ভারও ছিল আনুবিসের ওপরে।
ওসাইরিস
ওসাইরিস মিশরীয় পুরানে জীবন, মৃত্যু এবং ঊর্বরতার দেবতা। পৃথিবীর দেবতা গেব এবং আকাশের দেবী নুটের পুত্র ওসাইরিস। ওসাইরিসের স্ত্রী ছিলেন তার বোন আইসিস।
ওসাইরিসের মৃত্যুর পর তার পুত্র হোরাস জন্ম নিয়েছেন বলে গণ্য করা হয়।
গেব
গেব মিশরীয় পুরাণ অনুসারে পৃথিবীর দেবতা এবং হিলিয়াপলিসের এনেইডের একজন সদস্য। গেব ও তার স্ত্রী নুট আকাশ দেবী মিশরীয় পুরাণের চার প্রধান দেব-দেবী ওসাইরিস, আইসিস, সেত এবং নেপথিসের জন্ম দিয়েছেন। পৃথিবীর দেবতা হিসেবে উদ্ভিদের জন্ম ও বেড়ে ওঠার সাথে গেবকে সম্পৃক্ত করা হয়।
নুট
নুট মিশরীয় পুরাণের আকাশ দেবী।
তার নাম অর্থ রাত্রি এবং তাকে মিশরীয় সর্বদেবতার মন্দিরের মধ্যে পুরনোতম দেবের এক বিবেচনা করা হয়। হিলিয়াপলিসের সৃষ্টির ইতিহাসের সাথে তার উদ্ভবের অসল স্থান খুঁজে পাওয়া যায়। নুট এবং পৃথিবীর দেবতা গেব জন্ম দেন ওসাইরিস, আইসিস, সেত এবং নেপথিসের। নুটকে প্রথম দিকে শুধুমাত্র দিনের আকাশের দেবী মনে করা হত, পরবর্তীতে মিশরীয়দের ধর্ম-বিশ্বাসের বিবর্তনের ধারায় নুট আকাশের দেবীতে পরিনত হন।
মেনেস
মেনেস ছিল প্রাচীন মিশরের প্রাথমিক রাজবংশীয় সময়কালের ফারাও।
সে উচ্চ ও নিম্ন মিশরকে একত্রীত করার সুখ্যাতি অর্জন করে এবং প্রথম রাজবংশ স্থাপন করে। মেনেস জন্ম গ্রহণ করেন খ্রিস্টপূর্ব ৩১০০ সালে। তিনি নিম্ন নীল নদের তীরবর্তি অঞ্চল ও উচ্চ নীল নদের তীর হতে দূরবর্তী অঞ্চল মিশরকে একীভূত করে বৃহত্তর মিশর গড়ে তোলেন।
রা
রা প্রাচীন মিশরীয় সূর্য দেবতা। তিনি হোরাস নামেও পরিচিত।
পঞ্চম রাজবংশ দ্বারা সে প্রাচীন মিশরীয় ধর্মের একটি প্রধান দেবতাতে পরিণত হয়, মূলত মধ্য-দিবসের সূর্যের সঙ্গে সনাক্ত করা হতো।
সেত
সেত প্রাচীন মিশরীয় ধর্ম বিশ্বাসে তিনি ছিল মরুভূমি, ঝড় ও বিদেশীদের দেবতা। পরবর্তী পুরাণে তিনি ছিল অন্ধকার এবং বিশৃঙ্খলারও দেবতা।
সেত নামের অর্থ অজানা, কিন্তু ঐতিহাসিক কালে কয়েকটি ছদ্ম-ব্যুৎপত্তি কথা জানা যায়, যারা ইঙ্গিত করে প্রাচীন মিশরীয়রা এই নামটির সাথে তিনটা ভিন্ন অর্থ সম্পৃক্ত করত: দ্বিধার প্রনোদনা দানকারী, পরিত্যাগকারী এবং মাতাল। মিশরীয় চিত্রলিপির উপর ভিত্তি করে থেকে তার নামের উচ্চারণ ধ্বনি পুনঃনির্মিত হয়েছে হিসেবে এবং কপটিক ভাষায় লিখিত বিভিন্ন দলিল দস্তাবেজে তার উল্লেখ দেখা যায় ।
চিত্রকলায় সেতকে অধিকাংশক্ষেত্রেই একটা কাল্পনিক প্রানী হিসেবে চিত্রত করা হয় যার নাম মিশরতাত্ত্বিকগণ দিয়েছেন "সেত জন্তু" বা টাইফনিয় জন্তু। এই টাইফনের বাঁকান নাক, চারকোনা কান, লেজের প্রান্ত দ্বি-খণ্ডিত এবং কুকুর সদৃশ দেহ; কখনো কখনো সেতকে মানব দেহ এবং সেত জন্তুর মত মাথার অধিকারী হিসেবেও চিত্রিত করা হয়। জানা কোন প্রানীর সাথেই এই জন্তুর সদৃশ্যতা নেই, কিন্তু গাধা, শিয়াল অথবা ফেনেক শৃগালের শংকর ভাবা যেতে পারে। বড় আকারের সমতল শীর্ষ বিশিষ্ট শিংগুলো দেখে জিরাফের সাথে সাদৃশ্য প্রস্তাব করেন কোন কোন । তবে, প্রাচীন মিশরীয়রা জিরাফ এবং সেত জন্তুর মধ্যে পার্থক্য বেশ যত্নের সাথেই ফুটিয়ে তুলত।
পরবর্তীকালে সেতকে চিত্রিত করা হত গাধা অথবা গাধার মাথা বিশিষ্ট মানবদেহ এঁকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।