আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘খালেদা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সশস্ত্র জঙ্গিবাদের সৃষ্টি’

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন তিনি।
২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলকে ‘সম্ভাবনার অপমৃত্যু’ বলে উল্লেখ করেছেন শেখ হাসিনা। ক্ষমতা হারানোর পুরনো ক্ষতের মতো শোনা যায়, যখন তিনি বলেন, পক্ষপাতদুষ্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মদতে কারচুপি ও কারসাজির ফলে ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিশ্চিত বিজয় ছিনতাই হয়ে যায়।

ইশতেহারের শুরুতেই স্বাধীনতাযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদ এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বক্তব্যের শুরুতেই মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রত্যক্ষ বিরোধিতাকারী, যুদ্ধাপরাধী এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীকে পুনর্বাসিতই করার জন্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং পরবর্তীকালে তার উত্তরসূরি খালেদা জিয়াকে দোষারোপের মধ্য দিয়ে শুরু হয় কাঁদা ছোড়া। জিয়ার শাসনামলের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবৈধ সামরিক শাসকরা সংবিধান কর্তন, জনগণের ভোটাধিকার হরণ এবং নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সামরিক ছাউনিতে গড়ে তোলা হয় একাধিক রাজনৈতিক দল। হত্যা-ক্যু-পাল্টা ক্যু হয়ে দাঁড়ায় নিত্যদিনের ঘটনা।

ব্যক্তিগত ও গোষ্ঠীগত স্বার্থে সশস্ত্রবাহিনীকে ব্যবহার, মুক্তিযোদ্ধা অফিসার ও জওয়ানদের হত্যা এবং চাকরিচ্যুত করার মাধ্যমে দুর্বল করা হয় মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী গৌরবোজ্জ্বল সেনাবাহিনীকে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মের অপব্যবহার, কালো টাকা, পেশিশক্তি, দুর্নীতি, লুটপাট এবং দুর্বৃত্তায়নকে রাষ্ট্রপরিচালনার নীতিতে পরিণত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর ১৯৯১ সালে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলেও ক্ষমতাসীন বিএনপি স্বৈরশাসনের এ ধারাই অব্যাহত রাখে। এভাবেই পঁচাত্তর-পরবর্তী সামরিক ও স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের অর্জন এবং একটি সুখী সুন্দর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার সকল সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দেয়। প্রধানমন্ত্রী ইশতেহারে বাংলাদেশের স্বর্ণের যুগ বলে উল্লেখ করেছেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত নিজেদের ক্ষমতাসীন থাকার সময়কে।

প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়Ñ ‘দুঃসহ অবস্থার অবসান ঘটে ১৯৯৬ সালে। পাঁচ বছরে খাদ্যে আÍনির্ভরশীলতা অর্জন, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি, সাক্ষরতার হার ৬৫ শতাংশে উন্নীতকরণসহ বিভিন্ন সাফল্যের কথা তুলে ধরেন তিনি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-জামায়াত জোট প্রায় সমান সংখ্যক (৪০ শতাংশ) ভোট পেলেও বিএনপি-জামায়াত জোটের জন্য দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন নিশ্চিত করা হয়। প্রশ্নবিদ্ধ হয় নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের ধারণা।
বিএনপি-জামায়াত জোটকে এক হাত নিয়ে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত বিএনপি-জামায়াত জোট তাদের পাঁচ বছরের দুঃশাসনে বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করে।

হত্যা, সন্ত্রাস, রক্তপাত, জঙ্গিবাদী উত্থানের ফলে বাংলাদেশ পরিণত হয় মৃত্যু উপত্যকায়। ’ খালেদা জিয়া এবং তার পুত্র তারেক রহমানকে দায়ী করা হয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড হামলা করে হত্যার চেষ্টা এবং আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২২ নেতাকে হত্যার ঘটনায়। নিজের দলের সংসদ সদস্যদের হত্যার জন্যে তৎকালীন ক্ষমতাসীন ও বর্তমান বিরোধী দল বিএনপিকে দায়ী করে ইস্তেহারে উল্লেখ করা হয়, সাবেক অর্থমন্ত্রী এএসএম কিবরিয়া, সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টার, অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইমাম ও সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজউদ্দিনকে হত্যা করার কথা। আওয়ামী লীগের ২১ হাজার নেতা-কর্মীসহ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী বহুসংখ্যক মানুষকে হত্যার জন্যে দায়ী করা হয়েছে বিরোধীদলকে। ২০০১-এর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মন্ত্রিসভায় যুদ্ধাপরাধীদের অবস্থানের সমালোচনা করে ইস্তেহারে বলা হয়েছে, সে সময় সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় উগ্র জঙ্গিবাদের সশস্ত্র উত্থান ঘটে।

দেশের ৬৩টি জেলায় একই সময়ে পাঁচ শতাধিক স্থানে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটানো হয়। আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বলা হয়, বাংলাদেশ পরিণত হয় জঙ্গিবাদীদের অভয়ারণ্যে। সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে কালো তালিকাভুক্ত হয় বাংলাদেশ। বলা হয়েছে, তারেক রহমানের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় রাষ্ট্রক্ষমতার সমান্তরাল বা বিকল্প কেন্দ্র ‘হাওয়া ভবন’। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজি ও কমিশন সংগ্রহ, প্রশাসনের নিয়োগ-বদলি, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা প্রভৃতি দেশবিরোধী অবৈধ কর্মকাণ্ডের ‘অঘোষিত হেড কোয়ার্টার’ বলা হয় হাওয়া ভবনকে।

বিএনপি শাসনামলে প্রশাসন, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পুলিশ প্রশাসনসহ সর্বস্তরে নির্লজ্জ দলীয়করণ, চাকরিচ্যুতি, দখল, অবদমন প্রভৃতির ফলে সুশাসন ও ন্যায়বিচারের অবসান ঘটে। ইশতেহারে বিএনপি শাসনামলের সমালোচনা করে বলা হয়েছে, তারেক রহমান, আরাফাত রহমান ও বিএনপির মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও দলীয় ব্যক্তিরা আমদানি ব্যবসা করার প্রতি বেশি তৎপর ছিল; তারা বাংলাদেশকে আÍনির্ভরশীল করতে চায়নি। ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থেই বিএনপি সরকার বেশি যুক্ত ছিল। তারা নিজেদের স্বার্থকে বড় করে দেখে দেশ ও জনগণের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়েছে। খালেদা জিয়ার গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অর্থহীন করে তোলে।

দলীয় অনুগত ব্যক্তিকে প্রধান উপদেষ্টা করার লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধন করে প্রধান বিচারপতির চাকরির বয়সসীমা দুবছর বৃদ্ধি, আজ্ঞাবহ অযোগ্য ব্যক্তিদের বিচারপতি ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ, ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার করেই ক্ষান্ত হয়নি, তারা কারচুপি ও ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের নীল-নকশা কার্যকর করার মরিয়া চেষ্টা চালায়। এরপর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সমালোচনা করা হয়। মাইনাস টু ফর্মুলার সমালোচনা করে বলা হয়েছে, ‘শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে বিরত রাখার লক্ষ্য থেকেই এই তত্ত্ব হাজির করা হয়।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংসদের প্রায় নয়-দশমাংশ আসনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের গত পাঁচ বছরকে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বদলে যাওয়া দৃশ্যপট’।

রূপকল্প-২০২১, ডিজিটাল বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় সাফল্যের কথাও বলেছেন তিনি। এরপর পর কয়েক পৃষ্ঠাজুড়ে শুধুই নিজ সরকারের সাফল্যগাথা। নির্বাচনে বিরোধী দল না থাকলেও তাদের কার্যক্রমকে অসহযোগিতা, ধ্বংস ও সংঘাতের রাজনীতি হিসেবে উল্লেখ করে তার সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০৮ সালের নির্বাচনের গণরায় মেনে নিতে পারেনি। প্রথম থেকেই তারা অসহযোগিতা, ষড়যন্ত্র ও সংঘাতের পথ গ্রহণ করে।

বিডিআর বিদ্রোহকে ব্যবহার করে সেনাবাহিনীকে উসকানি প্রদান এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নস্যাতের জন্য বিএনপি নেতৃত্ব জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে একাÍ হয়ে একাধিক ব্যর্থ প্রচেষ্টা গ্রহণ করে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকেই বিএনপি নেতৃত্ব যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় মরিয়া প্রচেষ্টা নেয়। ইশতেহারে বলা হয়েছে, ‘তারা সারা দেশে হত্যা, গণহত্যা, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, ধর্মীয় উš§াদনা সৃষ্টি, হেফাজতে ইসলামকে মাঠে নামানো, মসজিদে অগ্নিসংযোগ, হাজার হাজার কোরআন শরীফে অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশ, সেনা সদস্য ও বিজিবি সদস্যদের হত্যাসহ সাধারণ নাগরিকদের পুড়িয়ে মারার মতো নারকীয় তাণ্ডবের সৃষ্টি করে। ’৭১-এর মতোই জামায়াত-শিবিরের ঘাতক বাহিনী বিএনপিকে নিয়ে দেশবাসীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। নির্বাচনকালীন সরকারের প্রশ্নে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোন এবং সংলাপের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান রাজনৈতিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ রুদ্ধ করে দেয়।


সুত্র

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.