অন্যান্ন জিনিসের কথা বাদ দেই , শুধু শীতের সব্জির দিকেই তাকাই । শীত হচ্ছে শাক-সব্জির সীজন । রকমারি বাহারি সব্জি প্রচুর পরিমানে ফলে । ফুলকপি , বাধাকপি, সীম, মূলা, গাজর, আলু , লাউ , বেগুন , টমেটো, আরো কতকি । পরিমানে যেমন পর্যাপ্ত মেলে, এসবের স্বাদও খোলে তেমনি ।
কিন্তু দাম দিতে গিয়ে দরিদ্রতো বটেই মধ্যবিত্তও হিমশিম খায় । একটা মাঝারি আকারের ফুলকপি পঞ্চাশ টাকার নিচে পাওয়া যায় না । সীমের কেজ়ি ষাট টাকা , টমেটো আশি টাকা , মাঝারি সাইজের বাধা কপি ত্রিশ টাকা । লাউ পঞ্চাশ ষাট টাকা । শীতকালীন সবজি দিয়ে রসনা তৃপ্তিও গড় জনগনের পক্ষে সহজসাধ্য নয় ।
এত দাম কেন সবজির ? ঢাকার কথা যদি ধরি , এর সবজি কিন্তু তেমন দূর থেকে আসেনা । কুমিল্লার চান্দিনা , বুড়িচং, দেবীদ্বার , নরসিংদি , গাজীপুর , সাভার এমনকি মহানগরীর সংলগ্ন এলাকাসমূহ থেকেও সব্জি আসে । সীমাহীন কষ্ট আর পরিশ্রমে যারা এসব ফলায় তারা কত পায় ? দেবিদ্বারে মঝারি আকারের ফুলকপির কুড়ি কেনা হয় একশত থেকে একশত বিশ টাকায় । লাউএর কুড়িও অমনই । সীমের পাল্লা অর্থাৎ পাঁচ কেজি ত্রিশ থেকে চল্লিশ টাকা ।
তাহলে সমীকরন তৈরী করা যাক-
ভোক্তাপ্রান্ত –উৎপাদক প্রান্ত= মধ্যস্বত্বভোগী
ফুলকপি এর জন্য সমীকরনটি(২০ টি ফুল কপির জন্য)দাঁড়ায়
১০০০-১২০=৮৮০
অর্থাৎ ভোক্তার ১০০%পরিশোধিত অর্থের ১২% পাচ্ছে উৎপাদনকারী আর বাকী ৮৮% পাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী ।
মধ্যস্বত্বভোগী কারা এবং তাদের কাজঃ
গ্রাম্য বাজার গুলিতে একধরনের ব্যবসায়ী থাকে তারা অতি অল্প মূল্যে উৎপানকারীর কাছ থেকে সবজি ক্রয় করে ঐখানেই জড় করে । এগুলোকে প্রয়োজনীয় প্যাক করে ট্রাকে করে বিভিন্ন বড় শহরে/ঢাকার কাওরানবাজারে নিয়ে আসে । প্যাকিং এবং পরিবহন বাবদ কাওরানবাজার পৌঁছানো পর্যন্ত তার কেজি প্রতি পঞ্চাশ ষাট পয়সার বেশি পড়েনা । তাও ধরে নিলাম এক টাকা ।
আড়ৎদারকে না হয় কপি প্রতি এক টাকাই দিল । লেবার খরচ বাড়িয়েই ধরা যাক , ধরলাম কপি প্রতি এক টাকা । কিছু সবজি নষ্ট হতেই পারে , ক্ষয়ক্ষতির খরচ ধরা যাক কপি প্রতি একটাকা । আর , আর রাস্তায় কারা কারা ধরে, তার খরচও ধরে নিলাম কপি প্রতি টাকা । আড়ৎএর চাঁদা টাদা আড়ৎদারের , সেই খরচতো আগেই ধরা হয়েছে ।
পাইকারী/কাওরানবাজার আড়ৎ থেকে এলাকার বাজারে পরিবহন খরচ না হয় কপি প্রতি এক টাকাই হল ।
তাহলে কি দাঁড়াল ?
ব্যবসায়ীর(পাইকারী ও খুচরা মিলে) খরচ কপি প্রতি (৬+১+১+১+১+১+১)= ১২ টাকা ।
পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীর লভ্যাংশ সমান ধরে নিলে দুইজনের পৃ্থক মুনাফা=(৫০-১২)x১০০/(১২x২)=১৫৮%
দুইপক্ষের মোট ৩১৬%
দেখা যাচ্ছে কপি প্রতি উৎপাদনকারী পাচ্ছে উৎপাদন খরচ সহ ৬ টাকা আর তার কষ্টের উপরে ভর করে দুই ব্যবসায়ী ১৯ টাকা করে মোট ৩৮ টাকা পাচ্ছে ।
উপরের হিসাবটি থেকে কি মনে হয় উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তা তক পৌঁছানোর পুরো প্রকৃয়াটির ভেতরে কিছুমাত্র ইনসাফ নিহিত রয়েছে ? এটিতে সামাজিক সাম্য বা আয় বন্টনের সাম্যের বিন্দুমাত্র অস্তিত্ব বিদ্যমান আছে ?
ফুলকপির উদাহরন কি শধু এটকুতেই সীমাবদ্ধ ? আরো বহু কিছুতেই কি অসাম্য বিস্তৃত নয় ?
ক্যাব (CAB) আছে । পুরো প্রকৃয়াটি নিয়ন্ত্রন করতে পারে এমন কোন কর্তৃপক্ষ কি নেই ? যদি বিষয়টিতে একটু দৃষ্টিপাত করত বড় ভাল হত ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।