নতুন বছরটাতে সবার জীবনেই নেমে আসে নতুনত্ব, কেউ নতুন কিছু করতে চায়, কেউ নতুন কাপড় পরতে চায়, কেউ নতুন খাবার খেতে চায়, কেউবা আবার নতুন কোথাও বেড়াতে চায়। বছরের প্রথম দিনটি কারও কাটে ঘুমিয়ে, কারও কাটে গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ড নিয়ে, কারও কাটে পরিবার পরিজনের সাথে আনন্দ উত্সবে আবার কারও কাটে জীবনের হিসাব কষে। কেউ পাওয়া না পাওয়ার জরিপ করে, কেউ না পাওয়াটাকেই পরম পাওয়া ভেবে উল্লাস করে, কেউ আর পাঁচটা দিনের মত এ দিনটিকেও গুলিয়ে ফেলে কাজের ভেতর, কারও কাছে আবার প্রথম শেষ বলে কিছু নেই। কেউ অট্টালিকা গড়েও খুঁজে পায়না একাণু আনন্দ, কেউ আবার অনাবাদী আনন্দকে ফসলের মাঠ ভেবে লাঙল চালিয়ে আবাদের পর করে যায় বহুমুখী চাষ, কেউবা আবার বহুদামে আরাধ্য আনন্দ কিনে সযত্নে তুলে রাখে সোনার শিশিতে, কেউ কেউ আবার নির্মল আনন্দে দিশেহারা, কারও উত্সব অবোধ শিশুর হাসিতে, কারও আবার ব্রিফকেস ভর্তি অর্থের শিশিতে, কেউ ডাল ভাতেই তুষ্ট কেউবা আবার পোলাও কোর্মায় অভ্যস্ত। কারও আনন্দ বস্ত্র হরণে তো কারও আবার বিতরণে।
রাস্তার পাশে নোংরা পোশাকের মুখভর্তি দাড়িয়ালা লোকটির মধ্যেও থাকেনা আনন্দের অভাব। না খেতে পারা শিশুটির মুখেও থাকে উল্লাস উল্লাস ভাব।
নতুন বছরও পুরাতনের মতোই পরিপূর্ণ থাকবে ঝামেলায়, তবুও সবার মাঝেই তাকে বরণের স্ফূর্তি। মহাকালের গর্ভে বিদায়ী ২০১৩ নিয়ে তেমন ভাবনা নেই, ভাবনা ২০১৪ নিয়ে। নতুন এরকমই, যেখানে সারা বছরের পড়ার কষ্ট থাকে না, থাকে নতুন বইয়ের আনন্দ; মৃত্যুর সময় কমার দুঃখ থাকে না, থাকে বড় হবার আনন্দ; ক্ষমতা হারোনোর চিন্তা থাকে না, থাকে ক্ষমতার নেশার আনন্দ।
সূর্যোদয়ের নিয়ম যেমন পাল্টাবে না, সূর্যাস্তের নিয়মও তেমনি পাল্টাবে না। তবে সময়টা পাল্টাবে, আর সেই সময়ের সাথে পাল্টে যাবে অনেক কিছু। আর এই সময়টাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্যই একেকজনের একেকরকম প্রয়াস। প্রতিটি প্রয়াসের মূল উদ্দেশ্যই হলো এমন কিছু মুহূর্ত/ঘটনার অবতারনা, যা সযত্নে তুলে রাখা যায় স্মৃতির মণিকোঠায়। আমিও তার ব্যাতিক্রম নই।
তবে একটু ব্যাতিক্রমভাবেই নিতে চায় নতুনত্বের স্বাদ। আর এই অভিপ্রায়েই অন্যদের মতো ঘোরাঘুরি ছাড়াই বছরের সাথে সাথে নিজেকেও এক্কেবারে নতুন করে ফেলার পাগলামীমূলক একটা পরিকল্পনা নিয়েছি। আনন্দ নিতে/দিতে প্রয়োজন হয় বুদ্ধিমত্তা কিংবা পাগলামী। প্রথম গুণটি না থাকায় দ্বিতীয়টিরই সাহায্য নিতে হলো। সেই উদ্দেশ্যে মোবাইলের সবগুলো কন্টাক্টকে ডি-লিট উপাধিতে ভূষিত করবো।
পরিচিত নম্বরগুলো যখন অপরিচিত অপরিচিত মনে হবে, চেনা কন্ঠস্বরগুলোতে ভেসে বেড়াবে অচেনা অচেনা গন্ধ, বন্ধুদের মনে রং নাম্বার রং নাম্বার ভাবনা উদয় ঘটবে কিংবা বকাবকির মতো ঘটনার অবতারনা হবে তখন আসলেই নিজেকে নতুন মনে হবে। সেলিব্রেটি বন্ধুগুলোর মত ভাব নিয়ে বলা যাবে," হ্যালো, কে বলছেন প্লিজ?" কল লিস্ট পাবে নতুন মাত্রা। সব মিলিয়ে আশা করছি পাগলামীটা জমবে ভালোই। আর তার সাথে বাড়তি আনন্দ হিসেবে আছে আমার, আমার মোজো চাচার, এবং আমার বড় চাচার পরিবারে সকল সদস্য মিলে হৈ-হুল্লোড়ে পরিপূর্ণ পিকনিক। তবে ভোজন কার্য বনে না বিশাল বারান্দায় সম্পন্ন হবে।
দেশের বর্তমান পরিস্হিতিতে বাইরে ঘোরাঘুরির প্লান করা আর জীবন নিয়ে বাজি ধরা একই কথা। তাই নিজের কথা না ভাবলেও পরিবারের কথা ভেবে আপনিও প্লান করে ফেলুন ঘরে বসেই নতুন বছর উদযাপনের। কিছুটা আবেগ, কিছুটা ত্যাগ, কিছুটা সাহায্য, কিছুটা বোকামী, কিছুটা প্রাপ্তি আর ভালোবাসার মিষ্টি দিয়ে রান্না করে ফেলুন অখাদ্য কিন্তু তৃপ্তিময় ক্ষীর। আর ঘ্রাণ নিন পরিবারের সকলে মিলে।
সবাইকে "হ্যাপি নিউ ইয়ার"
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।