তত্ত্ববিদ্যা , সত্তাতত্ত্ব , বা নির্বিশেষ তত্ত্ব কে Ontology বলা হয় ।
এই তত্ত্বের পেছনে আছে সৃষ্টির পেছনের মূল সত্তাকে খোঁজার বাসনা।
এ চিন্তা দার্শনিকদের আদিকালের চিন্তা। এরিস্টটলের মতে প্রতিটি বস্তু হল
খন্ডিত সত্তা আর আদিতে আছে নির্বিশেষ সত্তা । প্লেটো এই নির্বিশেষ সত্তাকে পরম বা আদি সত্তা বলেন ।
মধ্য যুগের দার্শনিক গণ এই তত্ত্বকে সামনে রেখে স্রষ্টাকে খুজে পেতে চেয়েছেন, একুইনাস , উলফ , হবস,
স্পিনোজা, লক এবং আরও অনেকে এই চিন্তা নিয়ে কাজ করেছেন ।
পৃথিবীর শুরু থেকে আজ অবধি চিন্তাশীল মানুষ এ প্রশ্নের খুজে ফেরে কে কি উদ্দেশ্য নিয়ে এ জগৎ তৈরী করল ? সমস্যা হচ্ছে এ কালের মানুষ ভাবনা চিন্তারও আগে রেডিমেড সমাধান পেয়ে যায় তাই ভাবনার যতি টেনে দেয় ।
আসুন সাদামাটা আলোচনায় , সৃষ্টিকর্তাকে আমরা যার যার ধর্মের শেখানো চেহারায় চিনি । কি কি তিনি মঞ্জুর করেন কি কি করতে বারণ করেন , কিভাবে তাঁকে ডাকতে হবে এর সবই আমাদের একেবারে শৈশবে শিখিয়ে দেয়া হয়। প্রতিটি ধর্মের একজন প্রধান পুরুষ থাকেন, সৃষ্টিকর্তা তার মাধ্যমে ধর্মের সংবিধান পাঠানো র কাজটি করেন।
ধর্মের সাধারণ যে ফরম্যাট আছে তাতে ধর্ম দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন নীতিকে সমর্থন করে , নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষনা করে, মৃত্যুর পর ভালমন্দ বিচার বিবেচনা করে চিরকালিন শাস্তি বা পুরষ্কারের ব্যবস্থা করে।
এই পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকলে ধর্ম নিয়ে কোনও সমস্যা ছিলনা। ধর্ম ব্যক্তি ছাড়িয়ে গোষ্ঠীবদ্ধ আচারে পালিত হতে শুরু করেছে যখন , যখন বিভিন্ন প্রান্তরে বসবাস রত মানুষ পরস্পরের সান্নিধ্যে আসতে শুরু করল তখনই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হল। ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের লড়াইয়ের বেলায় প্রেরণাটাও থাকে গতানুগতিক আবেগের চেয়ে আরও উপরে । এই লড়াই পবিত্রতার মর্যাদা পায় বলে আরাধ্য ।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় ধর্মযুদ্ধে এ যাবৎ যত মানুষ মরেছে আর অন্য কোন কারণে এত প্রাণের ক্ষয় হয় নি । পৃথিবীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কত গুলো ধর্মের আবির্ভাব ঘটেছে তা জানা যাবে না কখনও । লিখিত ইতিহাস পূর্ব সময়টা কত লম্বা ? আর্কিওলজিষ্টগণ সময়ের হিসেব কষেন মিলিয়ন ট্রিলিয়ন বছর ধরে ।
সেই সময় থেকেই মানুষ বিচ্ছিন্ন ভাবে ধর্ম পালন করে । সভ্যতা ধীরে ধীরে বিকশিত হতে হতে একসময় থিতু হয়, প্রাকৃতিক নেতিবাচক তা কে জয় করার মাধ্যমে আদি মানব এই বিকাশ প্রক্রিয়া শুরু করে ।
আগুন আবিষ্কার থেকে হালের ইন্টারনেট পর্যন্ত একই ধারাবাহিকতা র ফল । গুহাচিত্র থেকে ব্রেইল লিখন পদ্ধতি, অর্থহীন চিৎকার থেকে ভাষা সব ই নিজেকে জানান ও পর কে জানার মাধ্যম । এই সিনারিও কে গ্রহণ না করার কোনো যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে না।
ঠিক কোন জায়গায় এসে সৃষ্টিকর্তাকে অনুভব ও তাঁকে খোঁজার প্রয়াস ছিল তা বলা মুশকিল ।
আজকের বিদ্যমান সুসংহত ধর্ম গুলো সেই বিকাশ প্রক্রিয়া র ফল ।
সভ্যতার সঙ্গে প্যারালাল থেকে ও ধর্মের বিকাশ থেমে গেছে কেন ?
এই প্রশ্নের মাঝেই উত্তর নিহিত রয়েছে । মানব সৃষ্ট সভ্যতা বিকশিত হচ্ছে মানুষের ইচ্ছায় ঠিক সেভাবেই ধর্মের বিকাশ ও থেমে গেছে মানুষের ই ইচ্ছায় ।
একট সদ্য জন্মানো শিশু কে মায়ের স্তনের কাছাকাছি আনা মাত্রই শিশুটি সেটি চুসতে থাকে , এই কাজটি মাতৃজঠর থেকে শিখে আসেনি ।
শিশুর কোষে কোষে জেনেটিক কোড তার প্রয়োজনীয় ইনস্ট্রাকশান লিখে রাখে, সেই ইনস্ট্রাকশান অনুযায়ী অত্যাবশ্যকীয় কাজ শুরু করে শিশু নিজেই, আচরণগত শিক্ষা নির্ধারিত হয় পরিবেশের প্রকৃতি থেকে। আলাদা প্রাণ হিসেবে বেড়ে ওঠার ইনবিল্ট ব্লুপ্রিন্ট নিয়ই সে জন্মায় ।
যে মহা পরিকল্পনার কথা ধর্ম গ্রন্থ ঘোষণা করে , সে অনুযায়ী জীবনের জটিল পরিক্রমা পরিচালিত হচ্ছে , প্রাণের ইন ভিট্রো ও ইন ভিভো সব কিছু স্পষ্ট আইন ও যুক্তি দিয়ে কঠোর ভাবে পরিচালিত হয়, তার ব্যত্যয় হলে নিয়ম মেনে প্রাণকে নিষ্প্রাণ হতে হয় ।
মানুষের বোঝার ও আগে থেকেই সৃষ্টি ও সৃষ্টির রক্ষনাবেক্ষনের সূত্র সমূহ সংরক্ষণ করা হয় । সেই সূত্রে র কোন ব্যত্যয় হয় না । এর বাইরে স্রষ্টার কোনো অভিপ্রায় কিছু থেকে থাকে যদি , তা বোঝার কি সত্যই কোন বাস্তব সম্মত উপায় আছে ? আমরা বিজ্ঞান সম্মত হলে সব কিছু বিনা দ্বিধায় মেনে নিই । প্রচলিত সুত্র ধরে স্রষ্টাকে খুজে পেতে হলে অলৌকিকতা কে দুরে রেখে ই এগুতে হবে ।
এ কথা বলা কি অযৌক্তিক হবে , যে জীবন পরিচালনার ব্লু প্রিন্ট জিনোমে রক্ষিত আছে তাই ধর্মীয় আচরন ও আচার , এক স্রস্টা উদ্ভুত বলে , জীনে সংরক্ষণ হওয়া ই অধিক যুক্তিযুক্ত ।
স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার বাসনা ও প্রতিকূল পরিবেশে সাহায্য চাইতে গিয়ে ই ধর্মের প্রয়োজন অনুভুত হয় । ধর্ম কে শাশ্বত মনে করার একটা চাপ রয়েছে , তবে ধর্ম শাশ্বত নয় , সার্বজনীন ও নয় । কোন ধর্ম নেই যা শুরু থেকে চলে এসেছে , কোন ধর্ম নেই যাতে সবাই বিশ্বাস করে । সত্য কে সবাই বিশ্বাস করে , স্বীকার করে ।
একটি ধর্ম ও তার বিধাতায় বিশ্বাস করে শুধু ওই ধর্মের মানুষ । অন্য ধর্মের লোকের কাছে তা হাস্যকর কখন ও ঘৃণা র । একটি ধর্ম বাতিল করে দেয় অন্য গুলোকে , একই সাথে সব ধর্ম সঠিক হতে পারে না । সব ধর্ম দাবী করে সে সঠিক , এর প্রমান দেয় নিজ ধর্মের প্রনিত গ্রন্থ থেকে ।
ধর্মেগুলোর বিকাশ বর্তমানের কেউ চাক্ষুষ করেনি ।
হাইপোথেটিক্যালি আমরা এর উদ্ভব নিয়ে আলোচনা করতে পারি । ধর্ম গুলো একদিনে দেখা দেয় নি , মানুষ আদি কাল থেকে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছে বিশ্বকে - বিশ্বের ও নিজের উদ্ভবকে , চারপাশের প্রপঞ্চরাশিকে । সীমিত জ্ঞানে সে সব বুঝতে ও ব্যাখ্যা করতে চেয়েছে , ফলে ভুল ব্যাখ্যা ও ভুল কল্পনা করে ছে । বিভিন্ন প্রান্তরে বিভিন্ন মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে স্রষ্টার স্বরূপ উন্মোচন করেছে , এ ভাবেই নানান ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে । শক্তি ধর সব কিছু কে দেবতা জ্ঞান করেছে ।
তৈরী করে বহু কাহিনী ও কিংবদন্তী । পৌরাণিক কাহিনী র উদ্ভব ঘটে এ ভাবেই । পৃথিবীতে প্রচলিত বড় ধর্ম গুলো র উৎপত্তির কমন কিছু কেন্দ্র রয়েছে । ভারতীয় ধর্মগুলো র মধ্যে সুস্পষ্ট মিল রয়েছে । যেমন মিল আছে প্যালেষ্টাইন অধ্যুষিত ধর্মগুলো র ।
আবার গ্রীক ও রোমান ধর্মগুলো কাছাকাছি রকমের, পারস্য অঞ্চলের আগুন পুজকেরা আদি মানবের সাথে সুত্রবদ্ধ । এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রান্তরে বসবাস রত মানুষ নিজস্ব নিয়মে ধর্ম পালন করছে । এই প্যাটার্নটি বিশ্লেষন করলে অনুমান করা যায় যে দীর্ঘ সময় ধরে এই ধর্মগুলো একটা অন্য টার সাথে পরিচিত ছিলনা ।
ধর্মের ইতিহাস পাচ হাজার বছরের , এর মধ্যে অজস্র ধর্ম প্রচারিত হয়েছে ও বাতিল হয়ে গেছে , কিন্তু মানুষ আছে কোটি বছর আগে থেকে , টিকেও থাকবে আরো কোটি বছর । পৃথিবী ধ্বংসের আগে হয়তো পাড়ি জমাবে অন্য কোথাও , মানুষের সম্ভাবনা অনন্ত ।
পাচ হাজার বছর চির কাল নয় । কিছু প্রশ্ন চিরকালিন , সৃষ্টিকর্তা কে ? সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কি ? মৃত্যুর পর কি আছে ? এমন অজস্র জিজ্ঞাসা নিয়ে ই মানুষ বেঁচে আছে । অনেক প্রহেলিকা র কোন সদুত্তর নেই । তাই বলে জীবন থেমে নেই । আমাদের চারপাশে অনেক কিছু ঘটে চলেছে , ইন্দ্রিয়াতীত ঘটনা যা আমাদের বোধের অতীত তা অনুভব করছে নিম্ন বুদ্ধি সম্পন্ন কোন প্রাণী ।
যেমন শ্রবনোত্তর বা অবশ্রুত শব্দের সঙ্গীত উপভোগ করছে রাস্তার নেড়ী কুকুর টি , এমন আলো র বর্ণিল সৌন্দর্য হযতো চোখ ধাধিযে দিচ্ছে কোন পিপড়ে বা মৌমাছির , অথচ আমি বঞ্চিত । শিশুর ন্যাচারাল ইংস্টিংঙ্ক বলে , কেউ শিখিয়ে দেবার আগেই সে একান্ত নিজস্ব শারীরবৃত্তিয় কাজ গুলো সেরে ফেলতে পারে । এখানে সে চালিত হয় আভ্যন্তরীন তাড়না দিয়ে । বেসিক , ন্যাচারাল বা আভ্যন্তরীন যে নামেই ডাকা হোক , এই শক্তি বা ক্ষমতা নিয়ে সে জন্মায় । কে দিল এই প্রাণ , জীবনের এই যে চলমান স্রোতধারার শুরুটা কোথায় , এর উদ্দেশ্য ই বা ? এই প্রশ্নের জবাব খোঁজার আগে আরেকটা বিষয় নিয়ে কথা বলি ।
আমাদের স্নায়ু পরিবেশের সাথে সংযোগ রক্ষা করে , অপটিমাম পরিবেশ না পেলে প্রাণ বিকশিত হয় না , হতে পারেনা । তাপ , চাপ বায়ুপ্রবাহ, আলো খাদ্যের অবারিত সরবরাহ না থাকলে প্রাণ প্রাণান্ত হয় । স্নায়ুর ইনপুট আউটপুট অনুসারে প্রাণ অভিযোযিত হয় । এই অভিযোজনের ক্ষমতা ভিন্ন ভিন্ন প্রানে ভিন্ন । মানুষের মগজ উদ্ভাবন শীল সৃজন শীল তাই আমাদের অনেক শারীরিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও পৃথিবী শাসন করছে ।
অনেক প্রজাতি আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে । আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব কি সব দিকেই । না অনেক নিম্ন শ্রেণীর প্রানীরা যা দেখে শোনে অনুভব করে আমরা সেটা পারিনা । সীমাবদ্ধতায় বাস করে ও অসীম সম্ভাবনা ময় মানুষ ।
মানুষের অন্তর্জগত মনন ও চিন্তার জায়গাটা সম্পূর্ণ ই তার বেড়ে ওঠা র পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত বলে সব মানুষ এক গঠনের , এক শারীরবৃত্তীয কার্যকলাপ দ্বারা পরিচালিত হলেও , ভাবনার জায়গাটা এক নয়।
এখানেই মানুষ অদ্বিতীয় , তাই সবাই কে এক ভাবে ভাবতে হবে , এক মতে মিলে যেতে হবে - এই আইডিয়াটা ই অবাস্তব । আর কোন নীতিমালা অনুযায়ী চললে পৃথিবীর শান্তি বজায় থাকবে এটা ও বলা মুশকিল ।
নৈতিক শিক্ষা টা ও পরিবেশ গত , এটা র সাথে মূল্যবোধ জড়িত । আর যাই হোক লোভে পড়ে বা ভয় পেয়ে নৈতিকতা গঠিত হতে পারে না। লোভ বা ভয় হছ্ছে দুর্বল চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ।
মানুষের চরিত্র ও এক প্রহেলিকা , কোথাও সে মহিমাময় আবার কোথাও তার নিকৃষ্টতা অসীম । কিছু স্বভাব বংশের ধারাবাহিকতায় আর কিছু গড়ে উঠে পরিবেশ থেকে । তাই তার প্রাথমিক পারিবারিক শিক্ষা খুবই প্রয়োজন অন্য দিকে তার চিন্তা ভাবনা র জায়গাটা ফ্লেক্সিবল রাখতে হবে , আগে থেকেই ঢুকিয়ে দেয়া চলবেনা এবসলিউট কোন ধ্যান ধারণা ।
আমরা কি চাই: ধরে নিলাম স্রষ্টার বিধান অনুযায়ী মানব সম্প্রদায় এক ধর্মে দীক্ষিত হল । চির সম্প্রসারণ শীল ধর্ম এক সময় থেমে যাবে ।
তারপর কি হবে ? মানুষের চিন্তার জায়গাটা কি থেমে যাবে । জীবন কিসের সন্ধানে এগোবে ?
স্রষ্টা র কি লাভ আমাদের নৈবেদ্যে? যা চাইলে তিনি এমনি ই পেতে পারেন তার জন্যে তুচ্ছ মানুষের তুচ্ছ স্তব কোন অর্থ রাখে কিনা ? আবার আরেকটু অবাধ্য হয়ে জিজ্ঞেস করা যায় , তিনি কিভাবে অস্তিত্ব শীল হলেন , স্রষ্টা হলেন ? কে তাকে সৃষ্টি করল ? সৃষ্টির আগে কি ছিল ?
এসব প্রশ্ন খুব সাধারণ ও স্বাভাবিক ধরণের , কিন্তু প্রতিটা ধর্মের ই কিছু নিজস্ব ব্যাখ্যা আছে, আছে বিধিনিষেধ । এই আলোচনা করার প্রকৃত কোন সুযোগ নেই । তাই ধর্মের নামে মানবতা বিবর্জিত নানা শোষন চলতে পারে । অধিকাংশ মানুষ নিজ নিজ ধর্ম সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখেনা ।
এটি টিকে আছে যতটা না অন্তর্গত শিক্ষায় তারও বেশী একটা আশংকা ও ভীতি জাগানিয়া অনুভবে । মানুষ স্বভাব দ্বারা পরিচালিত প্রাণ । যাপিত জীবনে কাটায় অধিকাংশ সময় । এ যুগেও প্রত্যেকের নিজ নিজ ধ্যান ধারনা , হোক তা সত্য থেকে বহুদূরে , নিয়ে জীবন কাটালেও তাতে তার খুব একটা ক্ষতি বৃদ্ধি হবেনা । আদি কালের মানুষের ও জীবন কেটে বা গেছে ব্যাপক বিভ্রান্তি অপবিশ্বাস নিয়ে ।
নানা ভাষা, নানা গোত্র, হরেক বর্ণের সংস্কৃতির মানুষের জন্যে একটি জীবন ব্যবস্থা হয় কিভাবে ? আমাদের চোখের সামনের বিশ্বটা বাদে বাকি সব কিছু সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান সীমিত , যেটুকু জানা গিয়েছে তাও হাজার হাজার বছরের গবেষনার ফল ।
আমরা বলতে গেলে কিছুই জানিনা , অথচ ধর্মগ্রন্থে যা লেখা আছে তা আমরা দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি , কেন? শুধু বিশ্বাস করি বলে কোন প্রশ্ন নেই । কেন ? কিভাবে এত নিশ্চিন্ত ভাবে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব । যখন আমরা জানি যে এ যুগের মানুষের চেয়ে কম জ্ঞানবুদ্ধি মানুষের কল্পনা বই কিছু নয় । তারা জানতোনা পৃথিবীর ও মঙ্গলের দুরত্ব চার কোটি কিলোমিটার।
সত্যিই কি এ সব প্রশ্নের জবাব আছে , যা শুনে সকল প্রকার ভুল ধোঁয়াশা প্রহেলিকা অবিশ্বাস কেটে যাবে ?
না তা কখনই কাটবেনা । আপনি যদি এখনও এই কথা ভাবছেন অন্য ধর্মের সীমাবদ্ধ তা আছে তাই আমার ফুলপ্রুফ ধর্মে অন্যদের নিয়ে আসাটা ওয়ান-টুর ব্যাপার মাত্র । তাহলে আপনি এখনো পূর্বের বিশ্বাসে অটল আছেন । এমনটাতো অন্য কেউ ভাবতে পারে । প্রশ্ন করুন নিজেকে কেন আজ আপনি যে ধর্মে বিশ্বাসী সে ধর্মে বিশ্বাসীর ঘরে আপনার জন্ম হল ।
আপনি কি অন্য ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করেছেন? কি উদ্দেশ্যে জেনেছেন ? আপনার অন্য ধর্মের মানুষের ঘরে জন্মালে আপনি কি বর্তমানের ধর্মের লোকদের কাছে ফেরত যেতেন ?
স্পেস অসীম , এর ব্যাপ্তি ছড়িয়ে আছে কোটি কোটি আলোকবর্ষ ব্যাপী।
গ্রীকরা ভাবত সূর্য একটি ছোট্ট ভূখন্ডের সমান , মিশরীয়রা আকাশ কে তাবুর ছাদের বাইরে কিছু ভাবতে পারতনা । তারা ইকারুসকে ডানায় ভর দিয়ে ই সূর্যে পাঠিয়েছিল । গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থানের উপর মানুষের ভাগ্যকে ঝুলিয়ে দিত। পৃথিবীর ঘূর্ণন তাদের কাছে অবিশ্বাস্য ছিল ।
এরকম কোন কিছু না বুঝেই কোটি কোটি প্রজন্ম পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে । ধর্মগ্রন্থে আমরা এমন একটি ও বৈজ্ঞানিক সূত্র পাইনি যা দিয়ে পরিবেশকে ব্যাখ্যা করা যায় , কেন ? এই পৃথিবী একদিন ধংস হয়ে যাবে । পৃথিবী ধ্বংসের আগে হয়তো মানুষ অন্য কোথাও পাড়ি জমাবে । খুঁজে নেবে প্রাণের উপযোগী কোন নতুন আবাস । তিন বা পাচ হাজার বছর চির কাল নয় ।
আমাদের জানার পরিধি আদি মানবের চেয়ে অনেক বেশী হলেও মহাবিশ্বের সার্বিক জ্ঞানের তুলনায় নিতান্ত গৌণ । তাই আমি জানি এ কথা নিশ্চিত করে বলে ফেলা কি এত সোজা । তার চেয়ে সন্দেহ পোষণ করাকে অধিক যুক্তিযুক্ত মনে করি । ভেবে দেখুন আপনার নিশ্চিত বিশ্বাসের বলি আপনার মতই নিশ্চিত বিশ্বাসের অন্য মতের লোকেরা । মানুষ ধর্ম বিশ্বাস করে খুব সহজেই বাতিল করে দিচ্ছে অন্য আরেক দল মানুষ কে ।
আমি নিশ্চিত বিধাতা এটা মেনে নেবেননা। বাতিল করে দেওয়া কোন কাজের কথা না । এমন কোন পথ মানুষ নিজেই বের করে নেবে যাতে করে কাউকে বাতিল করে দেওয়া র প্রয়োজন হবেনা ।
এখন প্রশ্ন আসে একজিসটিং ধর্মের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান কি হবে বা হওয়া উচিত ?
তার আগে আমাদের ভেবে নিতে হবে আমাদের ধর্ম আমাদের ইচ্ছায় বেছে নেইনি , এটা পারিপার্শিকতা প্রসূত । এটার দায় আমার নয় , আমার মুখের ভাষা , ভৌগলিক অবস্থান , অর্থনৈতিক অবস্থা , আমার পরিবারের নৈতিক অবস্থা , প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং আরও অন্যান্য অনেক নিয়ামকের উপর যেহেতু আমার বিশ্বাস ও মূল্যবোধের গঠন নির্ভর করে সেহেতু " বর্তমানের আমার " মনোজগৎ দিয়ে আমাকে বিচার করলে তার দায় ও আমার একার হতে পারে না ।
স্রষ্টার যুক্তিবাদী সৃষ্টি হিসেবে এই উপসংহার টানলে কি অন্যায় হবে ? যদি পরিণত বুদ্ধি বিবেচনা অর্জিত হবার পর আমাকে ধর্ম বেছে নিতে বলা হয় , সেই বাছাবাছিটা ও হতে হবে প্রভাবমুক্ত । ব্যক্তি ভেদে মেধা ভেদে শিক্ষা ভেদে বয়স ভেদে অভিজ্ঞতা ভেদে অনুভবের তীব্রতা ভেদে এক বিষয় অভিন্ন থাকেনা । মানুষের চেতনার এই স্বাতন্ত্র অস্বীকার করা মানে সৃষ্টি কর্তার মাহাত্ম্য কে অস্বীকার করা ।
মানুষের কেন ধর্মের প্রয়োজন ? এর উত্তর সবাই এক দেবেনা । কারন সেই চেতনার স্বাতন্ত্রবাদ ।
তাই যে ভাবে যে বিশ্বাস নিয়ে তৃপ্ত থাকতে পারে তার সেই বিশ্বাস কে ম্যানিপুলেট করার কোন অর্থ নেই । তারও উচিৎ হবেনা অন্যের তুষ্ট হওয়া কে অস্থিতিশীল করা ।
এক পরিবারের সবাই কে পারিবারিক ইস্যু তে যেখানে এক করা যায় না। সেখানে সারা বিশ্বের সকল মানুষ কে এক মতে আনা কি সম্ভব ? যদি আপনি এটিকে সম্ভব ভাবেন তবে আপনি অন্য জগতের অতিমানব গোত্রের কেউ ,এই আলোচনায় আপনার পোষাবেনা , দু:খিত । গোত্র বদ্ধ মানুষ সময়ের সাথে সাথে বদলাতে বদলাতে দেশ নামের এই কাঠামো তে আবদ্ধ হয়েছে ।
পুরো পরিক্রমা টা না দেখে আমরা দেশটা দেখি তেমনি বিচ্ছিন্ন ব্যক্তি গত বিশ্বাস নানা পথ মত ঘুরে অবশেষে আজকের প্রতিষ্ঠিত ধর্মে পরিণত হয়েছে , মজার ব্যাপার তবুও এক হতে পারে নি । ধর্মের সেই পরিক্রমা টা বিবেচনায় আনতে হবে , নতুবা এই রেসিপ বাি রেডিমেড খাবার খেয়ে ফুড পযজনিং এ আক্রান্ত হতে মোটেও সময় লাগবে না।
"মধ্যযুগ " শব্দটা উচ্চারিত হয় সব ধরনের বর্বরতার সাথে । কেন ? এক উইচ হান্ট বা পেত্নী শিকার এত বর্বর ছিল যে আপানার গায়ে কাটা দেয়ার জন্য যথেষ্ঠ । ইউরোপের শাসন ভার যখন খ্রিস্টান পাদ্রী দের হাতে চলে যায় , রাষ্ট্র পরিচালিত হতো ধর্মীয় বিধিবিধান দ্বারা , তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানসিক বিকারগ্রস্ত দের ডাইনী আখ্যা দিয়ে প্রকাশ্যে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হতো ।
জনতা সেই সাজা দেয়ার দৃশ্য উপভোগ করতো
, এখন আরব বিশ্বের লোকেরা যেমন করে , সেই উণ্মাদনা কাল পেরিয়ে ইযোরোপ ধর্মকে বিদায় করেছে শাসন ব্যবস্থা থেকে । তারা দুদুটো বিশ্ব যুদ্ধ করেছে কিন্তু এখন আর ক্রুসেডের কথা বলেনা । যদিও মুসলিমরা জিহাদের স্বপ্নে বিভোর থাকে এখনও । ধর্মীয় আবেগ উৎসারিত উন্মাদনা ও উন্মত্ততার কোন সীমা পরিসীমা নেই ।
কোন বিশেষ ধর্মের ক্ষেত্রে তা ব্যতিক্রমী নয়।
এ যুগের পাথর নিক্ষেপ আর মধ্য যুগের উইচ হান্টের মধ্যে বস্তুত: কোন তফাৎ নেই । নিউটনকে তার বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ফিরিয়ে নিতে হয়েছিল ধর্মীয় শাসকদের হুকুমে , তা ই বলে কিন্তু পৃথিবীর সূর্যের চারপাশে ঘোরাঘুরি বন্ধ থাকে নি । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।