২০১৪তে আমার প্রথম পোষ্ট !
সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা !!
শুভ সূচনা ২০১৪
বালিশ বস্তুটির স্থান বিছানায় হলেও এই ঘটনায় বালিশের অবস্থান ছিল পুকুরে ।
২০১০-এর ঘটনা ফুটবল বিশ্বকাপ চলছে, সাথে অসহনীয় গরমের মিত্র লোডশেডিং। রাতেরবেলা কারেন্ট না থাকলে মসজিদ ঘাটে গ্রামের অনেকেই আড্ডা দিত।
এই ঘাটটাকে আমাদের গ্রামে 'সংসদ' বলা হয়, কারণ সব বিষয় (বিশেষ করে রাজনৈতিক ) নিয়েই এখানে আলোচনা,সমালোচনা,ঝগড়া সবই চলে।
রাতের বেলা সাধারণত কাজ থেকে ফেরা ও শ্রমিক টাইপের লোকজন গোসল করতে আসতো।
একদিন রাত দশটার দিকের ঘটনা,পুরো ঘাটভর্তি মানুষ ২০-২৫ জনের কম হবে না, সবাই রাজনৈতিক আলাপে মগ্ন।
নিচে পুকুরে কয়েকজন গোসল করছে। তাদের মধ্যে থেকে হঠাৎ এক লোক জোরে চিৎকার দিয়ে পানি থেকে উঠে সিঁড়িতে এসে দাঁড়াল, সাথে সাথে ঘাটের উপরের মানুষেরও আলাপন বন্ধ ২/৩ জন তাড়াতাড়ি সামনে গিয়ে ঐ লোককে জিজ্ঞেস করল 'কিরে মিয়া কি অইছে'!
বাকি সবাইও কৌতুহলবশত উঠে দাঁড়িয়েছে। ঐ লোক হাঁপাতে হাঁপাতে বলল 'আরে মিয়া কি জানি পায়ে লাইগা গেল গা,এক্কেরে নরম আতের (হাত) রহম' !
একজন বলল 'আরে ঐ মাছ ছাড়ছিল কয়দিন আগে ঐ মাছই অইব' ।
ঐ লোক প্রায় চিৎকার করে উঠল 'ধুর,আমার পায়ে লাগছে আমি বুজি নাই,আমার পাও দইরা টান দিবার লাগছিল' !
ঐ লোকের সাথে আরও কয়েকজন গোসল করছিল তারাও এই ব্যাপার দেখে কোনরকম গোসল করেই উঠে পড়ল।
ঘটনার সূত্রপাত এখানেই।
পরদিন দুপুরে ঘাটে বসে ছিলাম। কয়েকজন মুরুব্বী দেখি গতরাতের ঘটনা আলোচনা করছে তাদের কথাবার্তা এরকম 'কি বলে আইছে গাটে, নাহাইবার গেলে খাবলা মারে পায়ের বিত্রে ! হাঁচা নি ?'
'আরে মাছ মুছ অইব আর কি ! '
'আরে না হুনলাম পাও দইরা নাকি টান মারে ! আমার কাছে লাগে লগের যেই পুস্কুনিটা আছেনা অইত্তারতেই কিছু আইছে, ওই হিজল গাছটা তো খারাপ আগেত্তেই, নাহাইতেই তো অহনে ডর করে ! '
চুপচাপ শুনছিলাম তাদের কথাবার্তা। ছোটবেলায় বদ্ধমূল ধারনা ছিল একমাত্র সন্তান যারা তাদের পানির ভিতর ভয় বেশি। পানির মালিকের (!) নাকি এই জাতীয় মানুষ বেশিই পছন্দ।
তাই সাঁতরে পুকুরের মাঝখানে গেলে কলিজার পানি শুকিয়ে যেত।
একইদিন রাতের বেলা শুনি সন্ধ্যায় নাকি এক লোক গোসল করার সময় পায়ে নখের মত আঁচর লাগছে, ভয়ে আর গোসল করার সাহস হয়নাই।
আর রাতে এই ঘটনা নিয়ে সংসদ গরম । একেকজন একেকভাবে ব্যাখ্যা করছে 'কিছু তো একটা আছেই ?? '
আমি একজনকে বললাম 'আচ্ছা এইটা তো তেলিপিয়া মাছের পাখনা লাইগাও হইবার পারে, কয়দিন আগেও না দেখলাম তেলিপিয়ার বাচ্চা । '
প্রতিউত্তর পাইলাম 'আরে না সব সিলভার কাপ ছাড়ছিল' !
মনে মনে ঠিক করলাম 'দেহি আর কি কি বাইর হয় এইটা নিয়া' ??
পরদিন শুনি, মসজিদের মোয়াজ্জেম হুজুররে নাকি স্বপ্নে দেখাইছে একজন মানুষ নিব এই পুকুর থেকে !
ব্যস, আগুনে ঘি পড়ল আর কি ! আতংক ছড়িয়ে পড়ল এলাকা বাসির মনে মনে।
এখন প্রতিদিনই ৪/৫ বার করে কারো না কারো পায়ে এই রহস্যময় নরম জিনিসের ঘষা লাগতে লাগল। " style="border:0;" />
দুপুর ১২-৩ টা পর্যন্ত পোলাপানের দখলে থাকতো যেই ঘাট সেটাও এখন শূন্যপ্রায়। যাও গোসল করে দূরে যেতনা কেউ। এলাকার লোকেরা এই রহস্যময় জিনিসের নাম দিল 'বালিশ' । কারণ বালিশের মতই নাকি বস্তুটা,পায়ে হালকা ছোঁয়া দিয়েই সরে যায়।
আস্তে আস্তে এই বালিশ কাহিনী আশেপাশের মহল্লায়ও ছড়িয়ে পড়ল।
একদিন রাত সাড়ে ১২ টায় কারেন্ট না থাকায় ঘাটে বসে আছি। তেমন লোকজন ছিলনা আমি আর দুজন মুরুব্বী, এই সময় পাশের মহল্লা থেকে ২ জন শুকারুটি (বাখরখানি) দোকানের কারিগর গোসল করতে আসলো। এক মুরুব্বী তাদের বলল ' হুনো মিয়ারা, তোমরা যে হেনে নাহাইবার আইছ জানো হেনে কি আইছে ? হেনে বালিশ আছে,পায়ের মইদ্দে খাবলা দিব !'
কারিগরের একজন বলল ' আমরাও হুনছি এই গাটে কি জানি আইছে, বিশ্বাস করিনাই অহন তো আপ্নেগো কথা হুইনা ডর করতাছে ' !!
ঐ মুরুব্বী আবার বলল ' অহনো কি নাহাইবা হেনে এই রাইতে তাও আইছ ২ জনে ' ??
তারা বলল 'না না জান দিতে রাজি না, যাইগা !'
আগামী কয়েকদিনে ''জান দিতে রাজি না'' এই ডায়লগ আমাদের এই ঘাটকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়ল লোকের মুখে মুখে।
যোহরের আজানের আগে অনেকেই গোসল করত,কিন্তু কেউ ৩/৪ সিঁড়ির বেশি দূরে যেত না।
এই সময় ঘাটে থাকতাম বালিশ ভিকটিম লোকজন দেখা যায় কি না ! নিজেও কয়দিন গোসল করছি, একদিন পায়ে পলিথিন লাগায় উঠিয়ে বললাম ' এই পলিথিন লাগে না তো আবার মানসের পায়ে ? এইটাওতো ওই জিনিসের রহমই পানির বিত্রে !' একজন বলল ' আরে নাহ ! ওইটা মাথার বালিশের রহম চাইপা ধরে পিইসলায়া জায়গা আবার লগে পোলাপানের আতের (হাত) রহমও লাগে । '
এইসময় মসজিদের মোয়াজ্জেম হুজুর গোসল করছিল । আমি বললাম 'ওস্তাজি, আপ্নেরে দরেনাই বালিশে। '
আরও কয়েকজন যোগ দিল 'হ ঠিকই তো ওস্তাজিরে দরে না কেলা বালিশে !?'
ওস্তাজি এই কথায় শুধু দাঁত বের করে হাসে ।
প্রায় ২/১ দিন পরপরই শুনতাম 'আইজকা উমুকরে বালিশে খাবলা দিছে,পরসু তুমুকরে বালিশে টাইনা মইদ্দে লয়া গেছিল কুনুমতে বাইচা আইছে !!' এই নিয়া পুরো মহল্লা জুড়ে বিরাট আলোচনা ।
সংসদের (ঘাট) মুলবিষয়ও ছিল এটা খালি বালিশ আর বালিশ। অনেকেই পাশের মহল্লার পুকুরে গোসল করা শুরু করল। এভাবেই মাস দুয়েক চলল কিন্তু বালিশ আতংক আগের মতই রইল।
মাঝে মাঝে সারা রাত কারেন্ট থাকতো না তাই এসময় আমি আর মহল্লার এক ভ্যানচালক ভুলু ভাই ঘাটে বসে থাকতাম। তাকে জিজ্ঞেস করছিলাম 'ভুলু ভাই,ঘাঁটে বলে কিয়ের বালিশ আইছে ! দেকছেন নিকি ?'
সে বলল 'আরে দূর দূর,আমি তো ডেইলি নাহাই আইজকাও রাইত ১২ টায় নাহাইলাম ! কিচ্ছু না এইটি,মাইনসের কাম ! দুইটা গজার মাছ আছে হেনে বড় বড় আমি নিজে দেকছি,ঐ হালারাই কামরাকামড়ি করে,আর এইটারে বানাইছে বালিশ !!'
সে এমনিতেই অনেক সিনিয়ার লোক আবার কথাও বলে গলা চড়িয়ে ।
আমি বললাম 'কন কি !'
সে আরও বলল 'ঐদিনকা রাইতে ১১ টার সমে কতটিরে কইলাম হেনে রাইতে কয়দিন আগে এখলা বয়া রইছি আৎখা নূপুরের আওয়াজ হুনলাম,কইলাম তোর কাম তুই করতে থাক ! দেহি একটা একটা কইরা সব ভাগলো কাহিনী হুইনা । অহন দেখবা ১২ টার আগেই গাট খালি অয়া যায় । '
তার কথায় মজা পাচ্ছিলাম জোরে হাসলাম 'হা হা হা,ঠিকই কইছেন । কেঠা জানি একবার কইছিল রাইতে বলে চান্দি ছিলা এক লেংটা পিচ্চিরেও দেখছে হেনে !'
ভুলু ভাই : ' হ আমিও হুনছিলাম ! কউ দেহি কারবার ! সারারাইত গাটে বয়া থাকি একদিনও কিচ্ছু দেখলাম না,আর যেইটি আহে না ওইটিই কত কি দেইখা ফালায় ! ঐ দেহ মাছে গাই মারতাছে,সামনের হাপ্তায় মাছ দরবো । ঐ গজার দরলেই সব ঠাণ্ডা ।
'
চাঁদের আলোয় দেখলাম পুকুর ভরা মাছের তৈরি বড় বড় ঘাই।
কিছুদিন পর সত্যি সত্যিই প্রায় ৪ ফুট লম্বা দুইটা গজার মাছ ধরা পড়ল। আর সেইদিন থেকে বালিশের খাব্লা-খাব্লিও বন্ধ হয়ে গেল।
তারপরেও কিছু লোকের ধারণা ছিল এই বালিশ বস্তুটা অতিপ্রাকৃত কোন জিনিস যা পুকুরের নিচের মাটি খুঁড়ে অন্যকথাও চলে গেছে !!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।