আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।
জামায়াতে ইসলামী নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় কৌশলী অবস্থান নিতে যাচ্ছে। সরকারের শ্যেন দৃষ্টি থেকে বাঁচতে জামায়াত আশ্রয় খুঁজছে প্রভাবশালীদের কাছে। এজন্য দলটির নেতারা প্রতিবেশী দেশের প্রভাবশালীদের সঙ্গে দেনদরবারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থায়ীভাবে খোলস বদল না হলেও বর্তমানের কঠিন সময়টুকু হলেও নিরাপদে পার করার জন্য তারা নানাভাবে চেষ্টা-তদবির করছেন।
দলটি তাদের কৌশলের শুরুতেই নিজেদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠা পাওয়া ‘সন্ত্রাসী ও জঙ্গি’ ভাবমূর্তি পাল্টানোর চেষ্টা করছে। এজন্য প্রয়োজনে তাদের মিত্র বর্তমান বিরোধী দল বিএনপি থেকে ঘোষণা দিয়ে বেরিয়ে আসার কৌশল নিতেও দ্বিধা করবে না। সর্বশেষ দলের যেসব শীর্ষনেতার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আছে তাদের বাদ দিয়ে নতুনভাবে দল সংগঠিত করার কৌশলও গ্রহণ করতে পারে। তবে এ মুহূর্তের সঙ্কট কাটাতে সরকার এবং প্রতিবেশী একটি দেশের বিশেষ কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছে নিজেদের ক্লিন ইমেজ প্রতিষ্ঠায় তত্পর। এজন্য ‘সন্ত্রাসী’ ইমেজ থেকে নিজেদের বের করে আনার বিষয়ে মরিয়া হয়ে উঠেছে তারা।
কারণ বিএনপি-জামায়াত জোটের উত্থান নিয়ে ভারতের উদ্বেগের বিষয়টি দুই ভারতীয় কূটনীতিক প্রকাশ্যেই বলেছেন। বিবিসি সূত্র ওই কূটনীতিকদের ভাষ্য দিয়ে বলেছে, ভারতের মূল সমস্যা হলো বাংলাদেশের এই ইসলামপন্থী শক্তি। এ শক্তিগুলোর দাপটে গোটা বাংলাদেশের সামাজিক স্থিতিটাই ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ভারত তাদের এ অবস্থানের কথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে। জামায়াত এ বিষয়টি আঁচ করতে পেরেই তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে মারিয়া হয়ে উঠেছে।
অন্যথায় জামায়াত ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচিতি পাবে। জামায়াত কোনোভাবেই এ ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। এজন্য জামায়াতের এক প্রভাবশালী নেতা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের একাধিক শীর্ষ নীতিনির্ধারকের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনুমতি মেলেনি। তবে ওই নেতা থেমে নেই।
অপর একটি দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। জামায়াতের এ নেতার মতে, বর্তমান সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করতে হলে এ দেশের সবুজ সঙ্কেত ছাড়া কোনোভাবেই তা সম্ভব নয়।
সন্ত্রাসী ও জঙ্গি ভাবমূর্তি থেকে বের হয়ে আসার অংশ হিসেবে ১৮ দলের ডাকা পঞ্চম দফা অবরোধে জামায়াত তাদের অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে। জামায়াতের অবস্থান পরিবর্তনের কারণে পঞ্চম দফা অবরোধের সময় আগের মতো সহিংসতা ঘটছে না। জামায়াত বিএনপি সম্পর্কেও তাদের অবস্থান নতুনভাবে মূল্যায়ন করছে।
জামায়াত কোনোভাবেই সহিংসতা ও নাশকতার জন্য জঙ্গি সংগঠনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে চাচ্ছে না। অতিসম্প্রতি ভারতের একটি প্রভাবশালী দৈনিকের প্রতিনিধির সঙ্গে জামায়াতের এক শীর্ষনেতা এই ইঙ্গিত দিয়েছেন। প্রভাবশালী দৈনিকের প্রতিনিধি জানতে চেয়েছিলেন, আপনাদের অবস্থান পরিবর্তনের নমুনা কোথায়? জবাবে জামায়াতের ওই শীর্ষনেতা বলেছিলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াত সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পায়। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করে। সংসদীয় নির্বাচনে জামায়াত তার অবস্থান ধরে রেখেছে।
সহিংসতা ও নাশকতার অভিযোগে এ অবস্থানের পরিবর্তন হতে পারে না। ভারতীয় রাজনৈতিক দল বিজিপির মতো জামায়াতও সংসদীয় রাজনীতি করতে চাচ্ছে। ’ চতুর্থ দফা অবরোধের শেষ দিকে ওই নেতার বক্তব্যের পর পঞ্চম দফা অবরোধ কর্মসূচিতে জামায়াতের অবস্থানের অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। এ পরিবর্তন যাতে সবার দৃষ্টিগোচর হয় এ কারণে পঞ্চমবারের অবরোধের সময় সহিংসতা কমে গেছে। জামায়াতের একাধিক সূত্র থেকে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
তবে জামায়াতের এ বক্তব্যের বিরুদ্ধে ভিন্নমতও পাওয়া গেছে। সাতক্ষীরায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা আত্মগোপনে চলে গেছে। শীতকালীন মহড়ার অংশ হিসেবে সেনাবাহিনী নামায় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা গা ঢাকা দেয়। এ পরিস্থিতিতে বিরোধী দলের ডাকে শুরু হয় পঞ্চম দফা অবরোধ। আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে চোরাগুপ্তা হামলা চালানোর জন্য সহিংসতার মাত্রা কিছুটা কমেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
তবে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের ইস্যুসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের শীর্ষনেতাদের মুক্তির বিষয়ে শরিক দল বিএনপির ভূমিকায় চরম অসন্তুষ্ট দলটির নেতারা। এ বিষয়টি সামনে রেখে জামায়াত বিএনপির সঙ্গ ছেড়ে দিচ্ছে— এ তথ্যটি বাজারজাত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছে জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সূত্রে জানা গেছে, তাদের নেতাকর্মীরা অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই দেশে সহিংসতা ও নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছিল। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর ১৮ দলীয় জোটের প্রধান দল বিএনপির এ সম্পর্কে কোনো উচ্চবাচ্য না করায় জামায়াতের উপলব্ধি হয়েছে, তারা আগের মতো আর কেনো ঝুঁকি নেবে না। জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির পর পাকিস্তান সরকার অবস্থান গ্রহণ করার পরও বিএনপির নীরবতা জামায়াতকে কষ্ট দিয়েছে।
জামায়াতের ওই শীর্ষনেতা বলেছেন, ঝুঁকি নিয়েই জামায়াত সহিংসতা করেছে। তারপরেও বিএনপি কাদের মোল্লা বা যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে প্রকাশ্যে সমর্থন দেয়নি। তাই জামায়াত নাশকতা ত্যাগ করে দলকে রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত করতে চাচ্ছে।
ইতিমধ্যে জামায়াতের শীর্ষনেতারা সরকারের প্রভাবশালীদের সঙ্গেও দেখা করে জামায়াতের এ অবস্থানের কথা পরিষ্কার করেছেন। তারা বলেছেন, জামায়াত সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত হতে চায় না।
তারা পঁচাত্তরের পরে নতুনভাবে সংগঠিত হওয়ার পর গণতান্ত্রিক রাজনীতি করছে। ওই রাজনীতিই বহাল রাখতে চাচ্ছে। কোনোভাবেই তারা সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত হতে চায় না। জামায়াত তাদের এই অবস্থান ধরে রাখার ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছে। জামায়াত নেতাদের ওই আশ্বাসের পর ১৮ দলীয় জোটের পঞ্চম দফা অবরোধে সহিংসতার মাত্রা কমে গেছে।
সুত্র
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।