আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশে একজন কেজরিওয়ালের আগমন সম্ভাবনা

যে জানেনা এবং জানে যে সে জানেনা সে সরল, তাকে শেখাও। যে জানেনা এবং জানেনা যে সে জানে না, সে বোকা-তাকে পরিত্যাগ কর।

১। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ভারতের কমিশনের মত স্বাধীন ও সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী নয়। আপনি রাজনৈতিক দল গঠন করতে চাইলে নিবন্ধন পাবেন না।

আপনি আওয়ামী লীগ না বিএনপি এটা বুঝে আপনাকে নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় ফেলা হবে। তারপর আমলাতান্ত্রিক জটিলতার প্যাঁচে ফেলে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার মধ্যে নাকানিচুবানি খাওয়ানো হবে। ততদিনে যদি আপনার রাজনৈতিক দল করার খায়েশ থাকে তাহলে অবাক হয় দেখবেন যে, আপনি বড় কোনো দলের চাটুকারিতা করার উপযোগী হয়েছেন, কেজরিওয়াল হওয়ার জন্য নয়।

২। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে 'গুরু আন্না হাজারে'র সহযোগী হয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়াল অনশন সহ অনেক আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন।

ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক কোনো দলের সাথেই সম্পৃক্ত হননি। নীতির প্রশ্নে কারও সাথে আপোষ না করেই 'আম আদমি পার্টি' নামে আলাদা দল গড়েছেন। সেই দল নিয়ে জনগণের ঘরে ঘরে গিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বলেছেন। বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি এ ধরনের সুনির্দিষ্ট কোনো নীতি নিয়ে লড়ছেন না। নিজের স্বার্থের পক্ষে না হলে 'মূল দল' থেকে বের হয় ব্রাকেটবন্দী দল গঠন করছেন।

এভাবে কেজরিওয়াল হওয়ার কোনোই সম্ভাবনা নেই।

৩। সেবার মহান মানসিকতা নিয়ে কেজরিওয়াল লোভনীয় সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশে আপনি একবার যদি সরকারি চাকরি পান তাহলে ধরে নেন যে, এটাই আপনার বাকি জীবনের আরাম-আয়েশের একমাত্র অবলম্বন। সরকারি অর্থকে যথেচ্ছা ব্যবহার করে আপনার চৌদ্দ পুরুষকে আপনি আর্থিক নিরাপত্তা দিতে উঠে পড়ে লাগেন।

পদ্মা সেতুর জন্য ব্যবহৃত রড থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খাম্বা পর্যন্ত আপনার ঘুষের উপাদানে পরিণত হয়ে যায়। সরকারি বাড়ি, গাড়ি, ড্রাইভার, দারোয়ান, বিদেশে শপিং, বিদেশে চিকিৎসা, বিদেশে বাড়ি কেনা...এত্ত এত্ত দুর্নীতির সাগরে থেকে আপনি করবেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন! থাক আপনার আর কেজরিওয়াল হয় কাজ নেই।

৪। আপনি রাজনৈতিক দল করবেন বড় কোনো দলের কিংবা বড় কোনো নেতার চাটুকারিতা করার জন্য। ঘুষ দিয়ে টেন্ডারটা পেতে, ঘুষ দিয়ে আপনার সন্তান/আত্মীয়ের চাকরিটা পেতে, ঘুষ দিয়ে সরকারি কিছু খাস জমি পেতে, সিন্ডিকেট করে কালোবাজারির দখলটা পেতে, টেম্পু স্ট্যান্ডের চাঁদাবাজিটা পেতে রাজনৈতিক পরিচয় দরকার।

তাই আপনি রাজনৈতিক দল করে দুর্নীতির সহযোগী হতে চাইবেন। কেজরিওয়ালের মত দুর্নীতি বিরোধী রাজনৈতিক দল করে আপনার লাভ নেই।

৫। জন্মের পর থেকেই আপনি দেখছেন কিভাবে একজন আরেকজনকে ঠকিয়ে পয়সাওয়ালা হয়ে যাচ্ছে। পয়সা বানাতে পারলে আরাম আয়েশে জীবন কাটিয়ে দেওয়া সম্ভব।

পয়সা বানাতে পারলে সম্মান-প্রতিপত্তিও বাড়ানো সম্ভব। পানি বিদ্যুতের মিটার রিডিং করে পয়সা বানিয়েছেন নাকি শ্রমিক শোষণ করে পয়সা বানিয়েছেন, পয়সার গায়ে তা লেখা থাকবে না। পয়সা দিয়ে বড় কোনো দলের মনোনয়ন কিনে, পয়সা ছিটিয়ে জনগণের ভোট কিনে যদি আপনি ক্ষমতাবান হয়ে যেতে পারেন- তাহলে কেজরিওয়াল হওয়ার আর দরকার কী!

৬। আপনি মনে মনে সুপ্ত বাসনা লালন করছেন যে, আপনি ব্যতিক্রমী একজন রাজনৈতিক নেতা হবেন। প্রচলিত ধারার রাজনৈতিক নেতাদের কাছে প্রথমে আপনি হাসির পাত্র হবেন।

কেজরিওয়ালও ও হাসির পাত্র হয়েছিল। কিন্তু কেজরিওয়াল দমেন নাই। জনগণ তাঁর সাথে ছিল। কিন্তু আপনার সাথে জনগণ থাকবে না, কারণ আপনি টাকা ছিটাতে পারবেন না। আর রাজনৈতিক নেতারা আপনার ছিদ্র খুঁজে সেই ছিদ্র দিয়ে অনবরত কুৎসা রটাতে থাকবে।

আপনার প্রপিতামহের পার্শ্ববর্তী বাড়ির কেউ রাজাকার ছিল কিংবা আপনি সুদের ব্যবসা করেন- এরকম ইস্যু নিয়ে নাস্তানাবুদ করা হবে। জনগণ এরকম ইস্যুতে ভাগ হয়ে যাবে। আপনাকে মাঠে নামিয়ে হাসির পাত্র বানিয়ে তারা কেটে পড়বে।

উপরোক্ত কারণে আমাদের দেশে একজন কেজরিওয়ালের আগমন অসম্ভব মনে হলেও আপনাকেই এগিয়ে আসতে হবে। একটা ধারা সৃষ্টি করা দরকার।

একজন আন্না হাজারে এবং কয়েকজন কেজরিওয়াল বাংলাদেশের জন্য খুবই দরকার।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.