টানা আট দিন ধরে গুলশানের নিজ বাসায় নিঃসঙ্গ সময় কাটাচ্ছেন অবরুদ্ধ বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। তিনি মুক্ত না গৃহবন্দী তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে বিএনপির দাবি, বেগম জিয়াকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। দলের নেতা-কর্মীদের ছাড়াও সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নিকটাত্দীয়দেরও দেখা সাক্ষাতে মানা। দীর্ঘদিন ধরে তার দুই ছেলে সপরিবারে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।
বেগম জিয়ার নিকটাত্দীয় বলতে দুই ভাইয়ের পরিবারের সদস্যদেরও তার বাসায় ঢুকতে দেওয়া হয় না। ব্যক্তিগত স্টাফদেরও অনেক সময় বাসায় প্রবেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। দল ও পরিবার থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন বেগম জিয়া।
এদিকে বেগম জিয়া 'গৃহবন্দী' না 'গ্রেফতার' তা জানতে গতকাল বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের নেতৃত্বে সংসদীয় দলের আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বিষয়টি শীঘ্রই স্পষ্ট করা হবে বলে রাষ্ট্রপতি প্রতিনিধি দলকে আশ্বস্ত করেছেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপির এমপিরা আগামীকাল ৫ জানুয়ারি ভোট স্থগিত করার অনুরোধ জানালে রাষ্ট্রপতি বলেন, সাংবিধানিকভাবে তার হাত-পা বাঁধা। এ বিষয়ে এখন তার কিছু করার নেই। বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।
বেগম জিয়ার ঘনিষ্টজনেরা জানান, আট দিন ধরে অবরুদ্ধ থাকলেও মোটেও বিচলিত নন বিরোধীদলীয় নেতা। গ্রেফতার কিংবা গৃহবন্দিত্বকে মোটেও ভয় পান না তিনি।
নিয়মিত নামাজ কালামের পাশাপাশি পত্রিকা ও টিভি দেখেই সময় কাটাচ্ছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন মাধ্যমে দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন। লন্ডনে চিকিৎসাধীন বড় ছেলে ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও বিভিন্ন বিষয়ে সলাপরামর্শ করছেন। আন্দোলনে গতি আনতে জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গেও নানাভাবে যোগাযোগ রাখছেন তিনি।
গত কয়েকদিনের মতো গতকালও গুলশানে ৭৯ নম্বর সড়কের 'ফিরোজা' নামে বেগম জিয়ার বাসভবনের সামনে র্যাব-পুলিশের কঠোর অবস্থান ছিল।
গতকালও বাসার পূর্বপাশে দুটি বালুভর্তি ট্রাক রাখা হয়। পশ্চিম পাশে দুটি বালুভর্তি ট্রাক সরিয়ে সেখানে একটি জলকামান রাখা হয়। অতিরিক্ত পুলিশি নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেই নিঃসঙ্গ সময় কাটাচ্ছেন বেগম জিয়া। রবিবার অভিযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে নয়াপল্টনে সমাবেশে অংশ নিতে চাইলেও তাকে বের হতে দেয়নি পুলিশ। প্রায় দেড় ঘণ্টা বাসার গেইটের ভেতর গাড়িতে চড়ে ও দাঁড়িয়ে থেকে পরে বাসার ভেতরে ঢুকে যান তিনি।
পরদিন সোমবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকশ সদস্য তার গতিরোধ করতে বাড়ি ঘেরাও করে রাখে। এর পর অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করায় বাসা থেকে বের হননি বেগম জিয়া। গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার সাংবাদিক এ্যালেন ব্যারি বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে বাসভবনের সামনে থেকে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। বিরোধীদলীয় নেতার একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন হরতাল বা অবরোধে বাসা থেকে বের হন না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে অভিযোগ করে বলেন, বিরোধী দলীয় নেতা ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তার বাসা থেকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না।
তার সঙ্গে দল কিংবা নিকটাত্দীয়দের দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ নেই। এটা কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের আচরণ হতে পারে না। তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এমপিদের সাক্ষাৎ : বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে সরকার তার বাসায় 'অন্যায়ভাবে অবরুদ্ধ' করে রেখেছে অভিযোগ করে তিনি গ্রেফতার না গৃহবন্দী তা স্পষ্ট জানতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপির এমপিরা। গতকাল বিকালে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই দাবি জানান।
বিকাল ৪টা থেকে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার এই বৈঠকের পর বেরিয়ে এসে ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে সরকার অন্যায়ভাবে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। উনি গ্রেফতার না গৃহবন্দী সরকার তা স্পষ্ট করেনি। তিনি অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়াকে তার বাসা থেকে বেরিয়ে কার্যালয়ে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। নেতা-কর্মীদেরও তার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। রাষ্ট্রপতি তাদের বলেছেন, মৌলিক অধিকার রক্ষার দায়িত্ব সংবিধানে আছে।
তিনি চেষ্টা করবেন। তবে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নির্বাচন ও বিএনপির আন্দোলন নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি-না সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ফারুক। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফারুক বলেন, '১৮ দলের আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত আছে, তা চলবে। এ বিষয়ে জোটের পক্ষ থেকে বলা হবে। আমরা কথা বলব না।
'
প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা ছিলেন সংসদ সদস্য আশরাফ উদ্দিন নিজান, হারুন অর রশিদ, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, আসিফা আশরাফি পাপিয়া, নিলোফার চৌধুরী নিলু, রেহানা আক্তার ও রাশেদা বেগম হীরা। একই দাবি নিয়ে বৃহস্পতিবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে একটি স্মারকলিপি দেন তারা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।