প্রাচীনকালে আরবে মেয়েদের জীবিত কবর দেবার এক নিষ্ঠুর পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। সন্তান প্রসবকালেই মায়ের সামনেই একটি গর্ত খনন করে রাখা হতো। মেয়ে সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তখনই তাকে গর্তে ফেলে দিয়ে মাটি চাপা দেয়া হতো । আবার কোথাও যদি মা এতে রাজী না হতো বা তার পরিবারের কেউ এতে বাধ সাধতো তাহলে অনিচ্ছাসত্ত্বেও বাপ কিছুদিন তাকে লালন পালন করতো। তারপর একদিন মরুভূমি , পাহাড় বা জংগলের মধ্যে নিয়ে গিয়ে কোথাও তাকে জীবিত কবর দিয়ে দিতো।
আমরা মাঝেমধ্যে ভুল করি এই ভেবে যে আরব ভূখন্ডে সভ্যতার বিকাশ শুরু হয়েছিল ইসলামের আবির্ভাসের সময় থেকে। ইসলামের জন্মভূমি আরব বহু প্রাচীনকাল থেকে ইতিহাস ও সংস্কৃতির সমন্বয়কেন্দ্রে পরিণত ছিল, আমরা ভুলে যাই। বণিক কাফেলার আনাগোনায় আরব উপদ্বীপ মুখরিত থেকেছে সূদূর অতীতকাল থেকে। আশ-শানফারা(৫১০খৃঃ)। প্রাচীন আরবের বেদুঈন কবিদের অন্যতম।
তিনি দক্ষিণ আরবের ইয়ামেন প্রদেশের বিখ্যাত আযদ গোত্রের বনু আওয়াস ইবনে হুজর পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম ছাবেত ইবনে আউস আল আয়াদী। কিন্তু তাঁর কৃষ্ণ চর্ম, পুরু ঠোঁট, আর বেশী বাচালতার জন্য তিনি শানফারা নামে সমধিক প্রসিদ্ধ। শানফারার সেরা কাব্যকীর্তি তাঁর ‘লামিয়াতুল আরব’। এটি আরবী কবিতাবলীর উৎকৃষ্ট নিদর্শন।
ঐ সময় মক্কা, মদিনা তথা আরব এলাকার ধর্ম ছিল আদিম প্রকৃতির জড় উপাসনাকেন্দ্রিক। আরব অধিবাসীরা মনে করতো, মরুভূমির বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন দেব-দেবী অধিষ্ঠিত। ইসলাম প্রচলনের আগে আরবের অধিকাংশ মানুষই নানাধর্মে বিশ্বাসী ছিল। কোনো কোনো মরু দেবতাকে তারা ‘জিন’ বলতো। মরু এলাকায় চন্দ্রের পূজা এবং উর্বর এলাকায় সূর্যের উপাসনা করা হতো।
হিজায অঞ্চলের প্রধান দেবতা ‘উজ্জা’, ‘লাত’ ও ‘মনাহ’-কে আল্লাহর কন্যা বলে মনে করা হতো। কুরাইশদের প্রধান দেবতা ছিল ‘উজজা’। প্রাক ইসলাম যুগে আরব বণিকদের উর্টের কাফেলা মরুসীমানা অতিক্রম না করলেও, ইসলামের অভ্যুদয়ের পর সমুদ্রের হাতছানি তারা উপেক্ষা করেননি। বাণিজ্যের তরী ভাসিয়ে তারা পাড়ি দিয়েছেন সাগর-মহাসাগর। একইসঙ্গে তারা এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে নিয়ে গেছেন ইসলামের শাশ্বত বাণী।
প্রাচীন যুগের আরবী কবিদের মধ্যে যে সমস্ত মনিষী রাজ-অনুগ্রহ লাভ করার পর রাজ-রোষের শিকার হন কবি মুতালাম্মিস তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রধান। তিনি আরবের বাহরায়েন প্রদেশের বিখ্যাত দ্বাবী‘আ বংশে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম জারির ইবনে আবদুল মাসীহ। কিন্তু মুতালাম্মিস তাঁর কাব্যিক নাম। নৃপতি আমর বিন হিন্দ তাঁকে সেরা কবির মর্যাদা দান করেছিলেন এবং তাঁর ভাগ্না ত্বারাফাকেও তাঁর সহকারী নিযুক্ত করেছিলেন।
প্রাচীন আরব বলতে মেসোপটেমিয়ার পশ্চিম এবং দক্ষিণ অঞ্চলকে বুঝায়। আরবরা, বিশেষতঃ মক্কাবাসীরা মদ্যপান, জুয়া ও সঙ্গীতের প্রতি গভীরভাবে আসক্ত ছিল। যে সকল দাসী-রমনী নৃত্যগীত করত তাদেরকে কীয়ান বলা হত। তারা ছিল চরম নীতিহীন। তথাপি তারা সর্বোচ্চ সম্মানে অধিষ্ঠিত ছিল এবং বড় বড় দলপতিরা তাদের প্রতি প্রণয় নিবেদন করত।
বহুবিবাহ অবাধে অনুশীলিত হত। ৯৬৬ খৃঃ থেকে ১৯১৬ খৃঃ পর্যন্ত বিভিন্ন সাম্রাজ্যের অধীনে মক্কা শরীফ ও মদিনা উপ শরিফের দ্বারা শাসিত হয়ে আসছিল। অটোম্যান সাম্রাজ্যের পতনের পর আল হেজাজে আবার নিজদের ২য় রাষ্ট্র কায়েম হয়। পরে আব্দুল আজিজ আল সৌদি নামক এক ব্যক্তি জজিরাতুল হেজাজ এবং জজিরাতুল নজদকে এক করে ১৯৩২ খৃঃ আজকের এই সৌদি আরব রাষ্ট্র গঠন করেন।
প্রাচীন কাল থেকে জজিরাতুল আরব জজিরাতুল আল হেজাজ, জজিরাতুল ইয়েমেন, জজিরাতুল নজফ নামক বিভিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত ছিল।
প্রাচীন নগরের মধ্যে হেজাজে জেদ্দা, মক্কা, মদিনা, ইয়েমেনে সানা, নজফে রিয়াদ প্রভৃতি ছিল। সে সময় যেমন মক্কাকে বাক্কা মদিনাকেও ইয়াতরিব নামে পরিচিত ছিল। ইসলামের আবির্ভাবের পর থেকে মক্কাকে মক্কা আল মোক্কারম এবং ইয়াতরিবকে মদিনা-তুন -নবী বা মদিনা আল মনওয়ারা বলে পরিচিতি লাভ করে। মদিনা বলতে যে কোন শহরকে বুঝা তা আরবরা জানে কিন্তু আমরা যারা নন আরব তারা কিন্তু মদিনা বলতে মদিনা তুন নবীকে বুঝে থাকেন। এটি কিন্তু সঠিক নয়।
মক্কা বাণিজ্যিক রাজপথে অধিষ্ঠিত হওয়ায় প্রতিবেশী দেশসমূহ থেকে সম্পদ ও সংস্কৃতি সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়েছিল। অবস্থানের অপরিহার্যতার ফলে হিজাজের আরবরা বিশ্বের জাতি সমূহের পরিবাহক শক্তিতে পরিণত হয়েছিল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।