আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি।
আমার জন্ম এমন এক গ্রামে যেখানে মুসলিম বাড়ি মাত্র তিনটি। একটি আমাদের, আরেকটি আমার দাদার বাড়ি। আরেকটি আবুল মিয়ার বাড়ি।
পরে যুক্ত হয়েছে সন্দীপের একটি পরিবার।
শতাধিক পরিবার নিয়ে যে গ্রাম সেখানে এই তিনটে বাড়ির ছেলে মেয়েরা এক অসাধারন সখ্যতার ভেতর দিয়ে বড় হয়েছে। এখনো সেটি অব্যাহত রয়েছে। নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর উপজেলার চর আমানুল্লাহ ইউনিয়নের চর বজলুল করিম গ্রামটি যে কোনো বিবেচনায় শান্তি ও আনন্দের স্মৃতি নিয়ে আমরা বড় হয়েছি।
আমাদের সামনের মহাজন বাড়িতে আমরা ফুটবল খেলতাম, মাতবর বাড়িও আমাদের ফুটবল মাঠি ছিল।
মহাজন বাড়ির পুকুর পাড়ে অনেক বিকাল কেটেছে আমি, ফারুক, মীনা ও শিবানীর একসাথে লুডু খেলায়।
আমরা একই সাথে একই বাড়ি হিন্দু ও মুসলিম পরিবার কয়েক বছর বসত করেছি। কিন্তু সঙ্ঘাত, মনোমালিন্য কিম্বা সহিংসতার কোনো কাহিনী আজ পর্যন্ত আমার কানে আসেনি।
তেত্রিশ বছর পর খবরের কাগজে হিন্দু বাড়ি ঘর, উপাসনালয় পুড়িয়ে দেবার খবর অনেক বেশি পড়ছি। এটি আমাকে খুবই কষ্ট ও পীড়া দেয়।
আমরা বন্ধুরা মিলে ছোটবেলায় এবং বড় হয়েও এগিয়ে যাচ্ছি সমানতালে।
সাম্প্রদায়িকতার যে বিষবাষ্প, সেটি আমরা অনুমানও কতে পারি না, এই সুবর্ণচরে। আমাদের পরিবারের প্রায় সবাই ধর্মপরায়ণ, পর্দানশীন এবং ধর্মের বাইরে যে কোনো কর্মকাণ্ডকে বরদাশত করেন না। কিন্তু এমন একটা পরিবারে আমরা ছোট বেলা থেকে দেখে এসেছি পাশের বাড়ি আলোরানী মাসি, সুধীর ও মানিকের মা মাসি, রুনা আমাদের বাড়িতে আড্ডায় জমাতো, এখনো জমায়। তবে রুনা ও আলোরানী মাসির দেখা মিলে না।
বিয়ে করে তারা দূরে থাকেন।
আমার মরহুমা দাদি ও ফুপু এবং মা - চাচীর সাথে তাদের এ সখ্য কয়েক দশকের। এ রকম প্রায় সব পরিবারেই সখ্যতা ছিল, আছে।
দেশের বিভিন্নপ্রান্তে সাম্প্রদায়িক সঙ্ঘাত হয়, এটি কেন হয় আমার মত অনেকেই হয়ত জানেন।
অতি সম্প্রতি পাবনার ঘটনায় সরকার দলীয়দের প্রতি প্রকাশ্য আঙ্গুল উঠেছিল।
রাজনৈতিক শক্তির কাছে সেটি পরাজিত। এর আগে রামুতে বৌদ্ধ বিহারে হামলা হয়েছে। দুর্ভার্গার সুযোগ হয়েছিল রামু ও উখিয়ার ঘটনা তলিয়ে দেখার- আমি নিশ্চিত এর জন্য আম্লীগ দায়ি। সাথে প্রশাসনের অবহেলা। এখন যশোরের অভয় নগর!
যে কোনো ছুঁতোয় হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও পাহাড়িদের নিয়ে হাঙ্গামা, তাদের বলির পাঠা বানিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার কোনো যুক্তি না থাকলেও আমরা সেটিই করি এবং এটা নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রাভঙ্গের মতই ঘটনা।
তবে এ ঘটনা থেকে আম্লীগ বেশি সুফল পায়। সামনেও পাবে। অপরাধীরা শাস্তি পায়না, বিচারের আওতায় আসেনা। কেবল আশ্বাস, আশ্বাস আর ভোটের রাজনীতি চলে অবিরাম।
আমরা অসহায় ভাবে তা দেখি।
ভাবি-পরিমল, সুশান্ত, শ্যামল, সুধীর কিম্বা শিবানীর মুখ। আমরা কখনো বিচ্ছিন্ন হইনি, হবোও না। রাজনীতির নষ্ট বিষ, ঘৃণার চাদর ফুঁড়ে সত্যের সূর্য একদিন উঠবেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।