নির্বাচনের পর নতুন করে গ্রেফতার আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে বিএনপিতে। গতকাল কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে গ্রেফতার হয়েছেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিমকোর্ট বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খোন্দকার মাহবুব হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন ও লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের এমপি নাজিমউদ্দিন আহমেদ। আটক করেও ছেড়ে দেওয়া হয়, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান এমপি, লায়ন হারুনুর রশিদ এমপি ও মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানাকে। এ ঘটনায় বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
হরতাল কর্মসূচি একদিন বাড়িয়ে গতকাল সন্ধ্যায় গুলশানের বাসায় বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের কিছুক্ষণ পরই সেলিমা রহমানকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।
পরে তাকে মিন্টো রোডে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বিএনপির সহদফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সংবাদ সম্মেলনের পর একই ভবনে ভাইয়ের বাসায় গিয়েছিলেন সেলিমা রহমান। গোয়েন্দা পুলিশ প্রথমে বাসায় তল্লাশি করে না পেয়ে ভাইয়ের বাসা থেকে সেলিমা রহমানকে আটক করে নিয়ে যায়। বেলা সোয়া ২টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে পেশাজীবী সংগঠনের এক সভা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় মূল ফটকের সামনে থেকে খন্দকার মাহবুবকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনার সোয়া ঘণ্টা পর বেলা ৩টার দিকে বারিধারা ডিওএইচএস চার নম্বর সড়কের ২৮৮ নম্বর বাসা থেকে মিলন ও নাজিম উদ্দিন আহমেদকে গ্রেফতার করা হয়।
তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
জানা গেছে, প্রেসক্লাব এলাকা থেকে খন্দকার মাহবুবকে গ্রেফতারের পরপরই রাজধানীর কয়েকটি সম্ভাব্য স্থানে বিএনপির আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে ধরতে অভিযান চালায় ডিবির কয়েকটি দল। একপর্যায়ে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বারিধারায় বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের একটি ব্যবসায়িক কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয় দুজনকে। ওই সময় ওই বাসায় উপস্থিত ছিলেন মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, ফজলুল হক মিলন, নাজিমউদ্দিন আহমেদ এমপি, জয়নুল আবদিন ফারুক এমপি, এ বি এম আশরাফউদ্দিন নিজান এমপি ও লায়ন হারুনুর রশিদ এমপি।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহানসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা সেখানে যাওয়ার কথা ছিল। অনেকে রাস্তায়ও ছিলেন। এ সংবাদ শুনে রাস্তা থেকেই চলে যান তারা।
শিরিন সুলতানা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, আমরা সেখানে বসে কথা বলছিলাম। এ সময় প্রায় ২০ থেকে ৩০ জন ডিবি পুলিশ আমাদের নিচে নামতে অনুরোধ করে।
সবাইকে নিচে নিয়ে একটি গাড়িতে তোলা হয়। তবে কিছুক্ষণ পর ওই গাড়িতে কেবল মিলন ও নাজিমউদ্দিন আহমেদকে রেখে বাকিদের নেমে যেতে বলা হয়। তাদের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান তিনি। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, বিরোধী দলের ঢাকা অভিযাত্রা ও সমাবেশের আগের দিন গত ২৮ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে খন্দকার মাহবুব 'উসকানিমূলক' বক্তব্য দেন। এর পরের দুই দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা ও সহিংসতা ঘটে।
এই অভিযোগেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই ঘটনায় মাহবুবের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়েছে কি-না অথবা মিলন ও নাজিমউদ্দিনকে কোন অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে- ওই ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। পুলিশের এক ঊধর্্বতন কর্মকর্তা জানান, আপাতত কয়েকজনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও পর্যায়ক্রমে আরও অনেক জ্যেষ্ঠ নেতাকে গ্রেফতার করা হবে। যে কোনো মূল্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকারের নির্দেশ মোতাবেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় খন্দকার মাহবুব হোসেন ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে 'কলঙ্কিত নির্বাচন' বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, 'এই নির্বাচনের ওপর কোনো বৈধ সরকার হতে পারে না। যারা বলছেন, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য এই নির্বাচন, তারা সঠিক কথা বলছেন না। ' সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'এখনো সময় আছে, গণতন্ত্রের কাতারে আসুন। ' অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও বিএফইউজের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী। অনুষ্ঠানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পিয়াস করিম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য খন্দকার মোস্তাহিদুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে বের হওয়ার সময়ই ডিবির একটি দল খন্দকার মাহবুবকে গ্রেফতার করে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়।
বিএনপির নিন্দা : এদিকে দলের নেতাদের গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকার চায় না দেশে কোনো বিরোধী দল বা মত থাকুক। অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন তিনি।
একইভাবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এলডিপির পক্ষ থেকেও তীব্র নিন্দা জানিয়ে নেতাদের মুক্তি দাবি করেছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম।
আইনজীবী সমিতির নিন্দা : সুপ্রিমকোর্ট বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেনকে গ্রেফতারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি। একই সঙ্গে অবিলম্বে তার মুক্তির দাবি জানিয়েছেন আইনজীবী সমিতির সভাপতি এজে মোহাম্মদ আলী। তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, 'সরকারের প্রহসনের নির্বাচন নিয়ে কথা বলায় সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। এ ছাড়া বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এক বিবৃতিতে মাহবুব হোসেনকে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।