জানুয়ারির ৫ তারিখ গোটা জাতির জন্য একটি অপেক্ষার দিন। দেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ছিল এটি। একদিকে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন, অন্যদিকে বিএনপি জামাতের নির্বাচন প্রতিহতের দিন। বিএনপি জামাতের প্রতিহত মানে তাণ্ডব, আগুণ, ভয়ভীতি, অসংখ্য মানুষের প্রাণহানী, নিরীহ পশু, গাছপালা কারও রেহাই নেই। এটা নাকি তাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন।
জনগণকে সম্পৃক্ত করে এই আন্দোলন। নির্বাচনের ২/১ দিন আগে দেশের প্রায় শতাধিক বিদ্যালয়ে অগ্নিসংযোগ, ব্যালট পেপার ছিনতাই, প্রিজাইডিং অফিসার খুনসহ নানা জঙ্গিমূলক কাজের মধ্য দিয়ে তারা গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তাহলে তাদের কাছে গণতান্ত্রিক আন্দোলন মানে এইসব?
জানুয়ারী ৪, ২০১৪ ইং তারিখ বাংলাদেশের প্রতিটি গণ মাধ্যমে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সাহেব ও এই মূহুর্ত পর্যন্ত বর্তমান সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব তারেক রহমান (পিনো) এর একটি ভিডিও বার্তা সারা দিন রাত প্রচারিত হয়েছে।
তিনিও তাঁর ভিডিও বার্তাটি গণ মাধ্যমে প্রচারের জন্যই পাঠিয়েছেন। গণ মাধ্যম দায়িত্বশীলতার সাথে সেই ভিডিও বার্তাটি যথারীতি সম্প্রচার করে জনগণের কাছে জনাব তারেক রহমান (পিনো) এর বক্তব্য তুলে ধরেছেন।
এই ভিডিও বার্তায় তিনি যা বলেছেন সেটা বাংলাদেশের আপামর জনগণ যারা টেলিভিশন দেখার সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা দেখেছেন ও শুনেছেন। দেশ ও জাতির জন্য উদ্বিগ্ন জনাব তারেক রহমান (পিনো) বাংলাদেশের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগের দিন জনগণকে ”বর্তমান সরকারের এই ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিরোধ, প্রতিহত ও বর্জন” করার আহবান জানিয়েছেন। তিনি ১৯৭২ সালের সংবিধানকে ”গণ আকাঙ্খা বিরোধী সংবিধান” বলে দাবী করেছেন। তিনি আরো অনেক কিছুই বলেছেন এবং বলতেই পারেন কারণ একজন রাজনীতিবিদ ও স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে তাঁর বলার এখতিয়ার আছে।
দেশ ও জাতির প্রতি তাঁর দরদ এর কথা (যদিও কথা বলার ভঙ্গিমা তাঁর মায়েরই মতো কঠোর) তাঁর দলের লোকজনের কাছেও কতটুকু বিশ্বাস যোগ্য সেটা নিয়ে সংশয় আছে।
বিশেষত তাঁর অতীত পর্যালোচনায় যতটুকু বোঝা যায়। কিন্ত বিষয়টি সেখানে নয় একেক জনের কথা বলার ভঙ্গিমা একেক রকম হতেই পারে। কিন্তু তিনি জনাব তারেক রহমান (পিনো) যা বলেছেন সেসব কি তিনি নিজে থেকে বলেছেন নাকি তাঁরই চারিপাশের কোন একটি বিশেষ চক্র তাঁকে বাধ্য করেছেন এমন একটি ”লাদেন মার্কা” ভিডিও বার্তা পাঠাতে? আমি চিন্তিত!
কারন, এক. জনাব তারেক রহমান (পিনো) একজন ফৌজদারী মামলার আসামী। তিনি ১/১১ এর সময় এতটাই নির্যাতিত হয়েছিলেন যে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেই তাঁকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাবার অনুমতি দেন। তিনি সুস্থ্য হয়ে দেশে ফিরে আসার কথা কিন্তু যে কোন কারণেই হোক তিনি আর বাংলাদেশে ফেরেন নি বা ফিরতে পারেন নি।
এদিকে তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা গুলি ম্যাচিউরড হয়ে একটিতে তিনি খালাশ পেয়েছেন এবং অন্যান্য গুলিতে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা, হুলিয়া সবই জারি হয়ে মামলা গুলি বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন। আইনের চোখে সবাই সমান আর আইন তার নিজের গতিতেই চলবে এটা আমরা সবাই জানি। তাঁর বিরুদ্ধে যেহেতু গ্রেপ্তারী পরোয়ানা, হুলিয়া জারি হয়েছে সেহেতু তিনি একজন ফেরারী আসামী। আইনের চোখে একজন ফেরারী আসামী কোন ভিডিও বার্তা পাঠাতে পারেন বলে দেশের জনগণের জানা নাই। তার উপরে সেই ভিডিও বার্তা যখন হয় দেশের চলমান রাজনীতি নিয়ে সেটা আরো বড় ধরনের বিষয়।
এক্ষেত্রে বিজ্ঞ আদালত এর কাছে আইনত প্রতীয়মান হয় যে, তিনি (জনাব তারেক রহমান (পিনো) তাঁর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলি বর্তমান অবস্থার বিষয়ে সম্পূর্ণ অবহিত এবং তিনি ইচ্ছা কৃতভাবে দেশে ফিরছেন না এবং আদালতকে অবমাননা করছেন। এটা নিয়ে আদালত চাইলে তাঁর বিরুদ্ধে স্বপ্রনোদিত হয়ে আদেশ দিতে পারেন। তাঁকে দিয়ে যে বা যারাই এই কাজটি করিয়েছেন সে বা তাঁরা কাজটি ঠিক করেননি। পরোক্ষভাবে তাঁর (জনাব তারেক রহমান (পিনো) ক্ষতি করেছেন।
দুই. তিনি জনাব তারেক রহমান (পিনো) ভিডিও বার্তায় সরাসরি নির্বাচন প্রতিরোধ, প্রতিহত ও বর্জন করার জন্য তাঁর দলের ও দেশের জনগনকে আহবান করেছেন সেই ‘আহবান’ টি ছিল পক্ষান্তরে একটি ”নির্দেশ”।
তিনি ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে যতটুকু ক্ষতি নিজের করেছেন তেমনি পক্ষান্তরে তাঁর দলেরও করেছেন। কারণ তিনি বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে তাঁর দলকে আহবান জানাতে পারেন কিন্তু সমগ্র দেশবাসীকে নির্দেশ দিতে আইনত কতটুকু দাবীদার সেটি প্রশ্ন বিদ্ধ বিষয়। কারন তিনি কোন নির্বাচিত গণপ্রতিনিধি নন। তিনি দলীয় মনোনীত সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট।
তিন. ”প্রতিরোধ” শব্দের আভিধানিক অর্থর সঠিক ধারনা তাঁর নিশ্চয়ই জানা আছে।
”প্রতিহত” শব্দটিও তাঁর কাছে অবোধ্য নয়। এই দুটি শব্দ চয়ন কওে তিনি যে দেশের একটি উচ্ছৃংখল সন্ত্রাসী বাহিনীকে তান্ডব চালানোর জন্য পক্ষান্তরে নির্দেশ দিলেন সেটা আমরা গতকাল থেকেই খুব হাঁড়ে হাঁড়ে টের পাচ্ছি। কারন তাঁর ঐ ভিডিও বার্তা প্রচারিত হবার পর পরই বাংলাদেশের সন্ত্রাস ও তান্ডবের মাত্রা এতটাই বেড়ে গেল যে সরকারী কাজে নিয়োজিত অসহায় সহকারী রিটার্নিং অফিসার এর জীবন তৎক্ষনাত কেড়ে নিল ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিরোধীরা। পক্ষান্তরে এই হত্যার দায় তাঁর (জনাব তারেক রহমান (পিনো) কাঁধেই পড়বে।
চার. এর আগেও আমরা ”ডিজিটাল যুগের” বরাতে তাঁর (জনাব তারেক রহমান (পিনো) সাথে জনাব শমসের মবিন চৌধুরীর ফেনালাপ শুনেছি সেখানেও দেখেছি যে তিনি দেশের রাজনৈতিক বিষয়ে যথেষ্ট তৎপর আছেন এবং জনাব চৌধুরীকে নির্দেশনা দিচ্ছেন।
জনাব চৌধুরীও তাঁকে বারংবার আশ্বস্ত করছেন যে, জনাব মাহাফুজুল্লাহ (সাংবাদিক) সাহেবকে দিয়ে তিনি সেই সব কথা ”টক শো”গুলিতে বলাচ্ছেন। আমরা যারা নিয়মিত টক শো” গুলি দেখি তারা জানি সিনিয়র সাংবাদিক জনাব মাহাফুজুল্লাহ সাহেব ”টক শো” গুলিতে কী কথা বলছেন। তিনি (জনাব তারেক রহমান (পিনো) বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব সম্পর্কেও অত্যন্ত ক্ষুব্ধ তাঁর সাথে জনাব চৌধুরীর কথোপকথোন এই বোঝা গেল। সুতরাং টেলিফোন এ কথা বললেও জনাব জনাব তারেক রহমান (পিনো) এর একটু সতর্কতার সাথে বলা ভালো বৈকি। তিনি যদিও একটি দলের নেতা তাঁর পরও তাঁকে সর্বদাই মনে রাখতে হবে ভবিষ্যতে দেশের হাল ধরতে হলে ”কারো পেতে দেয়া ফাঁদে” তাঁর পা না ফেলাই ভালো।
পাঁচ. জনাব তারেক রহমান (পিনো) তাঁর ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন ইতোপূর্বে আওয়ামীলীগ সরকার কতদিন হরতাল করেছেন এবং সাধারন মানুষ কে জীবন দিতে হয়েছে। তবে মাত্র এই কয়েকদিনে সারা বাংলাদেশে যে মানুষগুলি পেট্রোল বোমায়, গুলিতে, লাঠিপেটায় বা চাপাতির আঘাতে নিহত হয়েছেন এবং এখোনো যারা মৃত্যুও সাথে পাঞ্জা লড়ছেন সেই সংখ্যাটি তাঁর জানা আছে বলেই আমার বিশ্বাস। তাহলে কী এরা কেউ সাধারন মানুষ নন? বা এরা কেউই মানুষই নন? এই প্রশ্ন আসে কী খুবই অনুচিৎ?
ছয়. তাঁর (জনাব তারেক রহমান (পিনো) দল নির্বাচন বর্জন করেছেন। করতেই পারে। এটা তাদেও গণতান্ত্রিক অধিকার।
যদিও একজন সাধারন নাগরিক হিসাবে এখোনো আমি মনে করি বি এন পি নির্বাচনে এলে ভালো করত। কারন বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশের সাধারন ভোটারদেও মন বোঝা ভার। প্রতি পাঁচ বছর পর পর তাঁদেও মনের গতিধারা পরিবর্তিত হয়। তাই আমরাও খুব মহানন্দে নূতন নূতন দূতদেরকে মহান জাতীয় সংসদে বসাই।
তিনি (জনাব তারেক রহমান (পিনো) তো বলেছেন ভিডিও বার্তায় যে, ”আওয়ামীলীগের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায় তাই তাঁরা এমন নির্বাচন করছেন। ” তাই যদি হয় তাহলে তো বিএনপি’র মতো বৃহৎ ও জনপ্রিয় দল অনায়াসে নির্বাচনে এসে জয়যুক্ত হয়ে সরকার গঠন করতেই পারতো।
সেটা যখন বিএনপি করে নি এখানে জনগনের মনে তো প্রশ্ন উঠতেই পাওে কেন? যেখানে আওয়ামীলীগ এর জনপ্রিয়তা শূন্যেও কোঠায় সেখানে বি এন পি নির্বাচনে এল না কেন?
বিএনপি নির্বাচনে আসার পর যদি কোন কারনে সংখ্যাগরিষ্টতা না পেত তাহলেও তো নির্বাচনের কারচুপি সহ শত সহশ্র অভিযোগ এনে সংসদ বাতিলের গন আন্দোলন করতে সক্ষম হতো এবং বলতে পারতো যে আমরা আগেই বলেছিলাম, ”এই সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। ” সেটা বলার পথ বিএনপি নিজেই বন্দ করে দিল।
বিষযটি আসলে সেটা নয়।
বিষয় হলো জামাত। জামাত বিএনপি কে নির্বাচনে আসতে দিল না। কারণ জামাত জানে তাদেরকে ছাড়াও নির্বাচন করলে বি এন বিজয়ী হয়ে যেতে পারে। আর একবার জামাত ছাড়া বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ভবিষ্যতে জামাত এর ছায়াও বাংলাদেশের কোন মানুষ সহ্য করবে না। জামাত এখন আইনত একটি অবৈধ সংগঠন।
তাদেও কোন চালই বাংলাদেশের কীট পতঙ্গও মেনে নিবে না । তাই অতি কূট চালে বিএনপি কেও শেষ করে দিতে চাইছে জামাত। আর জামাত এর সূক্ষাতিসুক্ষ কূট চালে এবং বিএনপি’র মাঝে ঘাপটি মেওে পড়ে থাকা জামাত পন্থীরা সেই চক্রের আবর্তেই ফেলে দিল ”বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল”কে।
জনাব তারেক রহমান (পিনো) এর সাথে জনাব শমসের মবিন চৌধুরীর টেলিফোনালাপ ও জনাব তারেক রহমান (পিনো) এর ভিডিও বার্তাও পর দেশে যে সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেও হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছে তার জন্য আইনত সরকার জনাব তারেক রহমান (পিনো) এর বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করতে বাধ্য। এখানে ব্যক্তি জনাব তারেক রহমান (পিনো) কোন বিষয় নয় বিষয় হলো ”এটাই নিয়ম”।
তবে জনগণ হিসেবে আমরা চাই, ফেরারী আসামীর দেশ নিয়ে ভাবনা চিন্তা করার কোনো সুযোগ আছে কিনা সেটা জনগণের কাছে পরিষ্কার হওয়া দরকার। আশা করি নতুন সরকার এ বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ নিবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।